আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

কম্পিউটারের সংখ্যা-১

এই ব্লগের কোন লেখা আমার অনুমতি ব্যতীত কোথাও ব্যবহার না করার অনুরোধ করছি

কিছু সংখ্যা নিয়ে আলোচনা করব যার কোনটাই মানুষের ব্যবহৃত দশ ভিত্তিক সংখ্যা বা ডেসিমাল নাম্বার নয়। অকটাল(ভিত্তি আট), হেক্সাডেসিমাল(ভিত্তি ১৬) এবং বাইনারি(ভিত্তি ২) এর এই সংখ্যাগুলো ব্যবহার হয় লজিকাল সার্কিটের ক্ষেত্রে। লজিকাল সার্কিটগুলো মূলত কিছু ট্রানজিস্টরের সমষ্টি এবং একটি ট্রানজিস্টর হচ্ছে সহজ ভাষায় একটি সুইচ, যা শুধু অন এবং অফ করা যায়। অর্থাৎ ট্রানজিস্টর তথা লজিক সার্কিটের অবস্থা হতে পারে শুধু অন এবং অফ, যাকে বলা হয় লজিক-০ এবং লজিক-১। লজিক সার্কিটে সাধারণভাবে ধরে নেয়া হয় শূণ্য ভোল্টের একটি সিগন্যালকে লজিক-০ এবং পাঁচ ভোল্টের একটি সিগন্যালকে লজিক-১, যদিও প্রাকটিক্যালি ব্যাপারটাতে কিছু ভোল্টের পার্থক্য আছে।

কম্পিউটারের মূল শক্তি হচ্ছে এর প্রসেসর, অর্ধশতাব্দী ধরে যা পরিণত হয়েছে মাইক্রোপ্রসেসরে এবং ধীরে ধীরে বেড়ে চলেছে মিলিসেকেন্ডপ্রতি এর হিসাব করার ক্ষমতা। কম্পিউটার যে কোন গাণিতিক হিসাব চট করে করতে পারে, কিন্তু সেই হিসাব মানুষের হিসাবের মতো নয়, মানুষের সংখ্যার নয়। মানুষের সংখ্যা দশ ভিত্তিক এবং ০-৯ পর্যন্ত দশটি ডিজিট নিয়ে গঠিত। কম্পিউটারের মাইক্রোপ্রসেসরে ব্যবহৃত বিপুল পরিমাণ ট্রানজিস্টরের পক্ষেও সম্ভব নয় এতগুলো ডিজিট নিয়ে কাজ করা, কারণ এদের প্রত্যেকেই শুধুমাত্র দুটি স্টেট নিয়ে কাজ করতে পারে-অন এবং অফ। তাই কম্পিউটারের জন্য সকল সংখ্যাকে কনভার্ট করতে হয় দুটি মাত্র স্টেটে-০(অফ) এবং ১(অন) এ।

আমরা দুই ভিত্তির এই সংখ্যাকে বলি বাইনারি সংখ্যা। মনে করা যাক এমন একটি বাইনারি সংখ্যা আছেঃ ০১০১০০০০০১১০১০১০১১০১০১০০০১১১০১০০০১০০১০০০১১১১০০১০১০১০১০১১১০০১০১০০। এর দশ ভিত্তিক মান কত? প্রচলিত ক্যালকুলেটরে আসবেনা এর ডেসিমাল ভ্যালু কারণ এত বড় কাজ ক্যালকুলেটর করতে পারবে না। সংখ্যাটি যদি আরও বড় হয়? ধরুন, কোন একটি ব্যাংকে দুই হাজার কোটি টাকার লেনদেন হয় প্রতিদিন, তাহলে এর কম্পিউটার সিস্টেমে কত বড়, কতগুলো, বাইনারি সংখ্যা দরকার প্রতিদিন? মানুষের পক্ষে আদৌ সম্ভব নয় এত বড় সংখ্যা হিসাব করা, তাই মানুষ নিজের সুবিধার জন্যে বের করে অকটাল এবং হেক্সাডেসিমাল সংখ্যার, যা মানুষের জন্য বাইনারি সংখ্যার হিসাবকে সহজ করে দেয়। ২^৪=১৬, অর্থাৎ, হেক্সাডেসিমাল নাম্বারের জন্য আমাদের প্রয়োজন চারটি করে বাইনারি সংখ্যার কম্বিনেশন এবং ২^৩=৮, অর্থাৎ, অকটাল নাম্বারের জন্য আমাদের প্রয়োজন তিনটি করে বাইনারি ডিজিটের কম্বিনেশন।

আসুন দেখি এখন কী করে উপরের সংখ্যাটিকে আমরা হেক্সাডেসিমালে কনভার্ট করতে পারি। প্রথমেই চারটি চারটি করে ভাগ করে নিলাম বাইনারি সংখ্যাগুলোকে। ০১০১ ০০০০ ০১১০ ১০১০ ১১০১ ০১০০ ০১১১ ০১০০ ০১০০ ১০০০ ১১১১ ০০১০ ১০১০ ১০১১ ১০০১ ০১০০ এবার আমাদের প্রয়োগ করতে হবে এদের হেক্সাডেসিমাল ইকুইভ্যালেন্ট। নিচের চিত্রটি লক্ষ্য করি। এবার এই অনুযায়ী কনভার্ট করি উপরের সংখ্যাগুলোকে।

দাঁড়াচ্ছে কত? বাম থেকে নিচ্ছি, ৫,০,৬....বাকিগুলো নিজে বের করুন। ১৬ ডিজিটের একটি ইকুইভ্যালেন্ট হেক্সাডেসিমাল সংখ্যা পাচ্ছেন যা মানুষের জন্য লেখা অনেক সহজ। তাই মানুষ মাইক্রোপ্রসেসরকে নির্দেশ দেয় এই হেক্সাডেসিমাল সংখ্যাতেই। ঠিক একই ভাবে যদি তিনটি তিনটি ভাগ করে নেই সংখ্যাগুলোকে, পাব কিছু অকটাল সংখ্যা। এভাবে, হেক্সাডেসিমাল সংখ্যার সাহায্যে, বিশাল বাইনারি সংখ্যাকে মানুষ এনেছে নিজের আয়ত্তে, এবং কম্পিউটারকে নির্দেশ দিয়েছে কম্পিউটারের ভাষা ০ আর ১ এ।

এখন, কম্পিউটার কি শুধু গাণিতিক অপারেশনই করে? না। কম্পিউটার করে আরও অনেক কাজ যাদের মাঝে কয়েকটি হচ্ছে স্ট্রিং ম্যানিপুলেশন, লজিকাল ডিসিশন মেকিং, মেমরি ম্যানেজমেন্ট ইত্যাদি। প্রতিটি অক্ষর বা ক্যারেক্টার এর জন্য রয়েছে নির্দিষ্ট একটি বাইনারি সংখ্যা, যা দিয়ে ক্যারেক্টারগুলোকে রিপ্রেজেন্ট করা হয়। আমাদের আজকের আলোচনা শুধু সংখ্যা নিয়ে, তাই যাচ্ছি না ওসব কথায়। এক কথায়, কম্পিউটারকে যে কোন নির্দেশ দিতে হলে তা দিতে হবে ০ এবং ১ দিয়ে।

এখন কীভাবে সম্ভব হাজারটা ভিন্ন কাজ মাত্র দুটি সংখ্যা দিয়ে? খুবই সম্ভব। কারণ, এই দুটি সংখ্যার যে ক্ষমতা, তা বিস্ময়কর, অবাক করার মতো। যা গণনা করা যায়, ডিজিটের সাহায্যে উপস্থাপন করা যায়, তাই ডিজিটাল, আর যা গণনা করা যায় না, তা অ্যানালগ। কিন্তু আজকের পৃথিবীতে সবাই ডিজিটাল বলতে বুঝে যে কোন একধরণের কম্পিউটিং ডিভাইসকে। কেন? কারণ হচ্ছে ০ এবং ১ দুটি ডিজিটের বিস্ময়কর ক্ষমতা হার মানিয়েছে হাজার বছরের অ্যানালগ দুনিয়াকে, সাথে সাথে দশ ডিজিটের মতবাদকেও।

যেই গণনা দশ ডিজিট দিয়ে পাঁচ বছরে করা যেত না, সেই গননা মাত্র দুই ডিজিটে কয়েক সেকেন্ডে করা সম্ভব! ধীরে ধীরে দেখব কী করে সাধিত হল এই অসাধ্য।

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.