আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

[প্রথম স্থান বিজয়ী - আদনান] আমি কেন সফল ব্লগার হতে চাই?

আমার সাথে যোগাযোগ করতে http://bn.jinnatulhasan.com/blog এ ভিজিট করুন।

আমার কিছু কথা কিছুদিন র্পূবে আমার নিজস্ব ব্লগের পাঠকদের উৎসাহ দেবার জন্য একটি প্রতিযোগিতা আয়োজন করেছিলাম। 'আমি কেন সফল ব্লগার হতে চাই?' বিষয়ে ব্লগ লিখতে হবে। সেখানে স্পরসের বাহির ওরফে আদনানের লেখা ব্লগটি প্রথম স্থান অধিকার করেছেন। লেখাটি এতই ভাল হয়েছে যে, এখানে পোষ্ট করার লোভ সামলাতে পারলাম না।

পূর্বপ্রকাশ: অতিথি পোষ্ট - প্রথম স্থান বিজয়ী - আদনান * আমি কেন সফল ব্লগার হতে চাই? প্রাককথনঃ হুম ব্লগিং…সত্যি সে এক অদ্ভুদ সুন্দর জগত। ভার্চুয়াল জগতে কিছু আনন্দময় সময় কাটাবার বা আয় করার একটা অসাধারন ব্যাবস্থা এই ব্লগিং। আমার অস্তিত্বের সাথে মিশে আছে ব্লগিং। কেন ব্লগিং করি বা করতে চাই তা ঠিকমতো হয়তো নিজেও জানি না। শুধু জানি স্বপ্ন দেখতে বড্ড ভালবাসি আর সেই স্বপ্ন পূরনের অন্যতম মাধ্যম ব্লগিং।

পিছন ফিরে দেখাঃ ব্লগিং-এর সাথে পরিচয় প্রায় ২ বছর আগে। পেপারে “অনলাইনে টাকা আয়” নামের একটা ভিডিও টিউটোরিয়ালের বিজ্ঞাপন দেখলাম। সেই সময়টায় আমি অনার্স সেকেন্ড ইয়ারের শেষের দিকে। মাথায় টাকা আয়ের চিন্তা। অন্যদিকে বুকে কম্পিউটারের প্রতি দুর্নিবার আকর্ষন।

এই অবস্থায় সম্ভবত ১৫০ টাকা দিয়ে সিডিটা কিনে আনলাম। দেখলাম,শিহরিত হলাম,হলাম বাকরুদ্ধ। অনলাইনে আয়ের এক নতুন জগত আমার কাছে এসে ধরা দিল। আমার ভুল ধারনাঃ ভাবতে অবাক লাগে বাংলাদেশে এখন যারা এই বিষয়টা নিয়ে কাজ করবে তারা কত ভাগ্যবান। কেননা তাদের জন্য আছে একটা অসাধারন প্লাটফরম।

তা হল হাসান ভাইয়ের এই ব্লগ । সে সময় ঠিক এই ধরনের কিছু ছিল না বলে অনলাইনে টাকা আয়ের ব্যাপারটির গুরুত্ব, ব্যাপকতা সর্বোপরি এর বিশালত্ব বুঝবার মতো জ্ঞানটিই আমার মাঝে ছিল না। তো আমার দেখা সেই সিডিটি ছিল গুগল এ্যাডসেন্স নিয়ে। যেহেতু হাসান ভাইয়ের ব্লগ ছিল না তাই ওয়ার্ডপ্রস, নিজের ডোমেইন, হোষ্টিং এই সব কিছুর সাথে আমি ছিলাম অপরিচিত। লাখপতি হবার স্বপ্ন (নাকি দুঃস্বপ্ন) নিয়ে গুগলের ফ্রি ব্লগস্পটে এ্যাকাউন্ট খুলে কোন মতে কপি পেষ্ট করে একটা সাইট বানিয়ে এ্যাডসেন্স একাউন্টের জন্য আবেদন করলাম আর তা অনুমোদিতও হল।

ওয়াও! আমাকে আর পায় কে! ভাবলাম বিদেশীরা এত বোকা কেন! বিজ্ঞাপনে ক্লিক করলেই টাকা দিবে-এতো খুবই সোজা। কয়েকদিন পর ছুটলাম ইউনিভার্সিটির ল্যাবে। ইচ্ছেমত নিজের ব্লগে গিয়ে একের পর এক বিজ্ঞাপন ক্লিক করতে লাগলাম! ওহ কি অদ্ভুদ উত্তেজনা! আমার প্রতিটি ক্লিকে টাকা আসছে ভাবতেই খুব ভাল লাগছিল! দ্রুত বাসায় এসে দেখি একদিনেই 24$ জমা হয়েছে। খুবই ভাল কাটল সেই দিনটি। ব্যর্থতাঃ সেই ঘটনার ঠিক দুই দিন পর সকালে উঠে ইমেইল খুলতেই বুকটা ধক করে উঠল।

যা হওয়ার তাই হয়েছে। আমার এ্যাডসেন্স একাউন্ট বাজেয়াপ্ত ঘোষনা করা হয়েছে। চরম রাগ করলাম। আমাকে একটা ওয়ার্নিং না দিয়েই এভাবে একাউন্ট কেটে দিল। ওদের মিথ্যে করে বললাম আমি হোষ্টেলে থাকি হেনতেন…কিন্তু এসবে কি আর কাজ হয়।

পেলাম নতুন দিশা: এরপর অনলাইনে আয়ের বিষয়টাই ফালতু মনে হল। মন ঘুরে গেল। বিভিন্ন ওয়ারেজ সাইটে সময় দিতে লাগলাম। ধীরে ধীরে www.abcdfree.com এর মতো একটা সাইটের মডারেটর পর্যন্ত হয়ে গেলাম। আমার কাছে তখন ওয়েবের জগতটা এত টুকুই ছিল।

এর সাথে জাকারিয়া ভাইয়ের ব্লগ পরে ফ্রীল্যান্সিং এর প্রতি চরম আগ্রহ হল। তাই ফটোশপ শিখব বলে প্রায় 30 GB ভিডিও টিউটোরিয়াল ডাউনলোড করলাম। কিন্তু আমার যা স্বভাব, আগ্রহ ধরে রাখতে পারলাম না। এরই মাঝে ধীরে ধীরে ইন্টারনেট ঘাটাঘাটি করতে গিয়ে হাসান ভাইয়ের ব্লগ পেলাম। পড়তে লাগলাম।

পড়তে পড়তে আবার ঠিক ২ বছর আগের মতোই শিহরিত, বিষ্মিত,বাকরুদ্ধ হয়ে গেলাম। নিজের ভুলগুলো অনুধাবন করতে শিখলাম। সত্যিকারের অনলাইন আয়ের বিষয়টি মর্মে মর্মে উপলদ্ধি করতে পারলাম। এবার শুরু হল নতুন করে পথচলা, নতুন স্বপ্ন দেখা। স্বপ্নযাত্রাঃ Darren Rowse , Yaro Starak , John Chow প্রমূখ বিখ্যাত ব্লগারদের লেখা পড়ে অনেক অনেক কিছু শিখতে পারলাম।

নিজের জ্ঞানের ভান্ডারটা বাড়ায় এবার অনেক বেশি আত্নবিশ্বাষ জন্মাল মনে। কিন্তু হায় টাকা টাকা টাকা। হ্যা আমার নিজের ডোমেইন, হোষ্টিং কেনার মতো টাকা ছিল না। অন্যদিকে বাবা মায়ের কাছে চাইতেও মন চাইছিল না-যদি আবার ব্যর্থ হই। যাই হোক এক আত্নীয়ের কাছ থেকে টাকা ধার করে ৪টা ডোমেইন আর ২৫০০ টাকার হোষ্টিং কিনে কিছু দিন আগে শুরু হল আমার পথচলা।

কেন সফল ব্লগার হতে চাইঃ ১. জগতের হাজার কাজের মাঝে এই কাজটিতেই সর্বোচ্চ আনন্দ ও আত্নবিশ্বাস পাই। ব্লগিং/ইন্টারনেটে আয় কোন সহজ কাজ নয়। কাউকে জোর করে এই লাইনে নিয়ে আসা যায় না বা নিজের মনের ইচ্ছের বিরুদ্ধে খুব বেশি দূর আগানো যায় না। শুধুমাত্র নিজের আগ্রহ-ই পারে এই বিষয়টি নিয়ে ভাবতে শেখাতে, নতুন করে স্বপ্ন দেখাতে। ২. ব্লগিং এর জগতে আয়ের কোন সীমানা নেই।

প্রথাগত চাকুরী, আমাদের মতো একজন ফ্রেস গ্র্যাজুয়েটকে প্রাথমিক ভাবে হয়তো ৬-২০ হাজার টাকার কর্মের সংস্থান করে দিতে পারে। সময়ের ধারাবাহিকতায় আস্তে আস্তে হয়তো বেতন বাড়বে কিন্তু তার গতিটা হবে বড্ড ধীর। অন্যদিকে নিজের মেধা, মনন, শ্রম, সময় ঢেলে দিতে পারলে খুব দ্রুত আপনি গড়ে তুলতে পারেন একটি আকর্ষনীয় ব্লগিং ক্যারিয়ার। কোন অঙ্কের বাধনে আটকাতে পারবেন না আপনি। আপনার কাজই নির্ধারন করে দিবে আপনার আয়ের অঙ্কটি-তাও আবার টাকার অঙ্কে না ডলার কিংবা পাউন্ডে।

৩. পৃথিবীর সবচেয়ে Flexible Job বোধকরি ব্লগিংকেই বুঝায়। আপনি আপনার ঘরের বিছানায় শুয়ে ল্যাপটপের বাটন প্রেস করছেন আর আপনার এ্যাকাউন্টে টাকা জমা হচ্ছে। কি অসাধারন একটা ব্যাপার! নিজেই নিজের বস হবার চেয়ে সুখকর অভিজ্ঞতা আর হতে পারে না। ৪. আপনি ঘুমাচ্ছেন আপনার এ্যাকাউন্টে টাকা জমা হচ্ছে, আপনার ভাল লাগছে না ঠিক আছে সেদিনটা না হয় আর কোন কাজই করলেন না, প্রিয়তমকে নিয়ে ঘুরতে চলে যাবেন কোথাও? যান না বাধা দিয়েছে কে! কারও কাছে ছুটি নেবার প্রয়োজন নেই, কোন অফিসিয়াল কর্মঘন্টা নেই, নেই ব্যস্ত ধুলমাখা রাস্তায় ছুটে চলা-এই সব কিছুই সম্ভব যদি আপনি একটা সফল ব্লগিং ক্যারিয়ার গড়ে তুলতে পারেন। ৫. আপনি ব্যবসা করবেন? প্রয়োজন হবে বেশ ভাল অঙ্কের টাকা, সাথে যুক্ত হবে হাজারো উটকো ঝামেলা, পাড়ার বড় ছোট ভাইদের আবদার।

আর ব্লগিং করবেন? এসব কিছুই আপনাকে বিচলিত করতে পারবে না। একটা মোটামুটি মানের কম্পিউটার, মাসিক ৬০০-১০০০ টাকার একটা ইন্টারনেট সংযোগ-ব্যাস এর বেশী কিছু লাগবে না ব্লগিং করার জন্য। ৬. ভার্চুয়াল জগতে নিজের একটি ওয়েব সাইট পৃথিবীর বুকে এক টুকরো জমির চেয়েও মূল্যবান হয়ে উঠতে পারে। আপনার সাইটের মূল্যবান ওয়েব স্পেসকে আপনি হাজারো কাজে লাগাতে পারবেন যা প্রথাগত ব্যাবসা, চাকুরী এমনকি ফ্রিল্যান্সিং এর মতো আকর্ষনীয় পেশায় ততটা সম্ভব নয়। প্রাইভেট এ্যাড , এ্যাফিলিয়েট প্রোগ্রাম , ডোনেশন , ইবুক পাবলিশিং , কোচিং/টিচিং ইত্যাদি শত শত উপায়ে, প্রচলিত যে কোন কাজের চেয়ে কয়েকগুন বেশী আপনি আয় করতে পারবেন যদি আপনি নিজেকে একজন প্রতিষ্ঠিত ব্লগার হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করতে পারেন, হয়ে উঠতে পারেন আরেকজন অমিত আগারওয়াল ।

তাই একথা নিঃস্বন্দেহে বলা যায়, সফল ব্লগার অর্থের পিছনে ছুটেন না বরং অর্থ তার পিছনে হুমড়ি খেয়ে পড়বে। আমার কর্মপরিকল্পনাঃ মাত্র কিছুদিন হোল পূর্ণদ্যোমে ব্লগিং জগতে পথ রাখলাম। জানি না সাফল্য পাব কিনা। এখন আবার IBA ও Du এর EMBA এর জন্য পড়ালেখা করতে হচ্ছে। প্রচন্ড প্রেসারে আছি।

তাও ব্লগিং চালিয়ে যাব। ব্লগিং নিয়ে আমার নিজস্ব কিছু পরিকল্পনা শেয়ার করলামঃ ১. Online Schools & Courses, Hospitality Training, Printer Buying Tips & Review, Mobile Contract Deal-এই ৪টি বিষয়ের ডোমেইন কিনেছি। Online Schools & Courses বিষয়টা বেছে নেওয়া একটা ভুল সিদ্ধান্ত ছিল যা আমি কাজ করার পর বুঝতে পারছি। এখন Hospitality Training নিয়ে কাজ করছি। এই বিষয়ে গ্রাজুয়েশন করায় আর এই টপিকের উপর ইন্টারনেটে কোন ফ্রী ট্রেইনিং সাইট না থাকায় স্বপ্ন দেখছি এই ব্লগটিকে নিয়ে অনেক দূর যাওয়ার।

২. Success Stories পড়তে ভাল লাগে, প্রচন্ড অনুপ্রানিত হই। কিছুদিন আগে Yaro Starak এর ব্লগ থেকে Pat Flynn এর সাফল্যের কাহিনী পড়ে একটা নতুন পরিকল্পনা এটেছি। আগামী কয়েক মাসে Hospitality Training ব্লগটি নিয়ে কাজ করে অন্তত কয়েক শত নিয়মিত পাঠক বানাতে চাই। তারপর Pat Flynn এর মতো নিজের একটা ইবুক বানিয়ে তা বিক্রী করতে চাই। আমার কাছে Text to Speech এর ভাল সফটওয়্যার আর অনেক Accent এর Voice আছে যা দিয়ে ইবুকের সাথে অডিও বুক আর অডিও টিউটোরিয়াল বানাতে চাই।

হয়তো অনেক বেশী বড় স্বপ্ন কিন্তু আমি প্রচন্ড আশাবাদী। ৩. বড় বড় ব্লগারদের আয়ের রিপোর্ট পড়লে দেখা যায় তাদের অনেকেরই আয়ের সবচেয়ে ছোট অংশটুকু আসে গুগল এ্যাডসেন্স থেকে। তারা মূলত আয় করে প্রাইভেট এ্যাড, প্রিন্টেড বই বা ইবুক আর এ্যাফিলিয়েট মার্কেটিং থেকে। যদি ভাল কাজ দেখাতে পারি তাহলে ইনশাল্লাহ কিছু প্রাইভেট এ্যাড বসাতে পারব বলে আমার বিশ্বাস। কিন্তু সে জন্য প্রচন্ড খাটতে হবে।

আমি খাটতে রাজী আছি। কেননা আমি বিশ্বাস করি মানুষের কর্মই তার ভাগ্যকে গড়ে দেয়। ৪. একবার সাফল্য পেলে আমার মতো সমমনা আরো কিছু তরুনদের নিয়ে একসাথে কাজ করার ইচ্ছে আছে। সে অনেক পরের ব্যাপার। দেখা যাক কি হয়।

যবনিকাঃ লেখাটা অনেক বড় হয়ে গেল। জানি না লেখাটা নির্বাচিত হবে কিনা। হলে হয়তো আপনারা আমার ভুলগুলো,আমার পরিকল্পনাগুলো জেনে নিজেদের মাঝে নতুন কিছু ভাবনার জাল বুনতে পারবেন। কারো বিন্দুমাত্র উপকার হলে আমার এই লেখা সার্থক। সবাইকে অসংখ্য ধন্যবাদ।

------------------------------------------------ ব্লগের নিউজলেটার (২৯২জন পাঠক) | ব্লগের ফেসবুক পেজ (১২৬জন সদস্য) -----------------------------------------------

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.