আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

যুদ্ধের ময়দানে যুক্তরাষ্ট্রকে রেখে কেটে 

সিরিয়ার বিরুদ্ধে যুদ্ধের ময়দানে যুক্তরাষ্ট্রকে নিঃসঙ্গ করে তার অন্যতম মিত্র যুক্তরাজ্য ও ফ্রান্স পিছুটান দিয়েছে। আক্রমণে যাচ্ছে না বলে সাফ জানিয়ে দিয়েছে জার্মানি। একই সময়ে রাশিয়া ও চীন নিয়েছে প্রেসিডেন্ট বাশার-আল আসাদের পক্ষ। যুক্তরাষ্ট্রের প্রতি হুঙ্কার অব্যাহত রেখেছে মুসলিম বিশ্বের ইরান ও সঙ্গীরা। এত কিছুর পরও মার্কিন কংগ্রেসে গোয়েন্দা প্রতিবেদন উত্থাপন করে এর ভিত্তিতে একা লড়াইয়ের ইঙ্গিত দিয়েছে ওবামা প্রশাসন। তবে প্রশ্ন আছে যুক্তরাষ্ট্র সরকারের সমর্থনপুষ্ট বার্তাসংস্থা সিএনএনের প্রতিবেদনে। বলা হয়েছে, 'বর্তমান বাস্তবতায় জোট ছাড়া যুদ্ধ যে সম্ভব নয় তা খুব ভালো করেই জানে ওয়াশিংটন। আর পিছু হটাও সম্ভব নয়। তাহলে এখন যুক্তরাষ্ট্রকে সমর্থন করবে কে?' সব মিলিয়ে বিশ্ব-রাজনীতি এক নতুন সমীকরণ দেখতে যাচ্ছে বলে মনে করছে বিশ্লেষকরা।

বিবিসি জানিয়েছে, গ্রীষ্মকালীন ছুটির মধ্যেই ব্রিটিশ পার্লামেন্টের নিম্ন কক্ষ হাউস অব কমন্সের বিশেষ অধিবেশন ডেকেছিলেন প্রধানমন্ত্রী ডেভিড ক্যামেরন। ইস্যু সিরিয়ায় সামরিক অভিযান। এ নিয়ে বিরোধী দলের ব্যাপক সমালোচনায় পড়েন প্রধানমন্ত্রী। ক্ষমতাসীনদের অনেকে সিরিয়ার আক্রমণের বিরুদ্ধাচরণ করে। ফলে ফল যা হওয়ার তাই হয়। নীতিগত সমর্থনের প্রস্তাবের বিপক্ষে ভোট পড়েছে ২৮৫টি। পক্ষে ১৩ ভোট কম অর্থাৎ ২৭২টি ভোট।

পার্লামেন্টে তুমুল সমালোচনা হয়েছে ডেভিড ক্যামেরনের ভূমিকার। কারণ ক্যামেরন সিরিয়ায় সামরিক অভিযানের পক্ষে বেশ সক্রিয় ছিলেন। তবে ভোটের পর ফলাফল মেনে নিয়ে বক্তব্য দিয়েছেন ক্যামেরন। বলেছেন, সিরিয়ায় রাসায়নিক অস্ত্র ব্যবহার করে যে হামলা চালানো হয়েছে তার বিরুদ্ধে শক্ত অবস্থান নেওয়া খুবই প্রয়োজন বলে আমি মনে করি। তবে এটা স্পষ্ট যে ব্রিটিশ পার্লামেন্ট কোনো ধরনের সামরিক অভিযান চায় না। ব্রিটিশ নাগরিকদের ভাবনাই এ রায়ে প্রতিফলিত হচ্ছে। আর তাই পার্লামেন্টের সিদ্ধান্তের প্রতি সম্মান রেখে সে অনুযায়ী কাজ করবে সরকার। বিবিসি বলছে, এই রায়ের মাধ্যমে যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে সিরিয়ায় আক্রমণে ব্রিটেনের থাকার বিষয়টি বাতিল হয়ে গেল। সেই সঙ্গে ক্যামেরনের নেতৃত্ব নিয়েও প্রশ্ন উঠল এবং যুক্তরাষ্ট্র ও তার মিত্র দেশগুলোর সঙ্গে সম্পর্কের জটিলতাও তৈরি হতে পারে বলেও মত দিয়েছে বিবিসি। ওয়াশিংটন পোস্টের খবরে বলা হয়েছে, জাতিসংঘের পর্যবেক্ষকদের প্রতিবেদনের অপেক্ষা না করে গত বৃহস্পতিবারই অভিযানের ইঙ্গিত দিয়ে ভূমধ্যসাগরের সিরীয় উপকূলে রণতরী পাঠিয়ে ছিল ফ্রান্সের প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়। কিন্তু ব্রিটেনের পার্লামেন্টে হামলাকে না বলার পর ফরাসি দৈনিক লা মঁদকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে ফ্রান্সের প্রেসিডেন্ট ফ্রাঁসোয়া ওঁলাদ বলেছেন, রাসায়নিক অস্ত্র ব্যবহারে সরকারি বাহিনীর সংশ্লিষ্টতার প্রমাণ পাওয়া ছাড়া এ ব্যাপারে কোনো সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে না। রয়টার্স জানিয়েছে, জার্মান পররাষ্ট্রমন্ত্রী গুইডো ওয়েস্টারওয়েল্লে সংবাদ মাধ্যমকে বলেছেন, সিরিয়া অভিযানে জার্মানির যোগ দেওয়ার কোনোই সম্ভাবনা নেই। কারণ এ ধরনের সামরিক হামলার জন্য আমরা কখনো আহ্বানও জানাইনি অথবা এ ধরনের হামলার কথা বিবেচনাও করিনি। আল জাজিরার বিভিন্ন প্রতিবেদনের তথ্যানুসারে, সিরিয়ায় হামলা চালালে তা প্রতিরোধে রাশিয়া যে দুটি যুদ্ধজাহাজ পূর্ব ভূমধ্যসাগরে পাঠিয়েছে সেগুলোর রণসজ্জা বাড়ানো হয়েছে। বিমান হামলা চালালে পরিণতি ভালো না হওয়ার হুমকি আবারও দিয়েছে চীন। চীনের পররাষ্ট্রমন্ত্রী সংবাদ সম্মেলন করে বলেছেন, সিরিয়ায় বাইরের হস্তক্ষেপ হবে জাতিসংঘের নীতিমালার সরাসরি লঙ্ঘন। লেবানন ও জর্ডান বলেছে, সিরিয়ায় সামরিক হস্তক্ষেপের জন্য লেবাননের আকাশসীমা ও জর্ডানের ভূমি ব্যবহার করতে দেওয়া হবে না। পশ্চিমা দেশগুলোর সিরিয়া আক্রমণকালে ইসরায়েলকে সংযত থাকার আহ্বান জানিয়েছে উপসাগরীয় দেশগুলো।

একা লড়তে চায় যুক্তরাষ্ট্র : ব্রিটেনের পার্লামেন্টের পক্ষ থেকে নেতিবাচক বার্তা পাওয়ার পরও মার্কিন কর্মকর্তারা বলছেন, যুক্তরাষ্ট্র তার সর্বোচ্চ আগ্রহ নিয়েই সিরিয়া সংকট দূরীকরণে কাজ করবে। প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামার কার্যালয় হোয়াইট হাউসের পক্ষ থেকে বলা হয়, সিরিয়ায় রাসায়নিক অস্ত্র ব্যবহারের জন্য প্রেসিডেন্ট বাশার আল-আসাদ বাহিনী দায়ী। আর যারা আন্তর্জাতিক আইন লঙ্ঘন করে রাসায়নিক অস্ত্র ব্যবহার করেছে তাদের জবাবদিহিতার মুখোমুখি দাঁড় করানো দরকার। মার্কিন প্রতিরক্ষা মন্ত্রী চাক হেগেল বলেছেন, সিরিয়া সংকট মোকাবিলায় স্বেচ্ছায় কাজ করতে ইচ্ছুক এমন ?আন্তর্জাতিক মিত্র খুঁজে যাবে যুক্তরাষ্ট্র। মার্কিন জাতীয় নিরাপত্তা পরিষদের মুখপাত্র কেটলিন হেডেন এক বিবৃতিতে বলেছেন, পার্লামেন্টে ভোটাভুটির ফল নেতিবাচক হওয়ার পরও প্রধান মিত্র ব্রিটেনের সঙ্গে আলোচনা চালিয়ে যাবে যুক্তরাষ্ট্র। এদিকে ওয়াশিংটনে ওবামা প্রশাসনের কর্মকর্তারা কংগ্রেসের জ্যেষ্ঠ সদস্যদের কাছে অভিযানের পক্ষে তাদের যুক্তি উপস্থাপন করতে যাচ্ছেন। সামরিক অভিযানের পক্ষে তারা গোয়েন্দা প্রতিবেদনও পেশ করবেন।

সোর্স: http://www.bd-pratidin.com/

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.