আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

মুক্তগদ্য: অলকানন্দা

ডুবোজ্বর একদিন ভেবেছিলাম দেবী ছিন্নমস্তার গল্প তোমাকে শোনাবো। তুমি চক্রাকারে হারিয়ে গেলে অনেকদূরে। নদী আর সমুদ্রগুলি পার হলে তোমার পায়ের পাতায় আনত চুম্বন হয়ে প্রজাপতি হয় লাল গতকাল। এটা আমার নাম না-ও হতে পারে। তুমি জেনেছিলে ভবঘুরে দুপুরের আখ্যান সূর্যমুখী সন্ধ্যায়।

দেবী দাঁড়িয়ে ছিলো মৈথুনরত ফুল ও প্রজাপতির শীৎকারের উপর। কেমন গর্বিত স্তনযুগল! চুইয়ে পড়ছে মধু ও মদ। আমি মন্দাকিনীর চোখের তারায় অশ্রু হয়ে দেখেছি সকালের রূপ— তোমাকে বলি নি, প্রিয়। আর তুমি অলকানন্দা— গঙ্গা নাকি হলুদ ফুল। পারুলের দূরবর্তী আত্মজা।

তোমার মায়ের মুখের রূপ তোমাকে দিয়েছিলো চারুময় চোখের মায়া। প্রাসাদের পেছনে অবরোহী পাহাড়ের খাঁজে ঝর্ণা আছে নির্ঝর। তার চোখের জলে ভিজে গেলে শঙ্খচরণ তোমার— তুমি কারো বাহুবন্দী নও। স্থির চিত্র ঝুলে থাকে জানলার পাশের দেয়ালে সবুজাভ ছায়াছবি। এই আলো লতাগুল্ম আর কানামাছি-ছায়া আর রোদ্দুরের।

তুমি অলকানন্দা। আমি মেঘদূত হলে তোমার খোঁজে পাড়ি দিই কালরূপ পাথার। সুদূর অলকায় তোমার বসত। আমি কখনো পূর্বমেঘ, কখনো উত্তরমেঘ। ভেবেছিলে এইভাবে যক্ষের যাতনার সঙ্গী হলো আমারও আর্তহৃদয়! হাতের বলয় যার খসে গেলো কামার্ত যাতনায়।

না, কেউ আমাকে করে নি মিনতি। তোমার আসলে কেউ ছিলো না সঘন রাতের চরাচর। তুমি তো কেবল জেনেছিলো কেমন করে সিঁদুরের রঙ গাঢ় হলো— কার রক্তে শীতল হলো সূর্য। তুমি আঁকছো গজগামিনী। আঁকছো বসে তোমার রূপ।

আঁকছো আদি ও সুন্দর। জলপাইবনের ভিতর যে গজ ধীরে হারিয়ে যায়— মনে হয় অপসৃয়মাণ জোছনার ঘাতক— তার পৃষ্ঠে তুমি ও তোমার কৌমার্য। তোমাকে দেখছে ছিন্নমস্তা; তার চোখ নেই— স্তনই চোখ। তার পদতলে পবিত্র কাম ও সৌন্দর্য। যক্ষিণী দুইধারে প্রহরায় নিষিক্তপ্রহর।

দালিমের বনে হারিয়ে যাওয়া কাল ফিরে আসে সলাবণ্য সুষমায়। এই প্রেম তিনফোঁটা অশ্রুর বিনিময়ে পাওয়া যায়। একটা উড়ালপঙ্খী সাপের পিঠে চড়ে আমাদের ভ্রমণ ছিলো না অলৌকিক। রক্তচন্দনের বনে তার চিহ্ন লেখা আছে হাওয়াচুর ঘ্রাণে। আমাদের কথা ছিলো ইন্দ্রধুন।

তুমি আমাকে মেঘদূত বলে ডাকো! আমি তো আসি নি কোনো যক্ষের করুণ মিনতিতে। আমি মেঘ আমি আকাশের নীচে আর পৃথিবীর উপরে যে রাজ্য তার স্রষ্টা। এটাকে ওরা স্বর্গ বলে। স্বর্গে ধানক্ষেতের বদলে আমি চাষ করি অলকানন্দার তীরে সূর্যমুখী। দেবী আমাকে বলেছে ডেকে সূর্যমুখীর বীজে জন্ম নেয় সুন্দরের সন্তান।

ললিত-রক্তের ভাষায় পাঠায় কথার অমিয় ঘ্রাণ। দেবী মিথুনকে যে শক্তি দেয়— তা সৃষ্টি করে ব্রহ্মাণ্ড। আমিই সেই শক্তি। প্রিয় নির্বাচন— তোর শঙ্খচরণ। যখন তুমি প্রবহমান গঙ্গা— তোমার বুকে আমি ছায়া হয়ে ছাই।

পবিত্র জল আর আগুনে তুমি একাকার। একদিন আমি অন্ধ হয়ে ঘুরে বেড়াই দালিমের বনে। আর তুমি ঘ্রাণের উৎসব এনে আমাকে শক্তি যোগাও। আমার রক্তের ভিতর জেগে উঠে মাইল মাইল সূর্যমুখীর বন। দালিমের কাঁটায় কেঁটে গেলে বিস্মৃত আঙুল— ক্ষরণে জন্ম নেয় সুন্দরের অবিরল সন্তানেরা।

সোর্স: http://www.somewhereinblog.net     দেখা হয়েছে ১৬ বার

এর পর.....

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।