আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

যুক্তরাষ্ট্র যখন নিরাপত্তাহীনতায় ভোগে



যুক্তরাষ্ট্র যখন নিরাপত্তাহীনতায় ভোগে ফকির ইলিয়াস --------------------------------------------- হঠাৎ করেই কেঁপে উঠেছে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের নিরাপত্তার ভিত। ওমর আবদেল মোতালেব নামক একজন নাইজেরিয়ান যাত্রী ডেট্রয়েটগামী একটি বিমান ধ্বংস করে দিতে চেয়েছিল। এই ঘটনাটি ঘটাতে পারলে ২০০৯ বড়দিনটি পরিণত হতো ভয়াবহ শোকের দিনে। কিন্তু কীভাবে বিধ্বংসী রাসায়নিক নিয়ে এই লোকটি বিমানে চড়ল? এত নিরাপত্তা বেষ্টনী সে পেরুলো কীভাবে? তা নিয়ে চলছে তুমুল বিতর্ক। প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামা স্পষ্ট বলে দিয়েছেন, যুক্তরাষ্ট্রের শীর্ষ নিরাপত্তা গোয়েন্দা সংস্থাগুলো ব্যর্থ হয়েছে।

না না প্রশ্নে জর্জরিত মার্কিনি প্রশাসন। ৫ জানুয়ারি ২০১০ মঙ্গলবার দুপুর পুরো সময় প্রেসিডেন্ট কাটিয়েছেন শীর্ষ গোয়েন্দা সংস্থার ২৮ জন কর্মকর্তার সঙ্গে মতবিনিময় করে। এই ঘটনায় কী কাউকে চাকরিচ্যুত করা হবে? মানব সম্পদ এবং যন্ত্রপাতিশাসিত নিরাপত্তা ব্যবস্থা কীভাবে ব্যর্থ হলো? কেন হলো? এমন অনেক প্রশ্ন তুলেছেন প্রেসিডেন্ট নিজেই। বলেছেন, এক সপ্তাহের মধ্যে বিভিন্ন সংস্থা থেকে প্রাপ্ত গোপনীয় রিপোর্ট সমন্বয় করা হবে। তারপর সিদ্ধান্ত নেয়া হবে আল কায়দার অন্যতম দোসর ওমর ফারুক আবদেল মোতালেব কিভাবে ফ্লাই করতে পেরেছিল।

এই ঘটনার পর যুক্তরাষ্ট্রের এয়ারলাইনগুলোর জন্য নতুন নীতিমালা প্রণীত হতে যাচ্ছে। দু'পিস লাগেজ বহনের ক্ষেত্রটিতে এক পিস লাগেজ অনুমোদনের কথাও ভাবা হচ্ছে। উড়ন্ত ফ্লাইটগুলোতে এয়ার মার্শাল বাড়ানোর সংখ্যা, গোটা আমেরিকার ফ্লাইট স্ক্যানিং সিস্টেম ঢেলে সাজানো, বিমানবন্দরগুলোতে আরও জোর নিরাপত্তা বাড়ানোর বিষয়গুলোও রয়েছে সক্রিয় বিবেচনাধীন। এদিকে চৌদ্দটি রাষ্ট্রের ওপর স্ক্যানিং ফোকাস বাড়ানো হয়েছে তাৎক্ষণিকভাবে। নাইজেরিয়া, ইয়েমেন, পাকিস্তান, আফগানিস্তান, সৌদি আরব রয়েছে এই তালিকার শীর্ষে।

এসব দেশ থেকে আগত যাত্রীদের পূর্ণ শরীর তল্লাশি করা হবে। হঠাৎ করেই আলোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে চলে এসেছে ইয়েমেন। কারণ ইয়েমেনে আল-কায়দার শীর্ষ সন্ত্রাসীরা ঘাঁটি গেড়েছে এরকম তথ্য আসছে যুক্তরাষ্ট্রের গোয়েন্দাদের কাছে। গেল বড়দিনে যুক্তরাষ্ট্রের ডেট্রয়েটগামী বিমানে আঘাত হানার প্ল্যানটিও তৈরি হয় ইয়ামেন থেকেই। প্রেসিডেন্ট ওবামার কাউন্টার টেরোরিজম এডভাইজার জন ব্রেনান বলেছেন, 'আল- কায়দা তাদের পরিকল্পনা অব্যাহত রেখেছে এবং এর শিকড় এখন ইয়েমেনে।

' ইয়েমেনে ব্রিটেন, যুক্তরাষ্ট্রের দূতাবাসগুলো হুমকির মুখে থাকায় বন্ধ করে দেয়া হয়েছে। কবে খোলা হবে তা আদৌ জানে না কেউ। তবে কি ইয়েমেনে যুক্তরাষ্ট্রের অভিযান চালানো হবে? এমন প্রশ্নের জবাবে জন ব্রেনান বলেন, তা যুক্তরাষ্ট্রের শীর্ষ পর্যায়েই সিদ্ধান্ত হবে। তবে ইয়েমেনি কর্তৃপক্ষ আল-কায়দার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়ার জন্য সম্মত হয়েছে। তারা ইতোমধ্যে চারজন আল- কায়দার সশস্ত্র ব্যক্তিকে হত্যা করেছে বলেও দাবি করেছে।

সেক্রেটারি অফ স্টেটস হিলারি ক্লিনটন বলেছেন, ইয়েমেন এখন গোটা বিশ্বের জন্যই আতঙ্কের কারণ। আমি আশা করছি এ বিষয়ে কংগ্রেস সিনেট শিগগিরই সিদ্ধান্ত নেবে। হিলারি এটাও স্পষ্ট করে বলেন, কীভাবে একজন আন্তর্জাতিক সন্ত্রাসী বিমানে চড়ার সুযোগ পেলো, তা গোটা যুক্তরাষ্ট্রের মানুষের জন্য শুভ সংবাদ নয়। এদিকে ইরানের সঙ্গে নতুন করে আলোচনায় আগ্রহ দেখাচ্ছে যুক্তরাষ্ট্র। বলছে, পরমাণু বোমা তৈরির বিষয়ে ইরানের বিরুদ্ধে আন্তর্জাতিক জনমত গঠন অব্যাহত রয়েছে।

যুক্তরাষ্ট্র চাইছে সমমনা মিত্র দেশগুলোর মাধ্যমে ইরানের ওপর যত বেশি চাপ প্রয়োগ করানো যাবে, ততই লাভ হবে। এজন্য বিভিন্ন নিষেধাজ্ঞা বলবতের বিষয়টিও সক্রিয় বিবেচনায় রেখে এগুচ্ছে যুক্তরাষ্ট্র। সম্প্রতি কাতারের প্রধান মন্ত্রী শেখ হামাদ বিন জসিম আল-থানির সঙ্গে এক যৌথ সংবাদ সম্মেলনে হিলারি ক্লিনটন বলেছেন, প্রতিটি মুসলিম দেশের উচিত দেশের অভ্যন্তরে উগ্র জঙ্গিবাদকে প্রশ্রয় না দেয়া। এবং এদের কঠোর হাতে দমন করা। গেল ক'দিন আগে আফগানিস্তানে যে সাতজন সিআইএ এজেন্টকে হত্যা করা হয়েছে, সেটাও ভীষণ আলোচিত হচ্ছে যুক্তরাষ্ট্রের প্রশাসনে।

আত্মঘাতী বোমার এসব সদস্যরা বিশেষ ট্রেনিং নিয়ে জর্দান থেকে আফগানিস্তানে এসেছিল। আল-কায়দার একটি সূত্র তা দাবি করেছে। তারা বলেছে, 'ডাবল এজেন্ট' বলে পরিচিত এমন বিশেষ কিছু 'চর' তারা বিভিন্ন স্থানে পাঠিয়েছে। যারা মার্কিনি গোয়েন্দাদের ভেতরে ঢুকে তাদের হয়ে কাজ করার ভাব দেখাবে। আর সুযোগ পেলেই আত্মঘাতী আক্রমণ করবে মার্কিন বাহিনীর ওপর।

যুক্তরাষ্ট্রের এনবিসি নিউজের তথ্য অনুযায়ী আফগানিস্তানে সিআইএ হত্যাকান্ডের প্রধান ঘাতকের নাম হুমাম খলিল আবু মুলার আল-বালাউয়ি (৩৬)। সে মূলত ছিল আল-কায়দা সমর্থক। সিআইএ'র কর্মকর্তাদের সঙ্গে একটি মিটিংয়ের নামে বুকে আগ্নেয়াস্ত্র সম্পন্ন ভেস্ট বেঁধে সেখানে আসে। এবং বিস্ফোরণ ঘটায়। মোটকথা জঙ্গিবাদের বেশ কিছু নতুন টেকনিক ও পদ্ধতি যুক্তরাষ্ট্রকে নিরাপত্তাহীনতার জ্বরে ভোগাচ্ছে।

কেউ আগ্নেয়াস্ত্র বহন করে কিভাবে যুক্তরাষ্ট্রের স্থাপনায় প্রবেশ করতে পারছে তা প্রশ্নবিদ্ধ হচ্ছে সর্বমহলে। কথা উঠছে, যুক্তরাষ্ট্র নিজেই যদি এমন নিরাপত্তাহীনতা এবং শঙ্কায় আক্রান্ত হয় তবে বিশ্বের অন্য দেশগুলোর অবস্থা কী? যুক্তরাষ্ট্রের বিশিষ্ট সাংবাদিক, বিশেষজ্ঞরা বলছেন, সব রকমের আলোচনার দ্বার বন্ধ করে শান্তির পথ প্রশস্ত করা কোন মতেই সম্ভব নয়। আর নিরাপত্তা নিয়ে ভাবতে হলে, গোটা বিশ্বের মানুষের কথাই ভাবতে হবে। তাছাড়া ট্যাক্সের অর্থ ব্যয় করে এত শক্তিশালী গোয়েন্দা পালনের পরও সাধারণ মানুষ কেন আতঙ্কে থাকবেন, তাও আসছে ঘুরে-ফিরে। বড়দিনে যে তিন শ' যাত্রী প্রাণে বেঁচেছেন, তাদের 'প্রতীক' বিবেচনা করে মানবতার পক্ষে আরও সোচ্চার হওয়ার দাবি জানাচ্ছে যুক্তরাষ্ট্রের মানবতাবাদী সংস্থাগুলোও।

নিউইয়র্ক, ৬ জানুয়ারি ২০১০। ------------------------------------------------------------------- দৈনিক সংবাদ। ঢাকা। ৮ জানুয়ারি ২০১০ শুক্রবার প্রকাশিত ছবি- বারগেন ভগি

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.