আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

ছেলেরা কেন পালিয়ে যায়ঃ

সব কিছুর মধ্যেই সুন্দর খুঁজে পেতে চেষ্টা করি............

ছেলেরা কেন পালিয়ে যায়ঃ আমার ১১ বছর বয়সের মধ্যে আমি বাড়ি থেকে ৪ বার পালিয়েছিলাম। যার শুরু করেছিলাম মাত্র ৮ বছর বয়সে। আমার বাড়ি পালানোর বিষয় নিয়ে এখনো আমার পরিচিত জনেরা অনেক সময় রসালো মন্তব্য করেন-যা আমাকে এক বিমর্ষ নস্টালজিকতায় আক্রান্ত করে। যে বাড়ি পালায়-সেই জানে কী কারনে বাড়ি পালায়! বাড়ি পালানো বিষয়ে আমার ব্যাক্তিগত অভিজ্ঞতা থেকে লিখছিঃ- সাধারণত ছেলে বাচ্চাদের মধ্যে বাড়ি থেকে পালানোর প্রবণতা লক্ষ্য করা যায়। এ পালিয়ে যাওয়ার ব্যাপারটা অনেক সময় ঝোঁকের মাথায় আবার অনেক সময় বেশ পরিকল্পনা করেই ঘটে।

পালানোর বিষয়ের পিছনে কখনো থাকে এডভাঞ্চার আবার কখনো থাকে এক নিদারুণ অস্ফুট কস্ট! যার বেলায় যেটা প্রজোয্য। ছেলেটি পালিযে কখনো কোন আত্মীয়ের বাসায় চলে যেতে পারে, কখনো কোন বন্ধুর বাসায়, কখনো স্বল্প পরিচিত কারো কাছে আবার কখনো কোন একেবারে অপরিচিত স্থানে-তা হতে পারে লঞ্চ ঘাট, কাকরাইল মসজিদ কিম্বা ট্রেন স্টেশনের ছিন্নমুলদের কাতারে! পালিয়ে নতুন আশ্রয় স্থলে যাওয়ার মোটামুটি এক সপ্তার মধ্যেই ছেলে বুঝতে পারে যে বাবা মার আদর আর টাকা পয়সার সাহায্য ছাড়া তার পক্ষে চলা সম্ভব নয়। তখনই সে আবার বাড়ি ফিরতে ব্যস্ত হয়ে ওঠে- নিজেই বাড়ি ফিরে আসে বা বাবা মাকে তার অবস্থান সম্পর্কে জানিয়ে ফিরিয়ে নিতে অনুরোধ করে। কিন্তু কেউ কেউ আমার মত "জীবনে আর বাড়ি নাফেরার" ধনুর্ভংগ পন করে-তারপরও ফিরে আসতে বাধ্য হয়! ছেলে কেন বাসা থেকে পালায়? সাধারণতঃ বাড়িতে নুন্যতম সহানুভুতি না পেলে কিম্বা কোন দ্বন্দ্বের সুস্থ সমাধান না করতে পারলে সেই দ্বন্দ্বের হাত থেকে বাঁচার জন্য এরা বাড়ি থেকে পালায়। এদের আবেগ অপরিপক্ক।

যুক্তি বুদ্ধি অপরিণত। ফলে কোন সমস্যাকে সুস্থভাবে মোকাবেলা না করে তারা সমস্যার হাত থেকে বাঁচার জন্য পালিয়ে বেড়ায়। বাড়ি থেকে পালানোর ক্ষেত্রে যে বিষয়গুলো সব চাইতে বেশী কাজ করে সেগুলো হচ্ছেঃ ০বেশীর ভাগ ছেলেরা পালায় সৎ মায়ের অত্যাচার কিম্বা আরো কিছু কঠিন পারিবারিক আবহের কারনে। ০ বাবা মার মধ্যে সর্বক্ষণ ঝগড়াঝাটি। এটা বাচ্চার মনের নিরাপত্তা বোধকে ব্যাহত করে।

০ "কেউ আমাকে ভালবাসে না"- এ ধরনের বোধ থেকে। ০ সহোদরদের মধ্যে হিংসা বা পরিবারে নতুন সন্তানের আগমনের কারণে অন্য সন্তানের প্রতি মনোযোগ কমে গেলে। ০ কোন অপরাধের কারণে শারীরিক শাস্তি পাওয়ার ভয়। ০ কোন অপরাধের কারণে পরিবার থেকে আদর স্নেহ ভালবাসা হারানোর ভয়। ০ পরীক্ষায় ফেল বা খারাপ রেজাল্ট করা।

০ বন্ধুর বিপদে সাহায্য করার জন্য। পালানোর প্রবণতা রোধে করণীয়ঃ ছেলের বাড়ি পালানো রোধে আপনার কিছু করণীয় আছে। প্রথম করণীয় হচ্ছে নিজেকে সংযত করা, রেগে না যাওয়া এবং সহজ থাকা। আর যেসব করণীয় আছে সেসব হচ্ছে- ০ আপনাকে বুঝতে হবে যে ছেলেটি বুদ্ধি অপরিণত এবং ওর মধ্যে ঝোঁকের মাথায় কাজ করার প্রবণতা আছে। ঝোঁকের মাথায় কাজ করার প্রবণতা ওর ইচ্ছাকৃত নয়।

০ ফিরে আসার পর ছেলেকে বকাঝকা করবেন না বা মারধর করবেন না। ওর সাথে ভাল সম্পর্ক আছে এমন কাউকে ওর সাথে আলাপ করতে দিন। ছেলেকে পালিয়ে যাওয়ার ঘটনা সম্পর্কে ওর নিজের অনুভূতি ও অপরাধবোধ প্রকাশ করার সুযোগ দিন। ০ তাকে বুঝতে দিন যে সে যা করেছে তা ভুল না কিন্তু সাহসী ছেলেরা এটা করে না। সাহসী ছেলেরা ঘরের সমস্যা ঘরে থেকেই সমাধান করে।

সমস্যার কারণে ঘর ছেড়ে যাওয়াটা পলায়নপর মনোবৃত্তির লক্ষণ- এটা দুর্বলচিত্তের লক্ষণ। দুর্বলচিত্ততা ওকে মানায় না। কারণ ও বুদ্ধিমান ও সাহসী। ০ সমস্যা সমাধানের বাস্তব পথ জানা সম্পর্কে ছেলেকে ধারণা দিন। ভবিষ্যতে এ ধরনের সমস্যা দেখা দিলে না পালিয়ে কিভাবে তার সমাধান করবে সে সম্পর্কে বলুন।

০ আপনার আন্তরিক ও ধৈর্য প্রসূত চেষ্টার পরও ছেলের পালানোর স্বভাব দূর না হলে একজন মনোরোগ বিশেষজ্ঞের পরামর্শ নিন।


এর পর.....

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।