আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

একুশের গল্প

আমার আমিকে আমি খুব ভালবাসি। শোভার চোখে জল রাসেল মাহমুদ শাড়িঁ পরে আয়নার সামনে এসে দাঁড়িয়ে নিজেই যেন নিজেকে চিনতে পারলোনা শোভা। নীল জামদানিতে তাকে চমৎকার মানিয়ে গেছে। কপালে অনেক যত্ন করে বসাল লাল পাথরের টিপ। চোখের কাজলে যেন চোখ দুটিকে আরও মায়াময় করে তুলেছে।

কেন যেন শোভাকে অদ্ভূত সুন্দর লাগছে। আয়নায় নিজের প্রতিবিম্ব দেখে তার একটু হাসি পেল। হেসে যেন নিজেকে অভয় দেওয়ার চেষ্টা করছে ও। আজ শোভা একটা বড় ধরনের অন্যায় করতে যাচ্ছে। নিজের বিছানায় সারা রাত নির্ঘুম কেটেছে তার।

নিজের সিদ্ধান্তের কথা বাবা-মাকে জানানো ঠিক হবে কিনা,এই ভাবনা তাকে সারা রাত ঘুমাতে দেয়নি। অনেক চিন্তা-ভাবনার পর যখন সে বাবা-মাকে জানাবে বলে সিদ্ধান্ত নিল,তখনই মনে হলো রাজের কথা। রাজ ভাল ছেলে,বিশ্ববিদ্যালয়ের শেষ বর্ষে পরছে ভাল একটা সাবযেক্টে। কোন দিক দিয়েই সে শোভার অযোগ্য নয়। তবুও শোভা চিন্তিত,কারণ রাজ একজন প্রগতিশীল ছাত্রনেতা।

মাকে বোঝাতে পারলেও শোভার ব্যবসয়ী বাবা কখনও রাজকে মেনে নেবেননা। তার বাবা ছাত্র রাজনীতিকে ঘৃণার চোখে দেখেন। অনেক ভেবে শোভা তার জীবনের গুরুত্বপূর্ণ এ সিদ্ধান্তটা মাকে জানাবে বলে ঠিক করল। মায়ের ঘরে উঁকি দিল শোভা,বিছানা পরিপাটি নিয়ে ব্যস্ত ছিলেন হালিমা। মায়ের দিকে তাকিয়ে নরম গলায় ডাকল শোভা-মা? হালিমা নিজের কাজ করতে করতে বললেন,‘আয় মা’।

অনেক বার বলতে গিয়েও মায়ের কাছে নিজের ভালবাসার কথা বলতে পারলোনা শোভা। হালিমা মেয়ের মনের অভিপ্রায় বুঝতে পেরে বললেন,‘কিছু বলবি মা,চুপ করে আছিস কেন’। -মা একটা কথা বলব? মেয়ের দিকে তাকিয়ে পরম মমতায় হালিমা বললেন,‘কী বলবি’। –মা তুমি রাজকে চেন? মা,আমি রাজকে ভালবাসি। হালিমা মুখ টিপে হাসছেন,সেই হাসিতে মমতা ঝরে পরছে।

হালিমা বললেন,আমি জানি তুই রাজকে পছন্দ করিস। মায়ের দিকে অবাক হয়ে তাকাল ও। কী বলছেন তিনি!!! তার আর রাজের কথা তো তেমন কেউই জানে না। –মা? ভয়ে ভয়ে ডাকল শোভা। মেয়ের মাথায় হাত বোলাতে বোলাতে হালিমা বললেন,‘আমি জানি আমাকে না জানিয়ে তুই কখনো কিছু করবিনা।

আমি রাজের সব খোঁজ নিয়েছি। তোর বাবাকেও বলেছি। জানতাম আমাদের না জানিয়ে তুই কাজী অফিসে,জানতাম পারবিনা….কথা শেষ না হতেই শোভা তাঁকে জড়িয়ে ফুঁপিয়ে কেঁদে উঠলো। ‘তুই যা’রাজ নিশ্চয় অপেক্ষা করছে তোর জন্য। কিছু বলতে পারছে না শোভা,ব্যকুল হয়ে কাঁদছে সে।

রাজ অপেক্ষা করছে শোভার জন্য। সে জানে শোভা আসবেই। আজ কাজী অফিসে বিয়ে করার কোন ইচ্ছে রাজের ছিলনা। শুধু শোভার জন্যই সে রাজি হয়ছে। শোভার ধারনা তার বাবা গোপনে তার জন্য পাত্র দেখছেন… কিন্তু শোভা দেরি করছে কেন? ও তো কখনো এভাবে দেরি করেনা।

নাকি…অনেক চিন্তা তার মাথায় ঘুরপাক খাচ্ছে। অস্থিরতা কাটাতে সে একটা সিগারেট ধরাল। সিগারেট শেষ হওয়ার আগেই রাজ দেখতে পেল কয়েকজন যুবক স্লোগান দিতে দিতে সামনে এগিয়ে আসছে। মিছিল থেকে ধ্বনিত হচ্ছে-‘রাষ্ট্র ভাষা বাংলা চাই’। রাজ ভুলে গেল তার সদ্য জ্বালিত সিগারেটের কথা,ভুলে গেল তার ভালবাসার মানুষ শোভার কথা,সে ভুলে গেল আজ তার বিয়ে।

মিছিলের ধ্বনি তাকে ব্যকুল করে তুললো। সে মিশে গেল মায়ের মর্যাদা রক্ষার মিছিলে । যখন রাজের মুখে ধ্বনিত হচ্ছে ‘রাষ্ট্র ভাষা বাংলা চাই’ তখনই হানাদাররা আক্রমন চালালো মিছিলে…হানাদারের বুলেট কেঁড়ে নিল রাজের জীবন। প্রাণ দিল রফিক,সালাম বরকতসহ আরও অনেকে। আজ ২১শে ফেব্রুয়ারী রাজের শাহাদাত বার্ষিকী।

ভাষা আন্দোলনের দশ বছর পার হলেও আর বিয়ে করেনি শোভা। রাজের প্রতিক্ষায় আজও পথ চেয়ে আছে শোভা। চোখ ভর্তি জল নিয়ে শোভা দাঁড়িয়ে আছে দেওয়ালে টাঙ্গানো রাজের ছবির দিকে। ছবির কাছে এসে তাতে আলতো করে চুমু খেল শোভা,শেষ বিকেলের রোদটা পরছে শোভার মুখে,জলভর্তি চোখ নিয়ে রাজের ছবির দিকে তাকাল সে। মুগ্ধ চোখে সে রাজের ছবি দেখছে আর ভাবছে,কেউ কি পারে তার রাজের মতো বীরের বেশে জীবন দিতে… ।

সোর্স: http://www.somewhereinblog.net     দেখা হয়েছে ২০ বার

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।