আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

কসোভো ও ইসরাইলকে স্বীকৃতি দিতে আপত্তি কোথায়??

ফেসবুক আইডি:নাই

নব্য স্বাধীন মুসলিম ইউরোপীয় রাষ্ট্র কসোভোকে স্বীকৃতি দিতে অস্বাভাবিক সময় নিচ্ছে বাংলাদেশ। ইসরাইলের স্বীকৃতির প্রশ্নও ঝুঁকে আছে কয়েক যুগ ধরে। ২০০৮ সালের ১৭ই ফেব্র্বয়ারি কসোভো স্বাধীনতা ঘোষণা করে। আর ইসরাইলের জন্ম ১৯৪৮ সালের ১৪ই মে। কসোভো প্রশ্নে বাংলাদেশের গুর্বত্বপূর্ণ মিত্র যুক্তরাষ্ট্রের ধারাবাহিক তাগিদ থাকলেও অগণতান্ত্রিক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের মতো বর্তমান গণতান্ত্রিক সরকারও স্বীকৃতি নিয়ে সময়ৰেপণের কৌশল নিয়েছে।

আর বাংলাদেশ হচ্ছে একমাত্র মুসলিম দেশ যে তার জন্মের পর থেকেই ইসরাইলের সঙ্গে সব ধরনের সম্পর্কে পূর্ণ নিষেধাজ্ঞা বজায় রেখেছে। কূটনৈতিক বিশেৱষকদের মতে, এ দুই দেশের সঙ্গে সম্পর্ক রাখা-না রাখার প্রশ্নে বাংলাদেশের অবস্থান বাস্তবতার নিরিখে পুনর্বিবেচনা করা প্রয়োজন। কসোভো প্রশ্নে বাংলাদেশকে মার্কিন চাপ নয়- উদার মুসলিম রাষ্ট্র হিসেবে নিজের পরিচয়কে মাথায় রাখতে হবে। আর সৌদি আরবের মতো দেশও ইসরাইলের সঙ্গে নতুন করে বাণিজ্য ও সেবা সম্পর্ক স্থাপন করতে পারলে বাংলাদেশের চোখ বন্ধ করে রাখা কূটনীতিক যৌক্তিক নয়। কারণ বিশ্ব বাণিজ্যে ইসরাইল একটি বড় ফ্যাক্টর হওয়ায় বাংলাদেশ অনেক ৰেত্রেই পিছিয়ে থাকছে।

কসোভোর স্বীকৃতি দিয়েছে ৬২ দেশ জাতিসংঘের ১৯২ সদস্য রাষ্ট্রের মধ্যে ৬২ রাষ্ট্র ইতিমধ্যে কসোভোকে সমর্থন দিয়েছে। কাউন্সিল অব ইউরোপ (সিওই)-এর ৪৭ দেশের মধ্যে ৩৩ দেশ দিয়েছে স্বীকৃতি। ইউরোপিয়ান ইউনিয়ন (ইইউ)-এর ২৭ দেশের মধ্যে ২২ দেশ ও ন্যাটো’র ২৮ দেশের মধ্যে ২৪ দেশ স্বীকৃতি দিয়েছে। আরব দেশগুলোর জোট আরব লীগও গত মে মাসে আনুষ্ঠানিকভাবে কসোভোর সঙ্গে সহযোগিতার সম্পর্ক গড়ে তোলার ঘোষণা দেয়। এর ২২ সদস্যের মধ্যে ৫ সদস্য ইতিমধ্যে স্বীকৃতি দিয়েছে।

ইসলামিক সম্মেলন সংস্থা (ওআইসি)-র ৫৭ সদস্যের মধ্যে ১৪ সদস্য এ রাষ্ট্রকে স্বীকৃতি দিয়েছে। এর মধ্যে ইসলামী উম্মাহর নেতৃস্থানীয় দেশ সৌদি আরবসহ বাহরাইন, সংযুক্ত আরব আমীরাত, জর্ডান, মালয়েশিয়া ও তুরস্ক রয়েছে। গত ২৫শে মে দামেস্ক ওআইসি পররাষ্ট্রমন্ত্রীদের বৈঠকে কসোভোর স্বাধীন রাষ্ট্র হিসেবে অভ্যুদয়কে স্বাগত জানিয়ে প্রস্তাব পাস করে। তবে সৌদি আরব কসোভোর স্বীকৃতির প্রস্তাব টেবিলে তুললেও মিশর, ইন্দোনেশিয়া ও সুদানের আপত্তিতে তা পাস হয়নি। সৌদি আরব ২০শে এপ্রিল কসোভোকে স্বীকৃতি দেয়।

৭ই আগস্ট দু’দেশ কূটনৈতিক সম্পর্ক স্থাপন করে। কসোভো সৌদি আরবের রাজধানী রিয়াদে দূতাবাস স্থাপন করেছে এবং সৌদি আরবও কসোভোর রাজধানী প্রিস্টিনায় লিয়াজোঁ অফিস স্থাপন করেছে। কসোভো ইতিমধ্যে ১০ দেশে দূতাবাস ও কনস্যুলেট খুলেছে। এ বছর তারা আরও ২২ দেশে দূতাবাস বা কনস্যুলেট খুলতে এগিয়ে এসেছে। কসোভোর রাজধানী প্রিস্টিনায় ১৭ দেশের দূতাবাস রয়েছে, ১০ দেশের আছে অনাবাসিক রাষ্ট্রদূত আর ১৩ দেশের আছে লিয়াজোঁ অফিস।

একমাত্র বাংলাদেশের পাসপোর্টেই ইসরাইল নিষিদ্ধ ইসরাইলের সঙ্গে বাংলাদেশের অভ্যুদয়ের পর থেকেই সব ধরনের কূটনৈতিক সম্পর্ক ছিন্ন থাকলেও এ দেশই বাংলাদেশকে প্রথম স্বীকৃতি দানকারী দেশগুলোর একটি। তবে একমাত্র এদেশের পাসপোর্টেই সুনির্দিষ্ট করে উলেৱখ করা আছে, এ পাসপোর্টে ইসরাইল ছাড়া বিশ্বের সব দেশে ভ্রমণ করা যাবে। ১৯৭২ সালের ৪ঠা ফেব্র্বয়ারি ইসরাইল এদেশকে স্বীকৃতি দিয়েছিল। বিশ্বের যে ৩৭ দেশ ইসরাইলকে স্বীকৃতি দেয়নি তার মধ্যে আরব দেশের সংখ্যা ২২। তবে এদের কারও সঙ্গেই বাংলাদেশের মতো সব ধরনের সম্পর্ক বন্ধ নেই ইসরাইলের।

আরব দেশগুলোর মধ্যে মিশর ও জর্ডানের সঙ্গে পূর্ণ কূটনৈতিক সম্পর্ক আছে এ ইহুদি রাষ্ট্রের। ২০০০ সালের অক্টোবরে বাহরাইন, মরক্কো ও ওমান কূটনৈতিক সম্পর্ক বাতিল করার ঘোষণা দিলেও ইসরাইলের সঙ্গে তারা বাণিজ্যিক ও অর্থনৈতিক সম্পর্ক বজায় রেখেছে। মরক্কো ও তিউনিসিয়া ইসরাইলি পাসপোর্টধারীদের তাদের দেশে পর্যটক ভিসা দেয়। এমনকি সৌদি আরব ২০০৫ সালে অন্য সব কূটনৈতিক সম্পর্ক স্থগিত রাখলেও ইসরাইলি পণ্য ও সেবার ওপরে নিষেধাজ্ঞা তুলে নেয়। দক্ষিণ এশিয়ায় ভুটান ও পাকিস্তানের সঙ্গেও কাগজে-কলমে তেল-আবিব-এর কূটনৈতিক সম্পর্ক নেই।

তবে ২০০৩ সালে পাকিস্তানের তৎকালীন প্রেসিডেন্ট পারভেজ মোশাররফ ইসরাইলের সঙ্গে পূর্ণ কূটনৈতিক সম্পর্ক চালুর বিষয়টি তোলেন। ২০০৫ সালে দু’দেশের পররাষ্ট্র্রমন্ত্রীরা বৈঠকও করেন। কসোভোকে স্বীকৃতি দেয়া উচিত: যুক্তরাষ্ট্র কসোভোর স্বীকৃতি দিয়ে বাংলাদেশের বাকি আন্তর্জাতিক সমপ্রদায়ের সঙ্গে যোগ দেয়ার সময় এখন বলে মনে করে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র। ঢাকার মার্কিন দূতাবাসের মুখপাত্র সুস্পষ্টভাবে বলেন, কসোভোর সাফল্য যুক্তরাষ্ট্রের জন্য একটি বড় অগ্রাধিকার। শান্তিপূর্ণ, বহুধর্মের মিলনস্থল, গণতান্ত্রিক ও স্বাধীন রাষ্ট্র হিসেবে এ রাষ্ট্রের পূর্ণ বিকাশ আন্তর্জাতিক সমপ্রদায়ের জন্যও জর্বরি।

মুখপাত্র আরও বলেন, কারণ এ রাষ্ট্র হচ্ছে বলকান অঞ্চলে দীর্ঘস্থায়ী স্থিতিশীলতা আনতে আন্তর্জাতিক সমপ্রদায়ের দীর্ঘ প্রচেষ্টার অংশ। তিনি বলেন, বিশ্বে ৬০টিরও বেশি দেশ কসোভোকে স্বীকৃতি দিয়েছে যার মধ্যে সৌদি আরবসহ ওআইসি’র কমপৰে ১০টি সদস্য দেশ রয়েছে। তাছাড়া কসোভো এখন বিশ্ব ব্যাংক ও আইএমএফ-এর সদস্য। স্বীকৃতি এখনও বাংলাদেশের বিবেচনায়: কসোভোর স্বীকৃতির প্রশ্নে বাংলাদেশের সর্বশেষ অবস্থান প্রশ্নে পররাষ্ট্র সচিব মিজার্বল কায়েস শনিবার বলেছেন, বাংলাদেশের নতুন কোন সিদ্ধান্ত নেই। কসোভোর স্বীকৃতি দেয়ার বিষয়টি বিবেচনায় রেখেছে ঢাকা।

তবে এ নিয়ে এখন কোন অগ্রগতি নেই। ঢাকায় মার্কিন রাষ্ট্রদূত জেমস এফ মরিয়ার্টি গত ১৯শে আগস্ট পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে পররাষ্ট্রমন্ত্রী ডা. দীপুমনির সঙ্গে সাক্ষাৎ করে কসোভোকে স্বীকৃতি দেয়ার অনুরোধ রাখেন। দীপুমনিও তখন বলেছিলেন, কসোভোর স্বীকৃতির বিষয়টি বাংলাদেশের বিবেচনায় রয়েছে। তবে স্বীকৃতি দেয়ার এ মুহূর্তে কোন চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেয়া হচ্ছে না। এটি ছিল বাংলাদেশকে মার্কিন সরকারের পৰে তৃতীয় দফা অনুরোধ।

গতকালও আরেক দফা অনুরোধ জানানো হয়েছে মার্কিন দূতাবাসের তরফে। এক সময় বাংলাদেশ ইউরোপের মুসলিম রাষ্ট্র কসোভোর স্বীকৃতির প্রশ্নে মুসলিম উম্মাহর স্বীকৃতি না পাওয়ার কথা উলেৱখ করেছিল। সংশিৱষ্ট কূটনৈতিক সূত্র মতে, ঢাকার তরফে চূড়ান্ত কোন সিদ্ধান্ত শিগগির নেয়ার কোন সম্ভাবনা নেই। এ সরকারের আমলেই কসোভোকে স্বীকৃতি না দিতে রাশিয়া বাংলাদেশকে আনুষ্ঠানিকভাবে চিঠি দেয়। তাছাড়া পারমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্র স্থাপনে রাশিয়ার সঙ্গে সহায়তা চুক্তি সই করার ব্যাপারে আলোচনা চালিয়ে যাচ্ছে।

মস্কোতে ইতিমধ্যে বাংলাদেশের বিভিন্ন পর্যায়ের কয়েকটি প্রতিনিধি দল সফর করেছে। ঊর্ধ্বতন একটি সূত্র জানায়, ইসরাইলের সঙ্গে বাংলাদেশের কোন ধরনের সম্পর্ক স্থাপনে আলোচনার বিষয়টিও এ মুহূর্তে বিবেচনায় নেই সরকারের। এটি একটি রাজনৈতিক ইস্যু ও বাংলাদেশের সাধারণ মানুষের আবেগ ও ধর্মীয় অনুভূতি এর সঙ্গে জড়িত। এ নিয়ে বর্তমান সরকার বা কোন সরকারই পদৰেপ নেবে না বলেও তিনি জানান। সংশিৱষ্ট এক কূটনীতিক জানান, মুসলিম সংখ্যাগরিষ্ঠ জনগণের কথা মাথায় রেখেই ইরাক যুদ্ধের সময় বাংলাদেশ জাতিসংঘ বাহিনীতে সৈন্য পাঠাতে পারেনি।


সোর্স: http://www.somewhereinblog.net     দেখা হয়েছে বার

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।