আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

আগামী সপ্তাহে মাঠে নামছেন খালেদা জিয়া

নির্বাচনকালীন সরকার নিয়ে ক্ষমতাসীনদের সঙ্গে এখন আর সংলাপ নয়, রাজপথে আন্দোলনের মাধ্যমেই সমাধান চায় বিএনপি। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বক্তব্যের পর দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচন নিয়ে সংলাপ প্রক্রিয়া ভেস্তে গেছে বলে মনে করে দলটি। তাই ৫ জানুয়ারি ভোটের দিন পর্যন্ত টানা কর্মসূচি রাখার নীতিগত সিদ্ধান্ত নিয়েছে বিএনপি নেতৃত্বাধীন ১৮-দলীয় জোট।

এ দাবিতে গতকাল এক দিন বিরতি দিয়ে আজ শনিবার থেকে দেশব্যাপী সকাল ৬টা থেকে টানা ৮৩ ঘণ্টার অবরোধ শুরু হচ্ছে। ২৫ ডিসেম্বর বড়দিন কোনো কর্মসূচি না রেখে পর দিন থেকে অবরোধের পরিবর্তে গণঅবস্থান, গণকারফিউসহ অসহযোগ আন্দোলনের মতো নতুন কর্মসূচির কথা চিন্তা করা হচ্ছে। এসব কর্মসূচি সফল করতে আগামী সপ্তাহে মাঠে নামছেন বিরোধীদলীয় নেতা, বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া। তৃণমূলের পাশাপাশি রাজধানী ঢাকায় চলমান আন্দোলনকে গতিশীল করতে বেগম জিয়া নিজেই আগামী কর্মসূচিতে নেতৃত্ব দেবেন বলে সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে। এদিকে সমঝোতা হলে দশম জাতীয় সংসদ ভেঙে দেওয়া হবে বলে প্রধানমন্ত্রীর বক্তব্যকে প্রত্যাখ্যান করেছে বিএনপি। দলের নেতারা বলছেন, প্রধানমন্ত্রীর এ বক্তব্য বিভ্রান্তিকর। তিনি (শেখ হাসিনা) প্রকারান্তরে একদলীয় দশম সংসদ নির্বাচনের বৈধতা নিতেই এ প্রস্তাব রেখেছেন।

আওয়ামী লীগের সঙ্গে তিন দফা বৈঠকে অংশ নেওয়া বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান শমসের মবিন চৌধুরী জানান, আলোচনায় বিএনপির অন্যতম শর্ত ছিল, ৫ জানুয়ারির নির্বাচন স্থগিত করা। কিন্তু তা না করায় বাধ্য হয়েই বিএনপিকে অবরোধের মতো কর্মসূচি অব্যাহত রাখতে হয়েছে। তিনি দাবি করেন, সরকারের কারণেই আলোচনা থেমে গেছে। তিন দফা আলোচনায় যেসব বিষয় এসেছে সেগুলো বাস্তবায়ন করা সরকারের জন্য কঠিন নয়। সদিচ্ছা থাকলেই এসব বাস্তবায়নের মাধ্যমে সবার অংশগ্রহণ নিশ্চিত করে দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচন সম্ভব ছিল। বিএনপির নীতিনির্ধারকদের সঙ্গে আলাপ করে জানা গেছে, নির্বাচনকালীন নির্দলীয় নিরপেক্ষ সরকার নিয়ে আন্দোলনে দেশের বেশির ভাগ মানুষই বিরোধী দলের পাশে রয়েছে। সুশীল সমাজসহ দেশি-বিদেশি কূটনীতিকরাও এ দাবির পক্ষে এরই মধ্যে তাদের মতামত দিয়েছেন। একমাত্র ভারত ছাড়া জাতিসংঘ, যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, চীন, জাপান, ইউরোপিয়ান ইউনিয়ন, মধ্যপ্রাচ্যসহ বিশ্বের প্রভাবশালী রাষ্ট্র ও সংস্থাগুলোর সমর্থন আদায় করা সম্ভব হয়েছে। তাই দাবি আদায় না হওয়া পর্যন্ত কূটনৈতিক তৎপরতার পাশাপাশি আন্দোলন চালিয়ে যাওয়ার নীতিগত সিদ্ধান্ত রয়েছে বিএনপি জোটের। তারা মত প্রকাশ করেন, এতে ভিন্ন কোনো পরিস্থিতি সৃষ্টি হলে এর দায় সরকারকেই নিতে হবে। ৫ জানুয়ারি নির্বাচন অনুষ্ঠিত হলে সে ক্ষেত্রে আন্তর্জাতিক মহল থেকেও সরকারের ওপর নানাবিধি নিষেধ আরোপ হতে পারে বলে মনে করেন বিএনপি নেতারা। সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, তিন দফা বৈঠকে বিএনপির প্রস্তাবগুলো ইতিবাচকভাবে নেয়নি ক্ষমতাসীন সরকার। তাই সংলাপে বিএনপি রাজি থাকলেও সরকারের পক্ষ থেকেই অনাগ্রহ প্রকাশ করা হয়েছে। কারণ নির্বাচনকালীন সরকারের প্রধান প্রশ্নে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বাইরে কোনো চিন্তা নেই আওয়ামী লীগের। এ কারণেই প্রধানমন্ত্রীসহ অন্যান্য মন্ত্রী ও নেতারা দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হওয়ার পরে সংলাপ নিয়ে আগ্রহের কথা জানিয়েছেন। বৃহস্পতিবার প্রধানমন্ত্রী গণভবনে এক অনুষ্ঠানে বলেছেন, হত্যা বন্ধ হলে সমঝোতার ভিত্তিতে দশম সংসদ ভেঙে আবারও নির্বাচন দেওয়া হবে। এ প্রসঙ্গে দলের স্থায়ী কমিটির সদস্য নজরুল ইসলাম খান বাংলাদেশ প্রতিদিনকে জানিয়েছেন, প্রধানমন্ত্রীর বক্তব্যে সমঝোতার কোনো ইঙ্গিত নেই। এতে জনগণকে বিভ্রান্ত করার চেষ্টা হয়েছে। এখনো সমঝোতা হলে তফসিল স্থগিত করে সংসদ ভেঙে দিয়ে নির্বাচন করা সম্ভব। আর এটা সংবিধানের মধ্যে থেকেও করা সম্ভব বলে জানান নজরুল ইসলাম খান। বিএনপি স্থায়ী কমিটির একজন সদস্য নাম না প্রকাশ করার শর্তে বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, এখন রাজপথে আন্দোলন ছাড়া বিএনপির কোনো পথ খোলা নেই। সরকারই বিএনপিকে লাগাতার আন্দোলনের পথে ঠেলে দিয়েছে। তাই ৫ জানুয়ারি একতরফা নীলনকশার নির্বাচন প্রতিহত করতে বিএনপি জোটের পক্ষ থেকে সর্বাত্দক প্রতিরোধ গড়ে তোলা হবে। জেলা পর্যায়ে আন্দোলন সন্তোষজনক আখ্যা দিয়ে তিনি বলেন, ঢাকার আন্দোলনের কৌশল নিয়ে বেগম জিয়া সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে কথা বলছেন। আন্দোলনে ঢাকা মহানগর বিএনপির কর্মকাণ্ডে চেয়ারপারসন অসন্তুষ্ট। তাই রাজধানীতে কর্মসূচি সফল করতে তিনি নিজেই রাজপথে নামার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। বিএনপির হাইকমান্ড মনে করে, তখন কর্মসূচিতে জনসম্পৃক্তা বাড়বে এবং আন্দোলনে নতুন মাত্রা যোগ হবে। এদিকে বিএনপি চেয়ারপারসনরে উপদেষ্টা অ্যাডভোকেট খোন্দকার মাহবুব হোসেন গতকাল জাতীয় প্রেসক্লাবে এক অনুষ্ঠানে বলেন, নির্দলীয় তত্ত্বাবধায়ক সরকারের দাবিতে শীঘ্রই বেগম জিয়া মাঠে নামবেন। তখন দেশে কোনো পরিস্থিতির সৃষ্টি হলে তার দায় সরকারকেই নিতে হবে।

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.