আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

মায়েরা নীরবে অবহেলায় মরে যায়

ভোরের তারা হয়ে একাকি পথ খুজি

ভদ্র মহিলার নাম রিনা। আমি তাকে খালা বলেই ডাকতাম। সেই রিনা খালা মারা গেছেন। তার মৃত্যুর পর জানতে পারলাম তিনি দীর্ঘ দিন ধরে ক্যান্সারে ভুগছিলেন। তার দুইটিই মেয়ে,বড় মেয়েটা একটা স্বনামধন্য প্রাইভেট মেডিকেলে পড়ে আর ছোট মেয়ে কলেজে যায়।

স্বামী বাংলাদেশ সরকারের বিশিষ্ট জজ মোবারক হোসেন। বর্তমানের রিটায়ার মোবারক হোসেন এককালে প্রাইভেট স্কুলে গরীব অংকের শিক্ষক ছিলেন। আর এখন ঢাকা শহরে তার তিন তিনটি ছয় তলা বাড়ী। বাড়ী গুলোর নাম দিয়েছেন জজ মঞ্জিল। ছাদের উপর শৌখিন চিড়িয়াখানা করেছেন।

এই কোটি টাকার মালিক জজ সাহেব স্ত্রীর তেমন কোন চিকিৎসা করাননি। দেশের বাইরে নিয়ে গিয়ে স্ত্রীকে উন্নত চিকিৎসা দেয়া তার জন্য কোন ব্যপার ছিল না। স্ত্রী অথবা মা কে অবহেলায় চির বিদায় দেয়া হল। আমার আরেক পড়শি, সবাই তাকে বাবুলের মা বলেই চিনে। আমি ডাকতাম ফুপু।

স্বামী ব্যবসায়ি, প্রথম প্রথম ভদ্রলোক ভাল আয় রোজগার করতেন। ঢাকায় তিন তলা বাড়ী করেছেন। তিনটি ছেলে একটি মেয়ে। ছেলেরা লেখা পড়া তেমন না করলেও খুব বুদ্বিমান। বড় ছেলে আমেরিকা থাকে, মেজ ছেলে রেন্ট-এ কারের পার্টনারশীপ ব্যবসা দি্যে শুরু করে আজ চার তলা চাইনিজ রেস্টুরেন্টের মালিক।

সেই সাথে ছয় তলা বাড়ী দাড় করিয়েছে। সেই ফুপু মারা গেছেন ক্যান্সারে। তার মুখে ক্যান্সার বাসা বেধেছিল। ভীষন যন্ত্রনায় কষ্ট পেতে পেতে তিনি মারা গেছেন। নাম মাত্র চিকিৎসা তাকে দেয়া হয়েছিল।

তার পরিবার তাকে আরো উন্নত চিকিৎসা দিতে পারত বলে আমার বিশ্বাস। এত অবহেলায় আমরা আমাদের মায়েদের চির বিদায় জানাচ্ছি কেন। মায়ের প্রতি আমাদের ভালোবাসা কি কমে গেছে? আমরা কি ভুলে গেছি মা আমাদের জীবন দিয়েছেন? জন্ম থেকে মৃত্যুর আগ পর্যন্ত মা আমাদের পাখির বাচ্চার মত করে আগলে রাখেন। আমাদের কষ্টে মায়েরা যে আরো বেশী কষ্ট পান- সেই সব দিন গুলো কি আমরা মনে রাখিনি? আজ আমরা বড় বেশী রুঢ়। মা অসুখে কষ্ট পান, চোখে জ্বালা পোড়া করে পানি ঝরে তার, সারাটা জীবন দুধটা ডিমটা নিজে না খেয়ে আমাদের খাইয়েছেন,আজ তাই তার ক্যালসিয়ামের অভাব।

হাড়ের ব্যথায় তিনি কষ্ট পাচ্ছেন রাত দিন। মুখে বলি মা ঔষধ খাও, ডাক্টারের কাছে যাও। তবু নিজেরা মায়ের হাত ধরে নি্যে যাই না, আমাদের কাজ গুলো মায়ের চাইতে অনেক বেশী ইমপরটেন্ট হয়ে গেছে। আজ মায়ের পাশে দু দন্ড বসবার আমাদের সময় নেই। আমরা এত পাথর হলাম কবে? আসুন আবার আমরা সেই ছোট বেলার আমি হয়ে যাই, যেই আমি মা কে অনেক ভালোবাসতাম।


অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.