আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

গল্পঃ সে সময় বালিশের নিচে মুখ লুকাতাম

কত কিছু যে করতে চাই, তবুও কিছু করতে না পারার দায়ে মাথা খুঁটে মরি ।
যখন আমার জন্য “আমি” স্বত্তাটার ঠিক শুরু, যখন পড়ার টেবিলের ড্রয়ারটা, খেলার মাঠ আর তিন গোয়েন্দা ছাড়াও নিজের আলাদা একটা জগৎ নিজেই গড়ে তুলতে পারলাম, যখন আমি টের পেলাম যে আসলে এটা “আমি”। তখন থেকেই আমি মাঝে মাঝে বালিশের নিচে মুখ লুকিয়ে বসে থাকতাম। আসলে ঘুরে ফিরে সেই একই কথা আর একই লাইন। তাও কথা পরিষ্কার হল না।

যেটা বলতে চাচ্ছি সেটা হল, যখন আমি প্রথমবারের মত নিজের জন্য একটা কিছু কল্পনা করতে পারলাম, সেই ছোট্ট সময় থেকেই সবার আড়ালে যাবার একটা মানসিকতা কাজ করত আমার মাঝে। একেবারে নিজের মত কল্পনা, অর্থাৎ, ছোট্টকালে চিন্তাভাবনায় সুপারম্যান আর স্পাইডারম্যান প্রভাব ছাড়িয়ে আরও একটু বড় হবার পর আলাদিনের মতন দৈত্য পেলে কী করতাম, সেটাও ভাবার পর যখন এরকম একেবারে নিজের মত কল্পনা করার বয়স হল, সেই সময়টাতেও মাঝে মাঝে বালিশের নিচে মুখ লুকিয়ে শুয়ে থাকার স্বভাবটা যায় নি। অনেক আগেই এটা অভ্যাস হয়ে দাঁড়িয়েছে । এখনও রাতে বা সকালে যখন শুয়ে থাকি, পাশ ফিরে শুয়ে মাথার উপর একটা বালিশ দেই। আলাদিনের দৈত্য পেলে কী করতাম, সেটা ভাবতাম যে সময়, সেই ছোট বেলার সুড়সুড়ি ছিল এক কাজিন, আমাকে বলত, “এই তোকে ত বিয়ে করা যাবে না।

তুই এভাবে বালিশের নিচে মাথা দিয়ে ঘুমালে তোকে তোর বউ কিস দিবে কী করে?” আমি তখন তাড়াতাড়ি গাল ফুলিয়ে বলতাম, “ধূর, আমি জীবনেও বিয়েই করব না। ” তখন সেই কাজিন এমনভাবে ঠোঁট মুড়ে হাসত যেন আমি কত ছোট! ও প্ল্যান করত, আমরা বিয়ে করার পর মার্কেট থেকে অনেক সুন্দর একটা বাবু কিনে আনব। এখন সেসব কথা মনে হলে বুঝি, সেও আসলে খুব বেশি বড় হয় নি তখনও। .......... [ ৫ সপ্তাহ আর ৪ মোট ৩৯ দিন। এই শিশুটার জন্ম আজকে নিয়ে ৩৯ দিন।

পিচ্চীটা একদম লাল। আমি ওকে ডাকি লাল্টু মিয়া। সাদা আর হলুদের কারুকাজ করা বিছানার চাদরে ওকে দেবদূতের মত লাগছে। আজকে বাসায় শুধু পিচ্চী আর আমি! আর, ওর পাশে দুটো কোলবালিশ। তার পাশে আরও কিছু বালিশ ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছে।

মাঝে মাঝে মনে হয়, পিচ্চীরা শিশুগুলা দুনিয়ায় সবচেয়ে সুন্দর কিছু! ] .......... পুরো স্মৃতিটা খেয়াল নেই। একবার ও আর আমি আমাদের পুকুরে সন্ধ্যাবেলা গোসল করতে গিয়েছিলাম। ও মানে আমার সেই কাজিনটা। ওর নাম রিমি, আমি ডাকতাম ঢুমি। সেই সময়েই।

তখনও এ ধরণের ব্যাপার সম্পর্কে আমাদের কারও ধারণা নেই। তাও আমি যেতে চাইনি, আম্মু ছাড়া গোসল করতে ভয় লাগত তখন। ছোট ছিলাম ত! ও জোর করেই নিয়ে গেল। গোসল করতে যেয়ে নিজের শরীরের এই স্বাভাবিক আকস্মিক পরিবর্তনে আমি ভয় পেয়ে কেঁদেই দিলাম। আর রিমিও ব্যাপারটা ঠিক বুঝে উঠতে পারে নি।

সে কিছু না বুঝেই আমার এই পরিবর্তনের নিদর্শন মুঠো পাকিয়ে ধরে। আমিও প্রতিশোধ নিতে ওরও কিছুতে হাত দেই। একটু পরে আমার মনে হল কোথাও কিছু একটা ঠিক হচ্ছে না। আমি লাফ দিয়ে সরে আসি। আমি তাড়াতাড়ি প্যান্ট পড়ে ও কাছে আসার আগেই প্যান্টের চেইন টেনে দেই।

আর কিছু ভাবার আগেই বের হয়ে আসে আমার গগনবিদারী চিৎকার। প্যান্টের চেইন স্বাভাবিক ভাবেই ফেঁসে গেছে। আটকে গেছে ভাল মতই। সেবার আরও কী যেন হয়েছিল, মানে দুই ফ্যামিলির মানে, আমার আর রিমির ফ্যামিলির মাঝে কিছু একটা নিয়ে ঝগড়াঝাটি হয়েছিল বোধহয়। অবশ্যই অন্য কোন কারণে।

আমাদের এই ঘটনা শুধু আমরাই জানতাম। যা হোক, তখন আমার এই চিৎকারের কারণে খুব দ্রুত আমাকে সদরে নেয়া হয়। সেখান থেকে ঢাকা। সোজা বাসা। হ্যা, আমার বাসা মানে আমার পড়ার টেবিল যার ড্রয়ারে তার একবছর পরে তিন গোয়েন্দা লুকিয়ে রেখেছি।

.......... [ এই লাল্টু মিয়া খালি মুখের মধ্যে আঙ্গুল ভরে। লাল মাড়ি দিয়ে আঙ্গুল কামড়ায়। ওকে খুব আদর করতে ইচ্ছা করে আমার। কোলে উঠিয়ে নেই। দুটো বালিশ জড়ো করে তার উপর শোয়াই।

কপালে একটা চুমু দেই। আম্মা বলে গেছে ভাল মত খেয়াল রাখতে ও যেন মুখে আঙ্গুল না দেয়। নইলে পরে পেট ব্যাথা করতে পারে। আমি সারাটা সময় ধরে ওর মুখ থেকে আঙ্গুল নামাতে নামাতে ক্লান্ত হয়ে পড়লাম। ] .......... মাঝে মাঝে আগের কথাগুলো হঠাৎ মনে পড়ে।

এরপর আস্তে করে তা ভুলে যাই। কারণ, এরপরে বেশ অনেকদিন গ্রামে যাওয়া হয় নি। অনেক দিন। এই অনেকদিনের মাঝে কত তিন গোয়েন্দা ড্রয়ারে আসল আর গেল। পরে মাসুদ রানা আর মাঝে শ্রীকান্ত।

ড্যান ব্রাউন আর হ্যাগার্ড। আর অনুবাদ। আহ, এরিক মারিয়া রোমার্ক। বালিশের নিচে মুখ লুকিয়ে শোয়াটা ছিল আমার নিজের একটা জগৎ। এখানে আমি হতাম কাহিনীর বিশালবপু মাসলম্যান নায়ক।

আর আমার সাথে থাকত একটা হালকা গোলাপী শাড়ী পড়া একটা মেয়ে। এই মেয়েটা হত খুব ছিপছিপে আর দারুণ সুন্দরী। বেশিরভাগ সময়েই এরা হত কোন না কোণ বিজ্ঞাপণী মডেল। আসলে এই সব কল্পনার শুরুটা হয়েছে আগেই। আলাদিনের দৈত্যের কাছে কী কী চাবো যখন ঠিক করতাম, তখনও জেসমিন হয়ে পাশে থাকত কল্পনার কেউ।

আবার যখন, তিন গোয়েন্দা পড়তাম, তখনও কল্পনায় সে বিপদজনক মুহূর্তে আমার জন্য এগিয়ে আসত। মাসুদ রানার সময় সে চট করে আমার অনেক কাছে এসে পড়ে। আর শ্রীকান্তর সময় সে হয়ে যায় আমার সব, আমার রাজলক্ষী। এই জগতে সবসময়েই আমার একগাদা বন্ধু থাকত, যারা সেই মেয়েটির কাছে আমার অনেক গুণকীর্তন করত। আমি কী সব ভয়ংকর মিশন শেষ করলাম, এই টাইপ গল্প করত।

আরও এমন অনেক সিনেমেটিক স্বপ্ন ছিল সে সময়। আহা। মাঝে একটা সময় ভেবেছিলাম, আসলে এই ত ভাল। নিজের মত একটা জগৎ। শুধু একটু ভাবলেই হয়, ভাবনাতেই আমার আশেপাশে স্বপ্নেরা ভীড় করে।

হঠাৎ এই কথা মনে হওয়ার কারণ হল, যতটুকু মনে হচ্ছে পুরো বিষয়টা আসলে তার চেয়ে একটু বেশি গুরুত্বপূর্ণ ছিল। আমি যখন সবার দেখাদেখি সিগারেট ধরতে যাবো, তখন সেই কল্পনার চরিত্রটাই বাঁধা দিত। যার কারণে সিগারেট আর ধরাই হল না। পুরো ব্যাপারটা মিলিয়ে মোটামুটি আমার কল্পনার এই গোলাপী শাড়ি মেয়েটা আমার ইচ্ছার প্রতিফলন ঘটাত সবখানেই। এভাবে দিন দিন তার চরিত্র আরও পরিষ্কার হতে লাগল।

তার চেহারা কয়েকদিন পর পর পাল্টাত। কিন্তু সেই মিষ্টি সাদা গোলাপী শাড়ী পরিয়েই তার সাথে আমি গাড় সন্ধ্যায় বেড়িবাঁধে বেড়াতে যেতাম। বালিশের নিচে মুখ লুকিয়ে দেখা স্বপ্নগুলোর মাঝে কখনই সেই কাজিন আসে নি। একবারের জন্যেও না। এরকম চঞ্চল কোন মেয়েও আসে নি।

আমার দেখা মেয়েগুলো ছিল শান্তশিষ্ট। বড় বড় চোখ। নিটোল গাল। .......... [লাল্টু মিয়া একেবারেই পুতুলের মত। কিন্তু কোন পুতুল কী এত সুন্দর করে হাসতে পারে ! তার পায়ে সুড়সুড়ি দিলাম কিছুক্ষণ।

একটু বেশি দিলেই কান্না শুরু। আর পেটের মাঝে আঙ্গুল ঘষলেই ফ্যাক ফ্যাক হাসি। কোমরের দিকটায় আঙ্গুল ঘুড়িয়ে নিলে খুশিতে এঁয়াঁও করে আওয়াজ করে। হা হা হা। আসলে এটা ঠিকই দেবদূত।

তবে যদি একবার কান্না শুরু করে তখন সত্যিকার দেবদূত এসেও ওকে থামাতে পারবে না। ] .......... আরো পরে, আরও অনেক পরে সব কল্পনা হারিয়ে যায়। নিজের অজান্তেই। এখন বালিশের নিচে মাথা দিলেই ঘুম। সকালে উঠে দৌড়।

হঠাৎ আগের কথা খেয়াল হলে নিজে নিজে হেসে ফেলা। আসলে সত্যিকারের বাস্তব গোলাপী শাড়ী পরিহিতাদের থেকে অনেক দূরে সরে গিয়েছিলাম। কারণ, এদের কেউ যে আমার কল্পনার সাথে মিলত না। বড় জীবনের ব্যস্ততায় সবার সাথে মিশে যাই আবার। কাউকে কাউকে জীবনেও মিশিয়ে নেই।

বিশেষ কেউ। যার সাথে কল্পনার সেই মেয়েটির কোন মিলই নেই। সে নতুন কল্পনা, আর আমার নতুন স্বপ্ন। এখন স্বপ্ন অনেক দেখি বটে, কিন্তু আর ভেবে ভেবে স্বপ্ন দেখা হয় না। কষ্ট করে আর একা একা ভাবতে হয় না।

যা যা ভাবি এখন দুজন মিলেই ভাবি। আমি আর ও। তাকে গোলাপী রঙে একেবারেই মানায় না। আমি বলেছিলাম একবার পড়ে আসতে। এরপরে আমিই না বলে দিয়েছি, “ তুমি পড়বে নীল।

আমার নামের সাথে ম্যাচিং করে। ” আমরা একসাথে মাঝে মাঝে রিকশা করে বেড়াই। ঘণ্টা চুক্তিতে রিকশায় ঘুড়ি। তিন ঘণ্টা বা কিছু কম সময়। এখানে সেখানে প্ল্যান করে যাওয়া আসলে কম হয়।

বাসা থেকে এত সময় তাকে এমনি এমনি বাইরে থাকতে দেয় না। আর পুরোদমে যখন আমার ক্লাস শুরু হয়ে যায়, ওর চেয়ে আমি নিজেই বেশি ব্যস্ত। এর মাঝে পড়ার টেবিলের ড্রয়ারে আর কোন গল্পের বই রাখা হয় না। টেবিল বদল হয়েছে, আর ছোটবেলার স্বভাবগুলোও। টুকিটাকি কলম, ইরেজার, পেন্সিল।

এই ত। যা থাকে এখন ওয়ারডরোবের উপরেই থাকে। বই, মুভি, খাতা, মুঠোফোন, মুঠোফোনের কার্ড, স্বপ্ন। মাঝে মাঝে আমি ওর থেকে চিঠি পেতাম, যদি কোন্দিন আমি ওর উপর খুব রাগ করতাম, সেদিন। মিষ্টি সাদা গোলাপী রঙের কাগজে হাতে লেখা চিঠি।

ঘ্রাণটা বুক ভরে নিতাম। মনে পড়ছে এখন খুব। .......... [ লাল্টু মিয়ার সাথে ওর বাপ নাকি মা, কার বেশি মিল ? আসলে একেবারে ছোট মানুষ ত। এখনও ঠিক বোঝা যায় না। তবে, আমি অবশ্য চেঁচামিচি করি যে, আমার সাথেই বেশি মিল।

কী জানি ! এত ছোট বাচ্চাকে ঘাড়্ব্বেও নেয়া যায় না। নইলে ওকে সারাদিন ঘাড়ে নিয়ে বাইরে বাইরে ঘুরতাম। ] .......... ওয়ার্ডরোবের উপরে একগাদা মোবাইলের কার্ড, বই আর মুভির সাথে একদিন আরও একটা আইটেম যোগ হয়। একটা বিয়ের কার্ড। কাজিনের।

রিমির। গ্রামে বিয়ে একটু আগেই হয়, আর ও ত এমনিতেও আমার চেয়ে অল্প কিছু বড় ছিল। অনেকদিন পরে সব মিটে গিয়েছে দুই পরিবারের। মতের মিল হয়ত এখনও দুই পরিবারের পুরোপুরি হয়নি, কিন্তু মনের মিল হয়ে গেছে। একটা বিয়ে ত! আমাদের বাসাতেই সব অনুষ্ঠান হবে।

আংটি বদল থেকে বাসর পর্যন্ত, দুই সপ্তাহ বাসা থাকবে জমজমাট। চাচারা আরও আগেই এসে পড়ে। সব মিলিয়ে বোধহয় আমাদের বাসায় সবাই থাকবে এক মাস। সমস্যা নেই। আমাদের বাসাটা যথেষ্ট বড়।

দুটো ফ্ল্যাট মিলিয়ে বানানো। রিমির ছোট বোনের সাথে এখন আমার খুব খাতির। প্রভা। নামটাই প্রথমে খুব পছন্দ হয়ে গিয়েছিল আমার। বয়সটাও মানানসই।

আমার চেয়ে দুই বছরের ছোট মাত্র। তার কাছে ওর কথা বলিনি। কেন যেন মনে হয়েছিল, আমার যে রিলেশন আছে বলার দরকারটাই বা কী ! আর, প্রভার সামনে ওর কলও ধরি না। পরে ওকে বলে দেই কাজ ছিল, বিজি ছিলাম। মাঝে মাঝে প্রভার উচ্ছ্বলতার ভিতরে অল্প কিছু ইঙ্গিতও খুঁজে পেতাম যেন! ওর বয়সটাই ত তাই, আর আমারটাও।

আর ওর বড় বোনকে সযত্নে এড়িয়ে চলি। হাই হ্যালো, ব্যাস কথা শেষ। আর প্রভার সাথে গা লাগিয়ে বসি। গ্লাসে অর্ধেক পানি খেয়ে সেটা ওর দিকে এগিয়ে দেই। ও শেষ করে দেয়।

এক কাপ চা একটা কাপেই ভাগাভাগি করে খাই। সন্ধ্যাবেলা ছাদে যাই। রাতে তারা দেখি। কোন একদিন বোধহয় হাত ধরেছিলাম। কিছু পরে হয়ত জড়িয়েও ধরেছিলাম।

দুজোড়া ঠোঁট ছুঁয়েছিল একে অপরকে। ব্যাপার না। কিছুই না, এর বেশি যাওয়ার সাহস পাই নি আমি। আসলে সাহস আমার কম নেই, কিন্তু ভিতর থেকে সাপোর্ট আসে না। খাটে মুঠোফোন ফেলে এসেছি।

এখন ত ওর কল দেবার কথা। প্রভা আমার দিকে তাকিয়ে বিদ্রুপের হাসি দেয়, বিরক্ত হয়। আমি রাতের তারা না দেখেই ফেরত আসি। মুঠোফোনে ১৪ টা মিসড কল। ওর কল।

“ কী ব্যাপার? ” “ কিছু না এমনিই খুব কথা বলতে ইচ্ছা করল। ইদানীং তোমাকে কল দিলে তুমি এমন কর কেন? ” একটা দীর্ঘশ্বাসের শব্দ সেলফোনের মাধ্যমে আদান প্রদান হয়। আমি জানি না, শব্দটা কোন পক্ষের, অথবা হয়ত দুই পক্ষেরই। ছোটবেলার সুড়সুড়ি সেই কাজিনের বিয়ে হয়ে যায়। রিমির বিয়ে, ভাবতেই কেমন যেন লাগে।

সেদিনের পুঁচকি মেয়েটা। যদিও তখন আমার চেয়ে একটু বড় ছিল, তাও সেদিন কেমন যেন খুব মায়া লাগল হঠাৎ। রিমিরা চলে যায়। ওর ছোট বোন একবার একটা ম্যাসেজ দিয়েছিল, “ ছিঃ, কাপুরুষ। ” বালিশে মুখ লুকিয়ে শোয়ার অভ্যাস তখনও আমার যায় নি।

শুধু ভাবনাগুলো কেমন প্যাঁচ খেয়ে থাকত। .......... [ কলিংবেলের শব্দ শুনে কে এসেছে দেখতে গিয়েছিলাম। ভাবলাম উঠেই যখন গেছি, গোসলটাও সেরে আসি। গোসল শেষে এসে দেখি পিচ্চী ঘুম। অভ্যাসবশত মুখে আঙ্গুল দিতে সে ভুল করে নি।

এখন আর আঙ্গুল সরালাম না। যদি ঘুম ভেঙ্গে যায়? ও ঘুমাক। আমি কিছু খেয়ে আসি। আমি ওর পাশে আরও কয়েকটা বালিশ জড়ো করে দিলাম। আরামে ঘুমাক।

] .......... একবার একটা চিঠি পেয়েছিলাম। না একটা না, দুটা। একটা তে লেখা ছিল, “ প্লিজ আমাকে ক্ষমা করে দিও। আমি কীভাবে যেন আরেকজনের সাথে জড়িয়ে গেছি। ওকে ছাড়া আমি ভাবতে পারছি না কিছু।

কোন একটা অসাবধানতার সময়ে অনেক কিছু হয়ে গেছে, অনেক কিছুই, এখন পিছু ফেরা সম্ভব না। ” মিষ্টি সাদা গোলাপী রঙের কাগজে হাতে লেখা চিঠি। হাতে নিয়ে দাঁড়িয়ে থাকলাম। মাঝে মাঝে ওসব কথা মনে হলে একোটা ভাবনা আসে। ভাবি যে কাগজটার যদি ছায়া না পড়ত, অথবা আমারই যদি ছায়া না থাকত ! আরেকটা চিঠি পেয়েছিলাম।

আসলে এই চিঠিটা প্রথম চিঠির পরেই পেয়েছিলাম, কিন্তু কাহিনীটা প্রথম চিঠির আগের। এখানে কী লেখা আমার কাছে পরিষ্কার না। চিঠিটা রিমির। “ তুমি সেদিন এভাবে কাঁদলে কেন? আমি না তোমার বড় বোন? আর এখন আমার বিয়ের সময় ভোর ৫ টায় এভাবে জড়িয়ে ধরে কান্নার মানে কী? তখন কোন কথা বললে না কেন? সারাটা মাস ত একটাবারের জন্যেও চোখ তুলে তাকাও নি। বিয়ের ১২ ঘণ্টা আগে কী হয়ে গেল তোমার? এমন করলে চলে? আর যদি ভুলেও ওমন করে আত্মহত্যার কথা বল, আমি কিন্তু খুব খুব রাগ করব।

আমাকে কী রাগাতে চাও বল? অনেকদিন ত হল, ভেবেছিলাম কোন চিঠি দিবো না। তাও আজকে দিলাম। আর সেদিনের মত অসময়ে ভুলেও ছাঁদে উঠবে না। তুমি কখন কি করে ফেল বলা যায় না। প্লিজ, কথাটা রাখো।

আমি না তোমার বড় বোন? আমার কথা শুনলে সেটা খারাপ কিছু না। জান, মাঝে মাঝে না হঠাৎ কিছু স্বপ্ন দেখি। থাক, এসব কথা বলে লাভ নেই। তুমি ভাল থেকো। ” মজার ব্যাপার, আমার স্মৃতিতে পুরো ঘটনার কিছুই নেই।

একেবারেই নেই। কার স্মৃতি ধোঁকা দিল? আমার নাকি ওর? .......... [খেয়ে দেয়ে টিভি দেখে এতক্ষণ পরে এসেও দেখি লাল্টু মিয়া ঘুমাচ্ছে। অনেকক্ষণ ধরে সময় নিয়ে শেইভ করেছি একটু আগে। আয়নায় নিজেকে খুটিয়ে খুটিয়ে দেখলাম আমি। মাঝে মাঝে খুবই বিরক্ত হই।

আজকে কেমন যেন লাগলো। এতটা খারাপ বোধহয় না। জানালার পর্দা সরানো। লাল্টু মিয়ার মুখে আলো পড়ছে। ওর বাবা কী কাজে আছে নারায়ণগঞ্জ।

ওর মা আর আমার মা গেছে বাইরে, এক আত্মীয়ের বাসায়। আমি পর্দাটা সরিয়ে দিতে গেলাম। ওখান থেকে ওর দিকে তাকিয়ে চমকে উঠলাম। এভাবে কখনও ত খেয়াল করিনি ব্যাপারটা। আমি ওর দিকে এগিয়ে গেলাম।

] .......... আজ এক বছর পর, ওরা খুবই সুখী। আমার কাজিন রিমি আর তার হাজব্যান্ড। দেখে বুঝি। ওদের খুব সুন্দর একটা বাচ্চা হয়েছে। এত্ত ছোট্ট।

দেখে এত যে কিউট লাগে। প্রথম দিন হাসপাতালে দেখে এসেছি। আমি নাম দিয়েছি লাল্টু মিয়া। একদম লাল তো ! ৫ সপ্তাহের মাথায় আমাদের বাসায় এসেছে। এখানে ১ সপ্তাহ থাকবে মা আর ছেলে।

আজকে নিয়ে ৪ দিন হল। এখানেই শেষ। আমি কী করলাম আমি নিজেও জানি না। ছোট্ট একটা বাচ্চা। হঠাৎ মনে হল ওর সাথে আমার এত মিল কেন? এত বেশি মিল কেন? কোমড়ের নিচের তিলটাও তাই বলে মিলে গেল? একই রকম! আমার পাওয়া চিঠির আড়ালে কী এই রকম কিছুই ছিল? শুধু স্মৃতির ধোঁকাই কী এত বাস্তব রূপ নেয়! ও কী আমার মত হবে? আমার মত বালিশের নিচে মুখ লুকিয়ে স্বপ্ন দেখবে? আমি যেভাবে দেখতাম? আমি কীভাবে দেখতাম? একটা বালিশ থাকত আমার মাথার উপর।

যেভাবে আমি বালিশটা ধরছি শিশুটার উপর। আমার মাথায় বালিশের চাপ থাকত না। কিন্তু মাথাটা শত ভাবনায় ভারী হয়ে থাকত। ভাবনার চাপ। এত ছোট শিশু ওভাবে ভাবতে পারবে না, কিন্তু তাও ওর মাথায় চাপটা থাকা দরকার।

আমি আস্তে আস্তে বালিশের উপর চাপ বাড়াই। দেবদূত একটু যেন নড়তে চায়। কেন যেন ওকে সে সুযোগটা দিতে ইচ্ছা করছে না। ওর পা নড়ছে, আমি আরও চাপ বাড়ালাম। © আকাশ_পাগলা [ এই লেখাটায় আসলে একটা ফরম্যাট নিয়ে এক্সপেরিমেন্ট করতে চাচ্ছি।

একবার ইচ্ছা হয়েছিল গল্পটাকে একটা উপন্যাস বানিয়ে দেই। কিন্তু আমি এখনও অত বড় কিছু হই নি যে উপন্যাস লিখতে পারব। কাহিনীর প্রতিটা টার্মের বর্ণনা দেয়ার ইচ্ছা ছিল। ভিতরে হয়ত আরও কিছু কাহিনী রাখতাম, সাথে আরও কিছু বর্ণনা। শেষ আর স্টাইলটা হয়ত এমনই হত।

কিন্তু নিজের লেখার ক্ষমতার উপর এতটা ভরসা না পাওয়ায় সেই চেষ্টায় পানি ঢেলে দিলাম। “আমার বিভাগ” বানানোর সময় গল্প বাছতে যেয়ে দেখি আমি মোটামুটি দুই টাইপের গল্প লিখেছি। একভাগে শুধুই ভাবনা গুলো সাথে এক লাইনের কাহিনী আরেক ভাগে উল্টোটা। মনে হল, দুটোই সমান সমান দিয়ে কিছু একটা করার চেষ্টা করব। তার ফলস্বরূপ এই ব্যর্থ গল্প।

এত বড় গল্প যারা কষ্ট করে পড়েছেন, তাদের আগাম ধন্যবাদ। ] (কাহিনী হুবহু একই রেখে আরও একটু মার্জিত করা হল। ৭ই নভেম্বার রাত ১০টা ২০ মিনিট। ) আরো কিছু কিছু ছোট ছোট চেষ্টা Click This Link
 

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।