আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

সিংহের খাঁচা (এডভেনচার কাহিনী)

জীবনের এই গতিপথ...পূর্ব-পশ্চিমে যেন এক নিছক অন্বেষণ

১। তাহার পর কিছু বুঝিয়া উঠিবার আগেই, আমাকে সিংহের খাঁচাতে ছুঁড়িয়া ফেলা হইল। ক্ষুধার্ত সিংহটি আমাকে দেখিবা মাত্রই, লাফ দিয়া আমার পানে প্রবল বেগে ধাববান হইল। বহুদূরে একটা এটমিক ব্লাস্টার দেখা যাইতেছে। উহা পর্যন্ত পৌছিতে হইলে, আমাকে সিংহটি অতিক্রম করা লাগিবে।

দেখিলাম, পাশেই একখানা লোহার রড পড়িয়া আছে। উহা তড়িত বেগে হাতে নিয়াই আমার দুই রানের চিপায় রাখিলাম। আমার দুই রানের চিপার উদ্ভুত তাপে রড খানা গলিয়া মোমের মত নরম হইয়া গেল। তাহার পর রডের এক মাথা আমি রশি দিয়া বাঁধিলাম। অতঃপর রডখানা এটমিক ব্লাস্টারের দিকে ছুঁড়িয়া দিলাম।

যখন রডের গলিত মাথাটি এটমিক ব্লাস্টারটি স্পর্শ করিল, তখন এটমিক ব্লাস্টারের “থার্মাল কন্ডাকটিভিটি” বেশি থাকিবার কারণে, রডের সমস্ত তাপ শুষিয়া লইল। ফলে রডের গলিত মাথাটি শুকাইয়া শক্ত হইয়া গেল। রডখানা এটমিক ব্লাস্টারের সাথে লাগিয়া গেল। রডের অন্য যে মাথাটি আমি রশি দিয়া বাঁধিয়াছিলাম, রশির সে প্রান্তটি আমার হাতেই ছিল। উহাতে হ্যাঁচকা টান মারিবা মাত্রই এটমিক ব্লাস্টারটি আমার হাতে চলিয়া আসিল।

ইতিমধ্যে সিংহটি আমার একেবারে নিকটে চলিয়া আসিয়াছে। সে আমাকে যখন প্রায় সংহার করিতে উদ্যত হইল, তাহার ঠিক আগের মুহুর্তে আমি তাহাকে এটমিক ব্লাস্টার দিয়া সংহার করিয়া ফেললাম। এখন খাঁচা হইতে বাহির হইব কেমনে? উপরে তাকাইয়া দেখিলাম, খাঁচাটির উপরে কোন ছাদ নেই। কিন্তু, উহা প্রায় পঞ্চাশ ফিট উপরে। কি করা যায়? ভাবিতে লাগিলাম।

বস্তুতপক্ষে, আমার মত মেধাবীকে, কখনই কোন খাঁচা আটকাইয়া রাখিতে পারিবেনা। সহসাই বুদ্ধি পাইয়া গেলাম। এটমিক ব্লাস্টারটি মাটির দিকে মুখ করিয়া একটানা গুলি করিতে লাগিলাম। প্রচন্ড শব্দে গুলিগুলো ধরণীতে আঘাত করিতে লাগিল। মহাবিজ্ঞানী নিউটন একটি সূত্র দিয়াছিলেন, “প্রত্যেক ক্রিয়ারই একটি সমান ও বিপরীতমুখী প্রতিক্রিয়া আছে।

” সেই সূত্র অনুসারে যখন আমি মাটিতে গুলি করিয়া ক্রিয়া করিতেছি, তারই প্রতিক্রিয়াতে আমি উপরে উঠিয়া যাইতে থাকি। এইভাবে গুলির মাত্রা তথা ক্রিয়া কন্ট্রোল করিয়া আমি প্রায় ষাট ফুট উপরে উঠিয়া গেলাম। তাহার পরে, আবার এটমিক ব্লাস্টারের মুখ তথা গুলির দিক এবং গুলির মাত্রা পরিবর্তন করিয়া খাঁচার বাহিরের মাটিতে ল্যান্ড করিলাম। অতঃপর, সিংহটি হত্যা করিয়া আমি শত্রুপুরী হইতে বাহির হইলাম। তাহার পরে আমি, এটমিক ব্লাস্টারের উপর ভর করিয়া কিছুক্ষণ উড়িয়া বেড়াইলাম।

বহুদূরে একটা ক্যাসিনো দেখিয়া, সেইদিকে উড়িয়া চলিয়া গেলাম। এটমিক ব্লাস্টারে ভর করিয়া, যখন আমি ক্যাসিনোতে নামিলাম, কোথা হইতে যেন আয়শা টাকিয়া ছুটিয়া আসিল। সে আমাকে টানিয়া ক্যাসিনোর ভিতর লইয়া গেল। ক্যাসিনোর ভিতর খালি যুবা রমণী আর বৃদ্ধ পুরূষ। আমি সেইখানে একমাত্র সুপুরুষ।

রমণীরা ইর্ষাকাতর নয়নে আমাকে দেখিতেছিল। কিন্তু আমার বক্ষ জুড়িয়া আয়শা টাকিয়া অবস্থান করিবার কারণে, অন্য রমণী সকল আর কাছে আসিবার সাহস আর পাইলনা। আসলেই আমার ভাগ্য আজকে সুপ্রসন্ন। তাই ক্যাসিনোতে বসিয়া জুয়া খেলিয়া বিপুল অংকের অর্থ উপার্জন করিলাম। আমি বুঝিতেছিলাম যে, আমি সহজে ক্যাসিনো থেকিয়া বাহির হইতে পারিবনা।

কারণ শত্রুপক্ষের লোকেরা এখন ক্যাসিনোর বংসারদের সাথে একাট্টা হইয়া আমার উপার্জিত অর্থ কাঁড়িয়া লইতে উদ্যত হইবে। কিন্তু আমি কি কাউকে ভয় পাই? আয়শা টাকিয়ার সাথে ক্যাসিনোর বারে প্রায় ঘণ্টাখানেক কাটাইলাম। বেশ অনেকখানি হ্যানিকেন নামক মদিরা পান করা হইয়া গেল। এই পুরোটা সময় সে “রিশ রিশ” করিয়া আমাকে প্রায় পাগলপারা করিয়া দিল। কিন্তু আমার নামতো “ইদরিশ”।

আয়শা টাকিয়া আমাকে কেন “রিশ” বলিয়া ডাকিতেছে বুঝিলামনা। যাইহোক, কোন কিছু বুঝিবার মত আর সময় পাইলাম কই? হ্যানিকেন প্রচুর পরিমাণে পান করিয়া আমার প্রচন্ড “হিসু” পাইয়া গেল। দৌড়াইয়া যখন হিসু করিবার নিমিত্তে স্নানঘরের দিকে যাইতেছিলাম, তখন আমাকে শত্রুপক্ষের সবাই ঘিরিয়া ধরিল। ইতিমধ্য, আমার বিপদ দেখিয়া আয়শা টাকিয়া ছুটিয়া আমার বুকে আসিয়াছে। সে শত্রুপক্ষের সকল আঘাত নিজের বক্ষে নেবার জন্য প্রস্তুত হইয়া আছে।

কিন্তু আমি থাকিতে আয়শার আবার ভয় কি? আমি স্পস্টতই বুঝিতেছি যে, বারের স্নানঘরের আশেপাশে প্রচুর গ্যাস জমা হইয়া আছে। কারণ, সবাই মদিরা পান করিয়া যখন হিসু করিতেছে, তখন তাহাতে “ইথানলের” প্রচুর আধিক্য থাকিতেছে। যে কোন বিবেচক বিজ্ঞানী মাত্রই জানেন যে, “ইথানল-মিথানল” খুবই দাহ্য পদার্থ। বস্তুত, পুরো বারটি “ইথানল-মিথানল”-এর একটি গ্যাস চেম্বারে পরিণত হইয়া আছে। তাই, যখন শত্রুরা আমাদের ঘিরিয়া ধরিল, তখন আমি হা হা করিয়া হাসিয়া উঠিলাম।

শত্রুপক্ষের লোকেরা আমাকে ঘিরিয়া একটা বৃত্ত রচনা করিয়া হাঁটিতে লাগিল। ধীরে ধীরে তাহাদের রচিত বৃত্তের ব্যাসার্ধ কমিতে লাগিল। যখন তাহারা প্রায় আমাদের দেহের সন্নিকটে চলিয়া আসিল, তখন আমি পকেট হইতে সিগারেট আর লাইটার বাহির করিলাম। কোন এক শয়তান তো বলিয়াই উঠিল, “খাইয়া নে, তোর জীবনের শেষ সিগারেট। ” বলিয়াই সে যেন এক উচ্চ-মার্গের রসিকতা করিয়াছে, এমনভাবে গা দুলাইয়া হাসিতে লাগিল।

উজবুকটা আবার কি বলিল? আমি সিগারেটটা মুখে পুরিয়া, আস্তে করিয়া লাইটারটা ধরাইয়া দিলাম। আর যায় কোথা। সাথে সাথে পুরা বারটাই প্রচন্ড বিস্ফোরণে ফাটিয়া গেল। আমি আর আয়শা টাকিয়া এটমিক ব্লাস্টারে ভর করিয়া বিস্ফোরণস্থল হইতে বাহির হইয়া আসিলাম। কিন্তু বাহির হইয়া আসিয়া দেখি, বিস্ফোরণের আর আমার লাইটারের কারণে, আয়শা টাকিয়ার বুকে আগুন ধরিয়া গিয়াছে।

উহা কি প্রেমের আগুন? বোধহয় তাই। তাই সে খুব ছটফট করিতে থাকে। আমি সে আগুন নিভাইতে উদ্যত হইলাম। কিন্তু আগুন কি দিয়া নিভাইবো? চারিদিকে তো খালি আগুন আর আগুন দাউ দাউ করিতেছে। পানি কই? সহসাই মনে পড়িয়া গেল যে, আমার “হিসু” পাইয়াছিল।

উক্ত পানি দ্বারা যদি আয়শা টাকিয়ার বুকের আগুন নিভাইয়া দেই, তাহা হইলে কি খুব পাপ হইবে? না, হইবেনা। বিপদের সময় সবই জায়েজ আছে। তাই, প্যান্টের জিপার খুলিয়া মনের সুখে “হিসু” করিতে লাগিলাম। আয়শার বুকের আগুন নিভাইতে লাগিলাম। তাহার পরে, সব অন্ধকার।

আবার অনেক আলো। আবার অন্ধকার। ২। মাঝরাত্রি পার হইয়াছে ঢের আগেই। খাটের মধ্যিখানে ইদরিশ আলী বিব্রত মুখে আধশোয়া হইয়া আছেন।

তাঁহার স্ত্রী জনাবা আয়েশা খাতুন, প্রচন্ড বিরক্ত মুখে তাহার সাথে কথা বলিয়া চলিতেছেন। তিনি বলিতেছেন, “তোমার অভ্যেসটা আর গেলনা। কতবার বলিলাম কবরেজ দেখাও। দিলা তো মাঝরাত্রিতে আমার পেছনটা আবার ভিজাইয়া। ” জনাবা আয়েশা খাতুন গজগজ করিতে করিতে স্নানঘরের দিকে ধাববান হইলেন।

একটু আগের মহা পরিক্রমশালী সিংহ শিকারী জনাব ইদরিশ আলী কেমন যেন পরাজিত মানুষের মত খাটের এক কোণে শুইয়া থাকিলেন। পুনঃশ্চ গল্পটি জীবনের ছায়া অবলম্বনে রচিত। কিঞ্চিত ছায়া অন্য একখান থেকিয়া লওয়া হইয়াছে। গল্পটি লেখিবার হেতু হইল, আসছে মঙ্গলবার আমাকে একটি ইন্টারন্যাশনাল কনফারেন্স-এ আমার বৈজ্ঞানিক প্রবন্ধ পাঠ করিতে হইবে। তাই, বিজ্ঞানের সহজ থিউড়ি গুলি একটু ঝালাই করিয়া লইলাম।

অশ্লীলতার জন্য ক্ষমাপ্রার্থী। দোয়া করিবেন আশা করি।

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.