আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

আমি নিজেই দ্বিধা বিভক্ত। কোনটি ঠিক কোনটি বেঠিক বুঝতে পারছিনা।

I love nature. I love babies and flowers.

রাবির ছাত্র হত্যা নিয়ে নানা প্রশ্ন নিহত ফারুক হোসেন কী ছাত্রলীগের দলীয় কোন্দলের শিকার? -পুলিশের পাহারায় থাকা লাশ ম্যানহোলে গেল কি করে? -লাশ পড়ে থাকতে দেখেও পুলিশ তা মেডিকেলে পাঠায়নি কেন? -ব্যাপক পুলিশ পাহারায় থাকা হলে হত্যাকান্ড ঘটিয়ে তা টেনে ম্যানহোলে নেয়া কিভাবে সম্ভব? রাবি রিপোর্টার : রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগ ও শিবিরের মধ্যে সংঘর্ষে নিহত ছাত্রলীগ কর্মী ফারুক হোসেন কী ছাত্রলীগের দলীয় কোন্দলের শিকার এই কথা রাবি ক্যাম্পাসহ রাজশাহী মহানগরীতে ব্যাপকভাবে আলোচিত হচ্ছে। ক্যাম্পাসে ছাত্রলীগের একক আধিপত্য বিস্তার ও পুলিশকে দিয়ে শিবিরকে ঠেকাতে ফারুকের লাশ দাবার ঘুঁটি হিসেবে ব্যবহার কীনা সে ব্যাপারে অনেক প্রশ্ন উঠেছে। বিশেষ করে ফারুক নিহত হবার পর থেকে রাবি'র নবগঠিত ছাত্রলীগ কমিটির শীর্ষ নেতাদের কোন রকম প্রতিক্রিয়া লক্ষ্যণীয় না হওয়ায় অনেকের মনে প্রশ্ন জেগেছে পদবঞ্চিত ও পদ পাওয়া নেতাদের মধ্যে অভ্যন্তরীণ কোন্দলের নীরব শিকার ফারুক হোসেন কী না? বিভিন্ন সূত্রে নিশ্চিত হওয়া গেছে, নিহত ফারুক হোসেন পদবঞ্চিত নেতা তহিদুর রহমান ডালিম গ্রুপের একনিষ্ঠ সমর্থক ছিলেন। গত ২৭ জানুয়ারি অনুষ্ঠিত ছাত্রলীগের কাউন্সিলে ডালিম সেক্রেটারি প্রার্থী ছিলেন। কিন্তু দলীয় কোন্দলে বর্তমান কমিটির কাছে ডালিম গ্রুপের কোন নেতাকেই মূল্যায়ন করা হয়নি।

এমনকি কমিটি গঠনের পর থেকে এই গ্রুপটিকে সব দিক থেকে উপেক্ষা করতে থাকে বর্তমান কমিটি। এই নিয়ে কাউন্সিলের পর ক্যাম্পাসে পদবঞ্চিত গ্রুপটি বিদ্রোহ ঘোষণা করে। তাদের সংখ্যা কম হওয়ায় তারা বেশি মাঠ গরম করতে ব্যর্থ হয়। গত সোমবার রাতের ছাত্র সংঘর্ষে আহত হবার মধ্যে ছাত্রলীগের অধিকাংশই পদবঞ্চিত গ্রুপের সমর্থক। এরা হলেন, সফিউল্লাহ, নিজাম, লুৎফর মুন্না, মশিউর, তৌফিক, রবিউল, বকুল, রববানী।

অপরদিকে ছাত্রলীগ বর্তমান কমিটির নেতৃত্ব পর্যায়ের কেউ আহত হয়নি। এই নিয়ে বিভিন্ন মহলে প্রশ্ন উঠেছে ছাত্রশিবির যদি ছাত্রলীগের ওপর বেপরোয়া হামলা করে থাকে তাহলে বর্তমান কমিটির নেতারাই তাদের টার্গেট হতো। তারাই আহত হতো বেশি। কিন্তু তা না হয়ে শুধুমাত্র কমিটির পদবঞ্চিত নেতাকর্মীরাই আহত হলো কেন? শিবিরের সাথে দৃশ্যত ছাত্রলীগের সংঘর্ষ বাধলেও এখানে ছাত্রলীগের কমিটির মূল অংশ একটি বড় ধরনের গেম খেলেছে বলে অভিজ্ঞ মহল মনে করছেন। তারা শিবিরকে শায়েস্তা করতে ছাত্রলীগের পদবঞ্চিত বিদ্রোহী সংখ্যালঘু গ্রুপটিকে দাবার ঘঁটি হেসেবে ব্যবহার করে।

আর ডালিম গ্রুপের একনিষ্ঠ সমর্থক ফারুক হোসেন হয় বলির পাঁঠা। অপরদিকে পদবঞ্চিত আরেক নেতা কাওসার ও ছাত্রলীগের বর্তমান কমিটির চক্ষুশূলে পরিণত হয়। যার কারণে কমিটি গঠনের পর তাকেও উপেক্ষা করতে থাকে ছাত্রলীগের নেতারা। কারণ, কাওসারও কমিটির সেক্রেটারি প্রার্থী ছিলেন। সোমবার রাত ৮টায় শিবির-ছাত্রলীগ সংঘর্ষে ছাত্রলীগ কর্মী আসাদ ও কাউসার প্রথমেই আহত হলেও তাদের উদ্ধারে সংগঠনের তৎপরতা দেখা যায়নি।

এ সময় ছাত্রলীগ নেতাকর্মীরা শিবিরকে প্রতিহত করতে চাইলে তাদের ভেতরে মতানৈক্য দেখা যায়। এমন একটি ঘটনা ঘটলেও কিছুদিন আগে হয়ে যাওয়া ছাত্রলীগের কাউন্সিলে পদবঞ্চিতদের আন্দোলনে দেখা যায়নি। রাতের আন্দোলনে না আসলেও এবং অন্য কোন কর্মসূচিতে না দেখা গেলেও লাশ দাফনের কাজে সক্রিয় দেখা গেছে সাবেক ক্রিড়া সম্পাদক এবং পদবঞ্চিত নেতা আহম্মেদকে। তারা বিভিন্ন গ্রুপে বিভক্ত হয়ে শিবির কর্মীদের দ্বারা ছাত্রলীগ কর্মী আহতের প্রতিবাদ করে। এ সময় তাদের অভ্যন্তরীণ কোন্দল প্রকাশ্যে রূপ নেয়।

এর কারণেই জানাযা থেকে শুরু করে পরবর্তী সময়ে ছাত্রলীগ কমিটির শীর্ষ নেতাদের ফারুক হোসেনের প্রতিক্রিয়ামূলক কাজে দেখা যায়নি। যে যার মত ক্যাম্পাস থেকে সরে পড়ে। অথচ বিচ্ছিন্নভাবে ডালিম ও আসাদ গ্রুপের নেতাকর্মীদের শোক প্রকাশ থেকে শুরু করে সব জায়গায় বিশেষ ভূমিকা রাখতে দেখা যায়। এই নিয়ে ক্যাম্পাসে খোদ আওয়ামী সমর্থক শিক্ষক ও কর্মকর্তা মহলেও মিশ্র প্রতিক্রিয়া দেখা গেছে। ফারুক হোসেন মারা যাবার পর ক্যাম্পাসে পুলিশকে দিয়ে শিবিরকে শায়েস্তা করার চাপ প্রয়োগ করে ছাত্রলীগ নেতারা।

মূলত শিবিরকে শায়েস্তা করাই তাদের উদ্দেশ্য। এই জন্য লেভেল ফিল্ড তৈরি করতে ফারুক হোসেনের মতো নিজ দলের কোন নিরীহ কর্মীর লাশ এই মুহূর্তে ছাত্রলীগের বড় প্রয়োজন ছিল। এদিকে দলীয় কোন্দলের জের ধরে কিংবা ছাত্রলীগের নেতাদের জ্ঞাতসারেই যে ফারুক হোসেনকে জীবন দিতে হয়েছে সে ব্যাপারে পুলিশও অবগত ছিল বলে জানা গেছে। প্রত্যক্ষদর্শীরা জানায়, ফারুকের লাশ এস এম হল গেটে পড়ে থাকার পর ম্যানহোল থেকে উদ্ধার পর্যন্ত পুরো সময় লাশ ঘিরে ছিল পুলিশ। এ সময় লাশের আশপাশে পুলিশ কাউকে ভিড়তে দেয়নি।

ছাত্রলীগ ও শিবির নেতাকর্মীরাও এ সময় ক্যাম্পাস থেকে পালিয়েছিল। অথচ সকাল ৭টার দিকে হঠাৎ করেই ফারুকের লাশ ম্যানহোল থেকে উদ্ধার করা হলো। তাহলে স্বাভাবিকভাবেই প্রশ্ন ওঠে পুলিশের পাহারায় থাকা লাশ ম্যানহোলে গেল কী করে? পুলিশ এ ব্যাপারে নীরব কেন? এই প্রশ্ন গতকাল ক্যাম্পাসে জোরেশোরেই আলোচিত হয়। আর লাশ পড়ে থাকতে দেখে পুলিশ কেন তা মেডিকেলে পৌঁছানোর ব্যবস্থা গ্রহণ করেনি। অথচ এ সময় অন্যান্য আহতদের হাসপাতালে নিয়ে যাবার ব্যাপারে পুলিশ তৎপর ছিল।

ফারুক হোসেন মৃত না জীবিত সেটা যাচাই করার জন্যও তো তাকে হাসপাতালের মর্গে পাঠানোর দায়িত্ব ছিল পুলিশের। এদিকে গত বছরের ১৩ মার্চ শিবির নেতা শরীফুজ্জামান নোমানী নিহত হওয়ার পর থেকে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রতিটি হলের গেট সংলগ্ন গেস্টরুমে একজন হাবিলদারসহ ১০/১২ পুলিশ কন্সটেবল নিরাপত্তার দায়িত্ব পালন করে। এছাড়াও হল প্রশাসনের নিয়োগ করা দুই জন গার্ড সব সময়ই গেটে অবস্থান করছিল। সোমবারের সংঘর্ষের সময় প্রতিটি হলে একজন পরিদর্শকের (ইন্সপেক্টর) নেতৃতেৃ বিপুল সংখ্যক পুলিশ মোতায়েন করা হয়। একজন পরিদর্শকসহ (ইন্সপেক্টর) বিপুল সংখ্যক পুলিশ সদস্য ও হলের গার্ডের উপস্থিতিতে সন্ত্রাসীরা কিভাবে এমন নৃশংস হত্যাকান্ড ঘটিয়ে তার লাশ টেনে হিঁচড়ে নিয়ে ম্যানহোলে রাখল সে ব্যাপারে অনেক প্রশ্নের জন্ম দিয়েছে।

এ সময় পুলিশ প্রশাসন কি ভূমিকা রাখল? কেন তারা সন্ত্রাসীদের আটক করেনি সে ব্যাপারে পুলিশের ভূমিকায় রহস্য ফুটে উঠেছে। তাহলে পুলিশের সহযোগিতায় এই হত্যাকান্ডটি ঘটেছে কী না এই প্রশ্নটি এখন ক্যাম্পাসে সবার মুখে

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.