আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

কোপেনহেগেন জলবায়ূ সম্মেলনে উপস্থিত সব নেতাদের প্রতি....



আমি বাংলাদেশ থেকে এসেছি। যে দেশে ১৫ কোটি মানুষের বসবাস। যে দেশকে আপনাদের অনেকেই চেনেন দারিদ্র আর সংগ্রামের দেশ হিসাবে। ক্ষুধার দেশ হিসাবে। আর আমি আর আমার নাগরিকরা যে দেশকে চিনি যুদ্ধে জয়ী এক সাহসী জাতির দেশ হিসাবে।

বন্যায় বারবার আক্রান্ত হয়েও 'কখনো মাথা নোয়াবার নয়' দেশ হিসাবে। শত শত বছর রক্ত চুষে খাওয়ার পরও উঠে দাঁড়ানোর মত শক্ত সমর্থ এক দেশ হিসাবে। আমি সেই দেশের প্রতিনিধিত্ব করতে এসেছি যে দেশ শিক্ষার হারে পিছিয়ে থাকলেও সামাজিক সূচকগুলোতে এশিয়ার অনেক দেশ থেকে এগিয়ে। যে দেশ সম্পূর্ণ তেরী ঘুরে দাঁড়ানোর জন্য। যে দেশ বিশ্ব মহামন্দার মহাভয়কে বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখিয়ে তার ভিতর থেকে অর্থনৈতিক ইতিবাচক সূচককে বের করে আনার তেজ ধরে।

যে দেশ সকল সময় নিপীড়িত জাতিগোষ্ঠির কন্ঠস্বর। যে দেশ সব সময় প্রস্তুত শান্তির পক্ষের অধিকারকে প্রতিষ্ঠা করতে। আমি আজ এই মঞ্চে দাঁড়িয়েছি আমার দেশের জন্য আর সেইসব মানুষের জন্য যারা আছে নতুন কিছু শোনার অপেক্ষায়, আমাদের সবার কাছ থেকে। কী শোনাব আমরা তাদের আজ। আমি দাঁড়িয়েছি বাংলাদেশের পক্ষে, আমি দাঁড়িয়েছি এশিয়ার ক্ষুদ্র দ্বীপ রাষ্ট্রগুলোর পক্ষে, আমি দাঁড়িয়েছি আফ্রিকার দরিদ্র-বিপন্ন জাতিগোষ্ঠীর পক্ষে।

আমি কথা বলছি অর্ধ শত কোটি মানুষের প্রতিনিধি হয়ে। আজ এখানে দাঁড়িয়েছি আমাদের অধিকারের কথা বলতে, অর্ধ শত কোটি মানুষের অস্তিত্বের জন্য লড়াইয়ের কথা বলতে। নিশ্চয়ই কোন দান চাইতে নয়। উন্নত বিশ্বের এতদিনের নির্বিচারে এবং তথাকথিত 'উন্নতিকরণ' মিশন চালানোর পরিনতি দেখাবার জন্য। আমি দাঁড়িয়েছি কী ভয়ানক পরিনতি আমাদের অপেক্ষায় তা বোঝাতে, আমরা যারা কোনভাবেই এর সাথে যুক্ত না।

কোনভাবেই দায়ী না। যারা শুধুই অপেক্ষা করছি সেই ভয়াবহ পরিনতিকে বরণ করে নেয়ার জন্য! আমাদের সমস্বর জিজ্ঞাসা - তাই কি হওয়া উচিৎ? সেটা কি কোনভাবেই নৈতিকতার বিচারে উৎরে যায়? সেই পদক্ষেপ কোনভাবেই কি আমাদের, যারা নিজেদেরকে বিশ্ব নেতৃত্বের আসনে বসিয়েছি দায় থেকে মুক্তি দেবে? যদিও এখন তা দেয় চাতুর্য্য বা অসাবধানতাবসতঃ, দেবে কি তা পরবর্তী প্রজন্মের প্রশ্ন থেকে মুক্তি? ইতিহাস কি মুক্তি দেবে ? মুক্তি পাওয়া যাবে কি নিজের কাছে? গ্লানি থেকে পাওয়া যাবে কি মুক্তি? আজ বিশ্বনেতৃত্ব সমবেত হয়েছি প্রায়শ্চিত্ত করার জন্য। আমরা সমবেত হয়েছি বিশ্বমাতাকে রক্ষা করার জন্য যার কোলে আমি আপনি আমরা অনাগত আমাদের ভবিষ্যত বসবাস করবে। বসবাস করবে সুস্থভাবে, সুখে আর শান্তিতে। ভাতৃত্ব আর বন্ধুত্বের বন্ধনে।

যুদ্ধ-অশান্তি-পরস্পর দোষারোপের সংস্কৃতিতে নয়। আজ আমাদের চুড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেওয়ার সময়। আজ আমাদের মহাপরীক্ষার সময়। আজ নিজেদেরকে প্রমান করার সময়। প্রমান করতে হবে বিশ্ব জনগনের কাছে আর একান্তই নিজেদের কাছে।

আর এরচেয়ে লজ্জার কী হবে যদি আজ এই কক্ষে বিশ্বের তাবৎ নেতারা মিলে কোন মীমাংসায় পৌঁছাতে না পারি! বিশ্ব মাতৃকার এই চরম দুঃসময়েই যদি না তার পাশে দাঁড়াতে পারি। তাহলে আর কবে শুধব 'মাতৃঋণ' ? নেতা হয়ে যদি পথ খুঁজে না পাই তাহলে আমরাই বা কিসের নেতা! বিশ্বজনগন আর কাদের উপর ভরসা করবে কবে! এটা তো ভাববার মোটেই কোন অবকাশ নেই যে, এ শুধুই দরিদ্র দেশের সমস্যা - আমার ঘরে আগুন লাগলে তা পাশের ঘরে লাগতে কতক্ষণ? আসুন আজ আমরা ক্ষুদ্র দেশ-জাতি-গোষ্ঠির স্বার্থের কথা ভুলে এই ধরীত্রির কথা ভাবি যেখানে আমাদের আরো বহু পথ হাঁটা বাকি। আমাদের প্রজন্মের পর প্রজন্মের বসবাস করা বাকি। যারা গর্বের সাথে, সম্মানের সাথে উচ্চারণ করবে আমাদের নাম। বলবে আমাদের একদল নেতা ছিলেন যাঁরা তাঁদের ভুল বুঝতে পেরেছিলেন আর যাঁরা শুধরেও নিয়েছেলেন।

যাঁরা সত্যিকার অর্থেই শিক্ষিত ছিলেন। আমাদের শুভবুদ্ধির উদয় হোক। জয় হোক ধরীত্রির, জয় হোক মনুষ্যত্বের।

সোর্স: http://www.somewhereinblog.net     দেখা হয়েছে বার

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.