আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

"মিনতি "।। পাঠকের কাছে ।।

অব্যক্ত বক্তব্যের ধারাবাহিক চলন,,

ছোট বেলার একটা ঘটনা বলি । আমি খুলনার গগন বাবু রোডস্থ 'ফাতেমা হাই স্কুলে' প্রথম ভর্তি হই । ভদ্রগোচর আধা ইংরেজি মিডিয়াম চালাতো ইতালীর শিক্ষকরা । মাত্র সোয়া তিন বছরে আমি ভর্তি হই বেবীতে । আমি খুব ছোট ছিলাম সবার মাঝে ।

যখন আমি এসেম্বলিতে দাড়াতাম আমার আম্মুর হাত ধরে দাড়িয়েছি । প্রতিটি দিন সকাল আটটায় আমাকে ক্লাসে ঢুকিয়ে আবার সাড়ে ১০ টায় টিফিন খাইয়ে আবার ১ টায় বাসায় নিয়ে যেত । বৃষ্টি-রোদ কেমন বুঝিনি যেমন বুঝছি এখন । আমার মায়ের কোলে ছাতার মাঝেই বেড়ে উঠেছে আমার পথচলা । যাহোক এক বছরে কেজিতে উঠলাম ।

প্রথম সাময়ীকি পরীক্ষা । অংক পরীক্ষা। আমার আম্মু বাসায় অংক করতে দিলে ১ থেকে ৫ নম্বর পর্যন্ত করতে দিলে আমি প্রথমে হয়ত ৪ নম্বর , তারপর ২ নম্বর এভাবে করতাম । আম্মুর ঝাড়ি । একদম ছিড়িয়ালী ১-৫ এভাবে করবি ।

পরদিন পরীক্ষার হলে প্রশ্ন যখন পেলাম দেখি প্রথম অংকটা বাদে সবগুলো পারি । কিন্তু আম্মুর আদেশ ১ থেকে করতে হবে । তাই ১ নম্বর অংকটা ভাবতেই পুরো পরীক্ষার সময় পার করে দিলাম । ফাকা খাতা দিয়ে এলাম জমা । আম্মুকে বলতেই হতবাক সে ! কিন্তু হয়ত আমি মোটামুটি ধরনের ছাত্র সত্ত্বেও ০০ পেলেও শুনেছিলাম মায়ের আদেশ ।

এতপর এ মায়ের একান্ত পরিশ্রমে ভর্তি হই খুলনা জিলা স্কুলে। খুলনা জিলা স্কুলে ভর্তির আগে হুদা স্যারের ব্যাচ ছিল নামকরা । একবার তার কোচিং এ ২০ এর মধ্যে খুব কম নম্বর পেলাম । বাসায় আসলে আম্মু খুব মার দিল । পরদিন পরীক্ষায় হাইস্ট মার্ক আমার ।

এভাবে ক্লাস নাইনে সায়েন্স পড়ার পূর্ব পর্যন্ত মা ছিল আমার গৃহ শিক্ষক । পরে হঠাৎ করে বাবার অসুস্ততা ও ব্যবসায়ীক লোকসানে প্রাচুর্যের অবস্থা র্বিপর্যস্থ হওয়ায় এইস.এস.সি'র সময়ে আমার পরিবার গ্রামের বাড়ি বাগেরহাটের মোড়েলগঞ্জে চলে যাই । সকল দিকে হঠাৎ ভারসাম্যহীন মনে হলেও আম্মুর দৃঢ়চেতা শক্ত হাতে আব্বুকে সাহস দিয়ে উঠে দাড়াই আমরা । পড়াশুনায় মাঝপথে এমন মফস্বলে খাপ খাওয়াতে না পারলেও আম্মুর মুখের দিক চেয়ে চেষ্টা করেছি কিছু করতে । গত ২৫ জানুয়ারী'১০ তারিখ শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় থেকে মাস্টার্স শেষ করলাম ।

দীর্ঘ এ যাত্রায় বিশ্ববিদ্যালয় জীবনে আম্মু হয়ত পড়াতে পারেনি । কিন্তু প্রতিটা মুহূর্ত ছিল তার অনুপ্রেরনা । হয়ত আম্মুর প্রতি দায়বদ্ধতা নিয়ে পড়াশুনা করেছি বলেই অনার্সে সেকেন্ন্ড হয়েছি । মাস্টার্সে ভাল ফলাফলের আশা রাখি । সকালে নাস্তায় ভাতের সাথে যখন একটা ডিম ভেজে আম্মু নিজে না রেখে ভাগ করে আমাকে, আমার একমাত্র বোনকে ও আব্বুকে দিত, আমরা তিনজন তা থেকে ভেঙে আবার আম্মুকে দিতাম ।

কোন কিছু খেত চাইলে সাথে সাথে বানিয়ে দিত । নিজে না খেয়ে, নিজের আনন্দ বিসর্জন দিয়ে আমাদের খুশি রাখতেন । তখন কিছুই বুঝিনি এখন বুঝছি । এখন পর্যন্ত জীবনে কোনদিন বাসায় আমার কাপড় আমি নিজে ধুইনি । যখন অসুস্থ হতাম আম্মুর দুশ্চিন্তার মুখখানা আর আদর আজ আমাকে কাদিয়ে তুলছে ।

আমার আম্মু অসুস্থ এখন । পেশার বেড়ে যাওয়ায় হঠাৎ হাটতে পারছেনা কদিন ধরে । জ্বর গায়ে । কাল খুলনায় যাচ্ছে ভাল ডাক্তার দেখাতে । আমি আমার নিজের জীবনের জন্য কিছু চাইনি ও চাইব বলেও মনে হয়না ।

সবসময় মনে হয় এমন কিছু করি যেন আমার আম্মার গর্ব হয় । সে খুশি হয়। নিজের জন্য নয় কোন কিছুই শুধু আম্মুর জন্য । আমার আম্মুর জন্য একটু দোয়া করেন প্লীজ ।


অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।