আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

রম্য সায়ন্সে ফিকশন

সব কথা বলা যাবে, সত্যটা বলা যাবে না।
একটি রম্য সায়েন্স ফিকশন জিল্লু স্যারের টাইমমেশিন আহমেদ মামুন দুলাল মিয়া কলেজের ছাত্র। সে ইন্টামিডিয়েট দ্বিতীয় বর্ষের পড়ে। তার গ্রামের নাম বড়জালিয়া। গ্রামের প্রায় সব মানুষ জেলে, তাই গ্রামের নাম বড়জালিয়া।

তার কলেজের নাম বড়জালিয়া ডিগ্রী কলেজ। এই কলেজে মোট সতের জন ছাত্র-ছাত্রী। সায়েন্সে মাত্র তিন জন। দু জন ছাত্র আর একজন ছাত্রী। ছাত্রীর বিয়ে হয়ে গেছে।

সে এখন আর কলেজে আসে না। সবাই বুঝে গেছে সে আর আসবেও না। সবাই বলে তার বিএ(বিয়ে) পাস হয়ে গেছে। বাকি দু জন ছাত্র হলো দুলাল মিয়া আর মতিন ভূইয়া। তার দু জন ছেলে বেলার বন্ধু।

দুলাল এসএসসি পরীক্ষায় টেনেটুনি পাস করেছে। তবুও সে সাইন্স নিয়েছে। কারণ তার প্রাণ বন্ধু মতিন সাইন্স নিয়েছে। সাইন্সের ছাত্র দু জন হলেও স্যার কিন্তু একজন। তিনি জিল্লু স্যার।

পদার্থ বিজ্ঞান পড়ান। কলেজে রসায়ন গণিতের শিক্ষক নেই। তাই এই দুই সাবজেক্ট নিয়ে দুলালের কোন মাথা ব্যাথা নেই। জিল্লু স্যার ভয়াবহ শিক্ষক। বিজ্ঞানী মানুষ।

সারাদিন গবেষনা নিয়ে ব্যাস্ত থাকেন। কলেজে তেমন একটা যান না। তার সাথে দুলাল মতিনও যায় না। জিল্লু স্যার এখন নতুন প্রজেক্ট নিয়ে ব্যাস্ত। তিনি টাইম মেশিন তৈরি করবেন।

তার দুই এসিটেন্ট দুলাল মতিন। তারা দিন রাত খটনি করে। দীর্ঘ ছয় মাস পরিশ্রমের ফলে যেটা তৈরি করলেন সেটা দেখতে কদাকার। লোহা লক্করের জঞ্জালের মতো দেখায়। অনেকটা পুরান টেম্পুর মতো।

তবে নিন্দুকেরা বলে বটবটিও দেখতে জিল্লু স্যারের টাইম মেশিন থেকে সুন্দল। দেখতে যেমনই হোক টাইম মেশিন বলে কথা। লোকজনের ঢল নামলো দেখতে। দুলাল মতিন হিমশিন খায় জনতা সামাল দিতে। একদিন দুলাল জিল্লু স্যারকে বলল, স্যার আমরা যদি টাইম মেশিন দেখতে টিকেট ব্যাবস্থা করতাম তাইলে ভালোই ইনকাম হইতো।

সপ্তাহে এক লাখ টাকা কামাইতে পারতাম। টাকা দিয়া তুমি কি করবা? স্যার আপনি বাড়ি থেকে পায়ে হেটে কলেজে আসেন। যদি একটা হোন্ডা হতো আমি আপনাকে নিয়ে কলেজে আসতাম। দুলাল মিথ্যা বলে। আসল ঘটনা মানসুরা।

তাদের কলেজে পড়ে। আর্টসের ছাত্রী। পরীর মতো দেখতে। হাটু পর্যন্ত চুল। মানসুরার এককথা, একমাত্র হোন্ডার মালিক হলেই তার ভালোবাসা পাবে।

এখন দুলালের হোন্ডার খুব প্রয়োজন। টাইম মেশিনের প্রয়োজন নেই। কেউ যদি টাইম মেশিন নিয়ে তাকে একটা হোন্ডা দেয় তাহলে দুলাল টাইম মেশিনটা চুরির ব্যাবস্থা করে দিবে। মতিন বলল, স্যার আমি যদি এই টাইম মেশিনে চড়ে অতীতে ধরেন দশ বছর পেছনে ফিরে যাই। তখন দেখবো আমার বয়স আট বছর।

আমি যদি আমাকে হত্যা করে আসি তাহলে কি হবে? আমি কি বর্তমানে থাকবো? স্যার বললেন, সেটা সম্ভব না। কেন? শোনো টাইম মেশিনে চড়ে আমরা শুধু ভবিষ্যতে যেতে পাবো। অতীতে নয়। কারণ সময়ের ধর্ম তীরের মতো। সামনের দিকেই যাবে।

পেছনে নয়। দুলাল বলল, স্যার টাইম মেশিনে চড়ে আমরা কত দিন ভবিষ্যতে যেতে পারবো? জিল্লু স্যার তার পকেট তেকে ক্যালকুলেটর বের করে হিসাব কষতে বসলেন। ত্রিশ মিনিট পর বললেন, এটায় এখন যে পরিমাণ তেল আছে তা দিয়ে একশ বছর ভবিষ্যতে যাওয়া যাবে। চলেন স্যার আমরা একশ বছর ভবিষ্যৎ থেকে ঘুরে আসি। মূর্খের মতো কথা বলো কেনো।

আমরা শুধু ভবিষ্যতে যেতে পারাবো। ফিরতে পারবো না অতীতে। কখনো ফিরে আসতে পরবো না। নতুন ফ্যাকড়া শুরু হয়ে গেল। জিল্লু স্যারের টাইম মেশিন পরীক্ষা করা সম্ভব হচ্ছে না।

এটা ভবিষ্যতে যেতে পারবে। ফিরতে পারবে না বর্তমানে। তাই কেউ টাইম মেশিনে চড়তে রাজি হচ্ছে না। সবাই শুধু এক নজর দেখে চলে যায়। জিল্লু স্যার পড়লেন মহা টেনশনে।

অনেককেই হাতে পায়ে ধরে অনুরোধ করলেন। কেউ ঘর সংসার বউ বাচ্চা ছেড়ে ভবিষ্যতে যেতে রাজি হচ্ছে না। দুলাল বলল, স্যার টাইম মেশিন তো বানাইলাম। এখন একটা হোন্ডা বানাই। স্যার বললেন, পরে দেখা যাবে।

স্যার তার পকেট থেকে ক্যালকুলেটর বের করে হিসাব শুরু করলেন। দুলাল ভাবলো এখন আর দাড়িয়ে থেকে লাভ নেই। টাইম মেশিনের পেছনে অনেক সময় ব্যায় করেছে সে। কত দিন ধরে মানসুরাকে দেখছে না। এতো ভাবনা যাকে নিয়ে।

সেই মানসুরা দুলালকে পাত্তা দেয় না। সুযোগ পেলে ছোট খাটো অপমান করে। অপমান করলেও দুলালের মানসুরাকে ভালোলাগে। এখন নিশ্চয়ই অপমান করবে না। একটা টাইম মেশিন তৈরি করা চাট্টিখানি ব্যাপার না।

যে কোন সময় বিবিসি সিএনএন চলে আসেতে পারে। সেখানে তাকে ইংরেজীতে সাক্ষাতকার দিতে হবে। এখন ইংরেজী শেখা দরকার। সবার আগে দরকার মানসুরার সাথে দেখা করা। তাকে দেখে মানসুরা ফিক করে হেসে উঠল।

ঠাট্টার হাসি না হৃদয়ের গভীরের হাসি ঠিক বুঝা গেলো না। তবে দুলালের বুকের মধ্যে চিন চিন ব্যাথা শুরু হয়ে গেছে। এই ব্যাথা তার মানসুরার কাছে আসলেই শুরু হয়। মানসুরা বলল, দুলাল ভাই আপানারা কি মেশিন বানাইছেন? টাইম মেশিন। এইডা দিয়ো কি আখ ভাঙে? তুমি কি বললা? শুনলাম আপনারা এই মেশিন দিয়া আখের শরবত বানাইবেন।

বাজারে পাঁচ টাকা দরে এক গ্লাস আখের শরবত বিক্রি করবেন। শরবত বেইচ্চা হোন্ডা কিনবেন। দুলাল রেগে গেলে তোতলা হয়ে যায়। সহজে মুখ দিয়ে কথা বের হয় না। তার অনেক কথা বলার ছিলো।

কিন্তু মুখ দিয়ে বের হলো, দেখায়া দিমু। হোন্ডা কিন্না দেখাইবেন। শুধু দেখাইবেন। আমারে চড়াইবেন না? দুলাল রাগে কষ্টে অভিমানে আর দাড়াল না। সোজ দৌড় দিল।

এক দৌড়ে জিল্লু স্যারের বাড়িতে। স্যার টাইম মেশিন সামনে চেয়ার পেতে বসে আছে। তার হাতে ইংরেজী স্পোকেন বই। ইংরেজেিত কথা বলার প্রাকটিস করছেন। টাইম মেশিন আবিষ্কার করে যদি বিবিসিতে বাংলায় সাক্ষাতকার দেন লোকে তাকে মূর্খ ভাববে।

দুলাল বলল, স্যার আমি এই খবিস মানব সমাজে থাকতে চাইনা। আমাকে টাইম মেশিনে করে ভবিষ্যতে পাঠিয়ে দেন। দুলালের কথা শুনে জিল্লু স্যার গা ঝাড়া দিয়ে উঠে দাড়ালেন। তিনি টাইম মেশিনের পরীক্ষা নিয়ে এক প্রকার টেনশনের মধ্যে আছেন। এই সুযোগ তিনি হাত ছাড়া করতে রাজি নন।

সে প্রায় ঠেলে দুলালকে টাইম মেশিনের মধ্যে বসিয়ে দিলেন। তারপর জানালা দিয়ে বললেন, আমারও এই খবিশ মানব সমাজে থাকতে ইচ্ছা করে না। যদি টাইম মেশিনে চড়ে দুজন যাওয়ার জায়গা থাকতো আমিও তোমার সাথে চলে যেতাম। সত্যি কথা বলতে কি দুলালের পাশে একটা সিট খালি আছে। স্যার চলে গেলে বিবিসিতে সাক্ষাতকার দিবে কে? তিনি কত কষ্ট করে ইংরেজীতে সাক্ষাতকার মুখস্থ করেছেন।

টাইম মেশিন তৈরি করা থেকে ইংরেজী শেখা বেশি কঠিন কাজ। তিনি দুলালের পাশে তার পোষা কুকুরটাকে বসিয়ে দিলেন। দুলালকে সাহস দিয়ে বললেন, ভবিষ্যৎ পৃথিবীতে তোমাকে একা নামতে হবে না। তুমি চাইলে একশ বছর আগের কুকুর বলে বেশি দামে বেচে একটা হোন্ডা কিনতে পারবে। স্যার টাইম মেশিনের গায়ের কী-বোর্ডের একের পর এক বোতাম চেপে যাচ্ছেন।

হঠাৎ যন্ত্রটা নড়ে উঠল। চুলায় ভাত ফোটার মতো একটা শব্দ শুরু হলো। গট গট গট গট.....। শব্দের তীব্রতা বাড়ছে। দুলালের ইচ্ছে করছে মানসুরাকে দেখতে।

একবার যদি মানসুরাকে দেখতে পেত। শেষ বারের মতো। এর মাঝে কুকুরটা কিঁউ করে কেঁদে উঠল। সবকিছু অন্ধকার। *** *** সাদা একটা ঘর।

চারদিকে সাদা। হঠাৎ তীব্র একটা আলো চোখের মধ্যে গেথে বসল। আলোটা হঠাৎ করে নিভে যায়। ফিসফিস শব্দ। অর্থহীন কথাবার্তা।

দীর্ঘ নীরবতা। একটি নারী কন্ঠ, পেসেন্টের জ্ঞান ফিরেছে। দুলাল হাসপাতালের বেডে শুয়ে আছে। মতিন এসে দুলালের পাশে বসল। কাধে হাত রেখে বলল, দোস্ত তোর হায়াত আছে।

টাইম মেশিন ব্লাষ্ট হয়েছিল। স্যারের কুকুরটা মরে গেছে। তুই বেচে গেছিস। স্যারকে পুলিশে ধরে নিয়ে গেছে। মানসুরাও এসেছে।

সে দুলালের পাশে বসল। সে কাদছে, আমার হাত ধরে শপথ করো। আমাকে ছেড়ে আর ভবিষ্যতে যাবে না। দুলালের অনেক কথা বলতে ইচ্ছে করে। তার মনে অনেক কথা।

সব কথা বলা যায় না। সে আর মানসুরাকে ছেড়ে কোথাও যাবে না। তার ভালোবাসা পেলে সে হাজার বছর বেচে থাকবে। এই মানবের মাঝে। এই সমাজে! রস+আলো প্রথম আলো ২০০৯
 


অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.