আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

বিজ্ঞান ও আমাদের বিজ্ঞানী

লেখার কিছু পাই না, তাই আবোল তাবোল লিখি
অবিভক্ত ভারতের অংশ থাকাকালেও, বাংলাদেশে বিজ্ঞান চর্চা ছিল এবং সেসময় যাঁরা বিজ্ঞান সাধনায় ও বাংলায় বিজ্ঞান চর্চায় মনোনিবেশ করেন তাদের গুটি কয়েকের অন্যতম বাংলাদেশি বংশদ্ভুত বিজ্ঞানী জগদীশ চন্দ্র বোস। বিজ্ঞানের নানা শাখায় বিচরণকারী, এই বিজ্ঞানীই প্রথম প্রমাণ করেন উদ্ভিদের প্রাণ আছে এবং মার্কিন বিজ্ঞানী মার্কনির এক বছর আগে বেতার যন্ত্র তত্ত্বের উদ্ভাবন করেন। উদ্ভিদ বিদ্যার গবেষণার জন্য তিনি বোস ইনিস্টিটিউটের প্রতিষ্ঠা করেন যা পরবর্তীতে বিজ্ঞানের অন্যান্য শাখায় গবেষণায় ভূমিকা রখে। এই প্রতিষ্ঠানেই তাঁর সাথে পরিচয় হয়, ফরিদপুরের লনসিংএ জন্মগ্রহণকারি উচ্চতর শিক্ষা বঞ্চিত স্বশিক্ষিত বিজ্ঞানী গোপাল চন্দ্র দাশের। উদ্ভিদ ও ফুলের শংকর তৈরীর গবেষণাকালে, প্রবাসী পত্রিকায় ”জৈবদ্যুতি” নামক লেখাটি জেসি বোসের দৃষ্টি কাড়ে ও সেখানে তিনি ছোট্ট একটি পদে চাকরির পাশাপাশি গবেষণার কাজ চালিয়ে যান এবং ‘আমেরিকান মিউজিয়াম অফ ন্যাচারাল হিস্টরি’সহ ২২টি ইংরেজী জার্নালে গবেষণা-প্রবন্ধ প্রকাশের পর ১৯৫১ সালে প্যারিসে একটি আন্তর্জাতিক সন্মেলনে তাঁর বিখ্যাত প্রবন্ধ “ভারতের সামাজিক কীটপতঙ্গ” উপস্থাপনের আমন্ত্রণ পান।

“বাংলার কীটপতঙ্গ” গবেষণাপত্রটি তাঁর সবচেয়ে বড় কাজ। জেসি বোসের ছাত্র ও ‘বোস-আইনস্টাইন স্ট্যাটিসটিক্স’ খ্যাত বিজ্ঞানী সত্যেন্দ্রনাথ বোস (সত্যেন বোস) ও পুলিন বিহারি দাশের সহায়তায় বঙ্গীয় বিজ্ঞান পরিষদের গোড়াপত্তন করেন এবং সেখান থেকে জনপ্রিয় বাংলা মাসিক পত্রিকা “জ্ঞান ও বিজ্ঞান” এর প্রকাশনায় হাত দেন। গবেষণা ও বিজ্ঞানকে জনপ্রিয় করার ক্ষেত্রে তাঁর বিশেষ অবদানের জন্য দেহত্যাগের মাত্র তিন মাস আগে কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় তাঁকে সন্মানজনক ডক্টরেট ডিগ্রীতে ভূষিত করে। ঢাকা কলেজিয়েট ও কেএল জুবিলি স্কুলের প্রাক্তন ছাত্র এবং জগদীশ চন্দ্র বোসের কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষাজীবনের বিখ্যাত দুই ছাত্রের আরেকজন হলেন মেঘনাদ সাহা, যিনি মহাকাশ পদার্থবিদ্যায় ”আয়োনাইজেশান” ফর্মুলার আবিষ্কারক। পরে পারমাণবিক গবেষণায় সহায়তার জন্য ”ইনিস্টিটিউট অফ নিউক্লিয়ার ফিজিক্স” ( সাহা ইনিস্টিটিউট অফ নিউক্লিয়ার ফিজিক্স) প্রতিষ্ঠা করেন।

এটিই ভারতের আণবিক গবেষণার প্রথম সোপান। পশ্চিমবঙ্গের বীরভুমে জন্মগ্রহণকারি, কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে প্রেমচাঁদ-রায়চাঁদ স্কলার ও বাংলায় বিজ্ঞান চর্চার অন্যতম পথিকৃৎ ডক্টর কুদরাত-ই-খুদা। জৈব রসায়নে রসায়নিক বিক্রিয়ায় প্রথম ”মাল্টিপল রিং” শনাক্ত বিষয়ে গবেষণা করে তিনি ১৯২৯ সালে ডিএসসি ডিগ্রী পান। ভারতে ফিরে প্রেসিডেন্সি ও ইসলামিয়া কলেজ অধ্যাপনা করাকালে, ১৯৪৭ এর দেশ বিভাগের পর বর্তমান বাংলাদেশে চলে আসেন এবং শিক্ষামন্ত্রণালয়ের পরিচালকের দায়িত্ব পান ও ১৯৫৫ সালে ইপিসিএসআইআর ( বর্তমানে বিসিএসআইআর) এর প্রতিষ্ঠাতা পরিচালক হিসেবে দায়িত্ব নেন এবং ১৯৬৬ সাল পর্যন্ত সেখানে থেকে ”জুটেক্স”সহ প্রায় ১৮টি আবিষ্কারের সঙ্গে প্রত্যক্ষভাবে কাজ করেন। সবশেষে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে (১৯৭৫-৭৭) ভিজিটিং প্রফেসার হিসেবে দায়িত্ব পালনকালে সেখানে বাংলায় স্নাতকোত্তর শিক্ষায় মনোনিবেশ করেন।

এছাড়াও, রসায়নের পাঠ্য বইসহ জনপ্রিয় বিজ্ঞান বিষয়ে তার বেশ কিছু বই ও অসংখ্য প্রকাশনা রয়েছে। বাংলাদেশের কুষ্টিয়ায় জন্ম, বহুগুণের অধিকারি কাজি মোতাহার হোসেন ১৯২১ সালে কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনে ঢাকা কলেজ থেকে এমএ পাশ করেন। পড়াশোনার পাশাপাশি পদার্থ বিজ্ঞান বিভাগে ডেমনস্ট্রেটারের চাকরির সুবাদে সত্যেন বোসের সহচার্য্যে আসেন ও পরে সহকারী-প্রভাষক পদে উন্নীত হন এবং তাঁরই উৎসাহে কোলকাতায় সদ্য স্থাপিত পরিসংখ্যান ইনস্টিটিউট থেকে ডিপ্লোমা ডিগ্রী নেন। দেশে ফিরে সেখানে পরিসংখ্যান-এ এমএ ডিগ্রী কোর্স চালু করে শিক্ষকতা করেন ও এক যুগ পর পরিসংখ্যান ইনিস্টিটিউট স্থাপনের মধ্যে দিয়ে এদেশে পরিসংখ্যান বিষয়ে পড়াশোনার ব্যাপ্তি ঘটান। সেই সঙ্গে, বাংলায় বিজ্ঞান চর্চার অংশ হিসেবে গণিত ও আলো (পদার্থ বিদ্যা) বিষয়ক দুটি বইসহ বেশ কিছু প্রকাশনায় হাত দেন।

তিনি জীবনের শেষ ৬টি বছর (১৯৭৫-৮১) জাতীয় অধ্যাপক পদে আসীন ছিলেন। স্বাধীনতাপূর্ব ও পরবর্তী সময়ে সমান তালে জনপ্রিয় বিজ্ঞান নিয়ে যিনি কাজ করেছেন তাঁদের মধ্যে ডক্টর আব্দুল্লাহ আল-মুতি শরফুদ্দিনের নাম প্রণিধান যোগ্য -- তিনি শিশুদের জন্য সহজপাঠ্য বিজ্ঞান বিষয়ক বই এবং বিজ্ঞান ক্লাব আন্দোলন ও রেডিও-টিভিসহ বিভিন্ন মাধ্যমে বক্তৃতার আয়োজনের মধ্যে দিয়ে এদেশে বিজ্ঞানের সেবা করে গেছেন এবং অন্যকে তাতে উৎসাহও যুগিয়েছেন। এই ধারাকে যাঁরা এগিয়ে নিয়ে চলেছেন তাঁদের মধ্যে রয়েছেন ডক্টর এম শমসের আলী, অধ্যাপক জামাল নজরুল ইসলাম, ডক্টর মোহাম্মদ ইব্রাহিম, অধ্যাপক জামিলুর রেজা চৌধুরী, ডক্টর মোহাম্মাদ কায়কোবাদ ও ডক্টর জাফর ইকবাল। তবে, বাংলাদেশের উন্নয়নে বিজ্ঞানের বিভিন্ন শাখায় যাঁরা অবদান রেখে অমর হয়ে আছেন এবং যাঁদের গবেষণার মাধ্যমে আমরা প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে উপকৃত হচ্ছি তারা হলেন : ডক্টর এমও গণি (আই-ই-আর এর প্রতিষ্ঠাতা), ডক্টর এম ইন্নাস আলী (প্রতিষ্ঠাতা চেয়ারম্যান, বাংলাদেশ আণবিক শক্তি কমিশন), জাতীয় অধ্যাপক ডক্টর নুরুল ইসলাম (প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি, ধূমপান বিরোধী জাতীয় প্রতিষ্ঠান ‘আধুনিক ), ডক্টর মুহাম্মাদ ইব্রাহিম (প্রতিষ্ঠাতা, ডায়াটেক নিরাময় জাতীয় সংস্থা ‘বারডেম’), ডক্টর কাজি মোহাম্মাদ বদরুদ্দো‌জা ( মাঠ পর্যায়ে ‘কাজি’ পেয়ারার প্রবর্তক), ডক্টর সুলতান আহমেদ চৌধুরী (বাংলাদেশে শিশু চিকিৎসার স'পতি ও বাংলাদেশে শিশু হাসপাতালের প্রতিষ্ঠাতা), জাতীয় অধ্যাপক একেএম আমিনুল হক (উপমহাদেশে ১ম ফিশারিজ ফ্যাকাল্টির প্রতিষ্ঠাতা ও বাংলাদেশ ফিশারিজ গবেষণা কন্দ্রের পুরোধা), ডক্টর এএম চৌধুরী (সাইক্লোন, বন্যা ও খরা পূর্বাভাষ পদ্ধতির উদ্ভাবক), ডক্টর এমএ হামিদ মিঞা (প্রাকৃতিক উপায়ে আঁখের রোগ নিরাময়ের পদ্ধতির উদ্ভাবক), অধ্যাপক হাজেরা মাহতাব (ডায়াবেটিক রোগে খাদ্য জটিলতা দূর করা এবং সারাদেশে এই রোগের প্রকৃতি নির্ণয়ের গবেষণায় নিয়োজিত), ডক্টর কে এম সুলতানুল আজিজ ( বিশ্বব্যাপী ওরাল ডিহাইড্রেশান থেরাপি জনপ্রিয়করণ), অবসরপ্রাপ্ত মেজর জেনারেল অধ্যাপক এএসএম মতিউর রহমান ( প্রধান এইচআইভি এ্যাডভাইজার) ও অধ্যাপক এম সলিমুলস্নাহ ( পদার্থ বিদ্যায় গবেষণার জন্য ইসেস্কো পুরস্কার-২০০৩, তেহরান) ।
 



এর পর.....

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।