আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

বঙ্গবন্ধুর খুনিদের ফাঁসি বহাল

ভাবি, ভেবে একদিন নিজের সম্পর্কে কিছু লিখব।

ঢাকা, নভেম্বর ১৯ (বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম)-ঐতিহাসিক এক রায়ে স্বাধীনতার স্থপতি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান হত্যা মামলায় মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত কারাবন্দি পাঁচ আসামি বজলুল হুদা, মহিউদ্দিন আহমেদ, সৈয়দ ফারুক রহমান, সুলতান শাহরিয়ার রশিদ খান ও এ কে এম মহিউদ্দিনের আপিল নাকচ করে দিয়েছে আপিল বিভাগ। হত্যাকারীদের ফাঁসি দেওয়ার হাইকোর্টের রায় বহাল রেখেছে আদালত। বৃহস্পতিবার বিচারপতি মো. তাফাজ্জাল ইসলাম, বিচারপতি মো. আবদুল আজিজ, বিচারপতি বি কে দাস, বিচারপতি মো. মোজাম্মেল হোসেন ও বিচারপতি এস কে সিনহার সমন্বয়ে গঠিত আপিল বিভাগের বিশেষ বেঞ্চ সকাল ১১টা ৫৬ মিনিটে ঐতিহাসিক এ মামলায় রায় ঘোষণা করে। কঠোর নিরাপত্তার মধ্যে আপিল বিভাগের ১ নং বিচারকক্ষে এ মামলার রায় ঘোষণা করে আপিল বিভাগ।

রায় ঘোষণার সময় আদালতে তিল ধারণের ঠাঁই ছিল না। আদালত কক্ষের বাইরেও উৎসুক জনতার ভিড় রয়েছে। মামলায় মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত অন্য আসামি আব্দুর রশিদ, শরিফুল হক ডালিম, এস এইচ এম বি নূর চৌধুরী, মোসলেমউদ্দিন, রাশেদ চৌধুরী ও আব্দুল মাজেদ পালিয়ে আছেন। তাদের গ্রেপ্তার করতে ইন্টারপোলের পরোয়ানা রয়েছে। পলাতক অবস্থায় আরেক আসামি আব্দুল আজিজ পাশা জিম্বাবুয়েতে মারা যায়।

ঐতিহাসিক এ রায় ঘোষণাকে কেন্দ্র করে সুপ্রিম কোর্টে নিশ্চিদ্র নিরাপত্তা ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। বসানো হয়েছে সিসিটিভি, আর্চওয়ে। র‌্যাব, পুলিশের পাশাপাশি সাদা পোশাকে বিভিন্ন নিরাপত্তা সংস্থার সদস্যরা আদালতে নিরাপত্তায় নিয়োজিত রয়েছে। ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট সেনাবাহিনীর একদল সদস্য ধানমণ্ডি ৩২ নম্বরের বাড়িতে হানা দিয়ে বেশ কয়েকজন আত্মীয়-স¡জনসহ তৎকালীন রাষ্ট্রপতি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে সপরিবারে হত্যা করে। নিহত হন বঙ্গবন্ধুর ছোট ছেলে রাসেলসহ মোট ২৮ জন।

বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও তার বোন শেখ রেহানা বিদেশে অবস্থান করায় বেঁচে যান। হত্যাকাণ্ডের পর তখন কাউকেই মামলা করতে দেওয়া হয়নি। হত্যাকাণ্ডের বিচারের পথ রুদ্ধ করার জন্য '৭৫ এর ২৬ সেপ্টেম্বর তৎকালীন মোশতাক সরকার ইন্ডেমনিটি (দায়মুক্তি) অধ্যাদেশ জারি করে। দীর্ঘদিন পর ১৯৯৬ সালের ১২ নভেম্বর ক্ষমতায় এসে আওয়ামী লীগ সরকার দায়মুক্তি অধ্যাদেশটি বাতিল করলে ওই হত্যাকাণ্ডের বিচারের পথ উন্মুক্ত হয়। হত্যাকাণ্ডের ২১ বছর পর ১৯৯৬ সালের ২ অক্টোবর বঙ্গবন্ধুর ব্যক্তিগত সহকারী আ ফ ম মুহিতুল ইসলাম ধানমণ্ডি থানায় ২৩ জনকে আসামি করে মামলা করেন।

তদন্ত শেষে পুলিশ ১৯৯৭ সালের ১৫ জানুয়ারি আদালতে অভিযোগপত্র দেয়। ওই বছরের ১২ মার্চ ঢাকায় দায়রা জজ আদালতে শুরু হয় বিচার। একই বছর ৭ এপ্রিল ওই আদালত ২০ আসামির বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠন করে। মারা যাওয়ায় আসামির তালিকা থেকে বাদ পড়েন খন্দকার মোশতাক আহমেদ, মাহবুবুল আলম চাষী ও মোস্তফা আহমেদ। ১৯৯৮ সালের ৮ নভেম্বর ঢাকার দায়রা জজ গোলাম রসুল ২০ আসামির ১৫ জনকে মৃত্যুদণ্ড দিয়ে রায় দেন।

এর আগেই আব্দুর রশিদের স্ত্রী জোবায়দা রশিদ হাইকোর্টের আদেশে মামলা থেকে অব্যাহতি পান। এরপর ২০০০ সালের ১৪ ডিসেম্বর হাইকোর্টের দ্বৈত বেঞ্চ এ মামলায় বিভক্ত রায় দেয়। ওই বেঞ্চের জ্যেষ্ঠ বিচারপতি মো. রুহুল আমিন ১০ আসামির মৃত্যুদণ্ড বহাল রাখেন। অন্য বিচারপতি এ বিএম খায়রুল হক ১৫ আসামির ফাঁসির আদেশই বহাল রাখেন। ২০০১ সালের ৩০ এপ্রিল হাইকোর্টের তৃতীয় বিচারপতি মোহাম্মদ ফজলুল করিম তার রায়ে ১২ আসামির মৃত্যুদণ্ডাদেশ বহাল রেখে তিন আসামি মো. কিসমত হাসেম, আহমেদ শরিফুল হোসেন ও নাজমুল হোসেন আনসারকে খালাস দেন।

মৃত্যুদণ্ড বহাল থাকা কারাবন্দি চার আসামি বজলুল হুদা, সৈয়দ ফারুক রহমান, সুলতান শাহরিয়ার রশিদ খান ও মহিউদ্দিন আহমেদ একই বছর আপিল বিভাগে আপিল দায়ের করে। ২০০৭ সালের ১৮ জুন দেশে ফেরত আনার পর ওই বছরের ২৪ জুন ফাঁসির অপর আসামি এ কে এম মহিউদ্দিন আপিলের আবেদন করে। ২০০৭ সালের ২৩ সেপেম্বর আপিল বিভাগ শুনানির জন্য আবেদন গ্রহণ (লিভ মঞ্জুর) করে। বিগত বিএনপি জামায়াত জোট সরকারের সময় আপিল বিভাগে বিচারপতি সঙ্কটের কারণে দীর্ঘদিন আপিল শুনানি ঝুলে ছিল। এ বছরের মাঝামাঝিতে চারজন বিচারপতি নিয়োগের পর আপিল শুনানির অচলাবস্থার নিরসন হয়।

গত ৪ অক্টোবর বেঞ্চ গঠনের পরদিন এ মামলার আপিলের শুনানি শুরু হয়। মামলার পেপার বুক উপস্থাপন শেষ হলে ১৫ অক্টোবর থেকে শুরু হয় যুক্তিতর্ক। মোট ২৯ কার্যদিবসের এই শুনানি শেষ হয় ১২ নভেম্বর। আপিল শুনানিতে অ্যাটর্নি জেনারেলকে সহায়তা করতে সরকার ১৮ জন আইনজীবী নিয়োগ দেয়। এ মামলায় রাষ্ট্রপক্ষের প্রধান আইনজীবীর দায়িত্ব পালন করছেন আনিসুল হক।

হাইকোর্টের রায়ের বিরুদ্ধে আপিল না করায় পলাতকদের মৃত্যুদণ্ড বহাল রয়েছে। নিয়মিত আপিলের সুযোগ না থাকায় গ্রেপ্তারের পরই তাদের ফাঁসি কার্যকর করা যাবে। তবে আইনি প্রক্রিয়ায় বিলম্বে আপিলের সীমিত সুযোগ থাকছে তাদের। যদিও এধরনের সুযোগ পাওয়ার নজির বিরল। বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম/এটি/আরএ/এমআই/জিএনএ/১১৫৬ ঘ.


অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.