আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

সুইডেনের গল্প - ৩

বৃষ্টিতে হাঁটতে ভাল লাগে আমার কারন কেউ দেখেনা দুচোখের জল ধুয়ে যায় বৃষ্টিধারায়

সাড়ে ৯ টায় ব্রেকফাস্ট সাংগ করে বের হলাম হোটেলের সুইং ডোর খুলে সামনের ব্যস্ত রাজপথে । বাইরে বের হয়েই ঠান্ডা বাতাসের কামড় দিয়ে ধরলো কান আর খোলা হাতের চামড়ার উপর । সাথে সাথে দেরী না করে কানটুপি দিয়ে ঢেকে নিলাম মাথা আর গ্লাভসের ভেতরে হাত । দূরে চেয়ে দেখি লেকের ওপারে উঁচু এক বিল্ডিং এর মাথায় ইলেকট্রনিক বোর্ডে আজকের তাপমাত্রা দেখাচ্ছে ২ ডিগ্রী সেলসিয়াস । শুনলাম আর কদিন বাদে নাকি এখানকার তাপমাত্রা শুন্যের নীচে নেমে আসবে ।

আর একঘেঁয়ে বরফ পড়া শুরু হবে তারপর থেকেই এসময়টা নাকি এদের বলে খুব খারাপ কাটে । রাস্তায় বের হয়ে পড়লাম একটু চিন্তায় কারন হাতে নেই কোন সিটি ট্যুরের ম্যাপ । এছাড়া এখন ও আমার পাসপোর্ট আমার হাতে এসে পৌঁছেনি কারন আমাদের যাবতীয় অফিসিয়ালের ঝামেলা সাংগ করবার জন্য আমাদের টীমের সবার পাসপোর্ট একসাথে নেয়া হয়েছিলো সেটা হয়ত আজকেই একটু পড়ে সবাইকে দেয়া হবে । কিন্ত এ্যাডভেন্চারের লোভে আর নতুন একটি শহরকে নতুন চোখে বরন করে নেবার লোভে পাসপোর্টের কথা মনেই ছিলোনা । হোটেল থেকে বের হয়ে আর মন চাইছিলোনা পাসপোর্ট টা এখন কে দেবে তাকে খুঁজে সময় নষ্ট করার ।

তাই সির্ধান্ত নিলাম আপাতত আমার সামিটের আইডি কার্ড যেহেতু সাথে আছে অতএব এই কার্ডকে ভরসা করে বের হলাম একা একা শহর দেখতে । প্রথমে একটু সির্ধান্তহীনতায় ভুগলাম । কোনদিকে যাব ? বামদিকের রাস্তা দেখলাম ব্রীজ অতিক্রম করে চলে গেছে লেকের ওপারে একটি পাহাড়ের উপরে সম্ভবত একটি গীর্জার পাশ দিয়ে কোন এক অজানায় আর সেই রাস্তা ধার ঘেঁষে একটি সাদা ধবধবে রাজহাঁসের মত রাজসিক ভংগীতে একটি মধ্যযুগীয় পালতোলা নৌকা নোংগর বাধা অবস্থায় । ধারনা করলাম সম্ভবত এটি টুরিস্টদের আকর্ষনের জন্য একটি রেস্টুরেন্ট হিসেবে ব্যবহৃত হচ্ছে । আমার ডানদিকের রাস্তার একটি শাখা রাস্তা আবার কিছুদুর গিয়ে চলে গেছে একটি বাম দিকে রাজার প্যালেস মানে রাজপ্রাসাদের দিকে আরেকটি ডান দিকে মোড় ঘুরে চলে গেছে ব্যস্ত শহরের শপিং মলের দিকে ।

মনে মনে টস করে সির্ধান্ত নিলাম বামদিকে সেই সাদা পালতোলা জাহাজ আর লেকের ধাঁর ঘেঁষে পাহারের উপরে গীর্জার দিকে এগুনো যেতে পারে । যেই ভাবা সেই কাজ । হাঁটা দিলাম বাম দিকের রাস্তায় কিছু দূর এগুতে দেখি রাস্তার বাম দিকে বিশাল এক দালান আকার ইংগিতে মনে হল কোন মিউজিয়াম হবে হয়ত । প্রধান প্রবেশ পথে যেয়ে দেখি আমার অনুমান ই ঠিক ছিল । এটা স্টকহোমের ন্যাশনাল আর্ট মিউজিয়াম ।

এবং সেটা তখন বন্ধ ছিলো । যদিও আর্ট মিউজিয়াম অথবা কোন দেশের সভ্যতা বা সংষ্কৃতির প্রতি আমার বরারবের আকর্ষন ছিলো । কিন্ত এবার মৃত মিউজিয়ামের তুলনায় জীবন্ত নতুন দেশের মানুষ গুলোকে বেশী করে জানার আর দেখার কৌতুহলে আমি আবার এগিয়ে চললাম সামনের দিকে । ব্রীজের উপরে উঠে আসতেই যেন ক্লোজআপ শটে আগমনী শীতের এক স্নিগ্ধ এক রুপ হঠাৎ করে আমার চোখে ধরা দিলো । লোভ সামলাতে পারলাম না হাতের ডিজিটাল ক্যামেরায় আনাড়ীর মত যাই ভাল লাগলো স্ন্যাপ নিতে লাগলাম ।

কিন্ত এই জনহীন ছোট্ট ব্রীজে কোন মানুষজন না থাকায় আমার ছবিটা কিভাবে এই প্রকৃতির সাথে তোলা যায় এই চিন্তায় অস্থির হবার আগেই দেখি দূরে এক সুইডিশ নয়না হেঁটে চলেছে আপন মনে আর কানের আইফোনে সাথে হয়ত সুর মিলিয়ে গান গাইছিলো । ইশারায় আমি তাকে অনুরোধ করলাম আমার একটা ছবি তুলে দেবার জন্য। দেখলাম ইশারা করার সাথে সাথে সে দৌড়ে এপারে আমার কাছে এসে প্রথমে পরিষ্কার ইংরেজীতে বললো " আমিতো ভাল ফটোগ্রাফার নই তারপরও আমি দেখি চেষ্টা করে কতটুকু ভাল একটা ছবি তোলা যায় তোমার " উত্তরে আমিও তাকে আস্বস্ত করে বললাম " আমিও ছবির ভাল একটা সমঝদার নই তাই আমাকে ছবিতে দেখা গেলেই আমি খুশী হব"। যাই হউক সে আমার কয়েকটি ছবি তুলে ধন্যবাদ দিয়ে চলে গেলো দ্রুতপদে তার গন্তব্যে । চলবে


সোর্স: http://www.somewhereinblog.net     দেখা হয়েছে বার

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.