আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

বার্লিন থেকে কোপেনহেগেন: জলবায়ু পরিবর্তন নিরোধে গৃহীত পদক্ষেপসমূহ

পরাঞ্জয়ী...

বর্তমান সময়ে জলবায়ু পরিবর্তন সংক্রান্ত বিষয়গুলির মধ্যে সর্বাধিক আলোচিত হল The Copenhagen Climate Conference. এই সম্মেলনের যাত্রাপথ ছিল সুদীর্ঘ এবং অবধারিতভাবেই দূর্গম! এবং এর সাফল্যের সম্ভাবনাও ছিল ক্ষীন। আল জাজিরা যে সমস্ত জলবায়ু সম্মেলন কোপেনহেগেন সম্মেলনকে ত্বরান্বিত করে সেগুলোর কৃতিত্বপূর্ন অর্জনসমূহ পর্যালোচনা করে। সেগুলো হল: মার্চ, ১৯৯৪: এসময় The UN Framework Convention of Climate Change (UNFCCC) নিকটবর্তী আন্তর্জাতিক সদস্য রাষ্ট্রগুলোকে নিয়ে কার্যকর হয়। এই সম্মেলনে বিভিন্ন দেশসমূহ গ্রীনহাউস গ্যাস নিঃসরণ সম্পর্কে পারস্পরিক তথ্য আদান প্রদান এবং উক্ত সমস্যা সমাধানে জাতীয় পর্যায়ে বিবিধ কৌশল প্রনয়নে একমত হয়। এই সম্মেলনে জলবায়ু পরিবর্তন নিরোধে বিভিন্ন মতামত সমূহ উন্নয়ন এবং কার্যকর করার স্বার্থে বার্ষিক সম্মেলনের প্রস্তাব গৃহীত হয় যা Conference of Parties বা COP সভা নামে পরিচিত।

COP-১, বার্লিন, ১৯৯৫: জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে সৃষ্ট হুমকির কারনে সারা বিশ্বে জনসচেতনতা গড়ে উঠলেও আলোচ্য সমস্যা সমাধানে কোন সর্বজনসম্মত এবং গ্রহনযোগ্য স্বিদ্ধান্তে উপনীত হওয়া সম্ভব হয়নি। এই সম্মেলনে সর্বাঙ্গীন কার্যপ্রক্রিয়ার তালিকা প্রনয়নের উদ্দেশ্যে প্রাপ্ত বিদ্যমান বিষয়গুলোর জন্য ২ বছর মেয়াদী "মূল্যায়ন প্রক্রিয়া" গৃহীত হয়। COP- ২, জেনেভা, ১৯৯৬ : এই বছরে সদস্য রাষ্ট্রসমূহ অনুধাবন করে যে জলবায়ূ সমস্যার বিভিন্নমুখী গতি প্রকৃতির জন্য একমুখী কোন সমাধান কার্যকর হওয়া সম্ভব নয়। তা সত্ত্বেও প্রত্যেকটি দেশ কে জলবায়ু পরিবর্তনের সমস্যা সমাধানে তাদের নিজস্ব পরামর্শ এবং কর্ম-কৌশল অবলম্বনে উৎসাহিত করা হয়। প্রথমবারের মত বিশ্ববাসী গ্রীনহাউস গ্যাস নিঃসরণ বিষয়ে উল্লেখযোগ্য বিষয়ের সাথে পরিচিত হল।

COP-৩,কিওটো-১৯৯৭ : ২বছর মেয়াদী মূল্যায়ন প্রক্রিয়া শেষে, আলোচনা সাপেক্ষে কিওটো প্রটোকল গৃহীত হয়। ৩৭ টি শিল্পোন্নত দেশে এটি অন্তর্নিবেশ করানো হয় এবং সময়সীমা নির্ধারণ করা হয় ২০১২ সাল পর্যন্ত। বিশ্বের পর্যাপ্ত দেশসমূহে এই প্রটোকল অনুমোদিত হতে প্রায় ৮ বছর সময় লেগে যায়। তথাপি কিছু গুরুত্বপূর্ণ দেশ এই প্রটোকল অনুমোদনে অস্বীকৃতি জানায়। COP-৪, Buenos Aires, ১৯৯৮: Kyoto Protocol এর বিষয়বস্তুসমূহ এই সম্মেলনের মূল বিষয়গুলোকে প্রভাবিত করে।

যদিও এতে কোন মতৈক্যে উপনীত হওয়া সম্ভব হয়নি, তথাপি প্রোটোকলের উদ্দেশ্যসমূহ বাস্তবায়নের জন্য সম্ভাব্য উপায়সমূহ বিচার বিশ্লাষণে ২ বছর মেয়াদী পরিকল্পনা প্রনয়নে সকলে একমত হন। COP-৫,বন, ১৯৯৯: বন সম্মেলনে Kyoto Protocol বাস্তবায়নের কৌশলগত দিক আলোচনা করা হয়। এতে কোন প্রাথমিক পদক্ষেপ গ্রহন করা হয়নি এবং সম্মেলনের উদ্দেশ্যকে Protocol কে বাস্তব রূপদানের থেকে বেশি প্রাধান্য দেয়া হয়। COP-৬, বন, ২০০১ : ৬ মাস বাদে, হেগ এর আলোচনা ভেস্তে যাওয়ায় পার্টিগুলো পুনরায় একটি বিশেষ জায়াগায় সভা করে। হতাশাব্যাঞ্জকভাবে, আমেরিকার নতুন প্রেসিডেন্ট, জর্জ বুশ অতিরিক্ত ব্যায়বহুল আখ্যা দিয়ে অবিলম্বে কিওটো প্রটোকল বাতিল করে, উন্নত রাষ্ট্রগুলোর পাশাপাশি উন্নয়নশীল রাষ্ট্রগুলিকেও এর আওতাভুক্ত করার কথা বলেন।

খুব অল্প সংখ্যক আলোচকই আশা করেন যে হেগ এর আলোচনার ভরাডুবির কারণগুলি এবার সমাধান হবে। এই আলোচনায়, মূল চুক্তিগুলো হয় কার্বন সিঙ্ক ও নির্গমন-প্রনোদিত অনুমোদন বিষয়ক। COP-৭, Marrakesh, ২০০১ : এই বছরে নিয়মিত বার্ষিক সম্মেলনে Buenos Aires এর প্রক্রিয়া অনুসারে Kyoto Protocol চূড়ান্ত করা হয়। এতে কতিপয় স্বিদ্ধান্ত প্রকাশ করা হয় যা Marrakesh Accord নামে পরিচিত। COP-৮, দিল্লী,২০০২: ইউরোপীয়ান ইনিয়নের ব্যর্থতাকে এই সম্মেলনে ইতিবাচক অর্থে গ্রহন করা হয়।

সদস্য দেশসমূহকে জলবায়ু পরিবর্তন নিরোধে একসাথে কাজ করার জন্য আহ্বান জানানো হয়। যদিও এই সম্মেলনে গুরুত্বপূর্ণ কোন স্বিদ্ধান্ত গৃহীত হয়নি। COP-৯,মিলান, ২০০৩: মিলানে কূটনিতীকেরা তখন পর্যন্ত কার্যকর না হওয়া Kyoto Protocol এর ত্রুটিসমূহ নিয়ে আলোচনা করেন কিন্তু নুতন কোন স্বিদ্ধান্ত গ্রহন করা হয়নি। COP-১০, Buenos Aires, ২০০৪:এসময় সদস্য সমূহের মূল আলোচ্য বিষয় হিসেবে আসে ২০১২ সাল নাগাদ কিওটো প্টোকলের মেয়াদ উত্তীর্ণ হওয়ার পর করনীয় বিষয় কি কি হতে পারে তা। কিওটো প্রটোকলকে বিশ্বব্যাপী জলবায়ু পরিবর্তন রোধের একটি সফল সূচনা হিসেবে দেখা হয়।

এরপর আলোচনা একটি "পুনঃস্থাপন চুক্তি" প্রনয়নের দিকে মোড় নেয়! (২০১২ সালে চুক্তির মেয়াদ শেষ হলে যাতে নুতন ভাবে চুক্তিবদ্ধ হওয়া যায়) COP-১১,/CMP1, মনট্রিল, ২০০৫: Kyoto Protocol কার্যকর হওয়ার পর এটি সর্বপ্রথম সম্মেলন। Kyoto Protocol এ স্বাক্ষরকারী দেশসমূহ (Parties to the Kyoto Protocol (CMP) এর জন্য আলাদা আরও একটি সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়। উভয় সম্মেলনে ২০১২ সালে প্রটোকলের মেয়াদ শেষ হওয়ার পর করনীয় বিষয়গুলোর উপর জোর দেয়া হয় এবং "মনট্রিল কর্মপরিকল্পনা"(Montreal Action Plan) গ্রহন করা হয়। COP-১২/CMP 2, নাইরোবি,২০০৬: ২০১২পরবর্তী সময়ে করনীয় বিষয়গুলো প্রটোকলের অন্যন্য সকল বিষয়াদিকে ব্যপক ভাবে প্রভাবিত করে এবং এ সময় একটা "পুনঃস্থাপন চুক্তির" (replacement agreemen) প্রনয়নের ব্যাপারে আলোচনা করা হয়। COP-১৩/CMP3, বালি: ২০০৭: এই আলোচনায় মূলত জোর দেয়া হয় একটি আন্ত-সরকারী প্রকাশনার দিকে, যেখানে বৈশ্বয়িক উষ্ণায়নের কারণ গুলি নির্নয় করা হবে।

একটি দ্রুত কার্জপ্রনালীর কথা আলোচনায় উঠে আসে ও কিওটো চুক্তির বিকল্প হিসেবে একটি নতুন চুক্তির দ্বার উন্মোচন করে বালি কর্ম পরিকল্পনা। ২০০৯ কোপেনহেগেন সম্মেলনকে ভবিষ্যতের ভৌগলিক আবহাওয়া চুক্তির জন্য স্থির করা হয়। COP-১৪/ CMP4, Poznam, ২০০৮: সকল প্রস্তুতি কোপেনহেগেনের পথেই এগিয়ে যাচ্ছিল। যুক্তরাষ্ট্রের নুতন প্রশাসনিক ব্যবস্থা জলবায়ু পরিবর্তনের ইস্যুতে নিজেদের অবস্থান পর্যালোচনা করে এবং প্রতিনিধিগন জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে ক্ষতিগ্রস্থ দেশসমূকে অর্থ সহায়তা করার ব্যাপারে মতৈক্যে পৌছান। COP-১৫/CMP5, কোপেনহেগেন, ২০০৯: এ বছরের সম্মেলনকে এ পর্যন্ত সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ সম্মেলন হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে।

সম্মেলনের আয়োজকেরা আশা করেন সিওপি ১৫ পৃথিবীর সকল দেশকে অন্তর্ভুক্ত করে একটি নতুন আন্তর্জাতিক চুক্তির জন্ম দিবে যেটি মনুষ্য তৈরী আবহাওয়া পরিবর্তনের তীব্রতা উপশমিত করবে। তবে সাফল্য এখনও অনেকটা অনিশ্চিত এবং অনেকেই বিশ্বাস করেন যে লক্ষ্য অর্জনে মতৈক্যে পৌছানোর সম্ভাবনাও ক্ষীন। অনুবাদ: Timeline: The road to Copenhagen পুনশ্চ: আমার জীবনের প্রথম অনুবাদ। ভুল ত্রূটি ক্ষমাসুন্দর দৃষ্টিতে দেখবেন।


সোর্স: http://www.somewhereinblog.net     দেখা হয়েছে বার

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.