আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

বিমুর্ত ও মুর্ত বিষয়ক সমস্যা - ডিউকের ভাস্কর্য



নাসিমুল খবীর ডিউক - ঢাকা আর্ট ইন্সটিটিউটের প্রাক্তন ছাত্র, বর্তমানের শিক্ষক; তাঁর ভাস্কর্য ও ড্রইং প্রদর্শনী গতকাল থেকে শুরু হয়েছে এশিয়াটিক সোসাইটির গ্যালারী অফ ফাইন আর্টসএ। এই সংবাদ নিয়ে মুনশিয়ানা আমাদেরকে পরিচয় করিয়ে দিতে একটা পোষ্টও দিয়েছেন। Click This Link ঐ পোষ্ট দেখার পরে যে মন্তব্য ওখানে দিয়েছি তা আরও কিছু স্পষ্ট করার সুযোগ নিয়ে আমার প্রকাশিত নিচের এই পোষ্ট। শ্রীমতী বোরাক ও সহোদরাবৃন্দঃ ভাস্কর্য প্রদর্শনী খুশির খবর যে ফাইন আর্টস ফ্যাকাল্টি বা আমাদের আর্ট ইন্সটিটিউটের ভাস্কর্য বিভাগে বোরাক (মেরাজ-গমন মিডিয়া) সাবজেক্ট হতে পেরেছে; তা সে পুরান ঢাকা অথবা পুরান ঢাকার গরীব রিক্সা পেইন্টিং কারিগরের কল্যাণে হোক, ক্ষতি নাই; খবর হোল বোরাক সাবজেক্ট হতে পেরেছে। ডিউককে এজন্য অনেক ধন্যবাদ।

সেই সাথে মুনশিয়ানাকেও ধন্যবাদ ভাল উপস্হাপনে ব্লগে আমাদেরকে তা জানানোর জন্য। বোরাক কী বোরাক সাবজেক্ট হয়েছে ঠিকই তবে বোরাক কী, কিসের প্রতীক, বোরাক কেন কমুনিকেশনের মাধ্যম, কার কার মধ্যে কমুনিকেশন - এসব এখনও ঠিকঠাক মত আমাদের সামনে বা ব্লগে হাজির নয়। আস্তিক-নাস্তিক অহেতুক মেতে থাকা সময়ে যখন আমরা আমাদের ব্লগ-সময় পার হচ্ছি তখন তা হাজির হতে আরও সময় লাগবে বুঝি। তবু ক্রিয়েটিভ জগতে বোরাক সাবজেক্ট হতে পারা সম্ভবত একটা প্রাথমিক ধাপ বৈকি! ডিউককে সামনাসামনি দেখা পাব কি না জানি না, পেলে অনেকগুলো প্রশ্ন জানার ছিল। যেমন, ভাস্কর্যে ইসলাম - ইসলামের জ্ঞানের বৈশিষ্ট ধারণ করে ভাস্কর্যে এমন কোন কিছু ফুটিয়ে তুলতে পারে কী না? ডিউকের প্রদর্শনী দেখে ওর ধারণা জানতে ইচ্ছা হচ্ছিল।

ভাস্কর্যে abstract ও real এর সমস্যা যা abstract বা বিমূর্ত তাকে প্রকাশ বা মূর্ত করে দেখানো সহজ কাজ নয়। abstract অর্থাৎ যাকে মূর্ত, সত্যি (real), মুর্তিমান বিশেষ কোন কিছুর মধ্যে সাহায্য নিয়ে ধরা চলবে না, গেলে হবে না, ধরতে হবে বিমুর্ত করে, ভাবের মধ্যে; আবার তাকে প্রকাশ করতে হবে, সেই ভাবকে প্রকাশ করতে হবে; অর্থাৎ সবশেষে তা মুর্ত করতে মুর্তি আবার একটা লাগবে - সবমিলিয়ে এক কঠিন সমস্যা, জটিল কাজ। আসলে সমস্যা হলো দেখা, দেখানো তো। কোন কিছু দেখানো মানেই তার রূপ ও আকার। রূপ ও আকার-সহ তাকে স-আকার বা সাকার করে মুর্ত করা।

এখন, সমস্যা হলো যা বিমুর্তে আছে, ভাবের মধ্যে আছে কেবল তাকে দেখাব কেমন করে। কারণ দেখা মানে কোন না কোন একটা রূপ ও আকার-সহ তাকে সাকার খাঁড়া করে মুর্ত প্রকাশ করে দেখানো। পাঠক খেয়াল করেছেন বোধহয়, উপরে একটা লিখেছি বোল্ড করে। কেন করেছি তা বলব নীচের উদাহরণের শেষে। যেমন ফুল যে একটা বিমুর্ত ধারণা আমরা অনেকেই হয়ত খেয়াল করিনি।

খেয়াল হবে - যদি কাউকে বলি, আমাকে একটা ফুল এনে দেন দেখি। নিশ্চয় সে আনবে জুই, জবা, গন্ধরাজ, দোপাটি, চাঁপা, বোগেনবোলিয়া অথবা রজনীগন্ধা বা আরও কোন দামী কিছু। আমি একএক করে সব ফিরিয়ে দিব আর বলতে থাকব, ওটা তো জুই, ওটা তো জবা,........ওটা তো রজনীগন্ধা। আমি শুধু ফুল চাই, কেবল ফুল - যেটা জুইও নয়, জবাও নয়,...... রজনীগন্ধাও নয় - কেবল ফুল চাই আমি। আমি জানি কেউ আমাকে ফুল এনে দিতে পারবে না, পারে না।

কারণ, বাস্তবে really ফুল বলে কিছু নাই; আছে কেবল জুই, জবা, গন্ধরাজ, দোপাটি, চাঁপা, বোগেনবোলিয়া অথবা রজনীগন্ধা বা আরও সব নাম না জানা। কিন্তু তবু ফুল আছে; আছে বিমুর্ততায়, আমাদের ভাবের মধ্যে। ফুল বললে আমরা আমরা বুঝতে পারি, কী নিয়ে কথা বলছে। এখন সেই বিমুর্ত ফুলকে আবার মূর্ত করে ভাস্কর্যে এনে, মুর্ত করে প্রকাশ করে দেখাতে কাউকে যদি বলি তবে সে কী করবে? কারণ আগেই বলেছি দেখানো মানে রূপ ও আকার-সহ তাকে স-আকার বা সাকার করতে মুর্ত করতে একটা মুর্তি লাগবে; একটা বাস্তব, সত্যি (real), কিছু না হলে সে "দেখাবে" কী করে?। আবার আরও কথা আছে।

যে সে দেখানো হলে চলবে না; মানে তা যেন আবার দেখে জুই, জবা, গন্ধরাজ, দোপাটি, চাঁপা, বোগেনবোলিয়া অথবা রজনীগন্ধা বা আরও সব নাম না জানা কারও মত হলে হবে না - বিমুর্ত, ভাবকে ফুলকে মুর্ত প্রকাশ করে দেখাতে হবে, ভাস্কর্যে। মানুষের চোখে তা দেখে আবার যেন কোন সুনির্দিষ্ট জুই, জবা, গন্ধরাজ, দোপাটি.... ইত্যাদির ভাবনা না আসে, অবশ্যই যেন বিমুর্ত ফুল মনে হয়, মানুষের মনে ফুলের ভাব আসতে হবে। সমস্যার এখানেই শেষ নয়; বিমুর্ত ফুল ধারণা বা ভাবকে ধরে যখনই কোন না কোন রূপ ও আকার-সহ তাকে স-আকার বা সাকারে মুর্ত ভাস্কর্যে উপস্হাপনের চেষ্টা করা হবে তখনই তা একটা - ফুলের একটাই রূপ বলে ধারণা তৈরি হবার সম্ভবনা তৈরি করবে। কিন্তু ফুল বলে তো একটা কোন কিছু নয় বরং সে তো বহু, প্লুরাল; জুই, জবা, গন্ধরাজ, দোপাটি, চাঁপা, বোগেনবোলিয়া অথবা রজনীগন্ধা বা আরও সব নাম না জানা - সকলেই সাধারণ বা বিমুর্ত নামে হলো ফুল। এই সমসয়াটাই সবচেয়ে কঠিন ও জটিল।

এককথায়, ভাস্কর যাই করুক তাঁর কাছে এর কোন আলটিমেট সমাধান নাই। তবু একটা আপাত বুদ্ধি সে করতে পারে। তাঁর বিমুর্ত ফুলের ভাস্কর্যে এমন কিছু থাকতে হবে, এমনভাবে গড়তে হবে যেন দেখে দর্শকের মনে একটা নয়, একের মধ্যে বহু, অনেক - এমন একটা ভাব আসে; অর্থাৎ একক ফুলের মুর্ত ভাস্কর্যে যেন বহু ফুলের জানা অজানা সম্ভবনার ইঙ্গিত থাকে। আমি অবশ্যই ভাস্কর নই, আর্টস বা কলাবিদ্যার ধারেকাছের কেউ নই ফলে, এরচেয়ে বেশি কোন পরামর্শ দিতে পারলাম না। তবে বলছিলাম, সবমিলিয়ে এটা এক কঠিন সমস্যা, জটিল কাজ; কাঠে বা কংক্রিটে গ্রোভ খোদাইয়ের কঠিন কষ্টকর কাজ এড়ানোর জন্য যাতা মাতা একটা আকার দেয়া নয়।

আমাদের অনেক ভাবতে হবে। আমি পশ্চিমের abstract expressionism এর কথা বলছি না। ডিউক পশ্চিমের পথ ধরে বোরাককে সাবজেক্ট করেছেন কী না আমি জানি না। জানার ইচ্ছা রইল। শেষ করার আগে কিছুটা ভিন্ন প্রসঙ্গে, আমার ভাল লেগেছে "জৈবিক কথোপকথন" এর কাজটা; যদিও নামকরণটা একেবারেই বেমানান, বিশেষ করে কাজের গভীরতার সাথে তুলনায়।

সেদিকে এখন কথা বাড়াব না, প্রসঙ্গ বদলের শঙ্কায়। অন্য কখনও দেখা যাবে। ডিউককে গভীর অন্তর থেকে ধন্যবাদ।

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।