আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

সুমনের ডাইরী থেকে

কোথাও হারিয়ে যেতে চাই

আজ রবিবার। রাত দশটা। ১২ অগাস্ট ২০০১ সাল। আজ ঈদের দিন। আজ আমার জীবনের সবচেয়ে খুশির দিন।

প্রতি দিনের মত লিখতে বসেছি আজকের দিনের কি কি ভালো অথবা খারাপ কাজ আমার দ্বারা করা হয়েছে। যাতে ভবিষ্যতে এসব থেকে শিক্ষা গ্রহণ করতে পারি। আমার নাম সুমন। সুমন আহমদ। আমি আমার পরিবারের মধ্য সবাচেয়ে বড়।

বড় বলতে একমাত্র বড় ছেলে । আর আমার একটি ছোট্র বোন আছে। তার নাম সুমি। আমাদের বাড়ী হলো বিয়ানী বাজারের পৌর শহড়ে। আমদের বাড়ী যদিও পৌড় শহরে কাছে তবুও গ্রামের সব ছোঁয়া এর মধ্য ভরপুর।

বাবা বেশির ভাগ সময় বিদেশে থাকেন। বিদেশ বলতে লন্ডনে আরকি। আমি মনে করি আমাদের পরিবার একটি সুখি পরিবার। কারণ সুখি পরিবার বলতে যে সব গুন থাকা প্রয়োজন, আমাদের পরিবারে তার সবটুকু বিদ্যমান। আর আমি! বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ি।

অংক নিয়ে। তাও আবার ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে। আজ আমার এ কি হলো? আমি এসব লিখছি কেন? এসব তো ডাইরীতে লিখার কোন কথা না । ডাইরীতো শুধু আমার নিজের জন্য। আমার নিজের পড়ার জন্য।

তাহলে এসব লিখছি কেন? মনে হয় এর মধ্য কোন কারণ লুকিয়ে আছে। আল্লাহ চাচ্ছেন যেন আমি এসব লিখে যাই। তার মানে কি আমি আর বেশি দিন বাঁচব না। আরে ধুৎ, আমি এসব চিন্তা করছি কেন? মৃত্যুতো আল্লারই হাতে। তিনি চাইলে যে কোন ব্যাক্তির যে কোন সময় মৃত্যু হতে পা ।

আর আমি তো আল্লার ইচ্ছার উপর আমার জীবন সপে দিয়েছি। তাই এসব নিয়ে তো কখনো চিন্তা করিনা। এই দেখুন এখনো লিখা হলো না, আমি কি জন্য এত খুশি। আজ নাবিল এসেছিলো আমাদের ঘরে। সে কি খুশি ছিল তা ভাষায় প্রকাশ করা যাবে না।

তার এই খুশি দেখে আমার যে কি ভালো লাগছিল তা আমি এই ডাইরীতে লিখে শেষ করতে পারব না। নাবিলের বয়স ১০ বছর। দিনে স্কুলে যায় আর বিকালে তাদের মুদির দোকানে বাবা কে সাহায্য করে। নাবিলের বাড়ী আমাদের পাশের গ্রামে। তার বাবার নাম আরমান আজিজ।

তিনি খুবই ধার্মিক। তাই উনার ছেলেকেও গড়ে তুলেছেন সে ভাবে। নাবিল ও সবসময় মসজিদে জামাতে নামায পড়ে। গত দুই দিন আগে ঈদের নতুন জামা কিনে বাজার থেকে রিস্কায় বাড়ীতে যাচ্ছি। জামাটি আমার খুবই পছন্দ হয়েছে।

তাই দামাদামি না করেই কিনে ফেলেছি। মনের সুখে গান গাচ্ছি আর মনে মনে আল্লার শুকরিয়া যানাচ্ছি যে তিনি দয়া করে আমাদেরকে এই ঈদের দিন গুলো দান করেছেন। এমন সময় কান্নার শব্দ কানে ভেসে আসে। চেয়ে দেখি পথের পাশে একটি ছেলে বসে কাঁদছে। ডাইবার কে বল্লাম রিস্কা থামাতে।

রিস্কা থেকে নেমেই ছেলেটির কাছে গিয়ে ডাকলাম, এই ছেলে তুমি এখানে বসে কাঁদছ কেন? ছেলেটি চোখ তুলে থাকাতেই, আমি অবাক হলাম! এতো দেখছি আমাদের নাবিল। আমাকে দেখে নাবিল একটু শান্ত হল। আমি তাকে জিজ্ঞাস করলাম তুমি এখানে বসে কাঁদছো কেন? নাবিল আমার দিকে শুধু নির্বাক হয়ে চেয়ে থাকলো। কিছুই বল্লো না। আমি আবারও বললাম নাবিল তোমার কি হয়েছ? সে এবার মুখ খুললো।

বললো, আজ আমি আব্বার কাছে ঈদের জামা কিনে দেওয়ার জন্য আবদার করলাম। কিন্তু আব্বু আকাশের দিকে চেয়ে কাঁদতে শুরু করলেন। আমি উনার কাঁদা দেখে সেখানে দাঁড়িয়ে থাকতে পারলাম না। তাই রাস্তায় বসে একা একা কাঁদছি। নাবিল আর কিছু বলতে পারল না।

শুধু চোখ মুছতে থাকল। আমি এ ঘঠনা শুনে মনে খুবই মরমাহত হলাম। আমার অজান্তে চোখ বয়ে অশ্রু ঝড়ে পড়ল। আমি চিন্তা করছি কি ভাবে নাবিলকে সাহায্য করা যায়। এমনি আমার হাত চলে গেল আমার পেন্টের প্যাকেটের দিকে।

ম্যানি ব্যাগ হাতে নিয়ে দেখলাম আমার কাছে ৫০০ টাকার একটা নোট আছে। আমি ৫০০ টাকা তাকে দিয়ে দেবার সিদ্ধান্ত নিলাম। কিন্তু তাকে কিভাবে দেওয়া যায়, এই নিয়ে চিন্তা করছি। তাকে যদি এমনি হাতে টাকা তুলে দেই তাহলে সে নিবেনা। কারন নাবিল এই সব ব্যাপারে খুবই সেনসেটিব।

তাই একটু বুদ্ধি খাঁটিয়ে তাকে প্রশ্ন করলাম, আমি কি তোমার বড় ভাই হতে পারি? সঙ্গে সঙ্গে সে বলল অবশ্যই। আমি বললাম যদি তাই হয়, তাহলে এই নাও আমি তোমাকে ৫০০ টকা দিচ্ছি তোমার ঈদের জামা কেনার জন্য। আশা করি তুমি মাইন্ড করবে না। আর তুমিতো বলেছ আমি তোমার বড় ভাই। নাবিল কিছু না বলে আমার দিকে অপলক দৃষ্টিতে চেয়ে থাকল।

আর শুধু বলল সুমন ভাই আপনি আমাকে এত ভালোবাসেন! আর আজ সেই নাবিল আমাদের বাড়ীতে এসেছে ঈদের জামা পড়ে আমাকে সালাম করতে। তার হাসি মাখা মুখ দেখে আমি কি না খুশি হয়ে পারি! এমন সময় দরজায় টক টক শব্দ হলো। ঘড়ির দিকে চেয়ে দেখলাম রাত একটা। এমন রাতে কে হতে পারে। বললাম কে? কোন জবাব আসলো না।

ঠিক এই মুহুর্তে আবারো দরজায় টক টক শব্দ। তবে এইবার আগের চেয়ে জোরে। আমি ভাবতে লাগলাম এত রাতে দরজা খুলা কি ঠিক হবে। এই সব চিন্তার মধ্য আবারও দরজায় টক টক শব্দ হলো। এবারকার শব্দ আগের দুইবারে চেয়ে আরো জোরে।

মনে মনে সিদ্বান্ত নিলাম আমি দরজা খুলবো। আমি দেখতে চাই এত রাতে এরা কারা। এর পরের ঘঠনা গুলো সুমন লিখে যেতে পারে নাই। এর পরের ঘঠনা আমাদের এলাকার সবার জানা। সুমন দরজা খুলার সাথে সাথে গুলি করে হত্যা করে সন্ত্রাসীরা পালিয়ে যায়।

পোষ্টমর্টমে বলা হয়েছে সুমনের গায়ে ৩০ টা গুলি করা হয়েছিল। আমরা জানিনা সুমনের কি অপরাধ ছিল। কোন অপরাধের জন্য তাকে হত্যা করা হল। তবে হ্যা এ জানি, সুমন ছিল ইসলামী আদর্শের বিশ্বাসী। সে চাইতো দুনিয়ার সবাই যেন একমাত্র আল্লাহর গোলামী করে।

সে লক্ষ নিয়ে মাঠে ময়দানে কাজ করে ভেড়াত। মনে হয় এটাই ছিল তার একমাত্র অপরাধ!

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।