আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

ভালবাসার উজান স্রোতে............ ১

পরাঞ্জয়ী...

হাত ভর্তি মেহেদী নিয়ে সেই কখন ধরে ঠায় বসে আছি। দূর ছাই কখন যে শুকাবে এই মছিবৎ!!!! ও দিকে আরেকজনের কঠোর নির্দেশ "মেহেদীর রং চড়া হওয়া চাই"!! "যেন ২ টি বছর একা বিদেশ বিভুইয়ে ঐ রঙ তার মনে ছড়িয়ে থাকে!" "বুবু, বুবু???????" জামালটা সাত সকালে ষাঁড়ের মত চ্যাচাতা চ্যাচাতে আমার পাশে এসে বসলো। "জানো বুবু বাজার গেছিলাম, টোকন দের বাসার সামনে থামলাম, ওমনি ঐ কালামুখো বাটপাড়ডা টোকন রে ডাক দিয়া কয় "গুলাশানে এপার্টমেন্ট কিনতেছি" আরও হাবিজাবি, আমিও কম যাইনা ঝামটি দিয়া শুনায়া আসছি "ব্যবসা করতে ৫ লাখ টাকা জোগাড় হয়না আবার ৫০ লাখের গরম দেখনি হচ্ছে? আরও কি কইছি জানো??কইছি............................ আর কি কি বলেছে সে শোনার অনাগ্রহে নাক সিঁটকিয়ে ধমক দেই জামালকে "থাক থাক হয়েছে, যা এখান থেকে, আমার মাথা ধরেছে"। ঘৃনায় গা গুলিয়ে ওঠে, কাজের ছেলের কাছে শাওনের দূর্নাম শুনতে ভালো লাগেনা আমার, কিন্তু ওর প্রবৃত্তি ঠিকই হয় তার কাছে নিজের প্রতিপত্তির জোর দেখাতে!! আমাকে গাড়ি বাড়ির কাঙাল ভাবার দুঃসাহস যার হয়েছে সে যে কত বড় কাঙাল তাই ভেবে এখন ঘৃনা হচ্ছে। ছি:!!!! আমি কি ওকে ঘৃনা করতে শুরু করলাম? সত্যিকারের ভালবাসায় কি ঘৃনার কোন অবকাশ থাকে? থাকে হয়ত, সম্পর্কটাই একটা পয়সার মত।

এক পিঠে ভালবাসা, অপরটিতে ঘৃনা। ভালবাসার পাশটা নিচে পড়লেই ঘৃনার পাশটা দৃষ্টিগোচর হয়। "কেন ভাবছি ওকে নিয়ে?" ও কে নিয়ে ভাববার অবকাশ কিংবা সুযোগ কোনটায়ই ও রাখেনি। "সুরভি???" মা ডাকলো। "হ্যা মা বল?" মা কাছে এসে বসলো, হাতে একটা বাটিতে ময়দার মাসকট হালুয়া! মা বললো "তোর না অনেক পছন্দ? খা একটু" বলেই মা মুখে তুলে দিতে লাগলো, হাসি মুখে বললো " দেখিস মা, উজান তোকে অনেক সুখে রাখবে, ওর চোখের দিকে তাকালেই বোঝা যায়, সেখানে মিথ্যার কোন ঠায় নেই" আমি হাসলাম।

মনে মনে বললাম "জানি মা, সেই ভরসাতেই তো হাতে মেহেদী পরেছি"। আমার খাওয়া শেষ হল, মা ও উঠে গেল। কত কাজ তার। বাইকের শব্দে বারান্দায় দৌড়ে গেলাম, হ্যা উজানের বাইকেরই আওয়াজ। "ওর বাইকের আওয়াজটাও চিনে ফেলেছি?" লজ্জা পেলাম নিজের কাছেই।

আমি কিছু জানিনা এমন একটা মুখভঙ্গি নিয়ে বসে আছি। উজান এল আমার ঘরে। "বাহ, দারুন পরেছ তো মেহেদী। আমি চোখ পাকিয়ে তাকালাম ওর দিকে। " আমার নামেই পরেছ তো, নাকি আল্পনা আঁকার সময় অন্য কারও মুখচ্ছবি ভাসছিলো চোখের সামনে?" সকৌতুকে তাকালো আমার দিকে।

বললাম " ককখনও না, তোমার নামে কেন পরবো?" ও হেসে বললো " তাইতো!!! আমার নামে কেন পরবে?" আমি ওর বলার ভঙ্গীতে আমার কপোট গাম্ভীর্য আর ধরে রাখতে পারলাম না, হেসে লুটিয়ে পড়লাম। "উজান?" :হুমম :পরশু গায়ে হলুদ , আজ কেন মেহেদী পরতে বললে বলতো? :সে আমি সন্ধ্যের আগে কিছুতেই বলতে পারবো না। :বল না : উহূ আমি মুখ ঘুরিয়ে বসে থাকলাম। "নিষ্ঠুর, বললে কি হয়?!!" আমার কানের কাছে মুখ নিয়ে বললো " সুর, ভালবাস আমায়?" ওর তপ্ত শ্বাসে আমার সমস্ত গায়ে কাঁটা দিল। আমি মুখ বুজে ঘাড় নেড়ে জানালাম "না"।

বললো " তবে বিয়ে করছো কেন আমায়?" এবার আর ঘাড় নেড়ে জবাব হয়না, তাই বললাম "ভালবাসতে চাই বলে!!" সত্যিই বলছো?" আমি জানালাম "হ্যা"। ---------------------------------------------------------------------------------- সন্ধ্যায় উজান নিতে এল আমায়। কোথায় যে যাবে পাগলটা বুঝতে পারছিনা। বরাবরই বড্ড নাটকীয়তা পছন্দ ওর। কি যে করবে ঈশ্বরই মালুম।

"মাআআআ, ও মা???" মা ঘরে ঢুকে বললো "কি হয়েছে ডাকছিস কেন?" " দেখনা মা, উজান রেডী হয়ে থাকতে বলেছে, কোথায় যেন নিয়ে যাবে, কিন্তু কি পরবো বুঝতে পারছিনা" মা বললো "যে সাদা রঙের সালোয়ার কামিজটা উজান কিনে দিল ওটাই পর" আমি মায়ের কথা মত তাই পরলাম। গলায় মুক্তার লকেট, কপালে ছোট্ট সাদা টিপ। ব্যাস এই আমার সাজন শেষ!! ঠিক ৫ টায় উজান এল। আমাকে দেখে কি কি বিষেশন সে ব্যবহার করলো সে না হয় থাক, আরেকদিন বলবো। রোজ রোজ রেষ্টুরেন্ট এর খরচ করবার সাধ্য আমদের ছিলনা।

তবে আজ উজান আমাকে নিয়ে ঢুকলো রমনা পার্কে। বাইরের বেঞ্চে বসলাম খানিক্ষন। সন্ধ্যার আগে আগে রেঁস্তোরার ভেতরে ঢুকলাম। এখানকার মালিকের ছোটভাই উজানের বন্ধু, তাই ম্যানেজারও চেনে তাকে। :সুরভি? :বল :তোমার না খুব আক্ষেপ আমি ভাল করে, স্পষ্ট করে তোমাকে কখনও বলিই নি যে তোমাকে ভালবাসি? আমি হাসলাম।

:হেসোনা, আজ আমি বলবো। আমি এবার প্রমাদ গুনলাম। " কি করছো উজান এখানে? কত্ত মানুষ দেখেছ? এসব নাটক নভেলে হয় উজান" :নাহ, যা নাটক নভেলে হয় সে বাস্তবেই হতে পারে। হঠাৎ উঠে দাঁড়িয়ে গেয়ে উঠলো, খালি গলাতেও ওর কন্ঠে গান টা খুব যায়। বাঙালী সংস্কৃতিতে এমনতর নিয়মের ঘাটতির কারনে হোক কিংবা প্রবল ঔৎসুক্য সবার চোখ আমাদের দূজনের দিকে।

আমি লজ্জায় মরতে থাকলাম! "তোমার কথা ভাবতেই গেলেই চাঁদ হয় অভিমানী বলে জ্যোৎসার চেয়ে মুখটি কি তার অনেক বেশি দামি তোমার গান গাইতে গেলেই পাখিদের অভিযোগ বলে এত গান গাই তোমার জন্য তবু ওর দিকে চোখ আমি কি করি, কি করি কোন দিকে যাই কোন পথে হারাই রক্ত প্রবাহে স্লোগান উঠেছে "তোমাকে তোমাকে চাই?" শেষ লাইনেই ও হাঁটু মুড়ে বসলো আমার সামনে। তারপর মেলে ধরলো একটা রুপোর আংটি, আমার খুব পছন্দের!! আমি বাঁ'হাত বাড়িয়ে দিলাম। অনামিকায় পরিয়ে দিল আংটিটা। আমি হতবাক হয়ে গেলাম। তারপরে অনেক কিছু হলেও, ঘটলেও এই পর্যন্তকার ঘটনাটুকু আমি বারবার ভাবছি আজ রাতে আর শিহরিত হচ্ছি! ঘুম আসছেনা।

ঘুমাতে চাইওনা। আজ সারারাত উজান কে নিয়ে ভাববো আমি। ও কে নিয়ে ভাবতে আজই প্রথম বড্ড ভাল লাগছে আমার!! কাল গায়ে হলুদ আমার, মাত্র একটি দিন....................... (চলবে)

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.