আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

ভালোবাসার গল্প

একাকীত্বই প্রাপ্য

ডাক্তারের চেম্বার থেকে এক বুক তৃপ্তি নিয়ে বেরোয় তৃণা। রাস্তায় বেরিয়ে লম্বা দম নেয়। আশেপাশে রিকশা নেই কোনো। হাঁটতে শুরু করে তৃণা। বুকে নির্ভার স্বস্তি আর মাথায় সামনের দিন গুলোর ভাবনা নিয়ে।

হাঁটতে হাঁটতে হঠাৎই ছেদ পড়ে ভাবনায়। পুরুষ কন্ঠে নিজের নাম শুনে মুখ তুলে তাকায়। রিমন। রিমনের হাজারটা প্রশ্ন। কেমন আছিস? কোথায় ছিলি ? কোনো খোঁজ খবর নেই, একেবারে উধাও? তৃণার ক্লান্ত লাগে।

আজকাল একটুতেই ক্লান্ত লাগে খুব। রিমন ওকে জোর করে ধরে নিয়ে যায় একটা ক্যাফেতে। মুখোমুখি বসে প্রশ্ন করে 'এখানে কোথায় এসেছিলি?' ম্লাণ হাসে তৃণা , 'ডাক্তারের কাছে। ' এবার রিমন ভাল করে ওর মুখের দিকে তাকায়, সত্যিই ওকে অসুস্থ দেখাচ্ছে। উদ্বিগ্ন কন্ঠে জিঙ্গেস করে , 'কি হয়েছে তোর?' তৃনা হাসে।

একটু দ্বিধাগ্রস্ত হাসি। ভেবে পায়না সত্যি বলবে নাকি বানিয়ে যাহয় একটা কিছু বলে দেবে। ওরা বিশ্ববিদ্যালয়ের বন্ধু। চমৎকার বোঝাপড়া ছিল দুজনের। পাস করার পর তৃণাই আর যোগাযোগ রাখেনি।

কারণ তার আগেই মানুষটা ওর জীবনে আসে। ওর জীবনের প্রতিটা মুহূর্ত কানায় কানায় ভরে দিয়েছিল সেই মানুষটা। স্বার্থপরের মত তৃণা ভুলে গিয়েছিল তারা দুজন ছাড়াও পৃথিবীতে অন্য মানুষ ও আছে। রিমনের সামনে সেই মানুষটাকে ছোট করতে ইচ্ছে করেনা। বলে , 'এমনি জ্বর জ্বর লাগছিল।

উঠি রে, ভাল লাগছে না। ' রিমনের প্রশ্নবোধক চোখের সামনে দিয়ে বেরিয়ে আসে তৃণা। সত্যি ক্লান্ত লাগছে। হাত বাড়িয়ে একটা রিকশা ডেকে উঠে পড়ে। বাসায় ফিরতে ইচ্ছে করেনা, তবু রিকশাওয়ালাকে বাসার দিকেই নির্দেশ দেয়।

শরীরটা বিশ্রাম চাইছে। মাথায় আবার ভাবনারা উঁকি ঝুঁকি মারতে শুরু করে। রাস্তায় বেরোলেই ওর এটা হয়, তৃণা আগেও খেয়াল করেছে। এক গন্তব্য থেকে আরেক গন্তব্যে যাওয়ার সময়টুকু যখন কিছুই করার থাকেনা, তখন রাজ্যের ভাবনা ওর মাথায় ঘুরপাক খায়। একারণে রাস্তায় পরিচিত মানুষদেরও ও খেয়াল করেনা।

কত মানুষ পাশ কাটিয়ে চলে যায়। কারো মুখই ও ভালো করে দেখতে পায়না। কিন্তু যেদিন মানুষটাকে প্রথম দেখে , টিপটিপ বৃষ্টির মাঝে, ঘন নীল একটা ফুলহাতা শার্ট গায়ে। চিনতে কষ্ট হয়নি একটুও। অবাক হয়েছিল ওর বাচ্চাদের মত মুখ আর হাসি দেখে।

তারপর একের পর এক আরো কতভাবে যে আবিষ্কার করেছে ওকে! হঠাৎ চোখ উপচে কান্না এলো ওর। কি করছে এখন মানুষটা ? বাসায় ফিরে নেতিয়ে পড়ে বিছানায়। হু হু করে কান্না আসে। ডাক্তারের কাছ থেকে পাওয়া স্বস্তি উধাও। সেখানে জায়গা করে নিতে থাকে শূণ্যতা আর হাহাকার।

আগে যখনই এমন হত, দৌড়ে যেত মানুষটার কাছে। মানুষটা ওকে শক্ত করে ধরে রাখত। ওর মাথায় হাত রেখে বলতো , 'সব ঠিক হয়ে যাবে। ' তৃণা বিশ্বাস করত। কখনো এক মুহূর্তের জন্যও অবিশ্বাস হয়নি ওর মানুষটাকে।

কখনো না। যেদিন মানুষটা প্রথম ওকে বুকে নিল, থরথর করে কাঁপছিল তৃণা। তবু একবারের জন্যও কোন প্রশ্ন আসেনি মনে। একবিন্দু দ্বিধাও না। মনে হচ্ছিল যেন ওর বুকের সাথে এভাবে লেপ্টে থাকার জন্যই তৃণা জন্মেছে , অপেক্ষা করেছে এত গুলো বছর।

ভাবতে ভাবতে আজও থরথর করেই কাঁপে তৃণা। নখের আঘাতে বিছানার চাদর ফালি ফালি। হঠাৎই হুঁশ ফেরে ওর । নিজের একটা হাত নিয়ে মাথায় রাখে। আরেকটা হাত পেটের উপর রাখে ওর বাবুসোনাটার অস্তিত্ব টের পেতে।

ফিস্ ফিস্ করে বলে, 'ভয় নেই তোর ,ভয় নেই। ' ওর ভেতরটা আকুলিবিকুলি করে বাবুসোনাটার মাথায় হাত রাখতে। কিন্তু সেজন্য ওকে অপেক্ষা করতে হবে আরো চার মাস। আজ ডাক্তার জানিয়েছে ওর গর্ভের সন্তান কে স্পর্শ করবেনা ওর শরীরের মরণব্যাধি। পাঁচ মাস ধরে যে সন্তানকে ও পৃথিবীর আলো দেখানোর স্বপ্ন দেখছে, সপ্তাহ দুয়েক আগে থেকে সেখানে গর্ত খুঁড়তে থাকা ভয় আজ আর নেই।

কিন্তু সময়ও যে নেই। তবু ভয় করেনা তৃণার । ও জানে ওর সন্তানকে ও দেখে যেতে পারবে। হয়তো খুব বেশিদিন থাকতে পারবেনা বাবুসোনাটার পাশে। তবু ওর সমস্ত টুকু দিয়ে ওর জন্য জীবনের পথ খুলে দিয়ে যাবে।

বড় আত্মবিশ্বাসী দেখায় তৃণাকে। মানুষটা ওকে বলেছিল সব ঠিক হয়ে যাবে। বলেছিল সারাজীবন ওর পাশে থাকবে। দুই হাতে ওকে ধরে থাকবে যতক্ষন পর্যন্ত না হৃদস্পনদন থেমে যায়। যতক্ষণ পর্যন্ত না সময় শেষ হয়।

তৃণা মানুষটাকে বিশ্বাস করে।

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.