সরসিজ আলীম_এর কবিতা
একটি হেমন্তের কবিতা
হেসেখেলের মাথার উপর চাবুক ঘোরাচ্ছিলো একটি হেমন্তকাল,
আর রাখাল-সময় শালিক পাখির ঝাঁক ছেড়ে দৌড়াচ্ছিলো
মাঠ পেরিয়ে,
আর পেরোতে পেরোতে সামনে এসে দাঁড়িয়েছিলো
একটি ঘুঘুপাখির ঝোপ,
ঝোপ আর ঘুঘুপাখি বসেছিলো একদুপুরের ডালে,
এই মেয়ে! তোমার টিপটি সুন্দর, তুমি তবে
তবে তুমি শুনতে পেয়েছো ঘুঘুপাখির ঠিক দুপুরের গান।
বেতবনের ভেতর থেকে যে বাঘগুলো জলপানে নেমে আসতো
পাশের নদীতে,
বাঘের জিভের উঠানামা থেকে গড়িয়ে পড়তো যে বৃত্তকার তরঙ্গগুলো,
তরঙ্গমালা ভেসে বেড়াতো সারা নদীতে, তা থেকে জানা যায়:
বেতবনের ভেতর ভয়গুলো নিদ্রা যেতো,
আর খিদে পেলে চুপিচুপি বের হয়ে ঘাড় মটকে আহার করতো
দলছুট দুএকটা হরিণ,
বেতবনকে ঘিরে রাখতো যে বৃক্ষগুলো, রোদ্দুর প্রতিদিন বসতো
তাহাদের পাতার উপর,
পাতাদের উপর বসে পা দুলিয়ে দুলিয়ে ফিরে যেতো নিজেদের
নিরালা নৌকোয়,
এই মেয়ে! তোমার পা দুখানি ভারি সুন্দর, সারারাত দুলতে থাকে
নায়ের উপর,
রোদ্দুর বেতবনের ভেতর ঢুকতে সাহস পেতো না,
শুধু ঝমঝমানো বৃষ্টিরা ঢুকতে পেতো,
আর বৃক্ষদের সারা গায়ে গড়াতে পারতো শ্যামল শ্যাওলারা,
দুএকটা গানের পাখি উচ্চডালে বসে নিবেদন করে যেতো গান
তার প্রেমিকার পায়ে,
বৃক্ষদের ডালে ডালে এক ঝাঁক পেচা ঝগড়াঝাটি করতে পারতো,
দুএকটা বানরছানা লাফিয়ে পড়তো বেতবনের উপর,
আর হুলস্থুল দাপিয়ে উঠতো, আর বাতাস ফালা ফালা হয়ে যেতো,
আর ভীতুরডিম কচ্ছপ বন হতে গুপিগুটি পায়ে বের হয়ে
নেমে আসতো নদীতে,
কচ্ছপের পা থেকে সাঁতার দিয়ে ডাঙায় ওঠা বৃত্তকার তরঙ্গমালাগুলো
ভেসে বেড়াতো সারা নদীতে,
সেই তরঙ্গমালা থেকেও জানা যাবে:
পেঁচাদের ঝগড়াঝাটিতে একদিন নদী পার হয়ে গেলো বাঘেরা,
আর ফিরতে পারলো না,
এবার রোদ্দুর ঢুকতে পারলো বেতবনের ভেতর,
বানরশিশু খেলতে আসে রৌদ্রের ভেতর, গল্প বলে রোদের সনে,
গল্প বলতে বলতে নদী পার হয়ে যায়, আর ফিরতে পারলো না,
একদিন হেমন্তের ভেতর দিয়ে পেঁচার ঝাঁক উড়তে উড়তে
কতকগুলো পালক ভাসিয়ে গেলো নদীর জলে,
পালকের ভেতর যে তরঙ্গমালা ঘুমিয়ে ছিলো, তা পালক ছড়িয়ে
সারা নদীতে ভাসতে লাগলো, এ তরঙ্গমালা থেকেও জানা যাবে:
কয়েকটা বনবিড়ালের গোঁফ, কয়েকটা গোবেচারা সজারুর কাঁটা,
আর রাতগড়ানো সাপেদের জড়াজড়ি করা ফোঁসফোঁস
শুনতে আসতো কয়েকটি মাছরাঙা নদীর জলে নামার আগে আগে,
এই মেয়ে! তোমার চোখ সুন্দর, জলে নামার আগে মাছরাঙাদের
সাথে নিয়মিতই দেখা হয় তোমার।
মাছরাঙাদের জলে নামা সাঁতার গড়াতে থাকে সারা নদীর অঙ্গে,
গড়াতে থাকাগুলোকে অতিক্রম ক’রে একটি সকাল
তোমাকে নিয়ে গেলো বেতবনের ভেতর,
বেতবনের ভেতর জামাকাপড় খুলে হুহু দৌড়াচ্ছে বাতাসেরা,
তোমার বুকের ভেতর কী যে তোলপাড় তখন,
কী যে তোলপাড়, তোলপাড়গুলো ভাসিয়ে না নিলেও পারো নদী!
এই মেয়ে! তোমার তোলপাড় বুক সুন্দর।
আহা কী যে সুন্দর! আহা কী যে সুন্দর তুমি তরঙ্গমালা।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।