আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

আমার ছোটবেলা ৩

:)
আমার ছোটবেলা ১ আমার ছোটবেলা ২ আমাদের সবচেয়ে মজার দিনগুলা কাটতো যখন আমার খালারা ইয়ামেন থেকে বেড়াতে আসত দেশে। আমাদের বাসা তেমন বড় না ,কিন্তু ওরা যখন ১ মাসের জন্য দেশে বেড়াতে আসত আমরা সবাই খুব মজা করে একসাথে থাকতাম । আমাদের বাসায় আগের দিন এর অনেক বড় একটা খাট ছিল তখন আমি,আমার ভাই , আম্মু আর আমার ২ খালাতো ভাই বোন সবাই মিলে একসাথে ঘুমাতাম । আম্মু আমাদের সবাইকে একসাথে রাতে খাইয়ে দিত । আম্মু একটা বিশাল বল এ ভাত মাখাত,আমরা ৪ জন আম্মুকে ঘিরে বসে থাকতাম তারপর আমাদের এক এক করে লোকমা মুখে দিত ।

নিমিশে বল খালি হইয়া যাইত । আমাদের বাসার সামনে আমরা সবাই আশেপাশের বিভিন্ন বয়সের ছেলেমেয়েরা একসাথে খেলতাম , গোল্লাছুট , দাড়িয়াবান্ধা, মাংস চোর , বঊচি, ছোয়াছুয়ি, কানামাছি, ফুলটোক্কা , এলন্ডিলন্ডন আরও কতকি !!! আমি অবশ্য ফুটবল ক্রিকেটও খেলতাম ভাই এর সাথে , আর ছোট ছোট হাড়ি পাতিল নিয়ে একা একা রান্নাবাটি ও খেলতাম। আমার পুতুল খেলার অনেক শখ ছিল বিভিন্ন জায়গা থেকে আমি পুতুল এর জন্য ছোট ছোট কাপড়ের টুকরা নিয়া আসতাম। ছোটবেলার মজার ঘটনার মধ্যে যে কয়েকটা মনে পড়ে একটা হল তখন আমার খালামনিরা মাত্র ইয়ামেন থেকে আসছে আমাদের বাসায় আমি তখন মাত্র কেজিওয়ান/ওয়ান এ পড়ি । একদিন স্কুল থেকে এসে আমি স্যান্ডো গেঞ্জি আর হাফ প্যান্ট পড়ে ঘুরে বেড়াইতেসি , তখনই পিয়ন আসছে চিঠি নিয়ে।

আমি দরজা দেখতে গেলাম তখন পিয়ন আমাকে দেখে কাজের লোক মনে করল , আমাকে বলে 'এই তোর মালিককে ডেকে দে তো '। আমিতো চেতে মেতে শেষ । ছোটবেলায় আমাকে কেউ তুই বললে আমার অনেক মেজাজ খারাপ হইত । আমাকে চেতানোর জন্য আমার আম্মু ,আমার ভাই, আমার মামা আমাকে তুই বলত আর আমিতো খেপে গিয়া প্রায় কেঁদেই দিতাম । আমার কাছে কেন যেন তুই শব্দটা গালি মনে হইত ।

এখন যখন আমার বন্ধু বান্ধবীরা তুই বলে শুনতে কত ভাল লাগে , তুমি বললে কেমন যেন পর পর লাগে । ও আচ্ছা এর পরের ঘটনা হইল ওই পিয়ন আরেকদিন আমাদের বাসায় আসছিল , সেদিন আমি খুবই সুন্দর প্রিন্সেস টাইপ ড্রেস পড়ে আম্মুর সাথে বেড়াইতে যাইতেসিলাম । লোকটাকে দেখে আমি তাড়াতাড়ি আমার আম্মুর হাত ধরে ফেললাম যাতে বদ লোকটা বুঝে আমি কাজের মেয়ে না । আরেকটা মজার যে কাহিনী মনে পড়ে তা হল আমার একইদিনে ২ টা দাঁত পড়ার কথা। তখন আমি ক্লাস ১/২ তে পড়ি মনে হয়।

আমি আর আমার ভাই একটা আজীব খেলা খেলতেসিলাম । একটা কাঁথা নিয়ে আমার ভাই ঐটার একটা প্রান্ত ধরে আসে আর আমি আরেকটা প্রান্ত দাঁত দিয়ে কামড়ে ধরে আসি (আল্লাহ জানে এটা কি খেলা ছিল !!!!!!!!! ) । কাঁথাটা পুরা টানটান অবস্থায় আসে হঠাৎ আমার ভাই এর কি মনে হল ও কাথাটার মাঝ বরাবর একটা হাত দিয়ে জোরে বাড়ি দিল । আর আমার সামনের দিকের একটা দাঁত উড়ে খাটের নিচে চলে গেল (যেটা ঐ মুহূর্তে আমি দেখি নাই ) আর একটা দাঁত আধা ভেঙ্গে গেল । আমিতো বিশাল কান্নাকাটি শুরু করলাম ।

আমার আম্মুও খুব ভয় পেয়ে গেল । আম্মু ভাবসে আমি মনে হয় একটা দাঁত গিলে ফেলসি । আর ভাঙ্গা দাঁতটা আম্মু টেনে তুলে ফেলল । আমার বদ ভাইটাও এই কান্ড দেখে ভয় পেয়ে গেসিল । এর কিছুক্ষন পর আমার নানু খাটের নিচ থেকে আমার আরেকটা দাঁত বের করল ।

তারপর আমি ২ টা দাঁত নিয়া বাসার কাছে ইঁদুর এর গর্তের (আসলেই ইঁদুর এর গর্ত কিনা আল্লাহ জানে !! )মধ্যে ফেলে দিলাম কারন নানু বলসে ইঁদুরকে দাঁত দিলেই ইঁদুর আবার আমার দাঁত ফেরত দিবে আর আমিও এটা বিশ্বাস করে বসে আছি (কি ছাগলই না ছিলাম তখন !!!)। ছোট থাকতে আমি কেন যেন পুলিশদের খুব বড় কিছু মনে করতাম । রাস্তায় বের হলেই যেকোন পুলিশ দেখলেই আমি তাদের সালাম দিতাম । আমার আম্মু , নানু আমাকে নিয়া হাসাহাসি করত । আর আমি খুব ভয় পেতাম যে জিনিসটা তা হল আমার মামা সবসময় আমাকে ভয় দেখাইত যদি বেশী দুষ্টামি করস তাইলে কিন্তু তোর আম্মু কে বিয়া দিয়া দিব ।

আমি এটা শুনলে খুব ভয় পেতাম । তখন বিটিভিতে কোন যেন একটা নাটক দেখসিলাম একটা ছেলের আব্বু মারা যাওয়ার পর তার আম্মুকে বিয়ে দিয়ে দিসে সবাই আর ঐ ছেলেটাকে সবাই বোর্ডিং স্কুল এ পাঠায়ে দিসে । ঐ নাটক দেখার পরই আমার মনে এই ভয় ঢুকে গেসিল । একবার কোন বিয়েবাড়িতে যাওয়ার পর কারা যেন আম্মুকে বিয়ে দেওয়ার কথা বলসিল আর সেটা আমার নানু আর মামা বলাবলি করতেসিল । সেটা শুনে আমার আর আমার ভাই এর সে কি কান্না ।

আমার আম্মু অফিস থেকে এসে দেখে আমরা ২ ভাই বোন গেটের সামনে বসে আছি , আম্মু আমাদের জিজ্ঞেস করল কি হইসে আমরা ঘটনা বলাতে আম্মু বলল যারা এসব বলবে তারা এ বাসায় থাকতে পারবে না , এটা শুনে আমি আর ভাইয়া অনেক খুশি হয়ে গেসিলাম । (চলবে )
 

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।