আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

মেগাসিরিয়াল: ঢাকা কলেজ এবং আমরা .........পর্ব৪

My scars remind me that the past is real, I tear my heart open just to feel........

আগের পর্বগুলো: পর্ব১: Click This Link পর্ব২: Click This Link পর্ব৩: Click This Link প্রারম্ভিক কথা: গত ৩ মাস লিখিনি, কিন্তু তাই বলে মেগাসিরিয়ালকে তো অন্য নাম দিতে পারিনা! ঢাকা কলেজে পড়ার সময়ের কিছু কথা নিয়ে শুরু করেছিলাম এই সিরিজ, আরেকবার দেখা যাক শেষ করতে পারি কিনা। ভাল লাগলে, সেটাই আমার প্রাপ্তি, কারণ কলেজে ঢুকার সময়ও কেউ টের পায়নি, বার হওয়ার সময়ও না। পড়ুন আর উপভোগ করুন দেশের একমাত্র বিজ্ঞাপনবিরতি বিহীন মেগাসিরিয়াল। শুরু হচ্ছে মেগাসিরিয়াল ঢাকা কলেজের চতুর্থ এপিসোড, ঢাকা কলেজ:৪; সেসময়ের ছাত্ররাজনীতি! আগের পর্বগুলোতে ছাত্ররাজনীতির কথা বেশি বলতে চাইনি, কিন্তু গত কয়েকদিন ধরে ঘটে যাওয়া ঘটনাগুলো আজকের এই শিরোনামের জন্য খুবই প্রাসঙ্গিক। সরাসরি বলে না বলে কিছু পারিপার্শ্বিক ঘটনা থেকে বলার চেষ্টা করব।

ঢাকা কলেজের আমার সবচেয়ে প্রিয় জায়গা ছিল পুকুরপাড়। পাশের মাঠটাও। শীতকালে খুবই ভাল লাগত কুয়াশায় মাঠটাতে হাঁটতে (শুধু ফার্স্ট ইয়ারে পেরেছি)। পুকুরপাড়ে ছিল ঢাকা কলেজের একমাত্র ক্যান্টিন। ক্যান্টিনের খাবারের কোয়ালিটি খুবই নোংরা ছিল, তাও বিপদে পড়ে প্রায় সবাই যেত।

কি করবে, আশেপাশের অন্য সব খাবারের দোকান বেশ দূরে। দুপুরে খাওয়ার জন্য রোজরোজ নীলক্ষেতে যেতে কার ভাল লাগে? যাই হোক, আমাদের সেই সবেধন নিলমণি ক্যান্টিন হঠাৎ বন্ধ হয়ে গেল দীর্ঘদিনের জন্য। ফার্স্ট ইয়ারের শেষের দিকের ঘটনা। আমরা অনেকেই বেশ ভাল বিপদে পড়লাম। কোনদিন নীলক্ষেতে যাই (বিপদে পড়লে মানুষ সবই করে), সায়েন্স ল্যাবে যাই।

দুপুরের কড়া রোদ, উপায় কি? রোজ ল্যাব থাকত না, কিন্তু আমরা বেশ কয়েকজন ছিলাম, দুপুরে টিচারদের কাছে পড়া থাকত, একবারে সব সেরে বাড়ি ফিরতাম। বাসা বেশ দূরে, উপায়ও নেই। মাস দুয়েক পর কারণ জানতে পারলাম বন্ধ হওয়ার, ছাত্রলীগের চাঁদা মেটানো নিয়ে কি একটা ঝামেলা হয়েছে, তখন যারা মেইনটেইন করত ওরা কলেজের ধারেকাছে আসতে সাহস পায় না। তাই ক্যান্টিন বন্ধ! ঢাকা কলেজে আমরা যখন পড়ি মোট হল ছিল ৬টা, নর্থ, সাউথ, ইন্টারন্যাশনাল,...বাকিগুলোর নাম এখন মনে নেই। এর মধ্যে একটা হলে সম্ভবত সাউথ হলেই সব বড় নেতারা থাকতেন! তাদের কাজকর্মে মাঝেমাঝে আতংক সৃষ্টি হত হলে।

একদিন বেলা ১২টার দিকে হলে যেয়ে দেখি, হলের প্রায় সবাই ঘুমে। কি ব্যাপার! মজার ঘটনা! আগের রাতে হলে কোন বড় ভাইয়ের রুমে গুলির চালান এসেছে। কয়েকজন পাতিনেতা রাতে অনেকক্ষণ বারান্দায় জমা বৃষ্টির পানিতে শুট করেছে বন্দুক দিয়ে। কোন সুস্হ মানুষের পক্ষে ঘুমান সম্ভব এই পরিস্হিতিতে? আল্লাহর শুকরিয়া আমি হলে থাকতাম না। ঢাকা কলেজে আমার নিজের আরেকটা জায়গার প্রতি ব্যাপক আগ্রহ ছিল, কলেজের লাইব্রেরি।

তখন ইন্টারে পড়তাম, কলেজ ছিল অনার্স/মাস্টার্স লেভেলের; বইয়ের কালেকশন আমার জন্য অসাধারণ তো লাগবেই। আমি তখন ফিজিক্সের কঠিন পোকা ছিলাম, স্পেশালি নিউক্লিয়ার ফিজিক্সের যা পেতাম তাই পড়তাম। লাইব্রেরিতে সেধরণের কিছু বই ছিল, কাজেই প্রায়ই লাইব্রেরিতে চলে যেতাম। এখন সেই লাইব্রেরি কেমন লাগবে আমি জানিনা, তবে তখন আমার খুব প্রিয় একটা জায়গা ছিল। কিছু মিথলজির বইও ছিল, এক বন্ধু একদিন দেখিয়েছিল, কারা জানি সেই বইয়ে আদি রসের ঝোল লাগিয়ে কমেন্ট লিখে গেছে বিভিন্ন ইলাস্ট্রেশনের পাশে।

বাঙ্গালি! যাই হোক, লাইব্রেরির কারণে একবার বেঁচে গিয়েছিলাম। হঠাৎ করে একদিন ছাত্রলীগের দুই গ্রুপের মারামারি হয়েছিল কলেজে, অনেকেই মার খেয়েছিল এক্সিডেন্টলি (পুরান আমলের সলিড ক্রসফায়ার আরকি), লাইব্রেরিতে বসে ফিউশন ঘটাচ্ছিলাম, টের পাইনি! যথারীতি তখনও ছাত্রলীগের দুইটা গ্রুপ ছিল ঢাকা কলেজে- সভাপতি গ্রুপ, সেক্রেটারী গ্রুপ। আমরা যখন ভর্তি হই সভাপতি ছিলেন পলাশ সম্ভবত। তিনি গত বিএনপি আমলে মারা যান (স্বাভাবিক মৃত্যু ছিলনা, ক্রসফায়ারে না কোন এক সংঘর্ষে পরে মারা যান, কারণ এখন ঠিকমত মনে নেই)। ফার্স্ট ইয়ারে ভর্তি হওয়ার কিছু দিন পর, দেশে বন্যা চলছে।

একদিন কলেজের ছাত্রলীগের হোমরাচোমড়া-রা এল ক্লাসে -এসে বন্যার্তদের জন্য চাঁদা চাইল। ওরা নাকি লঞ্চে করে সাহায্য করতে যাবে। ঢাকার কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগ হলেও একটা কথা ছিল, এরা যাবে? ভাল। তখন আবার মানুষকে বেশি খোঁচাতাম, ক্লাশে সবার সামনেই ডেকে বললাম 'ভাইয়া আপনারা কি রিসেন্টলি যাবেন?' নেতাজীরা আমার ডাকে মনে করেছিল টাকা দেব মনে হয়, এটা জানতে চাওয়াতে দেখলাম চেহারা পাল্টে গেল। তবে বড় নেতাজী বললেন, 'হ্যাঁ ভাইয়া, আমরা শিঘ্রী যাবো।

' ওরা চলে যাওয়ার পর আমার ফ্রেন্ডরা আমাকে ঝাড়ল 'বেকুব নাকি, এদের ঘাটাতে গেছিস? তুই পারবি এদের সাথে?' তখন কিছুটা টেনশনই লাগল, আসলেই তো। এরপর সেদিন যতবার ক্লাশে অপরিচিত কেউ উঁকি দেয়, খালি মনে হয়, আমি ক্লাসে আছি কিনা চেক করতে এসেছে। যাই হোক, নেতাজীরা অবশ্য পরে আমার উপর ঝাঁপিয়ে পড়েনি। তবে, তারা লঞ্চ নিয়ে ত্রাণ বিতরণেও যায়নি কোন ছাত্রলীগের কেউই না। পলিটিকস নিয়ে আরো কিছু কথা আছে সেগুলো পরে বলব।

ঢাকা কলেজের আরেকটা বিখ্যাত জিনিস নিয়ে একটু মজা করে যাই। সেটা হচ্ছে ইন্টারের সাজেশন। কলেজে ভর্তির আগে থেকেই ঢাকা কলেজের দুইটা জিনিসের কথা শুনতাম- পলিটিকস আর ইন্টারের সাজেশন। সবাই বলত, ঢাকা কলেজের টিচাররাই বোর্ডের প্রশ্ন করে, এবং ফাইনালের আগে একটা লাস্ট মডেল টেস্ট হয় কলেজে, সেটাতে যারা প্রথমদিকে থাকে, তাদের একটা স্পেশাল সাজেশন দেয়া হয়, খুবই শর্ট, সেটার একটা কি দুইটা প্রশ্ন ছাড়া কিছুই নাকি ফাইনালে বাদ পড়েনা। সাবজেক্টওয়াইজ টিচার-রা আলাদা আলাদা সাজেশন দেন, টপ সিক্রেট রাখতে হয় - আজ পর্যন্ত সেটার কোন প্রশ্ন মিস যায়নি,....ইত্যাদি, ইত্যাদি।

সত্যি/মিথ্যা আমিও নিজেও শিওর করে বলতে পারবনা। তবে এই ব্যাপারে আমার নিজস্ব অভিমত হচ্ছে এত ফাঁকিবাজের কলেজে যে কয়জন প্রথমদিকে থাকে, তারা আসলেই জিনিয়াস থাকে (পুরান ব্যাচগুলোর কথাও শুনেছি/দেখেছি, নিজের ব্যাচে তো নিজেই দেখলাম)। এদের যদি আবার সাজেশনও দিয়ে দেয়া হয়, কোনভাবেই তো এদের প্রথম দশের বাইরে যাওয়ার কথানা। আরও পরিস্কার করে বললে, স্ট্যান্ডের বিশজনই তো ঢাকা কলেজের হওয়ার কথা। হয় না কেন? ধরলাম মেট্রিকে সারাদেশ থেকে ৫০ জন স্ট্যান্ড করা ঢুকল কলেজে।

স্রোতে গা ভাসিয়ে ২০জন হারিয়ে গেল। বাকিদের তো স্ট্যান্ড করার কথা ছিল, তারা করল না কেন? এরকম সাজেশন থাকলে হয় কিভাবে? নিজের কথা একটু বলি। আমি সারা জীবনই মধ্যম সারির স্টুডেন্ট। ঢাকা কলেজে অনেকেই পরীক্ষায় আসত না, তাই কিছুটা সামনে এসেছিলাম, তাও বলার মত না (বাঘ নাই বনে শেয়াল রাজা আরকি)। প্রথমদিকের বেশ কয়েকজনের সাথে বেশ ভাল যোগাযোগ ছিল তখন।

কারো কাছেই এ জাতীয় কোন সাজেশনের খবর শুনিনি। নাকি নম্বরের শেষ ব্যাচে এই সিস্টেম বন্ধ হয়ে গিয়েছিল? ফাইনাল মডেল টেস্ট কলেজে যেটা হয়, সাইন্সে টোটাল দিয়েছিল ৯০ জন। রেজাল্টে আমি ২০ জনের মধ্যে এসে পড়েছিলাম। আমি তো কারও কাছে এই ধরণের কোন সাজেশনের খবর পেলাম না। তাহলে কোথায় গেল সেই সাজেশন? আমাদের আগের ব্যাচেও সেইম কেস, মাত্র ১জন স্ট্যান্ড সাইন্সে, সাজেশন থাকলে ১জন হয় কিভাবে? আরেকটা শক্ত লজিক দেই।

আমাদের ব্যাচে একজন বিভাগীয় প্রধানের ছেলে পড়ত। সে এসএসসিতে প্লেস করে আসা, কলেজের ভেতরের পরীক্ষাগুলোতেও বেশ ভাল রেজাল্ট করছিল (প্রথম চারজনের মাঝেই থাকত)। এধরণের সাজেশন যদি কোথাও দেয়া হত, সবার আগে অবশ্যই ও পেত। প্রশ্ন হচ্ছে, ও তাহলে ইন্টারে স্ট্যান্ড করতে পারল না কেন? যাই হোক, সাজেশনের কথা এত বেশি প্রচার হত, যে প্রথমদিকে যারা থাকত, তাদের মাথা নষ্ট করে ফেলত সবাই সাজেশনের জন্য। ফাইনালের পর, আমাকে আমার বেশ কিছু বন্ধু চেপে ধরল, আমি সাজেশন অবশ্যই পেয়েছি আমি যেন অবশ্যই শেয়ার করি।

মরা জ্বালা। যেটা নাই, কোথাকে দেব? তো তখন সবাইকে বলতাম 'আমি তো দশের মধ্যে ছিলামনা, স্যার-রা আমাকে দেন নাই!' তাও মানতে চাইত না। তবে কপাল সবচেয়ে খারাপ ছিল আমাদের ব্যাচের অন্য একটা ছেলের। সে ফাইনাল মডেল টেস্টে সম্ভবত সেকেন্ড বা থার্ড হয়েছিল, আমার এক ফ্রেন্ড তাকে ফোন করে করে পাগল বানিয়ে ফেলেছিল সাজেশনের জন্য। কোন কিছুতেই তার বিশ্বাস হয় না, যে কোন সাজেশন দেয়া হয়নি।

আমিও নিজেও আমার ঐ ফ্রেন্ডকে বুঝিয়েছি, কোন লাভ হয়নি। শেষে ঐ ছেলে পরীক্ষার আগের দুই সপ্তাহ ফোনের প্লাগ খুলে রেখেছিল। বি.দ্র: পলিটিকসের ব্যাপারে আরো কিছু কথা সামনে যোগ হবে (ছাত্রদলের সোনার ছেলেদের সামান্য কীর্তি আরকি)! আর আমার সামান্য বাঁদরামি। আপনাদের কথাও শেয়ার করুন আমার সাথে। ধন্যবাদ সবাইকে।


অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।