আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

আত্নীয়তার গুরু্ত্ব ও বজায় রাখার উপকারীতা



আল্লাহ রাববুল আলামীন কোরআনে পাকে বলেছেন, ওয়াতা ক্বুললাহাল লাজি তাসায়ালুনা বিহ আরহাম অর্থ তোমরা আল্লাহকে ভয় কর যাঁর নামে তোমরা একে অপরের কাছে কিছু চাও এবং রক্ত সম্পর্কীয় আত্নীয়দের সম্পর্কে সতর্কতা অবলম্বন কর। অর্থাৎ রক্ত সম্পর্কীয় বন্ধন ছিন্ন করো না। সুরা নিসা. আল্লাহ তায়ালা বলেন, তারাই তো জ্ঞানবান যারা আল্লাহর প্রতিশ্রুতি পূরণ করে এবং অঙ্গীকার ভঙ্গঁ করে না। আললাহ আত্নীয়তার যে সর্ম্পক রক্ষা করা নির্দেশ দিয়েছেন,তা যারা অক্ষুন্ন রাখে,তাদের পালন কর্তাকে ভয় করে এবং কঠোর হিসাবের আশংক্ষা রাখে। সুরা রাদ সহীহ বোখারী ও মুসলিম শরীফে বর্ণিত আছে আল্লাহর রাসুলুল্লাহ সাল্লাহু আলাইহী ওয়া সাল্লাম বলেন রক্ত সম্পর্কীয় আত্নীয়তা বন্ধন ক্ষুন্নকারী কখনো জান্নাতে যেতে পারবে না।

অন্য হাদীসে রাসুলুল্লাহ সাল্লালাহু আলইহী ওয়া সাল্লাম বলেন,যে লোক আল্লাহ ও পরকালের উপর বিশ্বাস রাখে,সে যেন রক্ত সর্ম্পকীয় আত্নীয়তার সু সর্ম্পক বজায় রাখে। মেশকাত শরীফ হাদীসে কুদসীতে এসেছে,রাসুলুল্লাহ সাললালাহু ওয়া সাল্লাম বলেন আল্লাহ পাক বলেন আমার নাম রাহমান (পরম দয়ালু)আর আত্নীয়তার সর্ম্পকের নাম হল রেহেম সেই দয়ার অপর নাম আত্নীয়তা বন্ধন। আমার রাহমান নাম থেকেই রেহেম নামটির সৃষ্টি। যে লোক আত্নীয়তা বন্ধন বজায় রাখে,আমি ও তার সাথে সর্ম্পক ছিন্ন করি। আল্লাহর আরশে মুআল্লার সাথে তিন ঝুলন্ত বষ্তু সম্পৃক্ত রয়েছে।

তার প্রথমটি হল রেহেম বা আত্নীয়তা বন্ধন। সে বলেছে হে মাবুদ আমি আপনার সাথে সম্পৃক্ত,আমাকে যেন ছিন্ন না করা হয়। দ্বিতীয়টি হল আমানাত,সে বলে চলেছে হে মাবুদ আমি আপনার সাথে সম্পৃক্ত। আমাকে যেন খেয়ানত তথা অনিষ্ট করত: পৃথক না করা হয়। তৃতীয়টি হল নিয়ামত সে বলে চলেছে।

হে মাবুদ আমি আপনার সাথে সম্পৃক্ত। অকৃতজ্ঞতা বশত: আমাকে যেন দূরে সরিয়ে না দেয়া হয়। যে লোক নিজের অসহায় দরিদ্র আত্নীয়দের সাথে সর্ম্পক ছিন্ন করে। তদের কে পরিত্যাগ করে। তাদের দিকে অহংকার ও দম্ভ প্রকাশ করে সে বিত্তবান আর তারা দরিদ্র এ ধরনের অবস্হায় সে দয়া দাক্ষিণ্য ও সহায়তা দ্বারা তাদের সাথে ঘনিষ্টতা বজায় না রেখে বরং গর্বিত মনোভাব নিয়ে আত্নয়তার বন্ধন ফাটল ধরায়।

হজরত আবু যর গিফারী (রা) বর্ণনা করেন রাসুলুল্লাহ সালল্লাহু আলাইহী ওয়া সাললাম আমাকে উপদেশ দিয়াছেন পার্থিব ব্যাপারে যারা আমার তুলনায় শ্রেষ্ঠ ও উন্নত আমি যেন তাদের সাথে প্রতিযোগিতা না করি। যারা আমার তুলনায় দুঃখ কষ্টে কালাতিপাত করে আমি যেন তাদের দিকে দৃষ্টিপাত করি। আল্লাহর কৃতজ্ঞতা জ্ঞাপন করি। গরীব মিসকীন দেরকে যেন অধিক ভালবাসি এবং সর্বদা তাদের সাথে উঠাবসা করি। আত্নীয় স্বজনদের কে যেন সন্তুষ্ট রাখি।

ধর্মীয় বিধি বিধান আদায়ের ব্যাপারে যেন কাউকে পরোয়া না করি। কারও কাছে কটু বা তিক্ত হলেও হক কথা বলতে যেন সংকোচ না করি। হাদীস শরীফে আছে মানব জাতির (দুনিয়ার)আমল সমূহ প্রত্যেক শুক্রবার রাতে আল্লাহর দরবারে পেশ করা হয়। কিন্তু আত্নীয়তা ছিন্ন কারী আমল তথায় গৃহিত হয় না। অন্য হাদীসে আছে তিন শ্রেণীর লোক বেহেস্তে যাবে না,মদ্যপায়ী,আত্নীয়তা ছিন্নকারী,যাদু টোনা বিশ্বাসকারী।

হাদীস শরীফে যে হুশিয়ারী ও সর্তকতার বাণীর দ্বারা বুঝা যায় সে জন্নাতে প্রবেশের অনুমতি পাবে না। একমাএ আল্লাহ পাকের কছে তওবা করে আত্নীয়তা বজায় রাখে। তাহলে তা থেকে আশা করা যায় পরিএান পাওয়া যেতে পরে। হাদীস শরীফে এও কথা ও বর্ণিত আছে তাহাদের সাথে অন্তঃ ছালামের মাধ্যামে হলেও আত্নীয়তার সর্ম্পক বজায় রাখ। হাদীস শরীফের মধ্যে আছে কোন সভা বা মজলিসে যদি রক্ত সর্ম্পক ছিন্ন কারী লোক উপস্হিত থাকে সেখানে আল্লাহ রহমত আসে না।

কেননা আল্লাহ তায়লা পিতা ও মাতার হকের পরেই সকল নিকট আত্নীয় স্বজনে সাথে সদ্ব্যবহারের নির্দেশ দিয়েছন। আমরা প্রতি শুক্রবারে জুম্মার খুতবার মধ্যে একটি আয়াত শুনি যা রাসুলুল্লাহ সাল্লালাহ আলাইইী ওয়া সাল্লাম প্রায় ভাষনের সময় বলিতেন। আল্লাহ সবার সাথে ন্যায় ওসদ্ব্যবহারের নির্দেশ দিয়াছেন এবংনির্দেশ দিয়াছেন আত্নীয় স্বজনের হক আদায় করার জন্য। আল্লাহ তায়লা আরশের ছায়ার নীচে তিন শ্রেণীর লোক স্হান পাবে। (১) আত্নীয়তার সর্ম্পক রক্ষাকারী,সে ইহকালে অপরকে শান্তি দিয়াছেন,তাই আল্লাহ পাক কিয়ামতের দিন তাকে আরশের ছায়ার নীচে স্হান দান করে সূর্যের তাপ থেকে নিরাপদ রাখবেন।

(২)যে বিধবা রমণী নিজের ইয়াতিম সন্তানের দেখা শুনা ওপর্যবেক্ষন ব প্রতিপালন করার উদ্দেশ্যে নিজেকে পূর্ণ বিবাহ থেকে বিরত রাখে। (৩) যে ব্যক্তি ভোজানুষ্টানে ইয়াতিম অসহায় ও নিঃসম্বলদের কে দাওয়াত করে। আমরা অনেক সময় আমাদের নিকট আত্নীয় স্বজন দরিদ্র অসহায়দের কে আমাদের যাকাত বা সদকার মাল,টাকা পয়সা দান করি থাকি। তাহার মধ্যে দু টি ছোয়াব রহিয়াছে। একটি হল তাহাদের কে দান সদকার জন্য ছোয়াব।

অন্যটি হল আত্নীয় বা রক্ত সর্ম্পকীয়তার জন্য ছোয়াব। আর যদি আমরা সাধারণ গরীব মিসকীন অসহায় কে দান করি তাহলে একটি ছোয়াব পাই তা শুধু দান বা সদকার জন্য ছোয়াব। যে ব্যক্তি আত্নীয় স্বজন গরীবদের কে বাদ দিয়ে অন্যদের ক দান করে তা আল্লাহ তায়লার কাছে গ্রহনীয় নয়। আমাদের মধ্যে যার আর্থিক সচছলতা আছে। তার জন্য আত্নীয় স্বজনের প্রাপ্য হল আর্থিক ভাবে সাহায্য করা।

আর যার আর্থিক সচছলতা নেই,তার কাছ থেকে আত্নীয় স্বজনের প্রাপ্য হল দৈহিক সেবা মৌখিক সহানুভূতি। রাসুলুল্লাহ সাল্লালাহ আলাইহী ওয়া সাল্লাম বলেন যে ব্যক্তি চায় যে তার রুজি রোজগার বাড়িয়ে দেওয়া হোক। এবং তার আয়ু বৃদ্বি পাক,সে যেন আত্নীয়তার সর্ম্পক সংরক্ষন করে। আমাদের মধ্যে এমন ও লোক পাওয়া যায়,যাহারা নিজ আত্নীয় ও রক্ত সর্ম্পকীয়দের সাথে বৈরী আচরণ করিতে দেখা যায়। আত্নীয় স্বজন দের সাথে হেসে কথা বলার মাঝে আ্ল্লাহ রহমত রেখেছেন।

বর্তমান পরিবেশ ভিন্ন সাহায্য সহযোগীতা খোজ খবর নেয়া তো দুরের কথা। বরং আত্নীয় স্বজনদের সাথে সু সর্ম্পক নেই। একে অপরের মুখ দেখাদেখি পর্যন্ত বন্ধ করে দেয়। অগোচরে পর্রনিন্দা,পর্রচচা,কুৎসা বর্ণনায় দেখা যায় ব্যস্ত। আল্লাহ তায়লা যাদের সর্ম্পকে আপনাকে আমাকে জিজ্ঞাসা করবেন।

তাহাদের কে বাদ দিয়ে অনেক কে দেখা যায় অনাত্নীয়দের কে প্রাধান্য দিতে,ইসলামের নিয়ম হল প্রথম আত্নীয় স্বজন,প্রতিবেশী,নিজ এলাকা,সাধারণ মুমিন মুসমান ও অন্যান্য মানুষবৃদ্ধ। নিকট আত্নীয় স্বজনদের রেখে অনাত্নীয়দেরে অন্যান্য প্রাধান্য দেওয়া ইসলাম অনুমোদন করে না। আত্নীয়তা বজায় রাখা শুধু দান সদকা করা নয়। আত্নীয়তা রক্ষা করার অর্থ হল তাহাদের খোজ খবর নেয়া। সুখ ও দুঃখে তাহাদের পাশে দাড়ানো।

অন্য যদি আপনার বা আমার সাথে সর্ম্পক ছিন্ন করিতে চায় তাহার সাথে আত্নীয়তা সর্ম্পক সৃষ্টি করাই হল আত্নীয়তা রক্ষা করা। যেন আমার কাছ থেকে কোন আত্নীয় স্বজন জ্বিবহা দ্বারা,হাত দ্বারা,অর্থ দ্বারা যেন কোনভাবে দুঃখ কষ্ট না পায়। দুনিয়ার হাজার ব্যস্ততার মধ্যে অন্তত সাপ্তাহ মাসে তাহাদের খোজ খবর নেওয়া আমদের উচিত। আত্নীয়তা বজায় রাখা উপকারীতা ১। আত্নীয়তা বজায় রাখার দ্বারা আল্লাহর সন্তুষ্টি লাভ করা যায়।

২। আত্নীয়তার সর্ম্পক রক্ষার দ্বারা হায়াত বৃদ্ধি পায়। অর্থাৎহায়াত বৃদ্ধি পাওয়ার অথ হল কাজের মধ্যে বরকত হওয়া,আমলের বিনিময়ে প্রচুর পূর্ণ্য লাভ করা। ৩। আত্নীয় স্বজনদের সাথে আত্নীয়তা বজায় থাকিলে আত্নীয় স্বজন সন্তুষ্ট হয়।

আর মুমিনের সন্তুষ্টি ইবাদত সদৃশ। ৪। আত্নীয়তা রক্ষার দ্বারা ফিরিস্তারা ও খুশি হন। ৫। সাধারণ মানুষরা আত্নীয়তা রক্ষাকারীর প্রশংসা করে।

৬। আত্নীয়তা রক্ষার দ্বারা রুজি ও উর্পাজনে বরকত হয়। ৭। আত্নীয়তার সর্ম্পক রক্ষা দেখিলে শয়তান দুঃখ পায়। শয়তান কে দুঃখিত করা মুমিনের জন্য আনন্দের বিষয়।

৮। আত্নীয়তার সর্ম্পক রক্ষার দ্বারা মূত ব্যক্তি ও সন্তুষ্ট হন। ৯। আত্নীয়তা রক্ষার দ্বারা একে অপরের প্রতি প্রেম প্রীতি বৃদ্ধি পায়। আর এ রকম মানুষকে সবাই ভালবাসে,এবং সহানুভূতি করে থাকে।

১০। আত্নীয়তা রক্ষাকারী মৃত্যুর পর ও তার এই কাজে প্রতিদান চলিতে থাকে। অর্থাৎ যার সাথে আত্নীয়তা রক্ষা করে উওম আচরণ করে ছিল। সে তার জন্য দোয়া করিতে থাকে। আর আল্লাহ পাক তাকে মৃত্যুর পর ও তাহাকে প্রতিদান দিতে থাকে।

পরিশেষে আল্লাহ পাকের নিকট আমাদের কর্রজোড় প্রার্থনা যে প্রত্যেক আত্নীয় স্বজনদের সাথে যেন আত্নীয়তার বন্ধন অক্ষুন রেখে তাহাদের সঠিক হক আদায় করে ইহকালর কল্যাণ ও পরকালে মুক্তি লাভ করিতে পারি। আমীন

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.