আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

হাইতিতে হাহাকার



মোহাম্মদ আবুল হোসেন: হাইতিতে হাহাকার। ত্রাণ নেই। পানি নেই। ওষুধ নেই। খাদ্যের সঙ্কটে জীবিতরা জাতিসংঘের একটি খাদ্যগুদাম লুট করেছেন।

ঘটনার ভয়াবহতায় পোর্ট অব প্রিন্স ছাড়ছেন হাজার হাজার মানুষ। এ সময় তারা উদ্ধার হওয়া স্বজনের লাশ কাঁধে নিয়ে ছুটছেন। তারা ওই লাশ যার যার বাড়ি নিয়ে সমাহিত করতে চান। এখনও সেখানে থেকে থেকে ভূকম্পন হচ্ছে। এমনি এক অবস্থায় পুরো হাইতি ডুবে আছে শোকসাগরে।

সেখানে লাশ রাখার আর কোন জায়গা নেই। মর্গ উপচে পড়ছে লাশে। ফলে বাইরে যেখানে সেখানে ফেলে রাখা হয়েছে মৃতদেহ। একটি দুটি নয়, হাজার হাজার । ধ্বংসস্তূপের নিচে এখনও আটকে আছেন অসংখ্য মানুষ।

তাদের বেশির ভাগই মারা গেছেন বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে। তার কোনটি বুলডোজারের সাহায্যে উদ্ধার করে তুলে দেয়া হচ্ছে ট্রাকে। ট্রাক সেই লাশ কোথায় নিয়ে যাওয়া হচ্ছে সে খবর কেউ নিচ্ছেন না। নালা, নর্দমায় জমেছে রক্ত। মৃতদেহে ধরেছে পচন।

দুর্গন্ধ ছড়াচ্ছে। তার মাঝ দিয়ে মুখে ‘মাস্ক’ পরে চলছে উদ্ধার অভিযান। লাশে পচন ধরায় সেখানে সংক্রামক নানা রোগের প্রকোপ দেখা দেয়ার আশংকা করা হচ্ছে। যারা বেঁচে আছেন মঙ্গলবারের মহাপ্রলয় থেকে তাদের ঠাঁই হয়েছে গাছতলায়, রাসত্মায়- খোলা আকাশের নিচে। আহতরা চিকিৎসা পাচ্ছেন না।

সব মিলে ভূমিকম্প বিধ্বসত্ম হাইতিতে এক অবর্ণনীয় অবস্থা বিরাজ করছে। খোলা রাসত্মায় এলোমেলো ফেলে রাখা হাজারো লাশের মাঝে আপনজনের মুখ খুঁজে ফিরছেন অনেকে। ধ্বংসস্তূপের চাপে চেহারা বিকৃত হয়ে যাওয়ায় এবং পচন ধরায় অনেকেই আপনজনের দেহ হাতড়ে চলে যাচ্ছেন। কিন্তু তাকে চিনতে পারছেন না। স্বজনের মৃতদেহ না পেয়ে কান্নায় আকাশ-বাতাস ভারি করে তুলছেন তারা।

১০ মাস বয়সী মেয়ে ক্রিস্টিনের লাশ পেয়ে আর্ত চিৎকারে মাটিতে লুটিয়ে পড়েন লায়নেল মিচাউদ। এ সময় পোর্ট অব প্রিন্সে সৃষ্টি হয় এক হৃদয়বিদারক দৃশ্য। বুক চাপড়ে লায়নেলের কান্না দেখে হতবিহ্বল হয়ে পড়েন উদ্ধারকর্মীরা। এখনও নিহতের সঠিক সংখ্যা জানা যায়নি। কেউ সঠিক সংখ্যার কাছাকাছি আন্দাজও করতে পারছেন না।

ইতিমধ্যে সেখানে বিদেশী ত্রাণ পৌঁছেছে। কিন্তু ধ্বংসস্তূপে সড়ক যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হওয়ায় প্রত্যনত্ম অঞ্চলগুলোতে তা পৌঁছে দেয়া যাচ্ছে না। আমরা ুধার্ত প্রেসিডেন্টের বাসভবনের বাইরে বেশকিছু মানুষ সমবেত হয়ে চিৎকার করছেন- আমরা ুধার্ত। খাদ্য চাই। আমাদের বাঁচানোর জন্য কিছু করম্নণ।

কিন্তু তাদের ডাকে সাড়া দেয়া কৌশলগত দিক দিয়ে অনেক কঠিন হযে পড়েছে। এরই মধ্যে যেটুকু সাহায্য পৌঁছেছে পোর্ট অব প্রিন্সের বিমান বন্দরে তা সেখান থেকে বের করা যাচ্ছে না। ত্রাণবাহী একটি বিমান থেকে সেখানে বৃহস্পতিবার ত্রাণ খালাস করা হচ্ছিল। এ সময়ে ওই বিমানবন্দরে পৌঁছে যায় আরও কয়েকটি ত্রাণবাহী বিদেশী বিমান। কিন্তু বিমানবন্দরে আর কোন জায়গা না থাকায় ওই সব বিমানকে এ সময় অপেড়্গা করতে বলা হয়।

কিন্তু তাতে জ্বালানি ফুরিয়ে আসায় বিমানগুলো ফের নিজদেশে ফেরত চলে যায়। রোদে ফেলে রাখা হয়েছে অসংখ্য মৃতদেহ শত শত মৃতদেহ ফেলে রাখা হয়েছে খোলা রোদে। এর মধ্যে রয়েছে শিশুর লাশ। বৃদ্ধদের লাশ। আছে প্রাপ্ত বয়স্কদের লাশ।

তার মাঝে মেয়ের লাশ খুঁজছিলেন রোইলিন এলিসি (৫৮)। তার চোখেমুখে এক অব্যক্ত ক্রন্দন। তিনি বলেছেন, উদ্ধার কর্মীরা আমার মেয়ের লাশ নিয়ে গেছে। একটি নিশান ট্রাকে নিযে কোথায় চলে গেছে জানি না। ওই ট্রাকে লেখা ছিল ‘পুলিশ’।

তিনি বৃহস্পতিবার ফরাসি দূতাবাসের সামনে থেকে তার মেয়ের মৃতদেহ খুঁজে পান। বলেন, ট্রাকে করে তাকে কোথায় নিয়ে যাওয়া হয়েছে, তার মৃতদেহ কি করা হবে তা আমি জানি না। তার মতো আরেকজন খুঁজে ফিরছিলেন তার ভাইয়ের মৃতদেহ। না পেয়ে শুধু ভাই ভাই বলে চিৎকার করছেন। তার চিৎকারে, বুক নিংড়ানো আবেদনে কেউ সাড়া দিচ্ছে না।

সাদা পোশাকের একজনের দিকে চোখ পড়ে যায় সবার। তিনি একটি লাউডস্পিকারে বলছেন, ঈশ্বর আবার আসছেন। কিন্তু শোকে পাথর হাইতির মানুষ তার কথায় মনোযোগ দিচ্ছেন কতটুকু তা কেউ জানে না। কারণ সবাই ছুটছেন বাঁচার জন্য। তার মাঝ দিয়ে চিনে নেয়ার চেষ্টা করছেন আপনজনের দেহ।

সরকার কাজ শুরম্ন করেছে ভয়াবহ বিপর্যয়ের পর হাইতিতে রাষ্ট্রীয় যন্ত্র কাজ শুরম্ন করছে। সবেমাত্র দেখা গেছে রাষ্ট্রীয় পুলিশ সুসংগঠিত উপায়ে নেমেছে উদ্ধার অভিযানে। বৃহস্পতিবার রাসত্মাঘাট পরিস্কার করার কাজ শুরম্ন হয়েছে। পিয়েরে রিকি কনস্ট্যন্ট (২৪) নামে এক ইন্সপেক্টর বলেছেন, প্রেসিডেন্ট ওবামাকে বলুন আমাদের সাহায্য দরকার। এখানে প্রেসিডেন্টের বাসভবন ধ্বংস হয়ে গেছে।

আইন মন্ত্রণালয়, অগ্নি নির্বাপনকারী বিভাগ ধ্বংস হয়ে গেছে। ত্রাণ আসছে বিভিন্ন দেশ থেকে ত্রানসামগ্রী যাচ্ছে হাইতিতে। কিন্তু সেখানে বিরাজমান বিশৃংখল পরিস্থিতির কারণে তা পৌঁছে দেয়া যাচ্ছে না দুর্গত মানুষের কাছে। ওদিকে হাইতিতে যাওয়ার জন্য কিউবার আকাশপথ ব্যবহারের আর্জি জানিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র। কিউবা সেই অনুমোদি দিলে দ্রম্নত ওষুধপত্রবাহী ফাইট পাঠানো যাবে হাইতিতে।

এতে মিয়ামি থেকে হাইতিতে যেতে সময় কমবে ৯০ মিনিট। হোয়াইট হাউজের মুখপাত্র টমি ভিয়েটর বলেছেন, কিউবার সেনাবাহিনীর সঙ্গে ইতিমধ্যে একটি চুক্তি হয়েছে। তবে কতগুলো ফাইট পাঠানো হবে এ পথ ব্যবহার করে তা স্পষ্ট করা হয়নি। আগে থেকেই জরম্নরি সময়ে মেডিকেল ফাইট পরিচালনা নিয়ে দু’দেশের মধ্যে একটি চুক্তি আছে। সেই চুক্তিকে এখন নূতন করে প্রসারিত করা হবে।

বিশ্বের কমপড়্গে ৩০ টি দেশ এরই মধ্যে হাইতিতে ত্রাণ পাঠাতে উদ্যোগ নিয়েছে। দৈনিক মানবজমিন, ১৬ই জানুয়ারি

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.