আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

সেহওয়াগ অযৌক্তিক কিছু বলেননি

সবকিছুই চুকিয়ে গেছে গালিব! বাকি আছে শুধু মৃত্যু!!

প্রায় ১১ বৎসর আগে ১৯৯৯ সালের বিশ্বকাপের সময়টাতে বাংলাদেশকে যখন টেস্ট স্ট্যাটাস দেবার দাবি করা হচ্ছিল বা এটা নিয়ে আলোচনা চলছিল তখন বাংলাদেশ দলের কোচ গর্ডন গ্রীনিজ এক মন্তব্যে বলেছিলেন, বাংলাদেশকে টেস্ট স্যাটাস দেবার মতো উপযুক্ত সময় এখনো আসেনি। এ কথাতে তখনকার বোর্ড সভাপতি সাবের হোসেন চৌধুরী এতোটাই তেতে ওঠেছিলেন যে তিনি জনসমক্ষে ঘোষণা দিয়েছিলেন যে, গ্রীনিজ দেশে ফেরামাত্র তাঁকে শোকজ করা হবে। গ্রীনিজ হয়তো তাঁর হুমকিতে এতোটাই ভয় পেয়েছিলেন যে, তিনি আর এ বঙ্গ-বদ্বীপে আসার সাহস পাননি। অথচ ১৯৯৭ সালে আইসিসি চ্যাম্পিয়ন হওয়ার পর এই গ্রীনিজকেই আমাদের বোর্ড এবং দেশের হর্তাকর্তারা জাতীয় হিরোতে পরিনত করেছিলেন। তাঁকে সন্মানসূচক বাংলাদেশের নাগরিকত্ব ও পাসপোর্ট প্রদান করা হয়।

এমন পাসপোর্ট ও নাগরিকত্ব নোবেল জয়ের পর অমর্ত্য সেনকেও প্রদান করা হয়েছিল। আমি নিশ্চিত তাঁদের দু'জনের কেউ কোনদিন এ পাসপোর্ট ব্যবহার করেননি বা করবেন না। অবশ্য এভাবে যেচে নিজের বউ বর্গা দেওয়ার আমাদের এ প্রথাটা প্রাগৈতিহাসিক। যাহোক, কথা হচ্ছিল বাংলাদেশের টেস্ট স্ট্যাটাস বিষয়ে গ্রীনিজের মন্তব্য নিয়ে। তাঁর মন্তব্যের প্রেক্ষিতে এক সময়ের হিরো বলে বিবেচিত গ্রীনিজকে ভৎসনার হিরিক পড়ে যায়।

আমাদের সংবাদপত্রগুলোতে তাঁকে নিয়ে ব্যাঙ্গাত্বক লেখার প্রতিযোগিতা শুরু হয়। শেষ পর্যন্ত গ্রীনিজকে অপমানজনকভাবে বিদায়ের মাধ্যমে এ অধ্যায়ের সমাপ্তি হয়। টেস্ট স্ট্যাটাসের প্রায় এক যুগ হতে চলল। এ এক যুগে বাংলাদেশের টেস্ট পারফর্মেন্স দেখলে কেউ বলবেনা যে গ্রীনিজ ভুল কিছু বলেছিলেন। বাংলাদেশের পারফর্মেন্স এর কারণে অস্ট্রেলিয়া বা সাউথ আফ্রিকার মতো দেশগুলো আমাদের সাথে টেস্ট খেলতে রীতিমত অনীহা প্রকাশ করে এবং গ্রীনিজের ধারাবহিকতায় রিকি পন্টিং, শেন ওয়ার্ন এবং ম্যাথু হেইডেনরাও বাংলাদেশের টেস্ট স্ট্যাটাসের যৌক্তিতা নিয়ে প্রশ্ন তুলেন।

তবে এগুলো নিয়ে আমাদের হর্তকর্তা বা সংবাদপত্রগুলো তেমন হৈচৈ করেনি। এর কারণ সম্ভবতো পন্টিং কিংবা হেইডেন কেউই গ্রীনিজের মতো বাংলাদেশের চাকরী করেন না। চাকরী করলে এ অপ্রিয় সত্য বলার জন্য তাঁদের বিরুদ্ধেও হয়তো সংবাদপত্রগুলোতে ব্যাঙ্গাত্বক কলামের হিড়িক পড়ে যেত এবং অবশেষে গ্রীনিজের মতোই অপমানজনকভাবে বিদায় করা হত। গ্রীনিজ, পন্টিং, ওয়ার্ন এবং হেইডেনের ধারাবাহিকতায় গতকালকে ভারতের মারকুটে ব্যাটসম্যান বীরেন্দর সেহওয়াগ বাংলাদেশের টেস্ট স্যাটাস নিয়ে নেতিবাচক মন্তব্য করেছেন। বাংলাদেশের অতীত পারফর্মেন্সের ভিত্তিতে তাঁর বক্তব্য অযৌক্তিক নয়।

তবে একজন ভারতীয়ের কাছ থেকে এমন মন্তব্য হয়তো আশা করা হয়নি। কারণ ধারণা করা হয় যে ভারত, পাকিস্তান এবং শ্রীলংকার অতিরিক্ত লবিংয়ের কারণেই অনেকটা আগেভাগে বাংলাদেশ এ সুযোগ দেয়া হয়েছিল। এমতাবস্থায়, ভারতের মতো একটি শুভাকাংখী দলের একজন প্রভাবশালী খেলোয়ার কেন এ ধরণের মন্তব্য করলেন তা বিশদভাবে পর্যালোচনার দাবি রাখে। সেহওয়াগের এ মন্তব্যের অনেক ব্যাখা হয়তো অনেক দিবেন। তবে আমাদের সংবাদপত্রগুলো সেই পুরাতন পথেই হাটবে।

তাঁরা এটাকে নিয়ে ব্যঙ্গ করবে, সেহওয়াগকে তামাশার পাত্র বানাবে। তবে সত্য কথা হচ্ছে এই যে, বাস্তব অবস্থার প্রেক্ষিতে ভারত, পাকিস্তান বা শ্রীলংকার মতো দলকে চটানোর মতো কোন সুযোগ আমাদের নেই। আমাদের পারফর্মেন্স এমন নয় যে, আমরা তাঁদের তুরি মেরে ফেলে দিব। ভাল না লাগলেও আমাদেরকে ভারতীয়দের সাথে থাকতে হবে। আমরা গ্রীনিজ, পন্টিং, হেইডেন এর বিরুদ্ধে যেমন আক্রমনাত্বক ছিলাম আমার মনে হয়না ভারতীয়দের বিরুদ্ধে সে রকম হওয়ার কোন সুযোগ আমাদের আছে।

কারণ নিঃসন্দেহে ভারত এখন আইসিসির সবচেয়ে শক্তিশালী সদস্য। আর এটাতো সত্যি যে, অস্ট্রেলিয়া বা সাউথ আফ্রিকা কোন অবস্থায়ই আমাদের শুভাকাংখী নয়। তাঁরা কখনই ক্রীকেটে অশ্বেতাঙ্গদের মেনে নেয়নি, নেবেও না। মনে কষ্ট নিয়ে হলেও আমাদেরকে আমাদের বলয়ে থাকতে হবে। ব্যক্তিগতভাবে আমার মনে হয় সেহওয়াগের মন্তব্যটাকে ইতিবাচকভাবে নেয়া উচিত।

তিনি হয়তো আমাদের পারফর্মেন্সের উন্নতির উদ্দেশ্যেই এটা বলেছেন। তাই উচিত হবে এটা নিয়ে কোন বাড়াবাড়ি না করে নিজেদের অবস্থার উন্নতি করা এবং পারলে পরফর্মেন্সের মাধ্যমে তাঁর জবাব দেয়া। অভিজ্ঞতার আলোকে এটা বলা যায় পারফর্মেন্সের উন্নতি বর্তমান ফর্মেটে সম্ভব নয়। আমরা যোগ্যতার ক্রম ধাপ না পেরিয়ে একেবারে সর্বোচ্চ পর্যায়ে পৌছে গেছি। আমাদের উচিত ছিল প্রতিবেশির দেশের প্রথম শ্রেণীর দলগুলোর সাথে নিয়মিত খেলা মাধ্যমে একটা ধাপ অর্জন করা।

সেটা আমরা করিনি এবং এটা নিশ্চিত যে পর্যন্ত আমরা সে ধাপটা রপ্ত না করতে পারি সে পর্যন্ত আমাদের টেস্ট পারফর্মেন্সের কোন উন্নতি হবেনা। আমাদের নিয়ে এই পরিহাস, তামাশা চলতেই থাকবে। তাই উচিত হবে আপাতত টেস্ট থেকে নিজেদের প্রত্যাহার করে টেস্ট খেলুরো দেশগুলোর প্রথম শ্রেণীর দলগুলোর সাথে নিয়মিত তিন, চারদিনের খেলা খেলে নিজেদের সর্বোচ্চ মানের জন্য প্রস্তুত করা। শুনতে ভাল না লাগলেও এটাই বাস্তব, এটাই সত্য। যতোদিন পর্যন্ত আমরা তা অনুধাবন করতে না পারব অন্যরা আমাদের নিয়ে তামাশা করবেই।


অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।