আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

রক্তপাতের বিপক্ষে মানুষের অবস্থান



রক্তপাতের বিপক্ষে মানুষের অবস্থান ফকির ইলিয়াস ===================================== বিশ্বের অর্থনৈতিক মন্দাবস্থার সহসা উন্নতি হবে, এমন কোন লক্ষণ দেখা যাচ্ছে না। একটা প্রত্যাশার বাণী শুনিয়ে ক্ষমতায় এসেছিলেন যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামা। তার ঘোষণা ছিল, তিনি বদলে দেবার সূচনা করবেন গোটা বিশ্ব। কিন্তু দশ মাসে এর উল্লেখযোগ্য পরিবর্তন দেখা যাচ্ছে না। বরং যুদ্ধ চলছে।

মৃত্যুর লাইন দীর্ঘ হচ্ছে। বোমা হামলা কিংবা আত্মঘাতি বোমার আওয়াজ ভীত সন্ত্রস্থ করে তোলছে মানুষের মন। সম্প্রতি পাকিস্তান সফরে গিয়েছিলেন যুক্তরাষ্ট্রের সেক্রেটারি অব স্টেটস হিলারী কিন্টন। এই সফলকালে তিনি বলেছেন, পাকিস্তানে ইসলামিক মিলিট্যান্ট শক্তির বিরুদ্ধে যুক্তরাষ্ট্রের অভিযান অব্যাহত থাকবে। পাকিস্তানে আসলে কি হচ্ছে ? আফগানিস্তানের প্রতিবেশী দেশ পাকিস্তানে জঙ্গিরা এতো শক্তি সাহস কোথা থেকে পাচ্ছে ? এসব প্রশ্ন উঠছে খুব সঙ্গত কারণে।

পেশওয়ারের একটি আত্মঘাতি বোমা হামলায় নিহতের সংখ্যা একশত। আহত হয়েছে দুই শতাধিক। এই বোমা হামলাকারীরা মসজিদ পর্যন্ত উড়িয়ে দিয়েছে। এর কারণ কি ? ধর্মই যদি তাদের আরাধ্য বিষয় হয়, তবে মসজিদ তাদের হাতে আক্রান্ত হবে কেন ? এটা সবার জন্য পাক-আফগান সীমান্তে আল কায়েদা, তালেবান শক্তিরা একটি শত্রু ঘাঁটি গড়ে তোলেছে। যুক্তরাষ্ট্রের ‘মোস্ট ওয়ান্টেড' ওসামা বিন লাদেনও রয়েছেন এই মরু প্রদেশে।

এমন আশংকা যুক্তরাষ্ট্র দীর্ঘদিন থেকেই করে আসছে। এরপরও মার্কিন গোয়েন্দাদের সকল কারিগরি শক্তির চোখে ধুলো দিয়ে লাদেন এই অঞ্চলে তার জঙ্গিবাদ চালিয়েই যাচ্ছেন। বর্তমান সময়ে জঙ্গিবাদের অন্যতম চারণ ভূমি দক্ষিণ পূর্ব এশিয়া। এর প্রধান কারণটি হচ্ছে, এই অঞ্চলের মানুষ ধর্মের বিষয়ে অত্যন্ত সরলপ্রাণ এবং সুদৃঢ় বিশ্বাসী। লক্ষ্য করলে দেখা যাবে, ধর্মীয় সমাজ কল্যাণের নামে ‘হিজবুত তাহরীর’ কিংবা দাওয়াতুল ইসলামের মতো কোন সংগঠন রাজতন্ত্র শাসিত সৌদি আরব, কুয়েত, কাতার, বাহরাইন, দুবাই,ওমান প্রভৃতি দেশে গড়ে উঠতে পারেনি কিংবা পারবেও না।

অথচ সকল নবী, রাসুলদের আবির্ভাব সেই আরব মল্লুকেই হয়েছিল। এর কারণ কি ? কারণটি হচ্ছে কট্টরপন্থিদেরকে প্রধান মুসলিম দেশগুলো, নিজ দেশে পৃষ্ঠপোষকতা করে না। অথচ আমরা পত্র-পত্রিকায় প্রায়ই সংবাদ দেখি উপমহাদেশের অনেকগুলো ধর্মীয় সংগঠন মধ্যপ্রাচ্য থেকে ফান্ড পায়। কেন এই ফান্ড দেয়া হয় ? এর নেপথ্য উদ্দেশ্য কি ? যারা, যে সব রাষ্ট্র প্রধানরা - নিজ দেশে ‘এক্সট্রিম পলিটিক্যাল মোটিভেশন’ লালন করে না, তারা অন্য দেশে এর পৃষ্ঠপোষকতা কেন করে ? এ প্রসঙ্গে নিউইয়র্ক ইউনিভার্সিটির রাজনীতি ও আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের অধ্যাপক মি· স্টিফেন চাকলার বলেন, রাজতন্ত্রী দেশগুলো হচ্ছে ধর্মীয় সুবিধাবাদে বেশি লাভবান। কারণ তারা বংশ পরম্পরায় একটি দেশ শাসন করে।

আর নিজের রাষ্ট্রে গণতন্ত্রকে হত্যা করে অন্য দেশে ধর্মীয় কট্টরবাদ জিইয়ে রাখার জন্য সেই সব তেল সমৃদ্ধ দেশগুলোর একটি চক্র দায়ী। এখানে আরেকটি বিষয় লক্ষ্যণীয়। তা হচ্ছে, ফিলিস্তিনের গণমানুষের মুক্তি সংগ্রাম কিন্তু ধনী আরব মুল্লুকের জোরালো সমর্থন কোনদিনই পায়নি। না পাবার কারণ কি ? কারণটি হচ্ছে, তাদের ঘনিষ্ঠ মিত্র দেশ যুক্তরাষ্ট্রকে এড়িয়ে ইসরাইলের বিরুদ্ধে দাঁড়াবার সাহস তৈল সমৃদ্ধ আরব দেশগুলো কখনোই করেনি। ভবিষ্যতেও করবে না, তেলের বদলে যুক্তরাষ্ট্র আরব বিশ্বের রাজা, বাদশাহ, খলিফা, সুলতানদের বংশ পরম্পরায় শাসনের নিশ্চয়তা নিশ্চিত করে যাচ্ছে।

দুই· একটি রাষ্ট্র কাঠামোতে ধ্বংস নামে, যখন রাষ্ট্র পরিচালকরা‌ কোন অশুভ শক্তি কর্তৃক নিয়ন্ত্রিত কিংবা প্ররোচিত হন। যে পাকিস্তানে আজ সরকার বনাম জঙ্গিদের গৃহযুদ্ধ চলছে, সেই পাকিস্তানে জঙ্গিরা মদদ পেয়েছে সামরিক স্বৈরাশাসকের। জেনারেল পারভেজ মোশাররফ নিজের ক্ষমতা টিকিয়ে রাখার জন্য হাত মিলিয়েছিলেন জঙ্গিবাদী অপশক্তির সাথে। ফলে তারা তাদের বিষদাঁত শক্ত করতে পেয়েছে পাকিস্তানের মরুভূমিতে। প্রায় একই অবস্থা ঘটেছিল বাংলাদেশেও চারদলীয় জোট সরকারের শাসনামলে।

এখানে একটি সঙ্গত প্রশ্ন উত্থাপন করা খুব জরুরি মনে করি। তা হচ্ছে ২০০১-২০০৬ সালে বাংলাদেশ স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়টির দায়িত্ব কার হাতে ছিল ? আমরা জানি এ সময় স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রীর দায়িত্বে ছিলেন লুৎফুজ্জামান বাবর। কিন্তু স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে পূর্ণ কোন মন্ত্রী ছিলেন না। এর নেপথ্য কারণ কি ? পনেরো কোটি মানুষের দেশ বাংলাদেশ। এই দেশে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়টি একটি অতি গুরুত্বপূর্ণ মন্ত্রণালয়।

কেন একজন প্রতিমন্ত্রীর হাতে ছিল সর্বময় ক্ষমতা ? রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের মতে এ সময়ে এই মন্ত্রণালয়টি চালাতো বিশেষ একটি মহলের সিন্ডিকেট। একটি ভবন নিয়ন্ত্রণ করতো সবকিছু। ফলে, শিক্ষা, অর্থ সহ আরো বেশ কিছু মন্ত্রণালয় মন্ত্রী, প্রতিমন্ত্রী, উপমন্ত্রী থাকার পরও স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে পূর্ণ কোন মন্ত্রী নিয়োগ দেয়নি চারদলীয় জোট সরকার। যা সে সময়ে ছিল অত্যন্ত দুর্ভাগ্যজনক। কারণ দেশের শান্তিশৃঙ্খলা পরিস্থিতি এতোই নাজুক থাকার পরও এর প্রতি ভ্রুক্ষেপ করেন নি খালেদা-নিজামীর জোট সরকার।

বাংলাদেশ এখনও সেই জঙ্গিবাদের দহন বয়ে বেড়াচ্ছে। যত্রতত্র গড়ে উঠা এসব জঙ্গিবাদী সংগঠন বিভিন্নভাবে দেশে অরাজকতা সৃষ্টির প্রচেষ্টা অব্যাহত রেখেছে। বিশ্বে সকল নাশকতা মূলক কাজের হোতাদের মাঝে একটা যোগসূত্র আছে। আর তা হচ্ছে এরা গোটা বিশ্বকে অশান্ত করতে চায়। মানুষকে ভীত করে তোলতে চায়।

সহিংসতার বিষবাষ্প ছড়াতে চায়। মানুষের অর্থনৈতিক মন্দার চরম ক্রান্তিকালে সামাজিক অশান্তিটি হচ্ছে বাড়তি দুঃখ। যারা একটি গোষ্ঠী ভিত্তিক মতবাদ কায়েম করে শান্তির সুবাতাস বইয়ে দেবার কথা বলে এরা মূলতঃ সমাজে কলহই ছড়াচ্ছে বেশি। প্রকারান্তরে বিশেষ মহলের স্বার্থ হাসিল করছে। এই সব হানাহানি, এই সব রক্তপাতের বিরুদ্ধে মানুষের অবস্থান শক্ত করতে হবে।

এগিয়ে আসতে হবে সম্মিলিত ভাবে সবাইকে। আর যারা সরকার চালান, যারা রাষ্ট্রপরে নিয়ন্ত্রক তাদের কে একটি কথা মনে রাখতে হবে গভীরভাবে। তা হচ্ছে প্রতিহিংসা পরায়ণ হয়ে শান্তি প্রতিষ্ঠা করা যায় না। শান্তি প্রতিষ্ঠার জন্য সুবিচার, আইনের শাসন প্রতিষ্ঠা করা খুবই জরুরি। আমরা দেখেছি জজ মিয়া নাটক সাজিয়ে একুশে আগষ্টের বোমা হামলা ভিন্ন খাতে প্রবাহিত করার অপচেষ্টা হয়েছে।

তা সফল হয়নি। যেমনটি হয়নি সাদ্দাম হোসেনকে ফাঁসি দেবার পরও ইরাকে শান্তি প্রতিষ্ঠার প্রচেষ্টা। বিশ্বে আজ ন্যায়ের ধারা প্রতিষ্ঠা করা প্রয়োজন। তা হলে সকল শুভ কর্মের উদ্যোগই ব্যাহত হবে বার বার। নিউইয়র্ক, ৩১ অক্টোবর ২০০৯ -------------------------------------------------------------------- দৈনিক উত্তরপূর্ব ।

সিলেট । ৩ নভেম্বর ২০০৯ মংগলবার প্রকাশিত ছবি- হোসে ডিয়াজ

সোর্স: http://www.somewhereinblog.net     দেখা হয়েছে বার

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।