আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

কুয়েতে বাংলাদেশী প্রবাসীদের হালচাল



একটু সুখের আশায়, পরিবার পরিজন নিয়ে সুখে শান্তিতে জীবন যাপনের জন্য প্রায় পাঁচ লাখ বাংলাদেশীর বিভিন্ন সময় কুয়েত আগমন। মধ্যপ্রাচ্যের খনিজ তেল সমৃদ্ধ দেশ কুয়েত। অনেকে বলে দৌলতের দেশ কুয়েত। এখানের অধিকাংশ বাংলাদেশী মোটামুটি গরীব পরিবার থেকে এসেছে বলা যায়। কেউ কেউ আবাদি জমি বিক্রি করে অথবা বন্ধক রেখে, কেউবা বসতবাড়ি বিক্রি করে নতুবা চরা সুদের উপর টাকা ধার করে জীবনের তাগিদে বিদেশে পাড়ি জমায়।

সফলতার মুখ সবাইতো আর দেখে না। আমি এই দিকটা নিয়ে আলোচনাও করবোনা। শুধু দেখানোর চেষ্টা করবো কেমন পরিস্থিতির মধ্যে দিয়ে কুয়েতে বাংলাদেশী প্রবাসীদের চলতে হয়। আমার জানা মতে সিংহভাগ বাংলাদেশী এখানে দুই ধরনের ভিসা নিয়ে আসে। একটি হচ্ছে সন্‌ (১৮ নং ভিসা) আর একটি হচ্ছে খাদেম (২০ নং ভিসা)।

ভিসা সংক্রান্ত একটি পোষ্ট পরে দেওয়ার ইচ্ছা আছে। তাই এ বিষয়ে আর বিষদ কিছু লিখলাম না। বাংলাদেশ দূতাবাসের সীমাহীন অবহেলা ও পশুসুলভ আচরনে অনেক বাংলাদেশী মানবেতর জীবন যাপন করছে। এখানকার অধিকাংশ বাংলাদেশী বিভিন্ন কোম্পানিতে কর্মরত। দেখা যায় বিভিন্ন কোম্পানিতে ৬/৭ মাস ধরে বেতন ভাতা দিচ্ছে না।

কিন্তু আমাদের দূতাবাসের এ বিষয়ে কোন মাথা ব্যাথা নেই। সরকার পরিবর্তনের সাথে সাথে এখানকার প্রবাসীরা আশায় বুক বাঁধে এবার হয়তো নতুন হাই কমিশনার কুয়েত সরকারের সাথে আলাপ আলোচনা করে তাদের সমস্যাগুলোর সমাধান করবে। কিন্তু না, দেখা যায় নতুন রাষ্ট্রদূত বিভিন্ন কোম্পানির সাথে আতাত করে কোম্পানিগুলোর বিভিন্ন অন্যায়মূলক আচরনের প্রতিবাদ তো করেইনা বরং তাদের পক্ষে সাফাই গায়। কেউ যদি দূতাবাসে গিয়ে কিছু বলতে চায়, তাহলে তার মুখ বন্ধ করে দেওয়া হয়। এমনকি গালাগালি পর্যন্ত করে।

এমন পশুসুলভ আচরণ করে যা ভাষায় প্রকাশ করা সম্ভব নয়। বিদেশের মাটিতে যখন লাল-সবুজের পতাকা ওড়ে তখন মনে হয় একখন্ড বাংলাদেশ। আমাদের রাষ্ট্রদূত একবারও চিন্তা করে না, কার টাকায় তাদের বেতন হয়, কার টাকায় বাড়ি-গাড়ির খরচ চলে। মূলত বেশির ভাগ অশিক্ষিত বাংলাদেশী কুয়েতে অবস্থানের জন্য এমন অবস্থার সৃষ্টি হয়েছে যা মোটেও কাম্য নয়। আমাদের পার্শ্ববর্তী দেশ ভারত-প্রবাসীদের ও আমাদের কর্মকান্ডের মধ্যে বিস্তর পার্থক্য লক্ষ করা যায়।

এদের দূতাবাসের কর্মততপরতাও লক্ষণীয়। আর আমাদের অবস্থা এমন যে, কেউ যদি কর্তব্যরত অবস্থায় মারা যায় তবুও বাংলাদেশ দূতাবাস সেখানে যায় না ঘটনা তদন্তের জন্য। একটা সময় ছিল যখন কুয়েতীরা বাংলাদেশীদের ভালো জানত, কাজের প্রশংসা করত। আর এখন সম্পূর্ণ বিপরীত অবস্থা। এখন যেখানে বাংলাদেশী সেখানে অপকর্ম।

নারী ব্যবসা (পতিতা বৃত্তি), মদ, হেরোইন, জুয়া, চুরি, ছিন্তাই এমন কোন খারাপ কাজ নেই যে বাংলাদেশীরা করেনা। জাত একদম মাথায় উঠে গ্যাছে। জুয়ার আসরে টাকার লেনদেন নিয়ে খুন-খারাবীর ঘটনাও ঘটে। সবচেয়ে মজার ব্যাপার হচ্ছে যে, বাংলাদেশী পতিতাদের ঘরের দরজায় লেখা থাকে "বাঁকি চাহিয়া লজ্জা দিবেন না"। বোঝেন অবস্থা কোন পর্যায়ে পৌছেছে।

হাছাবীয়া কুয়েতের একটি জায়গার নাম। গুলিস্তান বলে ক্ষ্যাত জায়গাটি। বেশিরভাগ খারাপ কাজ এই এলাকাটি ঘিরে হয়। এমন পরিস্থিতিতে খুব সহজেই বোঝা যায়, কুয়েতে বাংলাদেশের সুনাম কোথায় গিয়ে ঠেকেছে। আমরা এখন ঘৃ্নার পাত্র হয়ে গেছি।

বাংলাদেশী বলে পরিচয় দিতেও লজ্জা হয়। প্রায় ৪০/৫০ হাজার বাংলাদেশীদের কোন ওয়ার্ক পারমিট নেই। কুয়েতী পুলিশ হন্যে হয়ে খুজে বেরায় সারাদিন এদেরকে ধরার জন্য। অনেক সময় বাড়িতেও হানা দেয়। ধরতে পারলে প্রথমে জেল, তারপর সোজা দেশে পাঠিয়ে দেয়।

কোন সমাধান নেই। এ অবস্থার জন্য দায়ী আমাদের রাষ্ট্র প্রধান, শ্রম-মন্ত্রনালয় এবং বাংলাদেশের বেশিরভাগ ট্রাভেল এজেন্সি। মূলত কম মূল্যে শ্রমিক রপ্তানি করাতেই এ ধরনের সমস্যা সৃষ্টি হয়েছে। সবচেয়ে নিম্ন মানের কাজগুলো বাংলাদেশীরাই করে। আজকাল আবার মিশরীরা বাংলাদেশীদের নিয়ে ব্যংগ করে গান গায়।

"আনা বাঙ্গালী, আনা মিস্কিন, আশ্রিন দিনার মাশ, আনা মুশকিল, আনা এবি আক্কেল, আনা এবি ফুলুস" এই রকম আরকি। আমরা শুনতে চাইনা আর টিটকিরি মূলক গান। আমরা অন্যান্য জাতির মতো মাথা উঁচু করে মর্যাদার সাথে বসবাস করতে চাই। কিছুদিন আগে আমাদের প্রধান মন্ত্রী কুয়েতে এসেছিলেন। কুয়েত সরকারের সাথে বিভিন্ন বিষয় নিয়ে আলোচনা হয়েছে।

কিন্তু কাজের কাজ কি হয়েছে তা জানা নেই। খবরে শুনলাম ৪/৫ টি চুক্তি নাকি হয়েছে। কিন্তু তার মধ্যে শ্রম-রপ্তানি নেই। অবস্থা এতই বেগতিক যে কুয়েত সরকার আর আমদের জনশক্তি নিতে চাইছে না। আমরা আমাদের পর্বের মর্যাদাপূর্ন অবস্থানে ফিরে যেতে চাই।

তাই সরকারের কাছে আকুল আবেদন, অনুগ্রহ করে আর অদক্ষ শ্রমিক না পাঠিয়ে দক্ষ শ্রমিক পাঠান। এতে কাজের প্রশংসা বারবে। আর হাই কমিশনারকে বলেন, আমরা যারা এখানে আছি, আমরাও মানুষ। আত্বমর্যাদা নিয়ে বাঁচতে আমাদেরও ইচ্ছে করে। মাঝে মাঝে মনে হয় এ এক অভিষপ্ত জীবন যার শেষ জানা নেই।


অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।