আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

ব্যর্থ ক্যারিয়ারের অব্যর্থ কারণ



ব্যর্থ ক্যারিয়ারের অব্যর্থ কারণ • ক্যারিয়ারে সফল হতে হলে আমাকে ডাক্তার, ইঞ্জিনিয়ার বা এমবিএ করতে হবে প্রচলিত ধারণা হলো, সফল ক্যারিয়ার মানেই ডাক্তার, ইঞ্জিনিয়ার বা বিজনেস এক্সিকিউটিভ হওয়া। কিন্তু কজন ছাত্রছাত্রী এসব সাবজেক্টে পড়ার সুযোগ পায়? আর সুযোগ পেলেও তাদের কজন প্রথমসারির ডাক্তার, ইঞ্জিনিয়ার বা এক্সিকিউটিভ হয়? প্রথমটি কম এবং পরেরটি তার চেয়েও কম। আর তাছাড়া আজ যা সবচেয়ে আকর্ষণীয়, কাল তা সবচেয়ে অনাকর্ষণীয়ও হতে পারে। কাজেই আপনি ডাক্তারি, ইঞ্জিনিয়ারিং বা এমবিএ করতে পারেন নি বলে হতাশ হওয়ার একটি কারণও নেই। বরং আশাবাদী হওয়ার কারণ আছে অনেকগুলো।

কারণ সবাই যার জন্যে প্রতিযোগিতা করছে তার চেয়ে আলাদা হয়ে অপেক্ষাকৃত সহজ প্রতিযোগিতার মধ্য দিয়ে আপনি অন্য ক্যারিয়ারের শীর্ষ সাফল্য অর্জন করতে পারেন। আর যেকোনো পেশায়ই সাফল্যলাভ সম্ভব। আপনি সবচেয়ে বেশি আনন্দ পান এমন কোনো কাজ করে যদি দৈনন্দিন জীবনে সচ্ছলভাবে চলার মতো উপার্জন করা যায় তাহলে সে কাজটিই আপনার কর্মজীবনের জন্যেবেছে নিতে পারেন। আসলে জীবিকার জন্যে যেকোনো কিছু করতে পারেন যদি তা সৎ, আন্তরিক ও পরিশ্রমলব্ধ উপার্জনের উৎস হয়। সেক্ষেত্রে কোনো কাজই ছোট নয়।

কোনোকাজেই অসম্মানিত বা হীনম্মন্য বোধ করার কিছু নেই। আর মেধার বিকাশের মাধ্যমে সেবার নিয়তে যখন আপনি কাজ করবেন তখন বৈষয়িক প্রাপ্তির পাশাপাশি এ কাজ থেকে মানসিক ও আত্মিক তৃপ্তিও আপনি পুরোপুরি পাবেন। সে কাজই আপনাকে অমর করবে। • ডাক্তার, ইঞ্জিনিয়ার বা এমবিএ না হলেও কমপক্ষে একটা ইউনিভার্সিটি থেকে ডিগ্রি নিতে হবে ইউনিভার্সিটি থেকে নিদেনপক্ষে একটা ডিগ্রি নিতেই হবে এ মানসিকতার কারণে আমরা এমনকি পছন্দের সাবজেক্ট না হলেও তাতে ভর্তি হই, এমন বিষয়ে অনার্স পড়ি যার সাথে বাস্তব বা বর্তমান দুনিয়ার কোনো সম্পর্ক নেই, না তা লাগাতে পারি চাকরির কোনো কাজে। এটি ভ্রান্ত দৃষ্টিভঙ্গি।

কারণ শুধু ডিগ্রি অর্জন এবং জ্ঞানার্জনের মধ্যে ব্যবধান অনেক। • সরকারি চাকরি ভালো কারণ তাতে স্থায়িত্ব আছে চাকরিতে স্থায়িত্ব খুঁজতে গেলে আপনার কাজে স্বকীয়তা থাকবে না, তৃপ্তি এবং সাফল্য বলতে যা বোঝায় তা আপনি পাবেন না। আর জীবনেরই যেখানে স্থায়িত্ব বা নিরাপত্তা নেই, সেখানে চাকরির স্থায়িত্ব বা নিরাপত্তা কীভাবে হবে? কাজেই সাহসী হোন, আত্মবিশ্বাসী হোন। নিজেকে প্রমাণ করতে ভয় পাবেন না। তাহলেই আপনি সফল হবেন।

• ভালো বেতনের চাকরি না পাওয়া পর্যন্ত আমি কোথাও ঢুকবো না ডাক্তারি, ইঞ্জিনিয়ারিং বা এমবিএ করার পর তরুণ-তরুণীরা সাধারণভাবে চিন্তা করে, খুব ভালো বেতনের চাকরি ছাড়া আমি কোথাও ঢুকবো না। ফলে দেখা যায়, পাশ করার পর অনেক সময় পেরিয়ে গেলেও চাকরি হচ্ছে না। এটি আসলে ভুল ধারণা। শুরু করা উচিৎ গ্রাউন্ড জিরো থেকে। কারণ নিয়োগকর্তার কাছে বেকার থাকাটাই প্রার্থীর একটি দুর্বল দিক বলে গণ্য হয়।

তাই ছাত্রত্ব শেষ করে প্রথম সুযোগেই ক্যারিয়ার শুরু করে দেয়া উচিত এবং ভালো সুযোগের সন্ধানে ক্রমাগত চেষ্টা করা উচিত। আর আপনি যখন একটি চাকরিতে থাকবেন তখনই আপনি আরো ভালো চাকরির সুযোগ পাবেন। আর কিছু কিছু ক্ষেত্রে ছোট সুযোগ থেকে শুরু করাটা ক্যারিয়ারে আরো অনেক বড় সুযোগ এনে দেয়ার জন্যেই জরুরি। যেমন, আমেরিকার বর্তমান প্রেসিডেন্ট ওবামা গ্রাজুয়েশন করেছিলেন হার্ভার্ড ল’ স্কুল থেকে। কিন্তু তার সহপাঠীদের মতো তিনি খুব নামীদামী কোনো ল’ ফার্মে যোগ দিতে পারতেন।

কিন্তু তা না করে তিনি খুব কম বেতনের একটা ফার্মে ঢুকলেন। কারণ সেখানে ছিলো রাজনৈতিক যোগাযোগের সুযোগ। আজ তিনি বিশ্বের সবচেয়ে বড় শক্তিধর দেশের রাষ্ট্রপতি। কাজেই উপার্জনের জন্যে মরিয়া হবেন না। সময়মতোই তা আপনার বরাতে জুটবে।

• এতগুলো সিভি ড্রপ করেও আমার কিছু হলো না, আর অমুক তো মামার জোরে চাকরি পেয়ে গেল! সারা বিশ্বেই এটা একটি স্বভাবকি বাস্তবতা যে সিভি ড্রপ করে নয়, চাকরি হয় যোগাযোগের সূত্রেই। এটাকে মামার জোর না ভেবে জনসংযোগ দক্ষতা হিসেবে দেখুন যা ক্যারিয়ারে ভালো করার একটি গুরুত্বপূর্ণ শর্ত বটে। আর কোনো মামার প্রয়োজন নেই, আপনি নিজেই পারেন এ জনসংযোগ দক্ষতা গড়ে তুলতে। • অমুকের চেয়ে ভালো রেজাল্ট নিয়েও আমার চাকরি হলো না, ওর হলো - এটা ঠিক না চাকরির জন্যে ভালো রেজাল্ট ছাড়াও প্রয়োজন আরো কিছু গুণাবলি। এর মধ্যে রয়েছে আত্মবিশ্বাস, আকর্ষণীয় উপস্থাপন এবং ব্যক্তিত্বের বলিষ্ঠতা যা ইন্টারভিউ বোর্ডকে আশ্বস্ত করবে।

কাজেই এ গুণাবলিকে আয়ত্ত করুন। • বসের চাটুকারিতা করতে পারে বলে অমুকদের প্রমোশন হয়েছে, আমার হয় নি বস বা প্রতিষ্ঠানের চাকরগিরি হচ্ছে চাকরি- এটাই হচ্ছে বাস্তবতা। তাই চাকরিতে যতক্ষণ আছেন, মনে রাখতে হবে ‘বস ইজ অলওয়েজ রাইট’। কাজেই চাকরি সংক্রান্ত প্রতিটি কাজে বসের পূর্ণ আনুগত্য করুন। জানতে না চাইলে বসের সিদ্ধান্ত বা নির্দেশের বিরোধিতা করবেন না।

বস ঠিক নয় বা আমি বসের চেয়ে ভালো জানি- এমন ধারণা ত্যাগ করুন। চাকরিজীবী হিসেবে আপনার ভূমিকা হচ্ছে কেবল আজ্ঞা পালনকারী মাত্র। তাহলেই আপনি বসের আনুকূল্য লাভ করবেন। কারণ শুধু যোগ্যতা নয়, চাকরিতে পদোন্নতির জন্যে বস বা ঊর্ধ্বতনের সন্তুষ্টি ও অনুমোদনও আপনার প্রয়োজন। অতএব নীতিগত বিষয় ছাড়া অন্য সবক্ষেত্রে বসের সঙ্গে একমত থাকুন।

আর বসকে তার যোগ্যতা ও গুণাবলির ভিত্তিতে বাস্তবসম্মত প্রশংসা করুন। কারণ যুক্তিসঙ্গত প্রশংসা আর তোষামোদ বা চাটুকারিতা এক নয়। • ভালো চাকরির সুযোগ আমার আছে কিন্তু আমাকে এখানে থাকতে হবে চাকরিতে নিয়োগকর্তা আপনাকে করুণা বা ভিক্ষা দিচ্ছেন না। আপনার শ্রম ও মেধার বিনিময়ে শুধুমাত্র মূল্য পরিশোধ করছেন। কাজেই আপনার শ্রমের যথাযথ মূল্যায়ন হবে- এমন প্রতিষ্ঠানেই তা বিক্রি করুন।

আর শ্রমের ন্যায্য বিক্রয়মূল্য ঠিক করতে কখনোই সংকোচ করবেন না। প্রয়োজনে অন্যান্য প্রতিষ্ঠানে এ জাতীয় কাজের পারিশ্রমিক সম্পর্কে খোঁজ নিন। সুযোগ-সুবিধা বেশি পেলে প্রথম সুযোগেই বর্তমান চাকরি ছেড়ে দিন। • ক্যারিয়ার মানেই চাকরি ক্যারিয়ার মানেই চাকরি - পেশাগত ক্ষেত্রে এ ভ্রান্ত দৃষ্টিভঙ্গির মূলে রয়েছে ঔপনিবেশিক শাসনামল থেকে পাওয়া আমাদের ভ্রান্ত জীবনদৃষ্টি। ৪০০ বছর আগের যে সমৃদ্ধ জনপদের মানুষের পেশাগত দৃষ্টিভঙ্গি ছিলো স্বাধীন কৃষি বা শিল্পপণ্য উৎপাদন, সাগর-মহাসাগর পাড়ি দিয়ে বিশ্ববাণিজ্যে অংশগ্রহণ; তারাই বিদেশি প্রভুদের করায়ত্ত হওয়ার কয়েক বছরের মধ্যে পরিণত হলো কূপমণ্ডূক, ছাপোষা, সংকীর্ণ দৃষ্টিভঙ্গির মানুষে।

শোষকের সহযোগী হিসেবে সে তার স্বজাতির ওপরই উৎপীড়ন চালাতে লাগলো। ভারত ভাগ হওয়ার পর দৃষ্টিভঙ্গি একই থাকলো। শুধু আকাঙ্ক্ষাটা বদলালো কেরানির বদলে অফিসার পদের প্রতি। আর বাংলাদেশ হওয়ার পর এখন সে আর শোষকের সহযোগী নয়, সরাসরি শোষক হিসেবেই দমন-পীড়ন করছে, অবৈধ উপার্জনের পাহাড় গড়ে ভোগ-বিলাসে মত্ত হচ্ছে। এর সঙ্গে ৯০-এর দশকে এসে তরুণ প্রজন্মকে বিভ্রান্ত করতে লাগলো পাশ্চাত্য মিডিয়া প্রচারিত ভোগবাদী জীবনদৃষ্টি এবং এর সাথে পাল্লা দিয়ে মাল্টিন্যাশনাল কোম্পানির বেশি বেতনের চাকরির মরীচিকা।

কিন্তু এ ভ্রান্ত দৃষ্টিভঙ্গি বদলে যদি কেউ স্বাধীন পেশায় উদ্বুদ্ধ হতে পারেন, যদি নিজস্ব কোম্পানি বা সেবামূলক প্রতিষ্ঠান গড়তে পারেন, তাহলে পেশাজীবনের আনন্দ তাতে নিঃসন্দেহে বাড়বে। • ব্যবসায় করতে চাই, পুঁজি-ডিগ্রি এসব তো আমার নেই! ব্যবসায় সাফল্যের মূল উপাদান পুঁজি নয়, পরিশ্রম এবং কলা-কৌশল। যদি আপনার নিজের সামর্থ্যের ওপর আপনার আস্থা থাকে, পরিশ্রম করার মানসিকতা থাকে, তাহলে যেকোনো স্বাধীন ব্যবসা আপনি বেছে নিতে পারেন। দেশ-বিদেশের বড় বড় ব্যবসায়ী, শিল্পপতিরা সবাই শুরু করেছিলেন ছোট থেকে। কঠোর পরিশ্রম এবং বহুতর ব্যবসায়িক কলা-কৌশল অবলম্বন করেই তারা সফল হয়েছেন।

সেই সাথে প্রয়োজন ভালো মানের পণ্য সরবরাহ করে ক্রেতা সন্তুষ্টি অর্জন এবং ক্রেতার সাথে দীর্ঘমেয়াদী সম্পর্ক সৃষ্টি। • জমানো টাকা দিয়ে ব্যবসা শুরু করা শুধু পুঁজি দিয়ে ব্যবসায়ে সফল হওয়া যায় না। যে কারণে দেখা যায়, সারাজীবন চাকরি বা কোনো স্থায়ী পেশায় কাটিয়ে অবসরগ্রহণের পর জীবনের সব সঞ্চয় দিয়ে কোনো ব্যবসায়ে নেমেছেন এবং খুইয়েছেন সর্বস্ব| • সাফল্য মানে অল্প আয়াসে টাকা কামানো ক্যারিয়ার সাফল্যের কোনো শর্টকাট নেই। কাজেই অল্প আয়াসে কেউ যদি টাকা কামাতে চান, হয় তাকে হতাশ হতে হবে অথবা অবৈধ পথে যেতে হবে। আর মাল্টিন্যাশনাল কোম্পানির সিইও বা সিওও-দের যারা আমাদের অনেক তরুণ-তরুণীরই ক্যারিয়ার সাফল্যের মডেল তাদের দিকে যদি তাকান, দেখবেন তাদের জীবনে কাজ ছাড়া কিছু নেই।

অল্প আয়াসে বা অল্প দিনে কখনো সাফল্য আসে না। • অনেক অর্থ খ্যাতি বা ক্ষমতা পেলেই আমি সুখী হবো অনেক অর্থ খ্যাতি বা ক্ষমতা অর্জন করলেই সুখী হওয়া যায় না। সুখী হওয়ার সাথে বা প্রশান্তি অর্জনের সাথে এ জিনিসগুলোর ব্যাবধান বিস্তর। তা নাহলে আমেরিকায় বিষণ্নতায় ভোগা এবং আত্মহত্যাপ্রবণ পেশার র্যাং কিংয়ে সিইও-রা ওপরে থাকতেন না। শীর্ষে পৌঁছানো মানেই মানসিক পরিতৃপ্তি, সুখ বা প্রশান্তি নয়।

গবেষণায় দেখা গেছে যে পেশায় মানুষের সেবা করার সুযোগ রয়েছে সেসব পেশায় নিয়োজিতদের মানসিক তুষ্টির পরিমাণ অনেক বেশি। কাজেই শীর্ষে পৌঁছানোর ইঁদুর দৌড়ে না নেমে সেবার মানসিকতা নিয়ে কাজ করুন। আপনি সুখী হবেন। (এই লেখাটির পেছনের মূল অবদান দিতে হবে কোয়ান্টাম মেথড কে, আমি উছিলা মাত্র। )


সোর্স: http://www.somewhereinblog.net     দেখা হয়েছে ১২ বার

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.