আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

'হোমস্টোন আদিবাসী মেলা ২০১০' এবং বাঙালি জাতীয়তা

সমাজের প্রয়োজনকে ঘিরে যার জীবন আবর্তিত সেই তো প্রকৃত মানুষ

মূল বিষয়ে যাওয়ার আগে কিছুটা ব্যক্তিগত প্রসঙ্গের অবতারণা করতে হচ্ছে বলে প্রথমেই ক্ষমা চেয়ে নিচ্ছি। আশা করি, ব্লগাররা বিরক্তবোধ করলেও বিহঃপ্রকাশ করবেন না। আপনারা আমার যে নিকটা দেখছেন সেটা আমার লেখক নাম। এর প্রথম তিন শব্দ (মং হ্লা প্রু) আমার পিতৃপ্রদত্ত নাম এবং একই সঙ্গে সার্টিফিকেট নামও। আর শেষ শব্দটি (পিন্টু) আমার বাঙালি ডাকনাম।

এই নামে বাঙালি সহপাঠী এবং লেখক ও সাংবাদিক বন্ধুরা আমাকে ডেকে থাকেন, বিশেষ করে যাঁরা আমার পিতৃপ্রদত্ত নামের সঠিক উচ্চারণ করতে পারেন না। আপনারা আমার নাম দেখে নিশ্চয় বুঝতে পেরেছেন যে, আমি বাংলা ভাষাভাষি তথা বাঙালি জনগোষ্ঠীর কেউ নই। আমি জাতিগত, ভাষাগত এবং ধর্মীয় ও সংস্কৃতিগতভাবে সংখ্যালঘু অর্থাৎ ক্ষুদ্র জাতিসত্তার একজন সদস্য। এবার বাংলাদেশের প্রচলিত রাজনীতিতে আমার অবস্থানটা একটু পরিষ্কার করি। আমি বৃহত্তর রাজনৈতিক দলগুলোর কোনোটারই সক্রিয় কিংবা নিষ্ক্রিয় কর্মী নই, এমন-কী বাঁধা সমর্থকও নই।

তবে 'নাই মামার চেয়ে কানা মামা ভালো'-- এভাবে দেখলে তুলনামূলকভাবে আওয়ামী লীগের অতীত কর্মকাণ্ড ও সামগ্রিক কর্মসূচি ক্ষুদ্র জাতিসত্তা তথা আদিবাসী-বান্ধব বলে আমার মনে হয়। এখানে বলে রাখা ভালো যে, এটা একান্তই আমার ব্যক্তিগত অভিমত। এবার মূল বিষয়ে আসা যাক। কক্সবাজার সমুদ্র সৈকতের বালিয়াড়িতে 'চ্যানেল আই' আয়োজিত দিনব্যাপী আজকের 'হোমস্টোন আদিবাসী মেলা ২০১০'-এর শুভ উদ্বোধন করতে গিয়ে গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের মাননীয় শিল্পমন্ত্রী তাঁর বক্তব্যে বলেছেন,'আমরা ভিন্ন-ভিন্ন জাতিসত্তার, কিন্তু সবাই বাংলা ভাষাভাষি অর্থাৎ বাঙালি...। ' অনুষ্ঠানের উপস্থাপকদ্বয়ও (বাশার এবং ব্রাউনিয়া) বেশ ক'বার বলেছেন যে, আদিবাসীদের ভাষা বাংলা এবং এসব আদিবাসীর সংস্কৃতি বাঙালি সংস্কৃতিকে সমৃদ্ধ করেছে কিংবা এগুলো বাঙালি সংস্কৃতির অংশ।

এখন আমার প্রশ্ন, বাঙালি কারা? এ ব্যাপারে আমার ক্ষুদ্র জ্ঞান ও কিঞ্চিৎ পড়াশোনায় আমি যা বুঝি তা হল, যাঁরা বাংলায় কথা বলেন অর্থাৎ যাঁদের মাতৃভাষা বাংলা তাঁরাই বাঙালি। তা হলে, এসব ক্ষুদ্র জাতিগোষ্ঠী বা আদিবাসী বাঙালি হয় কী করে? তাঁরা তো নিজেদের মধ্যে বাংলায় কথা বলেন না। তাঁদের নিজস্ব ভাষা রয়েছে, এমন-কী প্রায় সকল আদিবাসীরই যেখানে লিপি বা বর্ণমালা রয়েছে। বঙ্গবন্ধু জাতীয় সংসদে চাকমা প্রতিনিধি মানবেন্দ্র লারমাকে বাঙালি হয়ে যেতে বলে যে ভুল করেছিলেন, স্বাধীনতার ঊনচল্লিশ বছর পরেও কি সেই একই ভুলের পুনরাবৃত্তি চলতে থাকবে? এখানে বলে রাখা ভালো যে, বাংলা ভাষা কিংবা বাঙালি জাতীয়তা-- কোনোটার প্রতি আমার বিন্দুমাত্র বিরূপ মনোভাব নেই। বরং তথাকথিত বাঙালির তুলনায় বাংলা ভাষা ও বাঙালি জাতীয়তার প্রতি আমার যে সম্মান তা শতভাগ অকৃত্রিম এবং নিখাদ বলে আমি দাবি করতে পারি।

যেখানে রাষ্ট্রবিজ্ঞান ও সমাজ বিজ্ঞানের অনেক বিষয় নতুনভাবে সংজ্ঞায়িত হচ্ছে, সেখানে একুশ শতকের প্রথম দশকের শেষ প্রান্তে এসে বাংলাদেশের ক্ষুদ্র জাতিসত্তাগুলো তথা আদিবাসীদের বাঙালি জাতীয়তার ছায়াতলে সমবেত হওয়ার আওয়ামী লীগের যে আহ্বান (অনেকটা ভাঙা রেকর্ডের মতো), তা রাষ্ট্রবিজ্ঞান ও সমাজ বিজ্ঞান সমর্থন করে কি না?

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.