আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

মেয়েদের নিয়ে বিড়ম্বনা

এটা আমার জন্য অনেক সুখকর যে, আমি এখন ব্লগ ও ফেইসবুক থেকে নিজেকে আসক্তিমুক্ত রাখতে পারছি। পরিবার ও পেশাগত জীবনের কর্মব্যস্ততা অনেক আনন্দের। ... ব্লগে মনোযোগ দিতে পারছি না; লিখবার ধৈর্য্য নেই, পড়তে বিরক্ত লাগে।

এক মেয়ে একবার অনেকগুলো কবিতা পাঠিয়েছিল আমার একটা লিটল ম্যাগে ছাপানোর জন্য। আমাকে সে ইয়াহু ম্যাসেঞ্জারে এ্যাডও করে নিয়েছিল।

মাঝে মাঝে অল্পবিস্তর চ্যাট হতো তার সাথে। কিন্তু কবিতাগুলো ছাপানো যায় নি। মেয়েটার খুব মন খারাপ হয়েছিল, ধরে নিই, কারণ, সে এরপর আমার সাথে আর চ্যাট করার আগ্রহ দেখায় নি। তাকে প্রায় সব সময়ই অনলাইন থাকতে দেখি ম্যাসেঞ্জারে। মেয়েরা এতো নিষ্ঠুর হয় কী করে- একটু-আধটু কি কুশলাদি বিনিময় হতে পারে না মাঝেমধ্যে? কবিতাই কি জীবনের সবকিছু? মেয়েটাকে অনলাইন দেখি আর এসব ভাবি।

মেয়েটা ঢাকার আসেপাশেই থাকে। কলেজে পড়ে। সে জানিয়েছিল প্রথম দিকের আলোচনায়। মাস ছয়েকের বিরতির পর হঠাৎ একদিন মেয়েটা নক করে ম্যাসেঞ্জারে : আপনি কে ভাই? তার প্রশ্ন। আমি স্মাইলিং ইমোটিকনে রিপ্লাই করি।

সে- আপনার asl? আমি- আবারো স্মাইলিং ইমোটিকন। সে- আমার নাম বাবুল। সউদি আরবে থাকি। (মেয়েটার আসল নাম গোপন রাখলাম)। আমি- হাসতেই থাকি।

সে- আপনার ছবিটা খুব সুন্দর। আপনি খুব সুন্দরী, তাই না? হাসতে হাসতে আমার জীবন শেষ হয়ে যেতে থাকে। ও, এই ফাঁকে আরেকটা কথা বলে নিই। আমার ম্যাসেঞ্জারে কিছুদিন পর পর ডিসপ্লে আইকন চেঞ্জ করি। কখনো ছেলের ছবি, কখনো ফুল, পাখি, আর মাঝে মাঝেই আমার বউয়ের ছবি ঝুলিয়ে দিই- কাউকে দেখাবার জন্য নয়, আমি দেখবো বলে।

তো, ঐ সময়ে আইকনে আমার বউয়ের সুন্দর সুরতখানা ভাসছিল। আর তখনই সেই 'মেয়েটার' বিমুগ্ধ প্রশ্ন : আপনার ছবিটা খুব সুন্দর। আপনি খুব সুন্দরী, তাই না? আমি লিখি, এটা আমার বউয়ের ছবি। সে লেখে, আমার মনে হচ্ছে এটা আপনি নিজেই। নিজের পরিচয় গোপন করছেন কেন? আমি হাসি।

সে লেখে, আমি সউদি আরব থাকি, একটা বড় কোম্পানিতে চাকরি করি। আমি- জেনে ভালো লাগলো। সে- আপনি কি ম্যারিড? আমি- জি। সে- আমার মনে হয় আপনি মিথ্যা বলছেন। আপনি ম্যারিড না।

আমি- অদ্ভুত কথা তো, আমি মিথ্যা বলবো কেন? আমি একজন পুরুষ মানুষ। এটা আমার বউ। আমার দুই ছেলে আর একটা মেয়ে আছে। সে- জানি, সত্যিকার মেয়েরা পরিচয় গোপন রাখে। তবে আপনার এই গোপন রাখার ব্যাপারটা আমার খুব ভালো লাগলো।

আমি সাথে সাথে বউয়ের ছবি পাল্টে ছেলের ছবি টাঙ্গিয়ে দিলাম। লিখলাম, এই দেখুন, এটা আমার ছেলের ছবি। সে লেখে, বিশ্বাস হয় না। সে আরো লেখে- আমার নাম বাবুল। সউদিতে কোরিয়ান কোম্পানিতে বড় পোস্টে চাকরি করি।

প্রচুর বেতন পাই। এখনো আনম্যারিড। আপনার কি সত্যি বিয়ে হয়েছে? *** আরো মাস ছয়েক পর। সে হঠাৎ উদিত হয়ে লেখে: হাই বেবি, হাউ আর ইউ? আমি- ইয়েস বেব, আই এ্যাম ফাইন। ইউ? সে- আমি আঁখি... (নামটা গোপন রাখলাম) আমি- খুব ভালো।

আপনি কি সউদি আরব থাকেন? সে- নাহ্‌, আমি বাংলাদেশে থাকি তো। আমি- কিন্তু আপনি একদিন বলেছিলেন যে আপনি সউদি আরবে থাকেন! সে- না, আমি বাংলাদেশেই থাকি। আমি- আপনি কী করেন? সে- আমি কলেজে পড়ি। আপনার নামটা জানতে পারি? আমি- আমার আইডি দেখুন। সে- আপনি কোথায় থাকেন? আমি- ঢাকায়।

সে- ঢাকা কোথায়? আমি- ঢাকার আশেপাশে। আপনি কোথায়? সে- ঢাকার আশেপাশে। (জায়গার নাম গোপন রাখলাম) আমি- সেদিন না বললেন আপনি সউদি আরবে থাকেন? সে- সউদি আরবে আমার ভাই থাকে। আমি- আপনার ভাই এই আইডিতে এলো কিভাবে? সে- আমি আর আমার ভাই একই আইডি ইউজ করি। আমি- এটা কি সম্ভব? সে- নিরুত্তর।

। আমি- আপনি যেন কী করেন? সে- আমি 'অমুক' কলেজে পড়ি। (ঢাকার আসেপাশে, কলেজের নাম গোপন করলাম)। আমি- আপনি সম্ভবত গত বছর আমার কাছে কিছু কবিতা পাঠিয়েছিলেন। আঁখি কোনো রিপ্লাই না দিয়ে লগআউট করে।

এর দিন দুয়েক পর তার সাথে আবার চ্যাট শুরু হলো। সে- হাই! আমি- জি! সে- আমি রেখা। আমি- ওকে। সে- কে আপনি? থাকেন কোথায়? আমি- বাংলাদেশে থাকি। আপনি কোথায় থাকেন? সে- আমিও বাংলাদেশেই থাকি।

আমি- আপনার নাম কি ঋতু, নাকি শ্রেয়া? সে- আমার নাম রেখা। আমি- আপনার আইডিটা পুরুষ নামের কেন? সে- স্যরি টু সে, রুমন ইজ মাই হাজব্যান্ডস নেইম (আসল নিকটা গোপন রাখলাম)। আমি- স্মাইলিং ইমোটিকন ছাড়ি। সে- আপনি কি ম্যারিড? আমি- জি। সে- ওকে।

আমি- আপনি কি ম্যারিড? সে- জি। আমি- আপনি কী করেন? সে- আমি 'অমুক' কলেজে পড়ি। আমি- আপনার হাজব্যান্ড কী করেন? সে- রুমন আমার হাজব্যান্ডের নাম। সে সউদি আরব থাকে। আপনি? আমি- আমি বাংলাদেশে থাকি।

আপনিও কি জামাইর সাথে সউদি আরব থাকেন? সে- জি না। আমি- কোথায়? সে- ঢাকার আশেপাশে। আমি- আপনার সাথে কথা বলে খুব 'আরাম' পাচ্ছি। সে- তাই? আমি- হুম। সে- আপনার বেবি কয়টা? আমি- ৩টা।

আপনার কয়টা? সে- বুঝলাম না। আমি- আপনার ছেলেমেয়ে কতোগুলো? সে- অনেক। আমি- অনেক সন্তান দেশ ও দশের জন্য মঙ্গল বয়ে আনে। সে- তাই? আমি- জি। আপনার কয়টা? সে- সম্ভাবনা আছে।

আমি- কিসের সম্ভাবনা? সে- বেবি। আমি- গুড। কবে? সে- ১০ মাস। আমি- জামাই না সউদিতে থাকে! সে- আসছে। আমি- জামাই দেশে আসার আগেই পেটে বেবি ঢুকে গেছে? সে- আবার জিগায়! আমি- আপনার কোনো ভাইবোন আছে? সে- জি, ৫ বোন।

আমি- আপনি কতো নম্বর? সে- ৫ নম্বর। আমি- বড়দের কি বিয়ে হয়েছে? সে- জি। আমি- ভাই কয়জন? সে- আমার কোনো ভাই নাই। আমি- কোনো ভাই নাই? সে- অবাক হলেন কেন? আমি- ভাইহীনারা কতো মজায় থাকে, তাই না? সে- বুঝলাম না। আমি- ভাই থাকলে মেয়েরা খুব স্বাধীনভাবে প্রেম করতে পারে না।

সে- তাই? আমি- আপনি মনে হয় খুব স্মার্ট একটা মেয়ে। সে- জি না। আমি- অবসর সময় কিভাবে কাটান? সে- স্বামী, ল্যাপটপ আর পড়াশোনা। আমি- আচ্ছা, ভালো খুব। আপনার নামটা কি জানতে পারি? সে- আমার নাম রেখা।

আমি- হুম। এরপর কিছু সময় তার রিসপন্‌স পাই না। আমি- আপনি কোথায়? বসে আছি। জরুরি কথা আছে। একটা জিনিস আছে আপনার জন্য।

এই ফাইলটা দেখুন ম্যাডাম। আমি একটা ফাইল সেন্ড করি, যাতে তার পাঠানো কবিতাগুলো আছে, আর আছে তার নাম, যা আঁখি কিংবা রেখা নয়। তার মেইল থেকে ডাউনলোড করা এগুলো। কিন্তু পর পর ৩বার ফাইলটা রিজেক্টেড হয়। আমি- ফাইলটা নিচ্ছেন না কেন? আছেন? সে- আছি।

আমি- ফাইলটা এ্যাকসেপ্ট করছেন না কেন? সে- কিভাবে এ্যাকসেপ্ট করবো? আমি বুঝি না। নতুন ল্যাপটপ কিনেছি। রিস্টার্ট দেব? আমি- সামহোয়ারে আপনার নিক কোন্‌টা? সে- কাল বলবো। আমি- কাল কেন? সে- জানি না। আমি- আপনি কি কবিতা-গল্প লেখেন? সে- এখন লিখি না।

আগে লিখতাম। আমি- আগের লেখাগুলো কোথায়? সে- জানি না। আমি- আপনি একবার আমার কাছে কবিতা পাঠিয়েছিলেন। মনে আছে? সে- আজ আর নয়। গুড নাইট।

আমি- একটা কথা শুনে যান ভাই। আঁখি লগ্‌ডআউট হয়। *** তার পরের দিন সে লেখে : হ্যালো, কেমন আছেন? আমি- ভালো। আপনি? সে- কাল চলে গেলেন কেন অমন করে? আমি- আরে মিয়া আপনিইতো চলে গেলেন। সে- তাই? নতুন শিখছি তো, এজন্য এমন হয়।

আমি- তাই, না? সে- জি। আমি- আপনি কি বলবেন আমার আইডি কোথা থেকে পেয়েছিলেন? সে- মোবাইল থেকে। আমি- মোবাইলে কিভাবে পেলেন? সে- নাম দেখে। আমি- আপনার মোবাইলে আমার নাম আসলো কোথা থেকে? সে- জানি না। আমি- ভালো।

আপনি যেন কী করেন? সে- 'অমুক' কলেজে পড়ি। আপনি কী করেন? আমি- কাজ করি। সে- কী কাজ করেন? আমি- বেঁচে থাকার কাজ। সে- মজা করছেন কেন? আমি- মজা হলো কিভাবে? সে- জানি না। আমি- একবার আপনি আমার কাছে কবিতা পাঠিয়েছিলেন।

মনে আছে? মেয়েটা লগ্‌ড আউট হয়। উপরের ফাইন্ডিংস ঘেঁটে আপনারা দেখুন 'আঁখি'র প্রকৃত আইডেন্টিটি বের করা যায় কিনা। আপাতত আমার পক্ষে এর চেয়ে বেশি জেরা করা আর সম্ভব নয়। তার চেয়ে বরং অন্য গল্প বলি। লিটল ম্যাগের জন্য হন্যে হয়ে বড় কবিদের কবিতা খুঁজছি।

দেশের প্রথম সারির কবিদের কবিতা পাওয়া তো চাট্টিখানি কথা না, তাই না? টপ র‌্যাংকিং এক কবির ই-মেইল আইডি পেলাম। ম্যাসেঞ্জারে এ্যাড করলাম। ইনসট্যান্টলি তিনিও আমাকে এ্যাড করে নিলেন। তাঁকে আইএম পাঠাই। তিনি খুব ব্যস্ত মানুষ।

জবাব দেবার সময় পান না। পত্রিকায় তাঁর কবিতা পড়ে মুগ্ধ প্রতিক্রিয়া জানিয়ে মেইল করি। তাঁর সময় হয় না জবাব দেবার। তাঁর কাছে কবিতা চাই, এমনকি সবিনয়ে জানিয়ে দিই, প্রথম আলোর চেয়ে দ্বিগুণ সম্মানী দেব আমি। ...আমি গরিব বান্দা মহাকবির দৃষ্টি আকর্ষণে ব্যর্থ হতে থাকি দিনের পর দিন।

সেই ২০০২ সনের দিকে তাঁর মেইল পেয়েছি, কতো আফসোস বুকের ভেতর জমতে থাকে- আহা, মহাকবি যদি একবার একটা আইএম পাঠাতেন! কিংবা একটা রিপ্লাই- চাই না তাঁর কবিতা। তাঁর কবিতা আমার লিটল ম্যাগে ছাপলে কবিতার অপমান হবে। মহাকবি সহসা একদা রাতে সুপ্রসন্ন হলেন। রাত ১টা হবে। তিনি অনলাইন হয়েই : হাই! দেখতে অদ্ভুত সুন্দরী আপনি।

আমি একটু থতমত খাই। আমার খেয়াল হয়, আইকনে আমার বউয়ের ছবি ঝুলছে। মহাকবি লেখেন : চ্যাট করার সময় হবে? বাস্তবিকই আমি লজ্জিত ও বিব্রত হতে থাকি। ভুল বা সমস্যাটা ধরতে তো আর জ্ঞানী হবার প্রয়োজন পড়ে না। আমি নীরব থাকি।

মহাকবি 'বাজ' ভাঙলেন আমার মাথায়। লিখলেন, আপনি এতো অহংকারী কেন? আমি খুব দ্রুত লগ আউট হই, আর খুব অস্বস্তিতে ভুগতে থাকি। ভাবি, এটা হয়তো আমার চেনা দেশখ্যাত 'মহাকবি' নন। তিনি এরূপ 'লোলুপ' হতেই পারেন না, যদিও জানতাম তার সাম্প্রতিক কালের দুই খণ্ডে লেখা একগুচ্ছ প্রেমের কবিতা সব বয়সের পাঠক খুব গোগ্রাসে খেয়েছেন, যা এরূপ কিছু রাতজাগা মেসেজ আদান-প্রদানের ঘটনা নিয়েই লেখা হয়েছে বলে জনশ্রুতি রয়েছে। 'কবিসভা'য় তাঁর জ্ঞানগর্ভ পোস্টগুলো পড়েছি।

তিনি একজন মস্তিষ্কবান সন্দেহ নেই। এরপর আরো কয়েকদিন মহাকবি আমাকে নক করেছিলেন, আমি রিপ্লাই করি নি। তবে আইকন বদল করে ছেলের ছবি লাগিয়েছি, আর আমাকে চিরতরে তাঁর কাছে 'ইনভিজিবল' করে রেখেছি। ঐ সময়ে, আমার বউয়ের ছবি যখন ঝোলানো ছিল- আরও কয়েকজন ক্ষুদে কবি নিয়মিতভাবে দু-চার লাইনের কবিতা আইএম করতেন, যদিও কখনো রিপ্লাই করা হয়ে ওঠে নি। তাঁদের আইডি পেয়েছিলাম কবিতা চাওয়ার সময়েই।

তাঁরা জানতেন আমি একজন 'অ-নারী' মানুষ, তবু নারী-জ্ঞান কেন করতেন আমাকে জানি না। আমার লেখায় কি 'নারীত্ব'ভাব আছে নাকি? এবার এক ব্লগারের কথা বলি। তিনি ইতোমধ্যে একজন সেলিব্রেটি। পোস্ট ছাড়া মাত্র ঝাঁকে ঝাঁকে কমেন্টকারীরা হুমড়ি খেয়ে পড়েন। তাঁর ব্লগে ড্রামের পর ড্রাম তেল পড়তে থাকে- যদিও আমি একফোঁটাও দিই নি আজও।

আমার পোস্টে মন্তব্যের খরা দেখে একদিন তিনি বলেই ফেললেন- আপনি একটা মেয়েনিক খুলছেন না কেন? যায়যায়দিনে তসলিমার 'ক'-এর উপর ধারাবাহিক প্রতিক্রিয়া বের হচ্ছিল- ২০০২ বা ২০০৩-এর দিকে মনে হয়। একবার এক লেখক একলাইনে একটা কথা লিখেছিলেন- তসলিমার 'ক' পড়ে বুঝলাম সকল মহাপুরুষই আসলে পুরুষ। আমিও ওরকম একজন মহাপুরুষ বটে, যিনি সর্বান্ত শরীরে-মনে একজন পুরুষ। আপনি কী মনে করেন?

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।