আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

প্লুটোর পৌরাণিক সংসার

কয়েক বছর আগেও সৌরজগতে প্লুটোর মর্যাদা ছিল ‘গ্রহ’। পরে ২০০৬ সালে, আবিষ্কারের ৭৬ বছর পর বিজ্ঞানীরা প্লুটোর আকারের কথা চিন্তা করে ওকে গ্রহের তালিকা থেকে বাদ দিয়ে ‘বামন গ্রহ’র মর্যাদা দেন।
প্লুটো আবিষ্কার
প্লুটোর অস্তিত্বের ইঙ্গিত প্রথম দেন বিজ্ঞানী পারসিভাল পাওয়েল। ১৯১৫ সালে তিনি একটি অচেনা ছোট গ্রহের সম্ভাবনার কথা জানান। তবে গ্রহটি আবিষ্কার করেন ক্লাইড ডব্লিউ টমবাউ।

১৯৩০ সালে।
১৯২৯ সালে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের অ্যারিজোনার লোয়েল অবজারভেটরি ক্লাইড টমবাউকে এক বিশেষ দায়িত্ব দেয়। সৌরজগতের অচেনা-অজানা বস্তু খুঁজে খুঁজে বের করতে হবে। মানে, সৌরজগতের নতুন কিছু আবিষ্কার করতে হবে। তিনি ছিলেন ঐ সময়ের শীর্ষস্থানীয় জ্যোতির্বিদদের একজন।


১৯৩০ সালের ১৮ ফেব্রুয়ারি। টমবাউ নিজের তোলা মহাকাশের দুটি ছবি দেখছিলেন। ছবি দুটি কয়েকদিন আগে-পরে তোলা। ছবিগুলোতে তিনি একটি নিভুনিভু বস্তু শনাক্ত করলেন। আর্কিমিডিসের ‘ইউরেকা’র মতো টমবাউ-ও বলে উঠল, ‘এই সেই গ্রহ!’ যেন নিজেকেই বললেন টমবাউ।


পরবর্তীতে লোয়েল অবজারভেটরি কর্তৃপক্ষ নতুন গ্রহটির নামকরণের দায়িত্ব গ্রহণ করে। কী নাম হবে নতুন গ্রহের?
এ নিয়ে সাধারণ মানুষেরও উৎসাহের কমতি ছিল না। শেষ পর্যন্ত গ্রহটির নামকরণ করা হয় গ্রিক দেবতার নামে- ‘প্লুটো’। গ্রিক পুরাণমতে, প্লুটো পাতালপুরির সর্বোচ্চ দেবতা। আর এই নামটি প্রস্তাব করেছিল ইংল্যান্ডের ১১ বছরের ছোট্ট ভেনেসিয়া বার্নি।


প্লুটো গ্রহটি পৌরাণিক দেবতা ‘প্লুটো’র জগতের মতোই শীতল বিষন্ন আর রহস্যময় এক গ্রহ। অন্যান্য গ্রহদের থেকে বেশ দূরে, খানিকটা একাকী যেন। দেবতা প্লুটো যেমন জাদুর শিরস্ত্রাণের সাহায্যে অদৃশ্য হয়ে যেতে পারতেন, তেমনি প্লুটো গ্রহটিও দীর্ঘদিন জ্যোতির্বিদদেও কাছে অদৃশ্য হয়ে ছিল। সব মিলিয়ে, নামটি একদম যুৎসই হয়েছে।
পরে তো প্লুটোর ‘গ্রহ’র মর্যাদাই কেড়ে নেওয়া হল।

প্লুটো এখন ‘বামন গ্রহ’।
 

প্লুটোর চাঁদমানিক
পৃথিবীর হিসেবে সূর্যকে প্রদক্ষিণ করতে প্লুটোর সময় লাগে ২৪৮ বছর। সূর্য থেকে গড় দূরত্ব প্রায় ৬০০ কোটি কিলোমিটার। কক্ষপথে প্লুটোর গতি মাত্র ৪.৭ কিলোমিটার। ব্যাস প্রায় তিন হাজার কিলোমিটার।

প্লুটোর অবস্থান নেপচুন গ্রহের বাইরের এলাকার থালাসদৃশ বরফশীতল অঞ্চল কিউপার বেল্টে।
প্লুটো গ্রহটি আসলেও রহস্যের আকর। কিছুদিন আগেও সবাই জানত প্লুটোর তিনটি উপগ্রহ- ক্যারন, হাইড্রা আর নিক্স। ২০১১ আর ২০১২ সালে বিজ্ঞানীরা প্লুটোর আরও দুটি উপগ্রহ আবিষ্কার করেন। প্রথমে এগুলোর নাম রাখা হয় ‘পি-৪’ ও ‘পি-৫’।

এ বছরের জুন মাসেই নতুন উপগ্রহদুটোর সহজ নাম দেওয়া হয়েছে-- কারবেরাস আর স্টিক্স।
 

তিন মাথার কারবেরাস
গ্রিক পুরাণে ‘কারবেরাস’ হল পাতালপুরির পাহারাদার, তিন-মাথাওয়ালা একটি কুকুর। সারাক্ষণ পাতালপুরিকে পাহারা দেয় এই কারবেরাস। বিখ্যাত পৌরাণিক বীর হারকিউলিসকে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছিল, কারবেরাসকে আটক করতে হবে। হারকিউলিস কারবেরাসকে রীতিমতো কাঁধে করে তুলে এনেছিলেন।


কারবেরাসের সবচেয়ে বড় বৈশিষ্ট্য ছিল সারাক্ষণ সজাগ থেকে পাতালপুরি পাহারা দেওয়া। প্লুটোর কারবেরাসে হাজারও জাগ্রত আগ্নেয়গিরি রয়েছে বলে ধারণা করা হয়। মানে সারাক্ষণ জেগেই থাকে কারবেরাস। আর তাই উপগ্রহটির এমন নাম।
স্টিক্স হল এক নদী
স্টিক্স নামটিও গ্রিক পুরাণ থেকে নেওয়া।

গ্রিক পুরাণে, মর্ত্যলোক মানে পৃথিবী আর পাতালপুরিকে আলাদা করেছে স্টিক্স নদী। সব আত্মাকে এ নদী পার হয়ে পাতালপুরিতে যেতে হয়।
এই স্টিক্স নদী নিয়ে পুরাণে একটি সুন্দর কাহিনিও রয়েছে। গ্রিক আর ট্রয়ের যুদ্ধের জন্য বিখ্যাত হয়ে আছে অ্যাকিলিস। অ্যাকিলিসের মা থেটিস ছোটবেলায় তাকে এই নদীতে গোসল করিয়েছিলেন।

স্টিক্স নদীর পানিতে গোসল করে অ্যাকিলিসের শরীর এক অদ্ভুত ক্ষমতা লাভ করেছিল-- কোনো অস্ত্রশস্ত্র তার কিছু করতে পারবে না। কিন্তু গোড়ালির একটি অংশ তখন পানিতে ভেজেনি। সেটিই ছিল তার দুর্বলতা। ইংরেজিতে তার এই দুর্বলতার একটি গালভরা নামও আছে- অ্যাকিলিস’ হিল।
স্টিক্সনদীর মাঝির নাম ক্যারন।

তিনি বিশেষ মোহরের বিনিময়ে মৃত আত্মাদের নদী পার করে দেন।
 

নৌকার মাঝি ক্যারন
প্লুটোর সবচেয়ে বড় উপগ্রহ ‘ক্যারন’। ক্যারন আবিষ্কৃত হয় ১৯৭৮ সালে। পুরাণে এই ক্যারন স্টিক্স পারাপারের নৌকার মাঝি। তিনি তিমি মাছের দেবতা এরিবাসের পুত্র।

ক্যারনের দায়িত্ব মৃতের আত্মা স্টিক্স নদী পার করে মৃতের রাজ্যে নিয়ে যাওয়া। আর সে জন্য তিনি নেন বিশেষ মোহর। এই বিশ্বাস থেকে প্রাচীন গ্রিসে মৃত ব্যক্তির সৎকারের সময় তার মুখে একটি মুদ্রা রেখে দেওয়া হত।
হারকিউলিসের সঙ্গে ক্যারনেরও একটি কাহিনি আছে। হারকিউলিস যখন কারবেরাসকে আটক করতে পাতালপুরিতে যাচ্ছিল, তখন ক্যারন হারকিউলিসকে নদী পার করতে রাজি হননি।

হারকিউলিস যে তখনও জীবিত! তখন হারকিউলিস ক্যারনকে বেঁধে রেখে নিজেই নদী পার হন। পরে দায়িত্বে অবহেলার কারণে পাতালপুরির রাজা হেডিস ক্যারনকে এক বছরের কারাদণ্ড দেন।
 

নয় মাথাওয়ালা হাইড্রা
হারকিউলিস তার বীরত্ব প্রকাশে বেশ কয়েকটি কাজ করেছিলেন। তার বীরত্বের দ্বিতীয় কাজটি ছিল, লার্না নামের একটি জলাভূমিতে গিয়ে নয় মাথাওয়ালা হাইড্রা নামের এক প্রাণীকে মারতে হবে। হাইড্রাকে মারা কিন্তু খুবই কঠিন।

কারণ, ওর নয় মাথার একটি ছিল অমর। শুধু তাই নয়, ওর একটা মাথা কাটলে সেখান থেকে দুটো মাথা গজায়।
হারকিউলিস আর কোনো উপায় না দেখে, শেষে এক কাজ করলেন। একটি করে মাথা কাটেন, আর মশাল দিয়ে ঘাড় ঝলসে দেন, যাতে সেখান থেকে আর কোনো মাথা না গজায়। শেষে গোল বাঁধল অমর মাথাটি নিয়ে।

শেষে এক বিশাল পাথর দিয়ে চাপা দিলেন হাইড্রার অমর মাথাটা।
এই নয় মাথাওয়ালা হাইড্রার নাম থেকেই প্লুটোর এই উপগ্রহটির নামকরণ করা হয়েছে।
 

রাতের দেবী নিক্স
নিক্স প্লুটোর সবচেয়ে ছোট উপগ্রহ। উপগ্রহটি আসলেও ছোট্ট। নিক্স গ্রিক পুরাণে রাতের দেবী।

তার যেসব ছবি পাওয়া যায়, সেগুলোও বেশ ছায়াময়। তার সন্তানদের মধ্যে কয়েকজন হল- ঘুমের দেবতা হিপনোস, রাতের দেবতা থানাটোস, স্বপ্নের দেবতা মর্ফিউস।
এই নিক্স দেবীর নাম থেকেই প্লুটোর কালো ও ছায়াময় এই উপগ্রহটির নামকরণ করা হয়েছে।

সোর্স: http://bangla.bdnews24.com

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।