আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

মুক্তগদ্য: কফিন আর চা-পাতার সড়ক এবং একটি রোদচশমা

ডুবোজ্বর

If I die, leave the balcony open. The little boy is eating oranges. (From my balcony I can see him.) The reaper is harvesting the wheat. (From my balcony I can hear him.) If I die, leave the balcony open! --Lorca ----------------------------------------------------------------------------------- ০১. মার্কেজের মেয়েটি একলা ঘরে থাকে। সে দেয়ালের চুন আর উঠানের মাটি খায়। আর আমার বুকের ভিতর আদিগন্ত ফাঁকা হয়ে যায়। প্রিয় মার্কেজ এখন কর্কটরোগের ভিতর বসত করছেন। তিনি শেষচিঠিতে বলেছিলেন, বার্ধক্য মৃত্যুর কারণ নয়, বিস্মৃতিই মৃত্যুর কারণ।

তুমি জানো স্বাতী, এই কথাটি কতোখানি সত্যি, জেনেছি আমিও। আমরা ঠিক করেছি মৃত্যুর আগেই মরে যাবো। ০২. না, রোদচশমাটি আমার নয়। পাথরের খুব গভীরে আছে কোমল। আমার গতি তোমাকে ছুঁবে।

ফিরবে পিছে পিছে যতো। আমার চোখে চেয়ে তুমি পাথর, আর তারপর আমি এইভাবে চিরদিন চির ধানের পথ ধরে চলে যাবো সোনারঙ কর্কট। রাত্রিজ্ঞাপন নিকষিত হোক, হেম, প্রিয় অভিমানী হেম... তোমার কি মনে আছে সেই যে অপু একটা স্টোরঘরের পাশের একচিলতে ঘরে থাকতো? আর তার জানলার বিপরীতে আরো একটি জানলা ছিলো। জানলা দিয়ে একটি বালিকা অপুকে অনুসরন করতো। আর একদিন জানলার কপাটে বালিকাটি খড়িমাটি দিয়ে লিখে রাখলো, হেমলতা আপনাকে বিবাহ করিবে।

০৩. মুক্তগদ্য বিষয়ে সওদাগরের কাছে কৈফয়ত দেবার সুযোগ হয়েছিলো একবার। যখন লিখি লাফিয়ে লাফিয়ে লিখি। মুক্তগদ্যে কোনো নিয়ম আছে বলে জানি না। তাই কখন কী আসে সবি লিখি। আর নিয়ম থাকলেও কিছু করার নেই।

প্রলাপের স্বর সপ্তকে বাঁধা পড়ে না। এটা তারপরেও প্রলম্বিত হয়। আর নদ ও উপকূলের মতো দীর্ঘ থেকে দীর্ঘতর হয়। ০৪. তোমার নামের অর্থ কেনো থাকতে হবে? এটা এমনিতেই উদ্ভাসিত নৃত্য ও নন্দন। স্বাতী শব্দের কোনো অর্থ নাই।

তবে এটা একটা তারার নাম। ইনি পঞ্চদশ নক্ষত্র এবং সূর্যদেবের পত্নী। কিন্তু সূর্যদেবকে আমার ভালো লাগে না কর্ণকে ভালোবাসি বলে। দ্রৌপদী বলিলেন, আমি সূতজাতীয়কে বরণ করিবো না... আর বিজয়ী এবং অপমানিত কর্ণ সভা ত্যাগ করিলেন। ০৫. দাদা বলিলেন, আমি শাদার হিশেব বুঝি নে।

আমি অন্যত্র নমস্য কবিদের উদাহরণ টানিয়া বিষয় নিপাত করিতে প্রয়াস পাইয়াছিলাম। দাদাবাবু, প্রকৃতপ্রস্তাবে নমস্য কবিদের চেয়ে ভালো লাগাটাই প্রধান আমার নিকট। এতো সব কৈফিয়ত আসলে তাহাদের জন্যে। কী করিবো? আমার ভালো লাগে বলিলে তো তাহারা কেহ মানিতে চাহিবে না। ০৬. তার গায়ে নিয়মিত দশটা করে তেলাপোকা ছেড়ে দিলে একমাস পর সে আর তেলাপোকা দেখে ভয় পাবে না।

তেলাপোকাকে ভালোবেসে ফেলবে। বিদ্যাসাগর ডালের মধ্যে একবার তেলাপোকা পেয়ে কচকচ করে খেয়ে নিয়েছিলেন। আর আমি তুচ্ছ মানুষ অন্ধকারে একবার আলুভাজির সাথে তেলাপোকা ভাজি করে ফেলেছিলাম। সম্ভবত সহসা লোডশেডিং হলে ওটা ভাজির মধ্যে পড়ে। আর আমি না জেনে অর্ধেক খেয়েও ফেলেছি।

অতি সুস্বাদু। কেবল গন্ধটাই খারাপ। ০৭. প্রিয়তম পাপ অন্ধকারে তলিয়ে যাওয়ার কথা বললো। আমি বললাম, অন্ধকার বিস্তারিত হোক। অন্ধকার সবি দিতে পারে।

আর আলো শুধু কেড়ে নিতে পারে। খোলা জানলা বাইরে তাড়ায়। জানলা বন্ধ হলে ঘনীভূত হয় দৃশ্যের স্তর। ০৮. নীল বলে কিছু নাই পাখি, শূন্যতা আছে। শূন্যতাকেই জড়িয়ে রাখি চোখের কাছে... আমি অকারণেই তার কাছে এইসব বললাম।

সৈয়দ হক তার কবিতায় বলেছেন, মানুষ এমন তয়, একবার পাইবার পর নিতান্ত মাটির মনে হয় তার সোনার মোহর। প্রত্যুত্তরে জনৈক বালকবালিকা বলেছেন, হারাইলে আবার সোনা মনে হয়। সবি সত্যি কথা। তাই স্বপ্ন ছোঁয়ার বাসনা সুন্দর, কিন্তু স্বপ্ন ছোঁয়া সুন্দর নয়। এবং এই কথাটিও অবশ্যই সুন্দর, আহা এমন যদি হতো! ০৯. বৈঠাল মানে যে বৈঠা চালায়।

আমার বানানো। তারমানে মানে শুয়ে উলম্ব হয়ে আছে, এমন নয়। আমি মধু নিয়েই বনে যাই। তবে মধুকর নই, ঈষৎ মাধুকর। ইচ্ছে করে সারাদুপুর মাধুকরি করি।

কিন্তু কোথায় সাধনসখা, অযৌন কুসুমের ঘর? আর মাঝে মাঝে উপগত হই। আমার গতায়ত ধীমানরসের সান্নিধ্যে ভ্রান্তপাতকের ন্যায় উৎসারিত প্লাবনে ভাসিয়া যায় আহাহাহা... ১০. কোনোদিন সারারাত সারাভোর কুয়াশার ভিতর হেঁটেছি। । আমি বাঙলাদেশে থাকি এবং অধিকাংশ সময় কাটিয়েছি গ্রামে। এবং সমুদ্রের কাছাকাছি।

আর আমার বাড়ি থেকে নদী হাঁটাপথে তিন মিনিট। ওখানে সন্ধ্যায় কুয়াশা নামে। আমি একবার সমুদ্রের পাড়ে কুয়াশার ভিতর হারিয়ে গিয়েছিলাম। আর অন্য কথাটি হলো আমিও দেখছি, স্পিডবোটগুলিকে মনে হচ্ছে ছোটো ছোটো কাগজের নৌকো। আর দেখছি পাথরের ভাঁজে সমুদ্রের উদ্ধত পতন।

আগুন, পতনের অন্যনাম কী? ১১. আমার কবিতা আপনার কাছে জীবনানন্দের কবিতার মতো কেনো মনে হলো, কুয়াশা দেখে নাকি? আরে দাদা এটাতো তারই লেখা। বালক বয়সে তিনি যা লিখে ফেলে দিয়েছিলেন সেখান থেকে কুড়িয়ে নেয়া। ১২. গজগামিনী একটা অসাধারণ সৃষ্টি। মকবুল ফিদা হুসেন এই চলচ্চিত্রে মাধুরিকে একেবারে ধ্রুপদীনন্দনের আধার বানিয়ে দিলেন। আমার ভালো লাগে।

ফিদা হুসেন একটি ছবি এঁকেছেন নিম্নরূপ: দূর্গা সিংহবাহিনি। তার তিনমুখে তিনরূপ। তিনমুখ তিনরঙের। লাল ক্রোধ, যুদ্ধবিগ্রহ রক্ত ইত্যাদির প্রতীক এইখানে। লালরূপ পদতলে মহিষাসুরকে আক্রমণ এবং পরাস্ত করে।

নীল হলো যন্ত্রণা আর অপমানের প্রতীক এইখানে। যা শরীরকেও গ্রাস করে আছে ওইসময়। যেই অপমান মহিষাসুর দূর্গাকে করেছে। আর সবুজ হলো মমতার প্রতীক এইখানে। এইরূপ মহিষাসুরকে ক্ষমা করে।

ফিদা হুসেন অকৃতদার এটা আমি কার কাছে শুনেছিলাম, স্বাতী? ১৩. এই শহরের রাস্তার দুপাশে কিছুদূর পর পর নতুন নতুন কফিন সাজানো। প্রতিদনই দেখি। আর আছে চা-পাতার দোকান। একটা দোকানের নাম দুনিয়া থেকে বিদায়। অন্যটা চিরবিদায় স্টোর।

আমার উদ্ধত প্রাণশক্তি কফিনের অন্ধকারে বাসি চাপাতার ঘ্রাণ পায়। হায় ভগবান, তোমার দেহের ভগচিহ্ন কোন অনুশোচনায় সহস্রচক্ষু হলো? একদিন আমি কফিনের ভিতর শুয়ে তোমার পাপক্ষয়ের কথা ভাববো না হয়তো?

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।