আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

টুনি গল্প > প্ল্যাটফর্ম এবং একজন অরুণিমা >

যে শিক্ষক বুদ্ধিজীবী কবি ও কেরানী প্রকাশ্য পথে হত্যার প্রতিশোধ চায়না আমি তাদের ঘৃণা করি
পঅঅঅঅ শব্দ করে ট্রেনটা ছেড়ে দিল। টানা লম্বা লাইন, তাই বিন্দু হয়ে যাওয়া পর্যন্ত দেখা যাচ্ছিল। ঠিক এভাবেই আরও একটি ট্রেন ছেড়ে গেছিল ছাব্বিশ বছর আগে। তখন শেষ হুইসেলটা খুবই কর্কষ শোনা গেছিল। কয়লার গুড়ো চোখে-মুখে লেগেছিল।

সেই সময়কার মানুষটির গর্ভে এইসময়কার মানুষটির জন্ম। কানের ভেতর টানা ভোঁ ভোঁ শব্দটা বড়ই বিকট লাগছিল। কান বন্ধ করার চিন্তা করেনি সে, কারণ তখনো ট্রেনের খটাখট খটাখট আওয়াজ ভেসে আসছিল। হাল্কা সুরে-' ডাব ছিল' বা 'এ্যাই রুটি রুটি' কিংবা জোরালো স্বরে ' পালিশ' শব্দগুলো কিছুতেই এড়ানো যাচ্ছিল না। অরুণিমা খুব চেষ্টা করছিল কোথাও একটু তানহাভি সানাটা....একটু কবরের নৈঃশব্দ।

এই প্ল্যাটফর্মে সে ফুরসৎ নেই! রোমকূপ খাড়া হয়ে শরীরের যে পরিবর্তনটা হলো তা কারো দেখার সুযোগ নেই, তাই অরুণিমা ঠাঁয় ট্রেনের গমন পথেই পলকহীন তাকিয়েছিল। এখন আর ট্রেন বা শব্দ কোনটিরই অস্তিত্ব নেই, কেবল একহারা গড়নের ধনেখালি শাড়িতে জড়ানো একটুকরো অরুণিমা সটান দাঁড়ানো। রোমকূপ খাড়া হওয়ার সাথে সাথে চোখের ভেতর জ্বালা করে উঠল। কোন রকম ওয়াইড অ্যাঙ্গেলে পরিবর্তন ছাড়াই উপরের ঠোঁট দিয়ে নিচেরটা চেপে রাখতে হচ্ছিল। কি ভেবে যেন মাথাটা একটু উঁচু করতেই আকাশের সিল্যুয়েটে টিনের চালের কোণা বেয়ে বসে থাকা কাকটার পাশ ঘেসে চোখ গিয়ে ঠেকেছিল অসীম শূণ্যতায়, নীলে।

নিচের পাঁপড়ির পাশ থেকে একটি স্বচ্ছ জলের ফোঁটা জমে ঝরে পড়ার অপেক্ষা করছিল। কিন্তু পড়ছিলনা! নিয়ম হলো ওখানে আরো একটি ফোঁটা ম্যানুফ্যাক্চার হয়ে মেশার পরই ভার সইতে না পেরে ঝরে পড়বে.... কিন্তু আর একটি বা অর্ধেক ফোঁটাও এ্যাড হলো না! জনতার ভিড়ে আবেগও বাস্তবতা মেনে চলে বোধহয় তা না হলে ভেতরে দুর্বার ভূমিকম্প হয়ে যাওয়ার চিহ্ন কেন চোখে ভাসবে না! কেন এগার বছরের নৈকট্য ভেঙ্গে অরুণিমার একা হওয়ার চিৎকার আর কেউ শুনতে পাবে না! মা কে জিজ্ঞেস করতে হবে-মা যে ঝর ঝর করে কেঁদেছিল সে কি কয়লার গুড়োর কারণে ?
 

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।