আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

মিনতি লতা ( পর্ব - ০১ )


(শুক্র ও মঙ্গলবারের ধারাবাহিক গল্প) জীবনে বোধ হয় আজ প্রথম, পা রাখলাম থানার বারান্দায়। এর আগে থানা পুলিশ সর্ম্পকে প্রত্যক্ষ কোন ধারণা লাভের সুযোগ হয়নি আমার। না গিয়ে উপায়ও ছিলনা। বিষয়টি সিরিয়্যাস। এটি নিয়ে গত দু'দিন ধরে রয়েছি চরম অস্থিরতায়।

দারুণ শংকীত। থানায় ঢুকে দেখলাম ডিউটি অফিসার হিসাবে রয়েছেন একজন নারী। পরনে তার গাঢ় নীল রঙের ইউনিফর্ম । ছোট্ট একটি টিপও আছে কপালে। তার বয়স হয়তো ত্রিশের উপরে হবেনা।

তাকে দেখে বেশ অবাকই লাগলো। প্রত্যন্ত অঞ্চলের কোন থানায় এসে যে মহিলা পুলিশ দেখতে পাবো, ভাবিনি কখনও। কিন্তু এই ভর দুপুরে থানায় কারেন্ট নেই। মাথার উপরের সিলিং ফ্যান রয়েছে বন্ধ। তার মুখ ও গলা বেয়ে টপটপ করে ঝরছে ঘাম ।

খবরের কাগজ দিয়ে হাত নেড়ে নেড়ে তিনি বাতাস খেয়ে চলেছেন অবিরত। সালাম দিয়ে তার সামনে বসলাম। তাকে আমার অভিযোগের কথা জানালাম। লিখিত অভিযোগের কপিটি মেলে ধরলাম সামনে। আমি যে স্থানীয় ডিগ্রি কলেজের একজন প্রভাষক, সে পরিচয়ও দিলাম।

তিনি বাতাস খেতে খেতে অভিযোগটির ওপর চোখ বোলাতে থাকলেন। এরপর সেটি একপাশে রেখে হাত উচু করে জোরে জোরে নিজের শরীরে বাতাস করতে লাগলেন। বুঝতে পারছি, প্রচন্ড গরমে তিনি কাহিল। নিজেকে ঠান্ডা করতে বাতাস করছেন আর সেই তালে দুলেদুলে উঠছে তার স্ফিত বুক। আমি উসফিস করতে থাকি।

বিচলিত হয়ে বলি, ইয়েস, নো, কিছু একটা বলুন। আপনিতো ওটা পড়ে রেখে দিলেন। মহিলা কেবল আমার দিকে তাকালো। কোন উত্তর না দিয়ে আরও জোরে জোরে বাতাস করাতে থাকলেন। সেই বাতাস আমার চুল ছুয়ে গেলো।

এবার একটু সুন্দর করে বললাম, ম্যাডাম, যদি আমার অভিযোগ লেখায় কোন প্রবলেম থাকে, প্লিজ গাইড লাইন দেন, আমি নতুন করে লিখে দেই। তিনি এবারও কিছু না বলে অহেতুক জিডি এন্ট্রির বইয়ের এককোণা ধরে টানাটানি করতে থাকলেন। আর পা দুটো এত জোরে দুলাতে থাকলো যে সেই কম্পন টেবিল ছুয়ে আমার শরীরও নাড়িয়ে দিচ্ছিল। তিনি বেশ বুঝতে পারছেন, আমি চরম ভাবে বিরক্ত হচ্ছি। কিন্তু কোন ভ্রুক্ষেপ নেই তার।

নিজেকে সামলে নিয়ে সরাসরি প্রশ্ন করি, এটি জিডি হিসাবে এন্ট্রি হতে কি কোন সমস্যা ? এবার তিনি একটু বিরক্ত ভাব করে তাকালেন। কিছু একটা বলতে গিয়ে হঠাৎ থেমেও গেলেন। আল্লাহর রহম, তখনই কারেন্ট চলে আসাতে মুহূর্তের মধ্যে তার মুড ভাল হয়ে গেলো। থেমেও গেলো তার পা দোলানো। আমার তখন মনে হলো তার গরম লাগার সাথে পা নাড়ানোর কোন যোগসুত্র আছে।

তা না হলে কারেন্ট আসার কয়েক সেকেন্ডের মধ্যে কেনো থেমে যাবে পা নাচানো ? সে যাই হোক। আমি ডিউটি অফিসারের চোখের দিকে তাকালাম। তিনিও আমার দিকে তাকিয়ে থাকলেন কয়েক সেকেন্ড। এরপর বললেন, আপনার মত এমন ঘটনা অনেক দেখেছি। সবই মান অভিমান।

দেখবেন কিছুদিন পর চলে আসবে। দেখুন ব্যাপারটা তেমন নয়। আমার সাথে তার মান অভিমানের কিছু হয়নি। বিয়ের আড়াই বছরেও মনে পড়েনা লতার সাথে মানে আমার স্ত্রীর সাথে কোন ঝগড়া ঝাটি হয়েছে। আমার প্রতি তার কোন অভিযোগ নেই।

আমরা অনেক সুখি। কথা শেষ হতেই ডিউটি অফিসার বললেন, আপনি শিক্ষক মানুষ। সবকিছু সাদা চোখে দেখলে হয়না। সাদা চোখে বলতে। তার কথার সুত্র ধরে পাল্টা প্রশ্নের কোন উত্তর পেলামনা।

তিনি বললেন, চা খাবেন। নো থ্যাংস। আচ্ছা, আপনি কি বাসায় প্রাইভেট পড়ান। হ্যা পড়াই। কতজন পড়ে।

এইতো পনেরো জন মত। ক'জন ছেলে, ক'জন মেয়ে। অধিকাংশ জনই আমার কলেজের ছাত্র। মহিলা কলেজের মেয়ে পড়ে দু'জন। আপনি কি বাসাতেই পড়ান।

হ্যা, কিন্তু কেনো বলুনতো। আপনি অপেক্ষা করুন। স্যার আসলে আপনার অভিযোগের বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেয়া যাবে। ও, ভাল কথা অভিযোগের মধ্যে আপনার স্ত্রীর বয়স উল্লেখ করেছেন। হ্যা, জন্ম তারিখ লেখা আছে।

সে অনুপাতে বর্তমানে তার বয়স ২৪ বছর, সেটিও উল্লেখ আছে। ওকে, ফাইন। আপনার স্ত্রীর ফটোটা দিন। অভিযোগের সাথে স্ট্যাপলার করে রাখি। আমি বললাম, ওটার সাথেই থাক।

স্ট্যাপলার করার কি দরকার? কেনো, স্ট্যাপলার করলে কি সমস্যা? না, কোন সমস্যা নেই। তবে স্ট্যাপলার করলে লতার ছবি নষ্ট হয়ে যাবে যে! পুলিশ অফিসার মহিলা বিস্ময়সূচক ভাব করে তাকালেন। এরপর দরখস্তর উপরে ছবিটা নিয়ে এক কোণায় স্ট্যাপলার করতে করতে বললেন, ভাইজান, বউকে যদি নিজের জীবনের সাথে এমন ভাবে স্ট্যাপলার করে না রাখতে পারেন, হারিয়েতো যাবেই। আমি আপনার কথা ঠিকমত বুঝলাম না মেডাম। আপনার বুঝে কাজ নেই।

স্যার আসলে ফের কথা হবে।
 

সোর্স: http://www.somewhereinblog.net     দেখা হয়েছে বার

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।