আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

টিউটোরিয়াল : কিভাবে আপনার প্রথম চলচ্চিত্রটি বানাবেন ? - ০৭

জীবন বুনে স্বপ্ন বানাই মানবজমিনে অনেক চাষ চাই
দর্শক থেকে লেখক হওয়ার চেষ্টা : সৃজনশীল এক অনন্ত যাত্রা দর্শক ও শ্রোতা হিসেবে অনেক অনেক চলচ্চিত্র দেখেছেন। এবার আপনি চলচ্চিত্র বানাবেন। তার জন্য লিখতে হবে একটা চিত্রনাট্য। চিত্রনাট্য লিখতে হলে আপনাকে এভাবে এগুতে হবে : ০১) একটি বিষয় নিয়ে ভাবুন এবং বিষয়টিকে নির্দিষ্ট করুন। ০২) একটি বাক্যে বিষয়টি সম্পর্কে সিদ্ধান্ত বা প্রেমিজ বানান।

০৩) পুরো চলচ্চিত্রের গল্পটি খুব সংক্ষেপে লিখে ফেলুন। একে বলে গল্প সংক্ষেপ বা সিনোপসিস। ০৪) এবার চরিত্রগুলো নিয়ে ভাবুন। প্রধান চরিত্র, তার সহযোগী চরিত্র ও তার প্রতিযোগী চরিত্র সম্পর্কে ধারণা করুন। একেকটা চরিত্রকে একেক রকম করে বানান যেন কারো সাথে কারো মিল না হয়।

বিশেষত প্রধান চরিত্রটিকে বিশেষভাবে নির্মাণ করুন। ০৫) পুরো ঘটনাটিকে স্থান অনুযায়ী ভাগ করে ফেলুন। মোট কতগুলি স্থানে ঘটনাগুলি ঘটছে সেটা নির্ধারণ করে ফেলুন। প্রত্যেক স্থানে কতগুলি চরিত্র মিলে একটা ঘটনা ঘটাচ্ছে সেটা ঠিক করুন। ঘটনার স্থান পরিবর্তন হলেই সাধারণত একটি দৃশ্য পরিবর্তন হয়।

কখনও একই সময়ে দুটি বা আরও অধিক ঘটনা ঘটতে পারে। ০৬) বিশেষ কোন চরিত্রের কোন সংলাপের বৈশিষ্ট্য নির্ধারণ করুন। বিভিন্ন চরিত্রের সংলাপ বিভিন্ন রকমের হলে শুনতে ভালো লাগে। ০৭) প্রতিটি দৃশ্যের শুরুতে একটি সাধারণ বর্ণনা থাকতে পারে। সাধারণ বর্ণনায় চরিত্রগুলোর বিভিন্ন ভঙ্গিমা, চলাচল, পোশাক, উপকরণ এবং ঘরের আসবাবপত্র উল্লেখ করা হয়।

তাছাড়া কোন বিশেষ পরিস্থিতিও সাধারণ বর্ণনায় উল্লেখ করা উচিত। আসুন লেখা শুরু করি : আপনারা এবার আমার সঙ্গে লিখবেন। আমি ও আপনি একই ব্যক্তি এখন। আমি যা ভাবছি, আপনিও তা ভাববেন। আমার ও আপনার ভাবনা মিলে একটা চিত্রনাট্য লেখা হবে।

আমি সিদ্ধান্ত নিয়েছি, একটি স্বল্পদৈর্ঘ্য চলচ্চিত্র বানাব। প্রথমে ভাবতে শুরু করলাম বিষয়বস্তু নিয়ে । নানাজনের সঙ্গে আলাপ করলাম। পত্রিকা পড়লাম। বই পড়লাম।

নেট ঘাটলাম। অবশেষে আমার এক বন্ধু মোশারফ হোসেনের পরামর্শে বিষয়বস্তু পেলাম। ও বলছে, সঙদের জীবন নিয়ে কিছু লিখতে। আমার এলাকায় এক সঙ থাকে, নাম সোলেমান। ও নিজেকে পরিচয় দেয় সোলেমান পাগলা হিসেবে।

তাকে দেখেছি, রঙচঙে পোশাক পরে কখনো চানাচুর, কখনো পান, কখনো চকলেট বিক্রি করতে। কিন্তু তাকে নিয়ে কী গল্প লিখব ? আমি তো তার সম্পর্কে কিছু জানি না। একদিন গেলাম তার বাড়ি। পরিচয় দিলাম। জানালাম, আমার উদ্দেশ্য।

সঙ খুব অবাক হল। তারপর তার একটা সাক্ষাৎকার নিলাম। লাগোস এগরির ত্রৈমাত্রিক চরিত্রের অস্থি-সংস্থান পূরণ করলাম। জানলাম তার স্বপ্নের কথা। সে চেয়েছিল সার্কাসের কাউন হবে।

কিন্তু সার্কাস উঠে গেছে। তাই সে এখন পথে পথে পান বিক্রি করে। মাঝে মাঝে বিয়ে বাড়িতে পানের অর্ডার পায়। খুব সুন্দর করে সাজিয়ে পানের ডালা দেয় সে। প্রথম জীবনে সে একটা ভিডিও দোকানে চাকুরি নিয়েছিল।

কিন্তু সেটা মজার চাকুরি হলেও তার ভালো লাগে ঘুরে বেড়াতে, মানুষের সঙ্গে মজা করতে। তাই মাঝে মাঝে সে দোকান ছেড়ে উধাও হয়ে যেত। নানা জায়গায় বিভিন্ন সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে মজা করে বেড়াত। মানুষ তার অদ্ভুত কর্মকাণ্ডে মজা পেত। এক সময় দোকানটা বন্ধ হয়ে যায়।

সে বেকার হয়ে পড়ে। অভাবের তাড়নায় সে বেশ কিছু দিন রিক্সা চালায়। কিন্তু রিক্সা চালাতে তার ভালো লাগে না। সে প্রায়ই যাত্রাপালায় গিয়ে রংঢং করে। অভাবের তাড়নায় তার স্ত্রী চলে যায়।

স্ত্রী চলে যাওয়ার পর সে বেশ কিছুদিন সঙ সাজা বন্ধ করে দেয়। কিন্তু একটা নেশার মতো মনে হয় তার এই সঙ সাজা। ফলে আবারও কোন একদিন সঙ সাজে সে। তার অভাব ও দুঃখকে জয় করে সে মানুষকে হাসায়। সে আবারও বিয়ে করেছে।

মোটামুটি চলে যাচ্ছে তার দিন। তার সাক্ষাৎকার নেয়ার পর এবার গল্পটি সাজাই। তার জীবনটা হুবহু নেয়ার কোন মানে নাই। তাই বেছে নেই তার জীবনের অন্যতম একটি অংশ। তার সঙ্গে নিজের কল্পনা মিশাই।

নাটকীয় বানানোর চেষ্টা করি তার জীবনকাহিনীকে। ফলে সেটা আর জীবনকাহিনী থাকে না, হয়ে ওঠে একটা সৃজনশীল গল্প। যেমন : বাস্তবের সঙের স্ত্রী কোন যাত্রাপালার নর্তকী ছিল না। কিন্তু আমার গল্পের স্ত্রী যাত্রাপালার নর্তকী। বাস্তবের মূল গল্পটি থেকে আমি অনেক অনেক দূর চলে গেছি।

অনেক অনেক নাটকীয় ঘটনা যোগ করি। প্রথমে পরিকল্পনা করি মাত্র ১২ মিনিটের হবে চলচ্চিত্রটি । কিন্তু আমার ইউনিটের লোকজনের আগ্রহে ও পরামর্শে শেষ পর্যন্ত এটা হয় ৪০ মিনিটের। প্রথমে লিখি সিনোপসিস। কিভাবে সেটা লিখি আসুন জেনে নেয়া যাক : সিনোপসিস বা গল্প সংক্ষেপ : চিত্রনাট্য লেখার প্রথম কাজ হল সিনোপসিস বা গল্প সংপে লেখা।

যত সংক্ষেপে পারা যায় তত সংক্ষেপে গল্পটি লিখতে হবে। সাধারণত সিনোপসিস বা গল্প সংক্ষেপে ১৫০ শব্দের বেশি না হওয়া ভালো। তবে ২০০ শব্দের মধ্যে হলেও চলবে এবং এর বেশি গেলে পরিচালক বিরক্ত হবেন। সিনোপসিসে যা যা থাকবে - ০১) শুরু, মধ্য ও শেষ থাকবে। ০২) প্রধান প্রধান চরিত্র থাকবে।

০৩) প্রধান প্রধান ঘটনা থাকবে। ০৪) কাহিনী কয়টি হবে তা থাকবে। একটি মূল কাহিনী ও তার সামঞ্জস্যপূর্ণ ও সহায়তাকারী ডালপালা ছড়ানো ২/১টি কাহিনী থাকতে পারে। ০৫) ভাষা সংক্ষিপ্ত ও সহজ-সরল হবে। ০৬) একটি মাত্র অনুচ্ছেদ বা প্যারাগ্রাফের সমান হবে।

০৭) কোন সংলাপ থাকবে না। ০৮) ১৫০ থেকে ২০০ শব্দের মধ্যে হবে। ০৯) চরিত্রগুলোর একটি তালিকা সিনোপসিসের সঙ্গে যোগ করে দিতে হবে। আমার সংখেলা স্বল্পদৈর্ঘ্য চলচ্চিত্রের সিনোপসিস বা গল্প সংক্ষেপ স্বল্পদৈর্ঘ্য চলচ্চিত্র : সঙখেলা চিত্রনাট্য ও পরিচালনা : শাহজাহান শামীম গল্প সংক্ষেপ : একজন সঙ। সে সঙ সাজার জন্য কোন কাজ করে না।

নানা জায়গায় ঘুরে ঘুরে মজা করে আর স্বপ্ন দেখে একদিন সে সিনেমার কৌতুক অভিনেতা হবে। সঙখেলা দেখানোর জন্য বিভিন্ন মেলায় যায় সে। সেই রকম এক মেলায় যেতে যেতে যাত্রাপালার নর্তকীর সাথে পরিচয় হয় তার। তারপর সেই নর্তকী তার হাত ধরে পালায়। পালিয়ে তারা ঘর বাঁধে।

কিন্তু অভাব তাদের পিছু ছাড়ে না। অন্য দিকে সেই নর্তকীর পেছনে লাগে এক ট্রাক ড্রাইভার। তাকে খুঁজে বের করে ফেলে। তারপর ফুসলায় তার সাথে যাওয়ার জন্য। সঙ তার অভাব দূর করার জন্য কখনও চকলেট, কখনও পান মসলা ও কখনও মিষ্টি পান বিক্রি করে।

এই কাজে সে চলে যায় বিভিন্ন মেলায়। বউটা একা পড়ে থাকে না খেয়ে। বাধ্য হয়ে বউটা বড় রাস্তার একটা দোকান থেকে বাকি নেয়। দোকানী মহাজন তাকে বাকি দিয়ে যেতে থাকে আর বলে একবারে শোধ করে দিস। এক সময় বউটি বুঝতে পারে সে সন্তানসম্ভবা।

তার এই বিপদে নানাজনের কাছে সে সাহায্য চায়। কারো সাহায্য পায়, কারো সাহায্য পায় না। একদিন সং সিনেমায় কৌতুক অভিনেতা হিসেবে সুযোগ পেয়ে যায়। কিন্তু তত দিনে সংসার ছেড়ে চলে যায় তার স্ত্রী। চরিত্র সূচি : ক্রমিক - চরিত্রের নাম - বয়স - পরিচয় - চারিত্রিক বৈশিষ্ট্য - অভিনয় শিল্পী ০১) আয়নাল (২৫) সঙ - মজার মানুষ - মোশারফ খোকন ০২) আলেয়া (২০) পালার নর্তকী - ঢঙ্গী - রুমা সরকার ০৩) সোলেমান (৩০) ট্রাক ড্রাইভার - লম্পট - শফিক রেহমান ০৪) উজির আলী (৫০) দোকানদার মহাজন - বিয়ে পাগলা - ফজলুল হক পলাশ ০৫) অধিকারী (৫০) যাত্রাপালার মালিক - মাতাল - এস.এম ইকবাল রুমি ০৬) ক্যাশিয়ার (৪০) পালার ক্যাশিয়ার - লোভী ও চতুর - শোয়েব মনির ০৭) ভাবী (৩০) প্রতিবেশী ভাবী - সদয় - সোমা সরকার এই সিনোপসিসে আছে ০১) শুরু - সঙ বিভিন্ন জায়গায় ঘুরে ঘুরে কাজ করে।

মধ্য - তার সঙ্গে যাত্রাপালার নর্তকীর পরিচয় ও প্রেম শেষ - তার স্ত্রী সংসার ছেড়ে চলে যায় । ০২) প্রধান প্রধান চরিত্র আছে। যেমন : প্রধান চরিত্র সঙ, তার স্ত্রী , ট্রাক ড্রাইভার ও দোকানী মহাজন। ০৩) প্রধান প্রধান ঘটনা আছে। যেমন : সঙয়ের নানা জায়গায় ঘুরে বেড়ানো, নর্তকীর সঙ্গে পরিচয়, প্রেম ও সংসার, ট্রাক ড্রাইভারের ফুসলানো, দোকানী মহাজনের বাকি দেয়া এবং সবশেষে সংসার ছেড়ে চলে যাওয়া ।

০৪) এখানে কাহিনী একটি । কোন উপ-কাহিনী নাই। স্বল্পদৈর্ঘ্য চলচ্চিত্র বলেই উপ-কাহিনী নাই। পূর্ণদৈর্ঘ্য চলচ্চিত্র হলে অবশ্যই উপ-কাহিনী থাকত। ০৫) ভাষা যতটা সম্ভব সংক্ষিপ্ত ও সরল করা হয়েছে।

ছোট ছোট বাক্য ব্যবহার করা হয়েছে। ০৬) আকারের দিক দিয়ে একটি অনুচ্ছেদ বা প্যারাগ্রাফের সমান আছে। যদিও নানা ঘটনার বাঁকগুলো একাধিক প্যারাতে লেখা হয়েছে। ০৭) কোন সংলাপ নাই। ০৮) ১৭৬ শব্দে লেখা হয়েছে।

০৯) সিনোপসিসের শেষে চরিত্রগুলোর একটি তালিকা যোগ করা হয়েছে। (অফ টপিক : আমার লেখা "কিভাবে আপনার প্রথম চলচ্চিত্রটি বানাবেন ? " নামের একটি অপ্রকাশিত বই থেকে লেখাটি দেয়া। এই পোস্টটি অনেক বড় হয়ে গেল বলে দুঃখিত। ) পর্ব - ০১ পর্ব - ০২ পর্ব -০৩ পর্ব - ০৪ পর্ব - ০৫ পর্ব -০৬ পর্ব -০৮
 

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.