আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

“আমি তোমাকে অনেক ভালবাসি”

ভালবাসি ভালো ভালো কাজ করতে। সৎ ভাবে জীবন জাপন করতে ভালোবাসা, ভালোবাসা আসলে কি? আমি মনে করি ভালোবাসার কোন সংজ্ঞা নেই, নেই কোন গভীরতার মাপকাঠি। ভালোবাসা হলো নিঃস্বার্থ ভাবে প্রিয় মানুষটির জন্য মঙ্গল কামনা করা। ভালোবাসতে হলে একটি সুন্দর মন থাকা দরকার, মানবিক অনুভূতি এবং আবেগকেন্দ্রিক একটি অভিজ্ঞতা প্রয়োজন। আবার ভালোবাসাকে অনেকে বিভিন্ন দৃষ্টিকোন দিয়ে দেখে থাকে বিশেষ কোন মানুষের জন্য স্নেহের শক্তিশালী বহিঃপ্রকাশ হচ্ছে ভালোবাসা।

ভালোবাসাকে বিভিন্ন দৃষ্টিকোণ থেকে ভাগ করা যায়। আবেগধর্মী ভালোবাসা সাধারণত গভীর হয়, বিশেষ করে, কারো সাথে নিজের সকল মানবীয় অনুভূতি ভাগ করে নেয়া, এমনকি শরীরের ব্যাপারটাও এই ধরনের ভালোবাসা থেকে পৃথক করা যায়না। ভালোবাসা বিভিন্ন রকম হতে পারে, যেমন: নিস্কাম ভালোবাসা, ধর্মীয় ভালোবাসা, প্রেমিক প্রেমিকার ভালোবাসা, আত্মীয়দের প্রতি ভালোবাসা, গরিব, অনাথ প্রতিবন্ধিদের ভালোবাসা, ইত্যাদি। আবেগধর্মী যে ভালোবাসা সেটা হলো সবচেয়ে গভীরতম ভালোবাসা। ভালোবাসার এই আবেগটাকে সেই সত্যিকার ভাবে অনুধাবন করতে পারে যখন কেউ প্রকৃত প্রেমে পড়ে।

তাই ১৪ই ফেব্রুয়ারিকে আমরা ভালবাসা দিবস বলে থাকি। এই দিনটিকে সামনে রেখে অনেক প্রেমিক-প্রেমিকা প্লান করে থাকেন। কি করে কাটানো যায় এই দিবসটিতে। কেউ কেউ আবার তার মনের মানুষকে প্রপোজও করে থাকেন এই বিশেষ দিনে। তন্বীর প্রতি আমার ভাললাগাটা ছিল অন্যরকম।

আমার মনে হতো ওর নামের সাথে ওর খুব মিল। তন্বী নামটা চিন্তা করলে কল্পনার জগতে রূপকথার রাজকন্যার যে ছবি ফুটে ওঠে ছিল, ঠিক সেই রকম। ভালবাসা নামের আকঙ্খিত সেই শব্দটির এতো মধুর তা আগে কখনো কল্পনা করিনি। এক সময় অনুভব করলাম মনের অজান্তেই আমার জীবনটা আমি তন্বীর সাথে জড়িয়ে ফেলেছি। আমার লক্ষ্য, আমার চাওয়া-পাওয়া, আমার স্বপ্ন, আমার ভবিষ্যত সব কিছুই তন্বী নামের একটি বিন্দুতে মিলিত হয়েছে।

তন্বীর সাথে আমার যে খুব একটা দেখা হতো বা কথা হতো তা নয়, তারপরও যতটুকু সময় আমারা পেতাম, সেইটুকু সময় পাশে থাকার চিন্তা করতাম। এবং স্বপ্নের ভুবনে ঘুরে বেড়াতাম। আমার প্রতি ওর মনোভাব কি তা কখনো বুঝতে পারতাম না। ছোটবেলা থেকেই লাজুক স্বভাবের হওয়ার কারণে ওকে কিছুই বলতে পারতাম না। ও যখন ক্লাস নাইনে পড়ত তখন আমার কাছ থেকে পুরোনো পাঠ্যবই গুলো নিয়েছিল।

আমার একটা স্বভাব ছিল মনের সব কথা বইয়ের মধ্যে লেখার, কিন্তু ও যখন আমার কাছ থেকে বইগুলো চাইলো আমার মনে নানা আশংকা দানা বাধতে লাগলো। ও আমাকে যদি খারাপ ভাবে? অথবা কোন সমস্যা হয়। যেভাবনা সেই কাজ, আমি তখন খুঁজে খুঁজে ওকে নিয়ে লেখা সব কথা মুছে দিলাম। ও আমার বইগুলো নিয়ে চলে গেল। আরো একবার আমি মনের কথা বলার সুযোগ নষ্ট করলাম।

তারপর অনেকদিন কেটে গেল ওর সাথে দেখা হলো না। আজ থেকে প্রায় সাত বছর আগের কথা, এইচ.এস.সি পরীক্ষা শেষ করে মেডিক্যাল ভর্তি কোচিং করছি। টিউশুনির টাকা দিয়ে কিছুদিন আগেই একটি সাদাকালো মোবাইল কিনেছি। ব্যস্ততা বেড়ে গেছে, কিন্তু তন্বী আছে আমার শয়নে-স্বপনে। তারপর হঠাৎ একদিন দুপুরে অচেনা একটা নম্বর থেকে ফোন আসলো।

হ্যালো বলার সাথে সাথেই অপর প্রান্ত থেকে যে কন্ঠস্বরটি শুনলাম আমার বুকের ভিতরটা বুঝি কেমন করতে লাগলো জানিনা। আর কেউ নয়, আমার বহু আকাঙ্খিত সেই কন্ঠস্বর, এ যে আমার স্বপনের তন্বী। সাথে সাথে আমার হৃদস্পন্দন বেড়ে গেল, সারা শরীর কাঁপতে লাগলো, শুধু অস্ফুট কন্ঠস্বরে বললাম, “তন্বী কেমন আছো”। অপর প্রান্ত থেকে ও বললো, “দিদা ভাইয়া তোমাকে একটা কথা বলবো। বলনা কি বলবে? আমি লজ্বায় বলতে পারলাম না আমার ভালবাসার কথা।

অমনি ভাবে আমার ভালবাসার কথা আরো একবার বুবা রয়ে গেল! আমার আর বুঝতে বাকি রইলো না, কিন্তু আমি কিছুই বলতে পারলাম না, মোবাইলটা হাত থেকে পড়ে গেল। তাড়াতাড়ি তুলে দেখি ও ফোন কেটে দিয়েছে, তবুও আমি আবার ফোন করলাম। ফোনের দোকানের লোকটা বললো, আপা তো চলে গেছেন। তখন আমার আর কিছুই ভাল লাগছিল না। ছটফট করছিলাম।

সেই রাতে কিছু খেতে পারিনি। সারারাত জেগে ছিলাম ভোর হওয়ার আশায়। সকালে উঠেই বারান্দার টপ থেকে একটা গোলাপের কড়ি নিয়ে ছুটলাম ওর স্কুলের উদ্দেশ্যে। সোজা ওর স্কুলের গেটের সামনে গিয়ে দাড়িয়ে রইলাম প্রায় দুই ঘন্টার মতো। স্কুল ছুটি হলো, কিন্তু আমার অস্থির চোখ আর তন্বীকে খুঁজে পাচ্ছেনা।

আমি উদ্বগ্রীব হয়ে খুঁজছি আমার তন্বীকে, অবশেষে ওকে দেখলাম। ওর কাছে গেলাম, ও আমাকে দেখে অবাক হলো আর খুব লজ্জা পাচ্ছিল। আমি কোন কথা না বলে একটা রিক্সা নিয়ে ওকে উঠতে বললাম। ও অবাক হয়ে জানতে চাইলো কোথায়। কোন উত্তর দিলাম না।

ওকে নিয়ে গার্ডেনে ঢুকলাম। পুকুরের পাশে বসেই হাতে গোলাপটা নিয়ে বললাম, “তন্বী আমি তোমাকে অনেক ভালবাসি”। আমার মনে আছে আজো ঐ তারিখটা, স্মৃতি হয়ে থেকে গেল সারা জীবনের জন্য। তন্মী আমার গোলাপটা নিয়ে হেসে বললো, তুমি একটা পাগল। সেই হাসি আমার হৃদয়ে আজো স্পন্দিত করে।

সেইদিন থেকে আমার জীবনটা অন্যরকম হয়ে গেল। আমাদের ভালবাসা কানায় কানায় পূর্ণ হয়ে উঠলো। দুজন মিলে প্রতিশ্রুতিতে আবদ্ধ হলাম। সারাজীবন একসাথে থাকবো দুজন দুজনার হয়ে। জীবনে যা কিছুই ঘটুক একে অপরকে ছেড়ে যাবনা।

এরপর জীবনে অনেক সংকট এসেছে, অনেক বাধার মুখোমুখি হতে হয়েছে, কিন্তু সব সময় দুজন দুজনের পাশে ছিলাম। এভাবে দেখতে দেখতে আর ভাল বাসতে বাসতে কেটে গেল সাতটি বছর। আমাদের ভালবাসার সাতটি বছর পেরিয়ে গেছে। আমাদের বন্ধন অটুট আছে। থাকবে ইনশাল্লাহ।

কদিন পরেই এই সম্পর্ক পরিপূর্ণতা পাবে আমাদের বিয়ের মাধ্যমে। এখন শুধু এটুকুই চাওয়া যেন সব সময় দুজন-দুজনকে মন খুলে বলতে পারি, “আমি তোমাকে অনেক ভালবাসি”!! সংগ্রহ ।


এর পর.....

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.