আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

ডিয়ার ডায়েরি

আর আমরা করি খামার

আজ দুপুরে খেতে বের হয়ে দেখি অদ্ভুত সুন্দর ঝলমলে রোদ আর মিষ্টি বাতাস। হঠাৎ মনে হলো সিলেট গেলে কেমন হয়। কি আছে দুনিয়ায়। মাঝে মাঝে খুব পরিস্কার করেই বুঝতে পারি নিজের উপর ছাড়া আর কোনো কিছুর উপর আমার কোনো টান নেই তেমন। ট্রেনে করে যেতে ইচ্ছে করছে।

রিকশাওয়ালাকে বললাম কমলাপুর চলেন। ট্রেন কেমন ধীরে ধীরে যায়! ওভাবে অগাছোলো ভাবে কোথাও যেতে ইচ্ছা করছে। ট্রেনের স্যান্ডুইচ খেতে ইচ্ছা করছে। প্রতি স্টেশনে আবোল তাবোল খাবো না। খালি শুধু ট্রেনের খাবার সবগুলি খেয়ে ফেলবো।

কেমন মজার দিন, আমার কোথাও ফেরার নেই। আমার ফোন বন্ধ। কারো সাথে কথা বলার নেই। কোনো চাকরি নেই। না গেলে বস কিংবা পিয়ন খোজ নেয় না, কেনো ফাকি দিলাম।

সকালে যে খাইনি সেটা টাকা বাচানোর জন্য নয়, রাতেও আসলে বেড়াতে গিয়ে খাবার কথা ভুলে গেছিলাম। ওহ কাল রাতে কি দারুন আবহাওয়া ছিল এই ঢাকায়! সড়সড় করে পাতায় আওয়াজ হচ্ছিলো। বিশাল পাগুলে চাঁদ। অসভ্য রকমের চাঁদ একটা। ঘুরেছি আরাম করে, অন্ধকারে, ভয়ে ভয়ে, মনের সুখে।

রাতে ঘরে ফিরে কিছু খেতে ইচ্ছে হয়নি। রেলস্টেশনে ঘুরতেও চমৎকার। অযথাই খানিক এদিক ওদিক হেটে বেড়াতে ভালো লাগছিল। অনুসন্ধানে বললো সিলেটের ট্রেন দুপুরে দুইটায়। যদিও তখন পৌনে তিনটা তবু কিছুটা আশা মুঠোয় রেখে জিজ্ঞাস করলাম আজকেরটা ছেড়ে গেছে? হ্যা।

সিলেট যাওয়া তাহলে এখন হলো না। অন্য কোন ট্রেনে উঠে বসি? বসে ট্রেনের স্যান্ডুইচ খাই? বাসে যেতে ইচ্ছা করছে না। ট্রেনে চড়তে ইচ্ছা করছে। শান্তাহারে গেলে কেমন হয়? কখন ছাড়বে শান্তাহারের ট্রেন? কাউকে আবার প্রশ্ন করতে ইচ্ছা হলো না। বের হবার পথে পেপারের দোকানে তুমুল রাজনীতি চলছে।

একটা বোরখা পরা মেয়ে মাটিতে বসে কান্নাকাটি করছে। আমার মনে পড়লো বের হবার সময় একটা স্কুলের মেয়ে কে কাঁদতে দেখে মনে হয়েছিল আহা কি সুখ! এই চমৎকার রোদে দাড়িয়ে কারো সামনে কান্নাকাটি করা না জানি কত মজার! বোরখা পরা মেয়েটা শ্যামলা, হালকা-পাতলা মুখ, অল্প বয়স, সুন্দরী আর আকর্ষনীয়া। একটা লোক তার সামনে দাড়ানো। লোকটা ফর্সা বয়স্ক কিন্তু সুন্দর নয়। একটা লোক পাশে দাড়ানো শ্যামলা পাতলা চেহারা।

কেমন যেন নোঙরা আর অদ্ভুত দেখতে শ্যামলা লোকটা। ফর্সা লোকটা বলছে, ওঠ। মেয়েটা আমার দিকে দেখলো ভালো করে। চোখটা ছোটও না, বড়ও না। কিন্তু চোখটা অনেক কালো আর চোখে যেন অনেক কিছু আছে।

কি আছে তা আমি আর ঐসব লোকদের মাঝে দাড়িয়ে বোঝার চেষ্টা করলাম না। ভিক্ষুক একটা বুড়ো শোয়ার চেষ্টা করছিল, আমি ভাবছিলাম আমার মনোযোগ সেদিকে যায় না কেনো। বের হয়ে রিকশাওয়ালাকে বললাম নীরব হোটেল চানখারপুল যেতে। কমলাপুর থেকে বের হয়ে শহরটা যেন নতুনের মত লাগতে শুরু করেছে আবার। যেনো পুরাতন শহর শেষ হচ্ছে কোনো, সেই অদ্ভুত রোদ, সেই বড় বড় ফাকা ফাকা রাস্তা, সেই দুপুরের বাতাস, যেন কোনো প্রাচীন শৈশব জেগে উঠতে চায় লুকানো কোনো পুরাতন গলি থেকে।

বায়তুল মোকাররমের কাছে এলে একটু একেলে মেজাজ আসে। এইখানে একটা তোরনের এক পায়ার চারটা বাশের মাঝে এবারের শীতে একটা মেয়ে একটা বাচ্চা কোলে নিয়ে বসে ছিল, দুজনেই যাচ্ছেতাই রকম কাপড়হীন। ঢাকার ভিক্ষুকেরা কখনো অত কাপড়হীন হয় না। একটা রিকশাওয়ালা রিকশা থামিয়ে তাকে দশটাকা দিয়ে দৌড়ে রিকশা নিয়ে চলে গিয়েছিল। রিকশাওয়ালাটা তখন কি লজ্জা পাচ্ছিল? সেদিন এমন রোদ ছিল না।

হুহু বাতাস ছিল একটানা। পল্টনের মোড়ে কোথাও দারুন একটা গান বাজছে দেশাত্মবোধক, ট্রাফিক পুলিশটা কেমন অন্য রকম অন্যমনস্ক, চেহারায় যেন মহান কিছুর ছাপ যেন মহত্তর কোনো কিছুর স্পর্শের খুব কাছা কাছি সে যেতে চাইছে। রিকশাওয়ালারাও সবাই চুপচাপ। সবাই মহান কিছুকে হাতড়ায় বিছড়ায়। এজন্যই কবিরাই, গীতিকাররাই সবচে বড় প্রতারক।

তারাই এই মিথ্যা গেলাচ্ছে সব বোকা লোকদের। বোকা মানুষরা ভাবছে তারা দেশের জন্য কিছু করবে, মানুষের জন্য কিছু করবে, অথবা কোনো একটা মানুষের জন্য করবে। সৃষ্টি জগতের বিশাল কোনো কিছু তারা ছুঁয়ে ফেলবে। সারা দিন তাদের মগজ ধোলাই করছে কবিরা চালাকি করে। কবিরা ভাবছে তারা মহান মিথ্যুক।


অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।