আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

শাবিপ্রবি নিয়ে-১

অলসদের দিয়ে কী আর হয়। আলসেমি ছাড়া!

{গত বছর এপ্রিল মাসে শাবিপ্রবি নিয়ে একটি লেখা লিখেছিলাম। ভাবলাম এখানেও থাক} নতুন একাডেমিক ভবনের কাজ এখনো কিছুটা বাকি। তবে ভবনকে ঘিরে প্রাণচাঞ্চল্য কম নয়। দিনভর সেখানে ভিড় করে শিক্ষার্থীরা।

ওদের বেশির ভাগের হাতেই ল্যাপটপ! না, ওখানে কোনো কম্পিউটার ক্লাস হয় না। শিক্ষার্থীরা ওখানে জড়ো হয়, বিশ্বের সঙ্গে নিজেকে যুক্ত করতে। ভবন এলাকাটি এখন একটি ‘ওয়াই-ফাই হট স্পট’। অর্থাৎ ওখানে রয়েছে তারবিহীন ইন্টারনেট সংযোগের সুবিধা। শিক্ষার্থীরা ইন্টারনেটে যুক্ত হওয়ার জন্য ওখানে আসে।

কেউ কেউ হয়তো ভাবছেন, আমি দেশের বাইরের কোনো বিশ্ববিদ্যালয়ের গল্প বলছি, যেখানে এটি খুবই স্বাভাবিক দৃশ্য। তবে আমার গল্পের বিশ্ববিদ্যালয়টি বাংলাদেশেরই একটি পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়। শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়, সিলেট, যা শাবিপ্রবি নামে পরিচিত। ১০ থেকে ১২ এপ্রিল সেখানে কম্পিউটার কৌশল বিভাগের শিক্ষার্থীরা আয়োজন করেছিল তথ্যপ্রযুক্তি উৎসবের। দেশের তরুণ-শিক্ষার্থীদের যেকোনো আয়োজনে যুক্ত থাকার একটা আকাক্খা থেকেই সেখানে উপস্থিত ছিলাম।

১০ তারিখ দিনভর আমি কাটিয়েছি শাবিপ্রবি ক্যাম্পাসে এবং তখনই আমার দেখা হয়েছে নতুন যুগের ডিজিটাল বিদ্যাসাগরদের সঙ্গে। আমরা জানি, ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর ঘরে বাতি ছিল না বলে ল্যাম্পপোস্টের নিচে গিয়ে পড়াশোনা করতেন। শাবিপ্রবির শিক্ষার্থীরা আমাদের এ যুগের বিদ্যাসাগর। তারা জানে, একুশ শতকে একজন পূর্ণাঙ্গ মানুষ হয়ে ওঠার জন্য তথ্যপ্রযুক্তির সংযুক্তি কতটা জরুরী। কেবল নতুন একাডেমিক ভবন নয়, ল্যাপটপ হাতে শিক্ষার্থীদের আপনি দেখতে পাবেন বিশ্ববিদ্যালয় গেস্ট-হাউসের আশপাশে, কম্পিউটার কৌশল বিভাগের বারান্দায় কিংবা হলে।

সেদিন সকালে আমাকে বাসস্টেশন থেকে গেস্ট-হাউসে নিয়ে আসে বিশ্ববিদ্যালয়ের একজন প্রাক্তন শিক্ষার্থী। সকালে নাশতার সময় সে জানাল, আমাকে নামিয়ে দিয়ে সে গিয়েছিল বিভাগে, উৎসবের প্রস্ততির খবর নিতে এবং যথারীতি দেখেছে, একজন শিক্ষার্থী ল্যাপটপে ঝুঁকে কাজ করছে। বাংলাদেশে আর কোনো পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষার্থীদের জন্য ডিজিটাল দুনিয়ার দ্বার এভাবে অবারিত হয়েছে কি না, তা আমার জানা নেই। তবে জানি, শাবিপ্রবি দেশের প্রথম বিশ্ববিদ্যালয়, যেখানে ক্যাম্পাসজুড়ে ফাইবার অপটিকের নেটওয়ার্ক বসানো হয়েছে। সংযুক্তির এ যুগে কেবল শিক্ষার্থী নয়, সবার জন্য ইন্টারনেট একটি মৌলিক অধিকারের পর্যায়ে চলে যাচ্ছে।

বৈশ্বিক গ্রামের উপযোগী হয়ে গড়ে উঠতে আমাদের নতুন প্রজন্মের হাতে আমাদের হকিস্টিক, রামদা কিংবা বন্দুকের পরিবর্তে তুলে দিতে হবে ল্যাপটপ, ইন্টারনেট সংযোগ। আর তুলে দিতে হবে আমাদের সংস্কৃতি-ঐতিহ্যের অনুসারী জ্ঞানভাণ্ডার। শিক্ষার্থীদের অনেকে আজকাল টিউশনির টাকা জমিয়ে ল্যাপটপ কেনে। আমাদের দরকার তাদের এগিয়ে যাওয়ার জন্য তথ্যের মহাসড়কে তুলে দেওয়া। পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে বিভিন্ন স্থানে তারবিহীন ইন্টারনেট এলাকা গড়ে তোলা মোটেই যে কোনো কষ্টকর বা ব্যয়বহুল কাজ নয়, তা আমাদের দেখিয়ে দিয়েছে শাবিপ্রবি।

কাজেই অন্য বিশ্ববিদ্যালয়গুলোও এ কাজে এগিয়ে আসতে পারে। বিভিন্ন পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয় নিজেরাই এ উদ্যোগ নিতে পারে। বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা ক্যাম্পাসে দলবেঁধে ঘুরে বেড়াচ্ছে, গলা ছেড়ে গান গাইছে আর কেউবা একটু সরে গিয়ে ল্যাপটপ খুলে ই-মেইল পাঠিয়ে দিচ্ছে বিশ্বের অন্য প্রান্তে, ক্যান্টিনে বসে চা খেতে খেতে ডাউনলোড করে নিচ্ছে আগামীকালের লেকচার নোট, মাঠে খেলা দেখার ফাঁকে দেখে নিচ্ছে ফেসবুক কিংবা সেরে নিচ্ছে কোনো সফটওয়্যার ডাউনলোড। এভাবে ডিজিটাল বাংলাদেশ গড়ার জন্য আমাদের ডিজিটাল বিদ্যাসাগররা তৈরি করেছে নিজেদের-এর চেয়ে সুন্দর দৃশ্য আমাদের জন্য আর কী হতে পারে? ---- প্রায় আটমাস পরে এসে দেখছি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের টিএসসি, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের দুইটি স্থানে ওয়াই ফাই জোন হয়েছে। অনেকগুলো প্রাইভেটও হয়েছে।

তবে, অনেক জায়গায় করা যায় নি!! বুয়েটে কী হয়েছে? জানা নেই। জগন্নাথে আর ইডেন কলেজের জন্য কাজ করা হচ্ছে এখন। সেগুলো হয়তো হয়ে যাবে এপ্রিলের আগে। ইউজিসি একটা প্রকল্প থেকে সব বিশ্বাবিদ্যালয়ে কানেকটিভিটির কাজ করার কথা। কতদূর এগিয়েছে খোঁজ নিতে পারিনি।

কে বোঝাবে যে একটা উচ্চগতির ইন্টারনেট সংযোগ একজন শিক্ষার্থীর জীবন কতোভাবে পাল্টে দিতে পারে!

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.