আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

মেঘনাপাড়ের ১৪০ শিক্ষার্থীর গল্প- পর্ব ২

যে জানেনা এবং জানে যে সে জানেনা সে সরল, তাকে শেখাও। যে জানেনা এবং জানেনা যে সে জানে না, সে বোকা-তাকে পরিত্যাগ কর।

প্রিয় বন্ধুরা আমি মেঘনাপাড় স্কুলের ১৪০ জন শিশু শিক্ষার্থীর গল্প শোনাব আপনাদের। গত ২২ ডিসেম্বর ইএফএলবিডির পক্ষ থেকে একজন গবেষণা সহকারীকে মেঘনাপাড় স্কুলের শিক্ষার্থীদের জীবনের গল্প গবেষণা আকারে তুলে আনার জন্য লক্ষ্মীপুর পাঠানো হয়েছিল। ৩ দিন মেঘনাপাড়ে থেকে জহিরুল আলম তুলে এনেছে মেঘনাপাড়ের জীবন কাহিনী।

শুনুন তাহলে একে একে মেঘনাপাড়ের সেই সব শিশুর গল্প.. গতকাল ৫ পর্যন্ত বলেছিলাম। আজ ছয় থেকে শুরু হলো... ৬. শিক্ষার্থীর নাম- আরজু রোল নং-৩ ৭. শিক্ষার্থীর নাম- লাইজু রোল নং-৪ পিতা- আমির হোসেন মাদবর,৮০। মাতা- হাসিনা, ৬০। আরজু ও লাইজু দুই বোন মেঘনাপাড় স্কুলে পড়ে। আরজু লাইজুরা মোট ৫ ভাই বোন।

দুই ভাই তিন বোন। দুই ভাইই বড়। একজনের বয়স ২০ এবং আরেকজনের ১৩। পেশা মাছ ধরা ও অন্যান্য কাজ করা। তাদের কোন নৌকা নেই।

বেড়ি বাঁধে থাকে। তাদের আদি নিবাস ছিল ভোলা। নদী ভাঙ্গনে সর্বস্ব হারিয়ে এখানে এসেছে এক বৎসর হল। ঘর-ভিটা ছাড়া তাদের আর কোন জমি জমা নেই। আমির হোসেন তিনটি বিয়ে করেছে।

হাসিনা হচ্ছে তৃতীয় স্ত্রী। আমির হোসেনের পেশা স্থানীয় বাজারে ভিক্ষা করা। পড়ালেখা শেখেনি তাই একদম নিরক্ষর। তার স্ত্রীও নিরক্ষর। তবে আরজু-লাইজুর দুই ভাই নাম লিখতে পারে।

৮. শুকতারা রোল নং-১৩ ৯. মোঃ মোশাররফ রোল নং-১২ পিতা- কালাম পাটওয়ারী, ৪০। মাতা- মর্জিনা খাতুন, ৩৫। কালাম পাটওয়ারীর তিন ছেলে তিন মেয়ে। শুকতারা এবং মোশাররফ যথাক্রমে চতুর্থ এবং পঞ্চম সন্তান। শুকতারা এবং মোশাররফ মেঘাপাড় ধীবর বিদ্যানিকেতনে পড়াশুনা করে এখন নাম লিখতে পারে।

অন্য কোন সন্তান নাম পর্যন্ত লিখতে পারে না। বাবা এবং অন্য ভাইরা মিলে নদীতে মাছ ধরে। মাঝে মাঝে অন্যের কাজও করে। তাদের মাছ ধরার একটা নৌকা আছে। কোনদিন দেড়-দুই-তিনশ টাকা পর্যন্ত রোজগার হয়।

আবার কোনদিন একেবারে কিছুই হয় না। তাদের আদি নিবাস ছিল ভোলা। এখানে বেড়ি বাঁধে বাস করছে আজ প্রায় দুই বৎসর। ১০. ছালমা রোল-৭৭ ১১. মনির রোল-৫ পিতা- আবুল কালাম দালাল, ৪৫। মাতা- নূরজাহান, ৩৫।

আবুল কালামের ১০ সন্তানের মধ্যে ৫ জন ছেলে এবং ৫ জন মেয়ে। সন্তানদের মধ্যে ছালমা ৬ নাম্বার এবং মনির ৮ নাম্বার। বাবা আবুল কালাম আগে মাছ ধরত। বর্তমানে অন্যের বাড়িতে কাজ করে জীবিকা নির্বাহ করে। বড় ছেলে ঢাকায় রাজ মিস্ত্রীর কাজ করে।

এক ছেলে নদীতে মাছ ধরে। তাদের একটি নৌকা আছে মাছ ধরার। আবুল কালাম তিন মেয়ের বিয়ে দিয়েছেন। মেঝ মেয়ের বিয়েতে ১৫ হাজার টাকা যৌতুকও দিয়েছেন জামাইকে। নদী ভাঙ্গনে ভোলা থেকে সপরিবারে এখানে বেড়ি বাঁধে এসে বাস করছেন প্রায় ৩ বৎসর হতে চলল।

১২. রীনা আক্তার রোল........... ১৩. মোঃ নিজাম রোল-৫৬ পিতা- মোঃ সাহজাহান, ৩৫। মাতা- রাশেদা বেগম, ২৫। রীনা নিজামের মা লেখাপড়া জানে না। ওদের বাবা ঢাকায় থাকে এবং আরেকটা বিয়ে করেছে। ফলে তাদের কোন খোঁজ খবর নেয় না।

মা রাশেদা বেগম অন্যের বাড়িতে কাজ করে সংসার চালায়। তাদের দাদা-দাদীও তাদের কোন খোঁজ রাখে না। খুব কষ্টে তাদের জীবন চলছে। মেঘনা নদীর পাড়ে বেড়ি বাঁধে তারা থাকে। ১৪. মিতু রোল............... পিতা- মোঃ মোস্তফা, ৩০।

মাতা- পেয়ারা বেগম, ২৫। তাদের দুই মেয়ে। এক ছেলে ও এক মেয়ে মারা গেছে চিকিৎসার অভাবে। মিতুর বাবা অন্যের বাড়িতে কাজ করে খায়। মাঝে মাঝে মাছ ধরতে নদীতে যায়।

নদীর পাড়ে তাদের আদি নিবাস। নদীর একপাশ ভাঙ্গার পর অন্য পাড়ে এসে বসবাস শুরু করে। মিতুর দাদা-দাদী আলাদা বাস করে। মিতুর বড় বোনের বয়স এগার। সে লক্ষ্মীপুর শহরে মাসিক বেতনে কাজ করে।

(আজ ১৪ পর্যন্ত বলা হল। ক্রমান্বয়ে মেঘনাপাড় স্কুলের ১৪০ জন শিক্ষার্থীর সবার গল্প বলা হবে। )

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।