আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

যশোরে ছাত্রলীগ নেতা খুন

সৈয়দ মুতনু

জেলা ছাত্রলীগের কাউন্সিলে গুলি ও বোমার পর সংঘর্ষ ছড়িয়ে পড়েছে পাড়া-মহলল্গায়। প্রতিপক্ষের হাম-লায় গতকাল রোববার সন্ধ্যায় নিহত হয়েছেন সদর উপজেলা ছাত্রলীগের আহ্বায়ক রিপন হোসেন দাদা (৩৫)। এর আগে সারাদিনে প্রতিপক্ষের হামলার শিকার হয়েছেন আওয়ামী লীগ ও অঙ্গ সংগঠনের আরও তিন নেতাকর্মী। এদের মধ্যে শহর আওয়ামী লীগের সদস্য রবিউল আজিজ তপুর অবস্থা সংকটাপন্ন। হতাহতরা সবাই রাজু-চাকলাদার গ্রুপের।

রিপন নিহত হওয়ার পর সন্ধ্যায় এ রিপোর্ট লেখা পর্যন্ত শহরে বিক্ষোভ মিছিল ও ভাংচুর চলছিল। ছাত্রলীগের কাউন্সিলকে ঘিরে পাড়ায়-মহলল্গায় ছড়িয়ে পড়া সংঘর্ষে জড়িয়ে পড়েছে স্থানীয় আওয়ামী লীগ ও যুবলীগের নেতাকর্মীরা। জেলা আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে বলা হচ্ছে, দলের বর্তমান কমিটিকে অকার্যকর করতে এ হামলা-সংঘাত ছড়িয়ে দেওয়া হচ্ছে। অপর গ্রুপের অভিযোগ, জেলা আওয়ামী লীগের বর্তমান কমিটির একগুঁয়েমির কারণে ছাত্রলীগের কাউন্সিলে অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটেছে। পণ্ড হয়ে গেছে কাউন্সিল।

এদিকে শনিবার রাতে ছাত্রলীগের কাউন্সিলকে ঘিরে দলীয় কার্যালয়সহ আশপাশ এলাকায় বোমাবাজি ও গুলিবর্ষণের ঘটনায় কোতোয়ালি থানা পুলিশের এসআই মিজানুর রহমান মিজান বাদী হয়ে মামলা দায়ের করেছেন। অন্ধকারের কারণে হামলাকারীদের চিহ্নিত করা সম্ভব হয়নি বলে মামলার এজাহারে উলেল্গখ করা হয়েছে। কোতোয়ালি থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) আবদুল কাদের বেগ জানান, মামলায় উভয়পক্ষের পাঁচশ' জনকে আসামি করা হয়েছে। শনিবার রাতে বোমা-গুলি ও ইটপাটকেলের আঘাতে পুলিশ-পথচারীসহ অন্তত ৪০ জন বিভিন্ন হাসপাতাল থেকে চিকিৎসা নিয়েছেন। এদের মধ্যে ১৫ জন ভর্তি রয়েছেন জেনারেল হাসপাতাল ও বিভিন্ন বেসরকারি ক্লিনিকে।

আহতের তালিকায় আছেন কোতোয়ালি থানার ওসি আবদুল কাদের বেগসহ চার পুলিশ, জেলা আওয়ামী লীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক শরীফ আবদুর রাকিব, সাংসদপুত্র মাসুক হাসান জয়সহ দু'গ্রুপের নেতাকর্মীরা। নিহতের চাচা রবিউল ইসলাম জানান, সদর উপজেলা ছাত্রলীগের আহ্বায়ক রিপন হোসেন দাদা রোববার সন্ধ্যায় মোটরসাইকেলযোগে নিজ গ্রাম সদর উপজেলার এড়েন্দা থেকে শহরে আসছিলেন। ভেকুটিয়া জামতলা মোড়ে পেঁৗছলে সেখানে ওত পেতে থাকা হাফিজ, ইকবাল ও মিকাঈলের নেতৃত্বে দুর্বৃত্তরা তাকে এলোপাতাড়ি কুপিয়ে রক্তাক্ত করে। দ্রুত তাকে যশোর জেনারেল হাসপাতালে নেওয়া হলে কর্তব্যরত চিকিৎসক মৃত ঘোষণা করেন। নিহত রিপন জেলা ছাত্রলীগের কাউন্সিলে সাধারণ সম্পাদক প্রার্থী ছিলেন।

পরে বিজু-ফয়সাল পরিষদকে সমর্থন দিয়ে তিনি প্রার্থিতা প্রত্যাহার করে নেন। সদর উপজেলা আওয়ামী লীগের দফতর সম্পাদক সুলতান মাহমুদ বিপু অভিযোগ করেন, হামলাকারীরা সাংসদ টিটো গ্রুপের ক্যাডার। কোতোয়ালি থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) আবদুল কাদের বেগ জানিয়েছেন, খুনিদের আটকের জন্য অভিযান চলছে। এর আগে দুপুরে শহরের রেলগেটে হামলার শিকার হন আওয়ামী লীগ নেতা রবিউল আজিজ তপু। এ সময় তার সঙ্গে থাকা আরেক নেতা কাজী শহীদুল হক শাহিন পালিয়ে রক্ষা পান।

জেনারেল হাসপাতালে নেওয়ার পর আহত তপু জানান, রেলগেট এলাকার চিহ্নিত মাদক ব্যবসায়ী শিকদার ও লুতুর নেতৃত্বে এমপি গ্রুপের ক্যাডাররা তাকে ছুরিকাঘাত ও কুপিয়ে জখম করে। তার দেহে অস্ত্রোপচারকারী চিকিৎসক ডা. কামরুল ইসলাম বেণু ও ডা. আফজাল হোসেন জানান, তপুর অবস্থা এখনও সংকটাপন্ন। এদিন সকালে শহরের রায়পাড়ায় একই গ্রুপের হাতে আহত হন জেলা যুবলীগের যুগ্ম সম্পাদক আজহার হোসেন স্বপন ও শহর স্বেচ্ছাসেবক লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক মনোয়ার হোসেন জনি। শনিবার গভীর রাতে তিনটি শক্তিশালী বোমার বিস্টেম্ফারণ ঘটানো হয় শহর আওয়ামী লীগের যুগ্ম সম্পাদক ইমাম হাসান লালের ষষ্ঠিতলা পাড়ার বাড়িতে। এসব হামলার প্রতিবাদে গতকাল দুপুরে জেলা ছাত্রলীগ-যুবলীগের ব্যানারে রাজু-চাকলাদারের অনুসারীরা শহরে বিক্ষোভ মিছিল বের করে।

এদিকে রাজু-চাকলাদার সমর্থিত জেলা ছাত্রলীগের সভাপতি প্রার্থী লুৎফুল কবির বিজু ও সাধারণ সম্পাদক প্রার্থী ফয়সাল খান দাবি করেছেন, ছাত্রলীগের কাউন্সিলকে ঘিরে একটি পক্ষ বিএনপি-জোটের চিহ্নিত ক্যাডারদের জড়ো করেছিল। তারা গত দু'দিন ধরে চালানো তা বে অংশ নেয়। তারা আওয়ামী লীগ ও ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় নেতাদের নাম ধরে অশোভন স্লোগান দেয়। তবে জেলা বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক দেলোয়ার হোসেন খোকন জানিয়েছেন, তার দলের কোনো কর্মী আওয়ামী লীগের অভ্যন্তরীণ সংঘর্ষে জড়িত থাকলে তদন্ত করে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক শাহীন চাকলাদার দাবি করেছেন, জেলা আওয়ামী লীগের বর্তমান কমিটিকে অকার্যকর করতে আওয়ামী লীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক শরীফ আবদুর রাকিব ও সদর আসনের সাংসদ খালেদুর রহমান টিটো ষড়যন্ত্র চালিয়ে যাচ্ছেন।

এ ষড়যন্ত্রের ধারাবাহিকতায় যশোরে সংঘাতময় পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়েছে। অপরদিকে এ অভিযোগ অস্বীকার করে শরীফ আবদুর রাকিব পাল্টা অভিযোগ করেন, শনিবার রাতে সংঘর্ষের পর শাহিন চাকলাদারের পোষ্য চরমপন্থি ক্যাডার বিলল্গাল তাকে গুলি করার চেষ্টা করে। তার দাবি, বর্তমান কমিটির এক নেতার একগুঁয়েমির কারণে এ সংঘর্ষের সূত্রপাত হয়। তারা মাদ্রাসার ভুয়া সার্টিফিকেটধারী অছাত্রদের জেলা ছাত্রলীগের শীর্ষ পদে বসানোর অপচেষ্টা চালান। এ খবর প্রকাশিত হয়ে পড়ায় প্রকৃত ছাত্ররা ক্ষুব্ধ হয়।

অপরদিকে এমপি টিটো সমর্থিত সভাপতি প্রার্থী মহিউদ্দিন আহমেদ মুক্ত ও সাধারণ সম্পাদক প্রার্থী হালিম বিশ্বাস গতকাল দুপুরে সংবাদ সম্মেলন করে জানিয়েছেন, তাদের প্রতিপক্ষ সভাপতি প্রার্থী লুৎফুল কবীর বিজু ও সাধারণ সম্পাদক ফয়সাল খানের বয়স ২৯ বছরেরও বেশি এবং দু'জনই অছাত্র। এ ব্যাপারে তারা কেন্দ্রীয় নেতৃবৃন্দের কাছে অভিযোগ করলেও তা গ্রাহ্য করা হয়নি। বিক্ষুব্ধ কর্মীরা এর বিরুদ্ধে স্লোগান দিলে সন্ত্রাসীরা বোমা বিস্টেম্ফারণ ঘটায়।

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।