আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

আমার পাউরুটি কলার ছোট্ট টং দোকান

.......অতঃপর মৃত্যুর প্রতীক্ষা

সুন্দরী হলেই প্রস্তাব দিতে হবে, আগে আসলে আগে পাবেন ভিত্তিতে বাগিয়ে নিতে হবে এমন মানসিকতা কখনই কাজ করতনা। এক ফারহানা চলে গেলে জানি আরেক সুন্দরী ফারহানার ক্লোনের দেখা পাব। কিংবা আব্বু-আম্মু গত প্ররোচনায় পড়ে একটা ছেলে হলেই হল বলে ওরা কারো ঘাড়ে চেপে বসবে। ওরা দল বেধে থাকে বন্ধু-বান্ধবের আড্ডা নিয়ে। পিছন থেকে ছেলেরা আমাকে গুতায়, ওকে প্রস্তাব দে, তোর জন্য আদর্শ সঙ্গিনী।

কী সূত্র ধরে আদর্শের মাপ জোক করে আমি বুঝিনা। ধুর, মেয়েরা কী কখনও প্রস্তাব দেয় নাকি, তুই না বেটা ছেলে, কী করলি জীবনে , কায়দা করে বলে দেখ আমরা পিছে আছি। তার ঠিক এক বছর আগে জামিলের কথা মনে আছে, কাঁদতে কাঁদতে হলের জানালা দিয়ে ছুড়ে ফেলছিল তার পছন্দের কলমদানি, বই, গ্লাস, মগ। বিপরীত লিঙ্গের অসম্মতির কথা জেনে মানসিক ভারসাম্য হারানো মানুষ, আহ্। আমার ঘর কোন দিন পুড়েনি, পোড়ার সুযোগ দিইনি, কিন্তু পাশের গোয়ালের গরুকে পুড়তে দেখে এখন সিঁদুরে মেঘ দেখলেই ডর করে।

চাকুরি করি, নিজের মত চলি খাই, দাই, হাটাহাটি করি, কী দরকার এসব ঝামেলায় জড়ানোর। সাঈফও শেষ মেষ ওর কাছে ছ্যাকা খেল, পুরো পাড়ায় ছড়িয়ে গেল গপ্পো, এভাবে তো সমাজে টেকা মুস্কিল। ওর প্রত্যাখ্যানের তালিকাটা যেমন দীর্ঘ, তেমনি আলোচিত। সেখানে আমার মত ছাই পাশ ছেলে, তোরা সব নিজের চরকায় তেল দে তো! কয়েকজন মিলে আবার বাজির টাকাও তুলে ফেলল, বি এ ম্যান! তুই হারলেও ক্ষতি নেই, তোর সামাজিক সম্মানহানি আমরা এই বাজির টাকা দিয়ে পুষিয়ে দিব। তুই খালি আমাদের আত্মবিশ্বাসের মর্যাদা রাখ।

বার বার কানের কাছে একজনের নাম শুনলে খানিকটা দুর্বল হওয়া স্বাভাবিক। কেউ একজন চেচিয়ে উঠল, শী ইজ ওয়েটিং ফর ইয়োর সিগন্যাল ম্যান, জাস্ট মেইক ইয়োর এপ্রোচ ইউ কাউয়ার্ড! সুন্দরী, শিল্প-সাহিত্য কলায় অন্যন্যা, বিশ্ববিদ্যালয়ের ফলাফলে সামনের সারিতে, বিয়ের বাজারে তো তার মেলা দর। নিজের বেতনের টাকায় নিজের পেট চলেনা, সংসার ধর্মের অঞ্জলি কেনার টাকা কই? সে কি পারবে আমার সাথে বসে আমার ছোট্ট টং দোকানে শুকনো পাউরুটি চায়ে ভিজিয়ে নাস্তা করতে, প্রতি ঈদে সস্তা জর্জেট শাড়ি পরে আত্ম সম্মান নিয়ে মাথা উচু করে সমাজে বাস করতে, সে কি পারবে কোন শীতের সকালে শাল গায়ে গ্রামের কোন কর্দমাক্ত গলিতে বসে অনাথ শিশুদের বর্ণমালা শিখাতে, শুধু মাত্র মৌলিক অধিকার গুলো নিয়ে সঙ্গীকে ভালবেসে সুখী হতে ? বোহেমিয়ানরা বন্ধুর মত এক সাথে থাকবে, একে অপরকে ভালবাসবে, সমাজ-লোকাচারের রঙ ঢঙ তাদের টানবেনা, ভদ্রলোক সাজার মত ভন্ডামি থাকবেনা। উত্তর গুলোর আন্দাজ ছিল বলেই অতি উৎসাহী বন্ধুদের ভিড় ঠেলে একলা পায়ে হেটে আমার টং দোকানে ফিরে যাই। দাগ পড়ে যাওয়া সেই পুরনো নোংরা চায়ের কাপে চুমুক দিই, গুটি শুটি হয়ে শীতের সকালে রোদের অপেক্ষা করতে থাকি, আড্ডা দিই ঘাম বেচে খাওয়া মানুষ গুলো সাথে।

মাস খানেক বাদেই বন্ধুদের হাত ঘুরে পরিণয় সূত্রে আবদ্ধ হবার নিমন্ত্রণ পত্র আসে। সামাজিক মানুষের ভীড়ে একটা অসুস্থ অসামাজিক জীব নব বধূকে দেখে হাসি মুখে জানতে চাইছে তার অনুভূতির কথা, -কেমন লাগছে? আমার কুৎসিত মুখের উপর একবার চোখ পড়তেই সে মুখ ঘুরিয়ে নিল। সেই ঘুরিয়ে নেয়া সুন্দর মুখের মাঝে অস্বস্তি জনিত অবজ্ঞা বা আমার সুযোগ হারানোর দায়ে অভিমানের ছাপ ছিল কিনা আর দেখা হয়ে উঠলনা। কিন্তু খুবই অন্যায় ও অপ্রাসঙ্গিকভাবে কত গুলো গানের কথা কানে বাজতে থাকল।


অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.