আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

ঈদ আনন্দ দেশ বিদেশ



ঈদ আনন্দ দেশ বিদেশ রোকসানা লেইস নভেম্বরের শেষ চারপাশে উৎসবের আমেজ। দোকান পাটে ভীড়, রাস্তায় ভীড়, এত ব্যস্ততা কোলাহল, হৈ চৈ গান বাজনা, সাজ সাজ আলোর মালায় ঝলমল। এত আনন্দ, এত আলো ক্রিসমাসের আয়োজনে ব্যস্ততা। এই উৎসব মুখর জীবনের কোলাহল ছড়িয়ে পরে নিজের মধ্যেও, তারপরও কোথায় যেন সূক্ষ এক বেদনার ধারা বয়। এমন আনন্দ হল্লা আলোরমালা ব্যস্ততা কেনা কাটা আমাদেরও আছে।

আমাদের দেশে রোজা শুরু হতে হতেই যার যেমন সামর্থ সে ভাবে আয়োজন শুরু করে, ঈদ উল ফিতরের জন্য। ঈদ উল আজহা বা কোরবানী ঈদেরও আয়োজন হয় মাসখানেক ধরে যাকাতের কাপড় এবং কোরবানীর পশু কেনার জন্যই থাকে এই ঈদের মূল আয়োজন তারপর ও নানারকম আয়োজনের শেষ নাই প্রস্তুতি চলতেই থাকে আগের দিন পর্যন্ত। পোশাক, জুতা গহনা, টুপি, আতর, সেমাই, চাল, তেল,পেয়াজ, মসলা, ম্যাগাজিন কত ধরনের কত আয়োজন তার কি শেষ আছে? আমরা যারা বিদেশের জীবন বেছে নিয়েছি বিদেশের অনেক সুবিধায় জীবন যাপন করি আবার সাথে দেশের অনেক ঐতিহ্য, মন প্রাণের সাথে নিবিড় হয়ে মিশে থাকা অনেক ভালোলাগা থেকে বঞ্চিত হই সারাক্ষণ। বহু জাতির সংমিশ্রন এই কানাডায়। বহু ধর্মের লোক বাস করে এখানে।

২০০১ এর পরিসংখ্যান অনুযায়ী পনেরো রকমের ধর্মের লোক বাস করে কানাডায় তার মধ্যে সাতাত্তোর ভাগ খৃস্টান, দুই ভাগ মুসলিম, এক ভাগ হিন্দু এবং বাকি অন্যান্য ধর্মাবলম্বি । কানাডায় ছুটির দিনগুলো ছকে বাধা । বড়দিন ও নতুন বৎসর শুরু উপলক্ষে ডিসেম্বরের শেষ কিছু দিন স্কুল, কলেজ, অফিস, আদালত বেশ লম্বা একটা ছুটি পায়। প্রতিটি ধর্মের বিশেষ দিনের জন্য একদিন করে বন্ধ দিলেও বছরে পনের দিন বন্ধ দিতে হয়। এখনো সে অবস্থা চালু হয়নি আর এত অল্প লোকের জন্য একদিন করে বন্ধ রাষ্ট্রের অনেক ক্ষতি।

তবে ধর্মিয় উৎসব পালনের জন্য সবাই ছুটি পায় নিজেস্ব প্রতিষ্ঠান থেকে। নিজের প্রয়োজন মতন সবাই সে ছুটি ব্যবহার করেন। টিভি, রেডিও তে প্রচার করা হয় বিশেষ দিনের অনুষ্ঠান যেমন ঈদের জামাত, একত্রিত হয়ে ঈদের আনন্দ উপভোগ, পূঁজা, হনেকা ইত্যাদি। আমরা বিদেশে থেকে দেশের মতন আয়োজনের ঈদ করতে পারিনা তবু ঈদ হয় আনন্দ হয়। এখানে ঈদ করতে আমার ব্যক্তিগত ভাবে বাড়তি পাওনা মনে হয়, ঈদের জামাতে যাওয়া।

দেশে থাকতে আমি কখনো ঈদের নামাজ পড়তে যাইনি। এখানে পুরুষদের পাশাপাশি মহিলাদের ঈদের জামাতে অংশ গ্রহণের ব্যবস্থা আছে। ঈদ কবে হবে এ নিয়ে আমাদের উৎকন্ঠায় কাটাতে হয়। বিশেষ করে পরিচিতজন, বন্ধু, মসজিদে ফোন করে, কবে ঈদ হবে, কোন খোঁজ পাওয়া গেল কি না ঈদ হওয়ার। অনেক রাত পর্যন্ত অনেক সময় থাকতে হয় এজন্য উদবিগ্ন।

ইন্টারনেটে মুন ডটকম খুঁজতে হয় চাঁদের খবর। অনেক সময় দেখা যায় দুদিন ঈদ হচ্ছ্। ে আমরা তবে কবে করব ? এটা বেশ বড় সমস্যা। অনেক দেশের অনেক রকম মুসলিম একই ঈদ ভিন্ন পন্থায় পালন করে। গত দুবছর ধরে ঈদ অনেক বছর পর একদিনে উযাপিত হয় এখানে।

কাজেই ঈদ উল আজহাও একই দিনে পালিত হবে এবার। এখানে কোরবানী দেয়ার জন্য হাটে গরু দেখে কেনা হয় না। কোন গরুর হাট বসেনা । ফার্মে সরাসরি গিয়ে গরু পছন্দ করে ওর্ডার করে আসেন। হালাল ভাবে জবাই করার জন্য, অনেকে লোক নিয়ে যান সাথে র্ফামে সঠিক ভাবে কোরবানির পশু জবাই করার জন্য।

এছাড়া সহজ পদ্ধতি হচ্ছে বাঙ্গালী গ্রোসারি দোকানে ওর্ডার করা ওরা কেটে কুটে সুন্দর ভাবে তিন ভাগ করে দেয় মাংস। এখানে দানের অংশ ফুডব্যাংক বা সেলটার গুলো তে দান করা হয়। টরন্টোর বাইরে ছোট শহর গুলোতে এক, দেড় বা দুশো মুসলিম বাস করে বিভিন্ন দেশ মিলিয়ে। তাদের একটাই মুসলিম কমিউনিটি । তারা অনেকটা দেশের মতন ঈদ করেন সকালে জামাত সেরে ঘুরে বেড়ান এবাড়ি ওবাড়ি।

টরোন্টোয় প্রায় সত্তর হাজার বাঙ্গালীর বাস। বাঙ্গালীদের একটি মসজিদ ও আছে এখানে। সকাল থেকে কয়েক দফায় ঈদের জামাত হয় ওখানে। মিলন মেলায় আনন্দ উৎসবের আমেজ এসে যায়। এ পরবাসে জীবনের বাস্তবতা অনেক কঠিন।

অনেকেই নামাজ সের্ইে ছুটেন কাজে। সারাদিনের কাজের পর সব ক্লান্তি ছেড়ে কিছু সময়ের জন্য বন্ধু বা আত্মিয় বাড়ি ঘুরতে যান অনেকে। তাও যোগাযোগ করে আগে ভাগে যদি তারা বাড়ি থাকেন তাহলে। ঈদের দিন তো ঈদের দিনই, দৈনন্দিন দিনের সাথে কি এর তুলনা চলে? তবে বেশীর ভাগ মানুষ ছুটির দিন বেছে নেন ঈদ পালনের জন্য। কিছু পরিবার,পরিচিত মানুষ এক হয়ে এক, এক জনের বাসায় ঈদ আনন্দ করেন।

এছাড়া এখানে স¤প্রতি বেশ জনপ্রিয় হয়ে উঠছে বড় একটি ব্যাঙ্কুট হল ভাড়া করে, অনেক ভোজের আয়োজনের সাথে গান, নাচ, গল্প, আড্ডা, বহু লোকের ভীড়ে উৎসবের আমেজে ঈদের আনন্দে মেতে উঠা। ছোট শহর গুলোতে সবাই নিজেরা রান্না করে নিয়ে আসেন এই ঈদ পুর্নমিলন অনুষ্ঠানে। আর টরন্টোর মতন বড় শহর গুলো র্নিধারিত মূল্যে সবাই ক্যাটারিংয়ের সহযোগিতা করেন। আর একই ছুটির দিনে হয়তো তিন চার জায়গায় ঈদ পুর্ণমিলনের আয়জন থাকে। গতানুগতিক উৎসবের মতন আমরা ঈদ উৎযাপন করি এই পরবাসে।

আর মনে ভাসে ফেলে আসা স্মৃতি। দুহাতে বিলানো গড়িব দুঃখির মাঝে কাপড়, মাংস। কোরবানির গরু কেনা আর যতœ আত্মির উৎসাহ মুখর সময়। মনে পড়ে এক বার কালো এক দুরন্ত যুবক ষাড় কেনা হয়ে ছিল ঈদের দুদিন আগে। দুদিনের মধ্যে তিনবার দড়ি ছিড়ে পালিয়ে গিয়েছিল সে দুরন্ত যুবক।

আহা মরি কিছু নয় তবু সেসব স্মৃতির উচ্ছাস ভাসায় মাঝে মাঝে। বাড়ি বাড়ি ঘুরে বেড়ানো আর আমন্ত্রণহিন সবার আনাগোনা বড় মধুর বড় সুখের ।

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।