আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

মেঘনাপাড়ের ১৪০ শিক্ষার্থীর গল্প- পর্ব ১

যে জানেনা এবং জানে যে সে জানেনা সে সরল, তাকে শেখাও। যে জানেনা এবং জানেনা যে সে জানে না, সে বোকা-তাকে পরিত্যাগ কর।

প্রিয় বন্ধুরা আমি মেঘনাপাড় স্কুলের ১৪০ জন শিশু শিক্ষার্থীর গল্প শোনাব আপনাদের। গত ২২ ডিসেম্বর ইএফএলবিডির পক্ষ থেকে একজন গবেষণা সহকারীকে মেঘনাপাড় স্কুলের শিক্ষার্থীদের জীবনের গল্প গবেষণা আকারে তুলে আনার জন্য লক্ষ্মীপুর পাঠানো হয়েছিল। ৩ দিন মেঘনাপাড়ে থেকে জহিরুল আলম তুলে এনেছে মেঘনাপাড়ের জীবন কাহিনী।

শুনুন তাহলে একে একে মেঘনাপাড়ের সেই সব শিশুর গল্প.. ১. শিক্ষার্থীর নাম- মোঃ সালাহউদ্দিন। রোল নং-................. পিতা- আব্দুল গণি সর্দার (১০০+ এবংঅন্ধ)। মাতা- ছালেহা খাতুন (৪৫)। সালাহউদ্দিনরা ২ ভাই ২ বোন। সে বাবা মার মেঝো ছেলে।

সবাই প্রতিদিন মাছ ধরতে মেঘনার বুকে চলে যায়। তাদের দুইটি নৌকা। একটিতে থাকে এবং আরেকটি দিয়ে মাছ ধরে। বাবা আব্দুল গণি ছোটবেলা থেকেই নৌকায় বাস করে। সালাহউদ্দিনের বড় ভাইয়ের নাম আলাউদ্দিন (২০)।

পড়ালেখা শিখেনি। তাদের দৈনিক আয় একেকদিন একেকরকম। কোনদিন ২০০, ৩০০ কিংবা ৪০০ টাকাও হয় আবার কোনদিন এক টাকাও হয় না। আব্দুল গণি সর্দার তিন বিয়ে করেছেন। বর্তমান স্ত্রী তিন নাম্বার।

সালাহউদ্দিনের দাদারা অন্য জায়গায় ঘর বেঁধে থাকতেন। নদী ভাঙ্গনের কারণে সালাহউদ্দিনের বাবা সহায় সম্পত্তি হারিয়ে নৌকায় বসবাস শুরু করেন। আব্দুল গণি সর্দার যখন জীবনের গল্প বলছিলেন তখন তার চোখ দিয়ে জল গড়িয়ে পড়ছিল। জীবন তার কাছে এখন দুর্বিষহ। বয়সের ভারে ন্যূজ্ব দেহ এবং অন্ধত্ব নিয়ে সে আর পারছে না।

জীবন থেকে মুক্তির অপেক্ষায় এই বৃদ্ধ এখন মেঘনাপাড়ে নৌকায় বসে বসে অপেক্ষার প্রহর গুণছে। ২. শিক্ষার্থীর নাম- মোঃ সাগর। রোল নং-............ পিতা- মোঃ হারুন সর্দার (৩০)। মায়ের নাম কালনী বেগম (২০)। সাগররা দুই ভাই।

সাগর বড় ছেলে। দুই নৌকার একটিতে বাস করে এবং অপরটি দিয়ে মাছ ধরে। গবেষণা সহকারীর ভাষ্য মতে, "আমি যখন যাই সাগরের বাবা মা দু'জনই মাছ ধরার নৌকা নিয়ে মেঘনার বুকে গিয়েছে মাছ ধরতে। সাগরের দাদী বেঁচে আছেন। বয়স প্রায় আশি।

সাগরের দাদীর মা ও নৌকায় ছোটকাল থেকে বসবাস করে আসছিল। সাগরদের দৈনিক আয় একেক সময় একেক রকম হয়। তবে তাদের আর্থিক অবস্থা সালাহউদ্দিনের পরিবারের চেয়ে একটু ভাল। ৩. শিক্ষার্থীর নাম- মোঃ আরিফ। রোল নং-............ পিতা- মোঃ সোহরাব হোসেন, ৩২।

(সোরাব মাঝি। ) মাতা- দিলজান বিবি, ২৫। সোহরাবের দুই ছেলে। আরিফ বড়। সে মেঘনাপাড় স্কুলে পড়ে।

সোহরাব ৩য় শ্রেনী পর্যন্ত পড়াশুনা করেছে। সোহরাব নাম লিখা সহ টুকিটাকি হিসাবও লিখতে পারে। সোহরাবের স্ত্রী নামও লিখতে পারে না। সোহরাবের পেশা মেঘনার বুকে পর্যটকদের নিয়ে ভ্রমণ করানো। নিজেদের একটি থাকার নৌকা বাদেও দুইটি বোট আছে।

মাঝি জনগোষ্ঠীর মধ্যে স্বচ্ছল এই সোরাব মাঝির ক্যাশ টাকা আছে প্রায় লাখ খানেক। সোহরাবের জন্মই হয়েছে নৌকায়। সোহরাবের দাদাও নৌকায় বাস করতেন। সামান্য একটু শিক্ষার আলো তাকে জেলে পেশা থেকে একটু ভিন্ন পেশায় মনোনিবেশে সহায়তা করেছে। সোহরাবের দৈনিক আয় কমপক্ষে ৩০০-৫০০ টাকা।

৪. শিক্ষার্থীর নাম- মোঃ সোলায়মান। রোল নং-২৫। পিতা- মোঃ করিম, ৩০। মাতা- বিবি সেতারা বেগম, ২৫। সোলায়মান বাবা-মার একমাত্র ছেলে।

সোলায়মান এর বাবা চার চারটি বিয়ে করেছে। সোলয়মান এর মা তার বাবার তৃতীয় স্ত্রী। সোলায়মান এর বাবা এখন সোলায়মান এর মায়ের সাথে থাকে না। সোলায়মান মা সহ নানা-নানীর কাছে থাকে। সোলায়মান এর নানা অন্যের ঘরে মাসিক ২০০০ টাকা বেতনে কাজ করে।

এভাবেই সোলায়মান এর পরিবার চলে। ৫. শিক্ষার্থীর নাম- সাজু বেগম। রোল নং-২৩ পিতা- মোঃ সাহজাহান, ৩০। মাতা- সাহারা খাতুন, ১৮। বাবা-মায়ের দুই মেয়ের মধ্যে সাজু বড়।

সাজুর বাবা হালচাষ করে। নদীর পাড়ে বেড়ি বাঁধে সামান্য এক চিলতে ঘর তুলে তারা থাকে। আর্থিক অবস্থা নিম্নবিত্ত হলেও কিছুটা স্বচ্ছল। আয় রোজগার বলতে তিন বেলা খেতে পারে। চরে ২২ কানি জমি আছে আর ঘর ভিটা আছে।

ছোট মেয়েকে কয়েকদিন পর ভর্তি করাবেন স্কুলে, জানিয়েছেন সাজুর মা সাহারা খাতুন। নদী ভাঙ্গনে ঘর-বাড়ি সব হারিয়ে এই নতুন জায়গায় এসে বাসা বেঁধেছেন। এক সময় বেশ সম্পদ ছিল। নদী ভাঙ্গনে অনেক সম্পদ খুইয়েছেন। সাজুর বাবার আক্ষরিক কিছু জ্ঞান আছে কিন্তু মা একেবারে নিরক্ষর।

মেয়ে দুটোকে লেখা পড়া শেখানোর ইচ্ছা প্রকাশ করেছেন সাজুর মা। (আজ এই ৫ জনের গল্প বলা হল। ক্রমান্বয়ে মেঘনাপাড় স্কুলের ১৪০ জন শিক্ষার্থীর পরিবারের গল্প বলা হবে। )

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।