আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

নিয়ন্ত্রনহীন বেপরোয়া অব্যবস্থাপনা এবং হারিয়ে যাওয়া ছেলেটি

রাজধানী ঢাকায় এক এলাকা থেকে অন্য এলাকা কিংবা এক প্রান্ত থেকে অন্য প্রান্তে চলাচল করে বেশ কিছু বাস। যাদের আমরা সিটি সার্ভিস বলে অবিহিত করে থাকি। ছোট্ট শহরে অল্প দুরুত্বে সার্ভিসগুলো বেশ বেপরোয়া। কিছুদিন আগে মতিঝিল থাকে শ্যামলী, আদাবর হয়ে শিয়া মসজিদ রুটে চলাচলকারী জনৈক সিটি সার্ভিস কেড়ে নিল এক ছাত্রের জীবন। অকালেই হারিয়ে গেল আরো একটি তাজা প্রাণ।

বেপরোয়া সিটি সার্ভিসের নির্মমতায় সে পাড়ি জমিয়েছে না ফেরার দেশে। সে আর কখনই ফিরবে না। বিশ্ববিদ্যালয় চত্ত্বরে তার আর কোন পদচারণা থাকবে না। সাময়িক প্রতিবাদ হলেও টনক নড়েনি দ্বায়িত্বপ্রাপ্ত বা উর্ধ্বতন কারোরই। ফিরেও আসেনি বিদায় নেয়া ছেলেটি।

মা স্বপ্ন দেখতেন তার ছেলে পড়াশোনা শেষ করে ভালো চাকুরী করবে, উঁচু পদবীর অধিকারী হবে। বাবা চাইতেন ছেলে তার নিজের ব্যবসাই দেখাশোনা করবে। অথচ তারা তাদের বুকের মানিককে হারিয়ে ব্যথিত। মনে বেধেছেন ধৈর্য্যের পাথর। বহু পথ পাড়ি দিয়ে গ্রাম বা মফৎসল থেকে জীবনযুদ্ধে জয়লাভ করতে ব্যস্ততম সে শহরে পড়তে আসা।

বিশ্ববিদ্যালয়ের হলে বসবাস। এরপর একদিন ব্যস্ততম শহরের অনিয়ন্ত্রিত ব্যবস্থার কাছে হার মেনে জীবন হারানো। আজ হয়ত আমরা তাকে ভুলে গেছি। সে তো আর স্বনামধন্য কেউ না তাই ভুলে গেছি তার মৃত্যুর নির্মমতাটুকুও। মৃত্যু নামক স্মৃতির পাতায় আরো একটি নাম যুক্ত হয়েছে।

একটা মানুষের প্রথম ও প্রধান পরিচয় সে মানুষ। এটাই তো আমাদের শিক্ষা। নাম, পরিচয় বাদ দিয়ে একজন মানুষ হিসেবে তার জীবনবসান নিশ্চই কাম্য ছিল না। কেন এই বেপরোয়া অব্যবস্থাপনার কাছে জীবনের বলি দান? কয়েকদিন বন্ধ থেকে গত কিছুদিন হল পুনরায় আগের রুটে চলতে শুরু করেছে সেই ঘাতক সার্ভিস। মোটা অংকের অর্থ দিয়েই হোক আর পর্বতসম ক্ষমতা দিয়েই হোক আবার তারা রাস্তায় নেমে বেপরোয়া।

প্রশাসনকে ছুঁতো আর আইন ও বিচার ব্যবস্থাকে বৃদ্ধাঙ্গুলী দেখিয়ে আবার তারা নিয়ন্ত্রনহীন অব্যবস্থাপনায় সেরা। একদিকে এই পরিবহন ব্যবস্থা আমদের রক্ত চোষার মত চুসছে আর অন্যদিকে কেড়ে নিচ্ছে প্রাণ। এর শেষ কোথায়? মুখে দেশপ্রেম আর অন্তরে স্বার্থ জয়ের মনবাঞ্চা নিয়ে অনেকে বসছেন সমাধান ও পরিবর্তনের পথ খুজতে। সমাধান ও পরিবর্তনের নামে পোয়াভারী ভালোই হচ্ছে আর ঘনীভুত হচ্ছে সমস্যা। এখনও কি সঠিক সমাধানের পথ খোঁজা এবং পথ নির্বাচনের সময় আসেনি? এ অবস্থা থেকে পরিত্রান পেতে কাউকে না কাউকে অবশ্যই এগিয়ে আসতে হবে।

থাকতে হবে প্রকৃত দেশ প্রেম এবং যথার্থ সদিচ্ছা। বিষয়টিকে নিজের করে ভাবতে হবে। হতে পারে এমন অনাকাংখিত ঘটনা আমাদের জীবনেও আসবে। প্রকৃত দেশপ্রেম থেকে সদিচ্ছা, জবাবদিহিতা নিশ্চিতকরণ, আইনের যথার্থ প্রয়োগ এবং বিচার ব্যবস্থাকে স্বক্রিয়করণ করে আমরা কি এই নিয়ন্ত্রনহীন বেপরোয়া অব্যবস্থাপনাকে রুখতে পারি? নাকি একের পর এক সড়ক দুর্ঘটনায় প্রাণ হারানোর ঘটনাকে প্রকৃতির নিয়তি ভেবে মেনে নেব? সব আগের মতই চলছে। সেই সিটি সার্ভিস।

তার অনিয়ন্ত্রিত বেপরোয়া গতির দৌরাত্ম। শুধু নেই সেই ছেলেটির পদচারণা। যে নিজের ও মা-বাবার স্বপ্ন পুরোনের স্বপ্নে বিভোর ছিল, আর উদ্যমে সামনে এগিয়ে যাচ্ছিল। নেই কোন সমাধান বা সংশোধনের চেষ্টা। ।

সোর্স: http://www.somewhereinblog.net     দেখা হয়েছে বার

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।