আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

রাজশাহী পলিটেকনিকে ছাত্রমৈত্রী নেতা নিহত সানিকে ছাত্রলীগের একনিষ্ঠ কর্মী হিসেবে দাবি করেছেন।



রাজশাহী পলিটেকনিকে ছাত্রমৈত্রী নেতা নিহত রাজশাহী পলিটেকনিক ইনস্টিটিউটে ছাত্রলীগ-ছাত্রমৈত্রী সংঘর্ষে ছাত্রমৈত্রীর এক নেতা নিহত হওয়ার ঘটনায় নিহত সানির বাবা বাদী হয়ে ছাত্রলীগের ১০ নেতাকর্মীকে আসামি করে বোয়ালিয়া মডেল থানায় একটি মামলা দায়ের করেন। অন্যদিকে একই ঘটনায় মহানগর ছাত্রমৈত্রী সভাপতি মতিউর রহমান মতি বাদী হয়ে ৯ জনের নাম উল্লেখসহ অজ্ঞাতনামা আরও ২৫-৩০ জনকে আসামি করে ওই রাতেই বোয়ালিয়া মডেল থানায় পৃথক একটি এজাহার জমা দেন। এ ঘটনায় আগে গ্রেফতারকৃত ৪ জনের ৭ দিনের রিমান্ডের জন্য আদালতে আবেদন করেছে পুলিশ। এদিকে রাজশাহী পলিটেকনিক ইনস্টিটিউটে ছাত্রলীগের সাংগঠনিক সব ধরনের কার্যক্রম অনির্দিষ্টকালের জন্য স্থগিত ঘোষণা এবং সভাপতি সাদ্দাম হোসেন নিজামকে সংগঠন থেকে বহিষ্কার করা হয়েছে। নগরী ও ক্যাম্পাস এলাকায় থমথমে পরিবেশ বিরাজ করছে।

ক্যাম্পাস ও আশপাশের এলাকায় বিপুলসংখ্যক পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে। এদিকে নিহত ছাত্রমৈত্রীর পলিটেকনিক শাখার সহসভাপতি ও কম্পিউটার বিভাগের চতুর্থ বর্ষের ছাত্র রেজাউল ইসলাম সানির লাশ গতকাল বাদ জুমা নগরীর বালিয়া পুকুর এলাকার টিকাপাড়া গোরস্তানে দাফন করা হয়। তার জানাজায় এলাকার শত শত লোক অংশ নেয়। সেখানে সানির স্বজন, শিক্ষক ও সহপাঠীরা কান্নায় ভেঙে পড়ে। এ সময় এক হৃদয়বিদারক দৃশ্যের অবতারণা হয়।

সবাই নিহত সানির লাশ একনজর দেখতে ভিড় করে। আহতদের মধ্যে ছাত্রমৈত্রীর পলিটেকনিক শাখার নেতা বুলবুলকে আশঙ্কাজনক অবস্থায় উন্নত চিকিত্সার জন্য ঢাকায় পাঠানো হয়েছে। কাজী আব্দুল মোত্তালিব জুয়েলের অবস্থাও শঙ্কামুক্ত নয় বলে চিকিত্সকরা জানিয়েছেন। নিহত সানির বাবা মতিহার থানা আওয়ামী লীগের তথ্য ও গবেষণা সম্পাদক মনোয়ারুল ইসলাম চৌধুরী নান্নু ও মা মহানগর মহিলা লীগের সহ-সভানেত্রী শামীমা মনোয়ারা হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে জড়িত সন্ত্রাসীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দাবি করেছেন। বোয়ালিয়া মডেল থানা পুলিশ জানায়, বৃহস্পতিবার রাতেই নিহত সানির বাবা বাদী হয়ে ছাত্রলীগের ১০ জন নেতাকর্মীকে আসামি করে থানায় একটি মামলা দায়ের করেন।

অন্যদিকে একই ঘটনায় মহানগর ছাত্রমৈত্রী সভাপতি বাদী হয়ে ৯ জনের নাম উল্লেখসহ অজ্ঞাতনামা আরও ২৫-৩০ জনকে আসামি করে ওই রাতেই বোয়ালিয়া মডেল থানায় পৃথক একটি এজাহার জমা দেন। তবে বোয়ালিয়া মডেল থানার ওসি জসিম উদ্দিন জানান, নিহত সানির পিতা বাদী হয়ে যে এজাহারটি দিয়েছেন সেটিই মামলা হিসেবে রেকর্ড করা হয়েছে। একই ঘটনায় দুটি মামলা হতে পারে না। সে কারণেই ছাত্রমৈত্রী নেতা মতিউর রহমান মতির এজাহারটি মামলা হিসেবে রেকর্ড হয়নি। সেটি সানির পিতার দায়ের করা মামলার সঙ্গে যোগ করা হবে।

তিনি তদন্তের স্বার্থে সানির পিতার দেয়া এজাহারে উল্লিখিত আসামিদের নাম বলতে অস্বীকৃতি জানিয়েছেন। তিনি আরও জানান, ঘটনার সঙ্গে জড়িত সন্দেহে বৃহস্পতিবার বিকেলেই পুলিশ ৪ ছাত্রলীগ কর্মীকে গ্রেফতার করে। গ্রেফতারকৃতরা হচ্ছে ইলেকট্রোমেডিকেল বিভাগের চতুর্থ বর্ষের ছাত্র নবীন, মেকানিক্যাল বিভাগের একই বর্ষের ছাত্র শরিফুল, কম্পিউটার বিভাগের নাহিদ ও মানিক। গ্রেফতারকৃত ৪ জনকে ৭ দিনের রিমান্ডের জন্য গতকাল বোয়ালিয়া মডেল থানা থেকে আদালতে আবেদন করা হয়েছে। তাদের কয় দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করা হয়েছে তা জানা যায়নি।

তবে মামলা দায়েরের পর থেকে গতকাল বিকেলে এ রিপোর্ট লেখা পর্যন্ত পুলিশ আর কাউকে গ্রেফতার করতে পারেনি। এদিকে মতিউর রহমান মতির দেয়া এজাহারে আসামি হিসেবে যে ৯ জনের নাম উল্লেখ রয়েছে তারা হলো—নিজাম উদ্দিন ৮ম পর্ব, পাবনার সাঁথিয়া থানার আল মামুনের ছেলে নাজমুল হুদা, পুঠিয়ার তেতুলিয়া গ্রামের আনিসুর রহমানের ছেলে শরিফুল ইসলাম, নাটোর জেলার বড়াইগ্রাম উপজেলার আহম্মেদপুর গ্রামের রুহুল আমিনের ছেলে জাহিদুল ইসলাম মানিক, রাজশাহীর আসাম কলোনি এলাকার আব্দুল জলিলের ছেলে নাহিদ সারওয়ার, একই এলাকার সাদ্দাম ও মাসুম, পলিটেকনিকের কম্পিউটার ৭ম পর্বের ছাত্র রহিম, ৫ম পর্বের ছাত্র রোকন, ৭ম পর্বের ছাত্র মতিনসহ অজ্ঞাতনামা ২৫-৩০ জন ছাত্র-যুবক। নিহত সানির রাজনৈতিক পরিচয় নিয়ে ছাত্রলীগ ও ছাত্রমৈত্রীর মধ্যে টানাটানি শুরু হয়েছে। উভয়পক্ষই তাকে নিজেদের নেতা বলে দাবি করেছেন। এ বিষয়ে মহানগর ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক জেডু সরকার নিহত রেজাউল ইসলাম সানিকে ছাত্রলীগের একনিষ্ঠ কর্মী হিসেবে দাবি করেছেন।

তবে ছাত্রমৈত্রীর সঙ্গে ছাত্রলীগের সংঘর্ষের ঘটনা ঘটলেও ছাত্রমৈত্রী তাদের ওপর হামলা করেনি বলে তিনি জানান। এ ব্যাপারে ছাত্রমৈত্রীর মহানগর সভাপতি মতিউর রহমান মতি বলেন, নিহত সানি ছাত্রমৈত্রীর পলিটেকনিক শাখার সহ-সভাপতি। ফলে তার রাজনৈতিক পরিচয় নিয়ে প্রশ্ন তোলার কোনো সুযোগ নেই। সানির পিতা-মাতা আ’লীগের রাজনীতির সঙ্গে সম্পৃক্ত হওয়ার কারণেই সানিকে ছাত্রলীগের কর্মী বলে দাবি করা হচ্ছে। তার লাশ নিয়ে তারা নোংরা রাজনীতি করতে চায়।

মহাজোট নেতা ও ওয়ার্কার্স পার্টির পলিটব্যুরোর সদস্য ফজলে হোসেন বাদশা এমপি বলেন, ছাত্রলীগ কর্তৃক ছাত্রমৈত্রীর নেতা খুন হবার ঘটনা অত্যন্ত দুঃখজনক ও বেদনাদায়ক। সন্ত্রাসী যে দলেরই হোক না কেন তাদেরকে গ্রেফতার করে বিচারের আওতায় আনতে হবে। ছাত্রমৈত্রী এ হত্যাকাণ্ডের প্রতিবাদে বৃহস্পতিবার রাতে রাজশাহী প্রেসক্লাবে সংবাদ সম্মেলন করে তিন দিনের কর্মসূচি ঘোষণা করেছে। গতকাল শুক্রবার বিকালে তারা নগরীতে বিক্ষোভ মিছিল ও সমাবেশ করে জড়িতদের গ্রেফতার ও দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দাবি করেছে। আজ শনিবার বিকালে নগরীতে শোকর্যালি ও রোববার থানা পর্যায়ে বিক্ষোভ কর্মসূচি পালন করা হবে।

আধিপত্য বিস্তার ও পূর্ববিরোধের জের ধরে গত বৃহস্পতিবার একাডেমী ভবনের সামনে ছাত্রলীগ নেতাকর্মীরা ছাত্রমৈত্রীর ওপর হামলা চালালে ঘটনার সূত্রপাত হয়। এ সময় ছাত্রলীগের সভাপতি সাদ্দাম হোসেন নিজামের নেতৃত্বে রোকন, মানিক, মতিন ও বাবুসহ ২০-২৫ জনের ছাত্রলীগের একটি সশস্ত্র গ্রুপ অতর্কিতে হামলা চালিয়ে চাপাতি ও রামদা দিয়ে ছাত্রমৈত্রীর বেশ ক’জনকে কুপিয়ে গুরুতর আহত করে। আহত ছাত্রমৈত্রীর নেতাকর্মীদের রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হলে সেখানে সানি মারা যায়। এদিকে উদ্ভূত পরিস্থিতিতে আবারও সহিংসতার আশঙ্কায় পলিটেকনিক ইনস্টিটিউট অনির্দিষ্টকালের জন্য বন্ধ ঘোষণা করেছে কর্তৃপক্ষ। এ বিষয়ে পলিটেকনিক ইনস্টিটিউটের অধ্যক্ষ একেএম জয়নাল আবেদীন বলেন, পুনরায় যাতে সহিংসতার ঘটনা না ঘটতে পারে সে কারণেই ক্যাম্পাস অনির্দিষ্টকালের জন্য বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছে।

এদিকে পলিটেকনিকের ঘটনার জের ধরে রাজশাহীর অন্যান্য শিক্ষা প্রতিষ্ঠানেও উত্তেজনা বিরাজ করছে। ছাত্রলীগ ও ছাত্রমৈত্রীর নেতাকর্মীরা সশস্ত্র মহড়া দিচ্ছে বলে ক্যাম্পাস সূত্রগুলো জানিয়েছে। এতে সাধারণ ছাত্রছাত্রীদের মধ্যে আতঙ্ক বিরাজ করছে। রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়, রুয়েট ও রাজশাহী কলেজসহ বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে।


অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।